নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেদিন এক বিবাহিতা রমণী তার পাশের
সহকর্মীকে ডেকে বলছিলেন, আর ভাললাগছে না,
এবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। তাদের
আলাপের পূর্বাপর রেশ না বুঝেই ঠোঁটকাটার মতো
পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বললাম- জানেন না; বিয়ের পর
কেউ স্বাভাবিক হতে পারে না!
আমার কথা শুনে হঠাৎ তারা উভয়ে কিছুটা
থতোমতো খেয়ে হেসে উঠলেন। তাদের বাকা
ঠোঁটের হাসিতে অব্যক্ত যে প্রশ্নটি ছিলো তা
শুধু তাদের নয়- অনেকের। সত্যি কি বিয়ের পর
মানুষ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে? নাকি অস্বাভাবিক
জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে? মূলত স্বভাব শব্দটি
নিয়ে আমারও কিছুটা মতামত আছে। স্বভাব
শব্দটির অর্থ আপেক্ষিক। এর আভিধানিক অর্থ
হচ্ছে- আপন বা নিজের ভাব।
জন্মের কিছুকাল পর প্রতিটি শিশু নিজস্ব পছন্দ
মতো আগুনকে শিল্পজ্ঞান করে ছুতে যায়- এটিই
তার স্বাভাবিকতা। আবার খাদ্য ফেলে অখাদ্যকে
খাবার জ্ঞান করে, এটিই স্বভাবিক অর্থাৎ
স্বভাবজাত। এরপর দিন দিন সেই মানবশিশুটি
সামাজিক জীবনাচারের কড়া অনুশীলনে নামে।
প্রতিটি জিনিস তাকে ধরিয়ে ধরিয়ে শিখিয়ে
দেয়া হয়। সাথে সাথে লোপ পায় তার জন্মসুত্রের
স্বাভাবিকতা। গড়ে ওঠে সমাজসিদ্ধ স্বাভাবিক
ধারা। দিনে দিনে খানিকটা চালাক মানুষে
পরিণত হয় সে। পাশাপাশি তার দৈনন্দিন প্রতিটি
কাজের ধরন বদলাতে থাকে। প্রাকৃত ধারা থেকে
নিয়ন্ত্রণের স্রোতে পড়ে বিশুদ্ধ হতে থাকে
মানুষটি। শিক্ষা, সমাজ এবং পরিবেশের দাবির
কাছে তার স্বাভাবিক জীবনাচারে
সেন্সরশিপের ছুরি চলে। তখন বাধ্য হয়ে তাকে
হাতের বদলে চামচ দিয়ে খেতে হয়। কিংবা বসতে
গেলে চেয়ার ছাড়া জো থাকে না।
আর এই শ্রেণির লোকেরা বিত্ত বৈভবের মালিক
হয় বলে অন্ত্যজ শ্রেণি তাদের বাচ্চাদের হাতে
আদর্শলিপি ধরিয়ে দিয়ে শিখাতে চেষ্টা করে-
‘লেখপড়া করে যে, গড়িঘোড়া চড়ে সে।’
পরবর্তীতে তারাই আবার শিক্ষিত হয়ে
ভদ্রলোকের সারিবৃদ্ধি করে। এভাবেই তৈরি হয়
নতুন নতুন রুচিবোধের উন্নত সমাজ। তখন সেই
সমাজের মানুষজন যা করে সেটিই হয় আদর্শ।
তাদের কৃত কর্ম এবং কর্ম পদ্ধতিই হয়ে ওঠে
স্বাভাবিক। তাহলে আজ যা স্বাভাবিক কাল তা
অস্বাভাবিক বটে! তবে সব অস্বাভাবিক
স্বাভাবিকের বিচারে মন্দ নয়। সাধনালব্ধ
ফলাফলের বিচারে আস্বাভাবিক কর্মকে উন্নত
মানদণ্ডে পরিমাপ করা হয়। যেমন হিমালয় জয়!
এবার পূর্বের কথায় ফিরে আসি। বিয়ের পর কি
সত্যিই মানুষ আস্বাভাবিক হয়ে পড়ে? এ প্রশ্নের
উত্তর অনেকটা আপেক্ষিক। তবে আমার ধারণা,
বিয়ের পর সত্যিই মানুষ পূর্বের তুলনায়
আস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এই অস্বাভাবিকতা উন্নত
ও নিয়ন্ত্রিত জীবন গঠনের যেমন নিশ্চয়তা দেয়
তেমনি ভবিষ্যত প্রজন্মকে রুচিশীল করে তোলার
ক্ষেত্রে সহায়তা করে। কেননা, উঠতি বয়সী
ছেলেদের নানা কীর্তি নিয়ে তাদের পরিবার
যখন হতাশ, তখন গ্রামের বৃদ্ধদের বলতে শুনেছি- ও
কিছু না; এটাই ‘স্বাভাবিক’; বিয়ের পর সব ঠিক
হয়ে যাবে…। তবে কি সত্যিই বিয়ের পর মানুষ
অস্বাভাবিক হয়ে যায়? প্রশ্নটির যথার্থ উত্তর
আমার অন্তত জানা নেই। তবে এতোটুকু জানি-
হারানো সময় আর ফিরে আসে না।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
১৮ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:২১
আফনাজ উদ্দিন বলেছেন: হুম, আহলান।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:০৭
আহলান বলেছেন: সবার চাওয়া পাওয়া এক রকম না, কেউ সুখি কেউ অসুখি .... তাই স্বভাবিক এর সঙ্গা কন্সট্যন্ট বলা যায় না ...