নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আজাড় মানুষ। নিজেকে আবিষ্কারের নেশায় নেশাগ্রস্থ।

জিসান অাহমেদ

একজন কসমিক ট্র্যাভেলার, মহাজাগতিক মুসাফির।

জিসান অাহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের চৈতন্য হবে কি ?

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:২৯

ছেলেবেলায় বাংলা দ্বিতীয় পত্রে যখন ‘অরণ্যে রোদন’ কথাটার বাক্যে উদাহরণ লিখেছি, তখনও কথাটার মানে এত বুঝেছি বলে মনে হয় না, এখন যে রকম বুঝি। আরও বেশি মর্মান্তিকভাবে বুঝি ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯ মে ঘাড়ের ওপর এসে পড়লে, যখন সবাই ‘বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা’ করে একটা ভয়ংকর হল্লা শুরু করে দেয়। বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে আমরা বুক চাপড়াতে চাপড়াতে রক্তাক্ত করে ফেলি। ঢাকা আর শিলচরের শহীদদের চোখের জলে স্মরণ করি, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়েছে বলে অহংকারে নাক উঁচু করে থাকি; কিন্তু বাংলা ভাষাটা কী অবস্থায় আছে তার খবর নিই না, বা খবর নিলেও তাকে ভালোবাসার দায়িত্ব নিই না। ভালোবাসার দায় বড় কঠিন দায়।

আমি এমন কথা বলি না যে, ভাষাটার অবস্থা এখনই মরো-মরো। যতদিন এ ভাষায় ভালো কবিতা লেখা হবে, গল্প-উপন্যাসের পাঠক সমাজ থাকবে, জনপ্রিয় সংবাদপত্র-সাপ্তাহিক-পাক্ষিক (নিউইয়র্ক, লন্ডন থেকেও) থেকে হাজার হাজার লিটল ম্যাগাজিন বেরোবে, গান-নাটক-চলচ্চিত্র লোকে শুনবে দেখবে, ততদিন এ ভাষার শরীর-সুস্বাস্থ্য নিয়ে আমার তেমন কোনো দুশ্চিন্তা নেই। আমার দুশ্চিন্তা এ ভাষার মধ্যবিত্ত ব্যবহারকারীদের নিয়ে, যারা খানিকটা দ্বিভাষী, ইংরেজি-বাংলা দু’ ভাষা নিয়েই খানিকটা নাড়াচাড়া করেন। এই মধ্যবিত্তরাই ভাষা নিয়ে বেশি বুক চাপড়ায়, আবার এই মধ্যবিত্তেরই একটা অংশ ভাষাটাকে নিয়ে কী অপমান করছে তা খেয়ালই করে না।

সবাই জানেন, প্রতিটি ভাষার দুটো চেহারা- একটা বলার, আরেকটা লেখার। মুখে বলার চেহারা অনেকগুলো। নানা অঞ্চলের উপভাষা, সমাজের নানা অংশে বড়লোক-গরিব, বেশি লেখাপড়া-জানা অল্প লেখাপড়া-জানা লোকদের শ্রেণীভাষা, নানা জীবিকার মধ্যে তৈরি হয়ে যাওয়া ভাষার সংকীর্ণ ধরন, বিশেষ উদ্দেশ্যে বানিয়ে-তোলা গোপন ভাষামুখের ভাষার এ রকম নানারূপ আছে। তার মধ্যে একটা রূপ খাড়া হয়ে যায়, যা উপভাষা বা শ্রেণীভাষা বা অন্য যে কোনো সংকীর্ণ ভাষা-নির্বিশেষে ভাষার সব বক্তা ব্যবহার করতে বা জানতে বাধ্য হয়। এটা একটা বিশেষ অধিকারসম্পন্ন মাথায় চড়ে-বসা উপভাষা, যার নাম প্রমিত উপভাষা বা মান্য উপভাষা, ইংরেজিতে যাকে বলে স্টান্ডার্ড ডায়ালেক্ট। লেখাপড়ার জগতে, রেডিও-টেলিভিশনে আমরা মুখে এই উপভাষাটা বলি, আবার খবরের কাগজে, বইপত্রে, লেখায় এ ভাষাটা ব্যবহার করি।

বাংলায় এই বাবুমশাই গোছের উপভাষাটার নাম প্রমিত বাংলা। উপভাষাগুলোকে নানা কারণে প্রমিত বাংলা উত্ত্যক্ত করছে বা গ্রাস করে নিচ্ছে, সেটা একটা দুশ্চিন্তার বিষয়। কিন্তু সেটা এই প্রবন্ধের মূল দুশ্চিন্তা নয়। দেশে প্রমিত ভাষায় শিক্ষাবিস্তার হবে, প্রমিত ভাষায় গল্প-উপন্যাস-পাঠ্যবই লেখা হবে, প্রমিত ভাষায় নাটক, চলচ্চিত্র, রেডিও-টেলিভিশনের খবর আর অনুষ্ঠান চলবে, আর উপভাষার লোকেরা সেসব পড়তে পড়তে শুনতে শুনতে নিজেদের ঘরের উপভাষার আঁচল ধরে বসে থাকবে, এমন হয় না। তাদের উপভাষাও তারা বদলাবে। এর ওষুধ বা টোটকা কী আছে আমরা জানি না।

আমাদের দুশ্চিন্তার বিষয় প্রমিত বাংলাই। মনে রাখতে হবে, এই প্রমিত বাংলার সম্মান রক্ষার জন্যই ১৯৫২-র ২১-২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আর ১৯৬১-এর ১৯ মে শিলচরে বাঙালি শহীদরা প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। বাংলার কোনো উপভাষার জন্য তারা প্রাণ দেননি। ‘মাতৃভাষা’ বলতে তারা বুঝেছিলেন এই প্রমিত বাংলাকেই। যদিও এই বাংলা তাদের অনেকেরই ঘরের ভাষা বা জন্মের ভাষা নয়।

২.

প্রমিত বাংলা যদি ‘বাবুমশাই’ ভাষা হয়, তবে তার উপরে আছে ‘সাহেবের’ ভাষা, অর্থাৎ ইংরেজি। আমাদের এই সাবেক-উপনিবেশের সমাজে আমাদের একাধিক ভাষার ব্যবহার করতেই হয়। আর এই ভাষাগুলো যে শুধু শরিকের মতো নিজেদের এলাকা পাশাপাশি ভাগ করে নিয়ে শান্তিতে কালযাপন করে তা নয়। তাদের মধ্যে তৈরি হয়ে থাকে আধিপত্য আর আনুগত্যের সম্পর্ক, একটা আরেকটার ওপর খবরদারি করতে চায়। যে ভাষার ‘গায়ের জোর’ (আসলে অর্থনীতি, রাজনীতি ও জ্ঞানবিজ্ঞানের জোর) বেশি, সে ভাষা অত জোর নেই অমন ভাষার ওপর নানাভাবে প্রভুত্ব করতে চায়। ইংরেজির এসব জোরই আছে। সে ভাষা তাই বাংলার ওপর প্রভুত্ব করে। আগে করেছে ব্রিটিশ আমলে, এখনও করে বিশ্বায়নের (নাকি ‘মার্কিনায়নের’?) আমলে।

সবাই একথা শুনে হয়তো ‘হ্যাঁ-হ্যাঁ’ করে উঠবেন। ‘সে কী? এই না আমরা মাতৃভাষার জয় ছিনিয়ে এনেছি শহীদের প্রাণ আর রক্ত দিয়ে, ভাষার সংগ্রাম থেকে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছি, আমাদের আত্মদানের স্মরণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়েছে, সেই আমাদের বাংলা ভাষা কেন খবরদারি সইবে? দেখছেন না আমরা ঢাকা শহরে বাংলায় গাড়ির নম্বর লিখছি, বাংলায় দোকানের নামপাটা (সাইনবোর্ড) লিখে সয়লাব করে দিয়েছি, তবু আপনি বলছেন আমার ভাষার ঘাড়ে ইংরেজি চড়ে বসেছে? কী বলছেন স্যার, মাথাটা কি একেবারে গেছে?

মুখের বাংলাটাই আগে ধরি। আমরা মধ্যবিত্ত ইংরেজিওয়ালারা ক’টা বাংলা বাক্য অকারণে ইংরেজি শব্দ না মিশিয়ে বলতে পারি? আমার ‘অকারণে’ কথাটা ফেলে দেবেন না। ‘সকারণে’ ইংরেজি শব্দ আমাদের কথায় মেশে। কিছু ইংরেজি শব্দ ধার নিয়ে আমরা বাংলা করে ফেলেছি, টেবিল-চেয়ার, ইস্কুল-কলেজ, পেনসিল-চক, এরোপ্লেন-রেল ইত্যাদি বাংলা কথায় ব্যবহার করলে কেউ আপনাকে সেগুলো ফেলে দেয়ার জন্য জুলুম করবে না। আমাদের সে রকম ‘বামনাই’ নেই। কিংবা কেউ জ্ঞানবিজ্ঞান, ডাক্তারি বা প্রযুক্তির পরিভাষা ব্যবহার করল, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। অনেক বিদেশী পরিভাষা আমরা নিয়ে নিয়েছি, ধার হিসেবেই। সেগুলো আমরা আর ফেরত দেব না, কেউ দেয় না। নিশ্চয় সেগুলো ব্যবহার করব আমাদের দরকারে। কিন্তু কেউ যদি বলে, বুলি-মিশ্রণ করে বলে- ‘আমি নেক্সট ফ্রাইডে মর্নিংয়ে লন্ডনের ফ্লাইট ধরছি’, ‘আমি অ্যাকচুয়ালি এ বিষয়ে টোটালি ইগনোর‌্যান্ট, আপনি আমার ফাদারকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, নয়তো আমার এলডার ব্রাদারকে, এই প্রপার্টি সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না’- তখন কি বলা যাবে এতে আমাদের বাংলা ভাষার সম্মান পুরোপুরি বজায় থাকছে?

মুখের বাংরেজি নিয়ে অনেক কথা আমরা নানা জায়গায় বলেছি, একুশে ফেব্রুয়ারি এলে প্রতি বছরই বলা হবে। তাতে আমাদের চৈতন্য হবে কিনা জানি না। কিন্তু আমি এ নিবন্ধে মূলত বলব লেখার বাংলার কথা। তাও একধরনের বিশেষ লেখার বাংলার। দোকানের নামপাটায় (‘বাংলা’ করে বলি ‘সাইনবোর্ডে’) আমরা যে ‘বাংলা’ লিখি।

এটা আমাদের একটা মুখের চকচকে গর্ব যে ঢাকায় গাড়ির নম্বর আমরা বাংলায় লিখছি, পশ্চিমবঙ্গেও আমরা তা দেখে ভেবে চোখ জুড়াই, বলাবলি করি, বাংলাদেশকে বাহবা দিই। কিন্তু সত্যি কি বাংলা লিখি আমরা? বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গে? এর আগে আমি উদাহরণ দিয়েছিলাম, কলকাতার একটা দোকানের নাম ‘দি ঢাকা মুলিবাঁশ কার্যালয়’। এটা কি বাংলা, না ‘দি’ লাগিয়ে ইংরেজি করার করুণ চেষ্টা? নইলে দোকানের নাম কেন দেখব ‘বিক্রমপুর সুইট্স অ্যান্ড কনফেকশনার্স’, ‘আসগর জেনারেল স্টোর্স’, ‘কুন্ডু হার্ডওয়ার মার্চেন্টস’, প্রতিষ্ঠানের নাম ‘জয় বাংলা ইয়ুথ ক্লাব’, ‘একাডেমি অব বেঙ্গলি পোয়েট্রি’, ‘সামন্ত কোল্ড স্টোরেজ’? খোদ লালন ফকিরের সমাধিগৃহে একটি বড় আসরঘর হয়েছে, তার নাম দেখেছিলাম বড় বড় করে ‘অডিটোরিয়াম’ লেখা, যেন কথাটার কোনো বাংলা পাওয়া গেল না। পশ্চিমবাংলায় ছেলেমেয়ের বিয়ে উপলক্ষে সদর সাজানো হয় লতাপাতা দিয়ে, তাতে ইংরেজিতে লেখা থাকে ‘আশিস ওয়েড্স মৌমিতা’। আর আজকে তো ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে’র সয়লাব চলছে। তালিকা অনন্তভাবে বাড়ানো চলে, কিন্তু তার দরকার নেই।

অর্থাৎ আমার স্থবির মস্তিষ্কের ধারণায়, আমাদের দেশকে আমরা স্বাধীন (?) করেছি হয়তো, কিন্তু আমাদের ভাষাকে আমরা পুরোপুরি স্বাধীন করে তুলতে পারিনি। অথচ ভাষার স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা থেকেই দেশের স্বাধীনতার লাল সূর্য উঠেছিল। কোথাও একটা অন্তর্লীন ঔপনিবেশিকতা আমাদের পায়ে শিকল পরিয়ে রেখেছে, আমরা লিপিটা লিখি বাংলা, কিন্তু ভাষাটা লিখি ইংরেজি। আমরা কি লিপির স্বাধীনতা চেয়েছিলাম?

অবশ্যই এটা শুধু বাংলা ভাষার ব্যারাম নয়, সারা দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশেই এই দশা। উত্তরপ্রদেশে, মধ্যপ্রদেশে, গুজরাটে- যেখানেই যাই সেখানেই দেখি দেবনাগরি বা গুজরাটি লিপিতে ওই একই ব্যাপার ঘটছে, ‘প্রমোদ ইলেক্ট্রনিক্স’, ‘মধুরা আইসক্রিম পার্লার’, ‘হিমালয় লন্ড্রি অ্যান্ড ড্রাই ক্লিনার্স’-এর ছড়াছড়ি। নিজস্বতাভিমানী মহারাষ্ট্রও ব্যতিক্রম নয়, মুম্বাই থেকে কল্যাণ পর্যন্ত যেতে ‘নিউ শিব সদন’, ‘গুরুপ্রসাদ আয়ুর্বেদিক ক্লিনিক’, ‘মুকেশ মোবাইল ডেকোর্স’, ‘ভাবনা চপ্পল্স’, ‘কান্হাইয়া প্রিন্টিং প্রেস’-এর শোভাযাত্রা।

অনেকেই বলবেন, এ প্রাগৈতিহাসিক বৃদ্ধ কেন প্রলাপ বকতে শুরু করল আবার? এই বামনাইয়ের কোনো মানে হয়? ভাষায় বিদেশী শব্দ ঢুকবে না? তাতে তো ভাষাই সমৃদ্ধ হবে। প্রশ্ন হল, কতটা নিলে সমৃদ্ধ হয় ভাষা, আর কতটা নিলে ভাষা খিচুড়ি পাকিয়ে যায় তার সীমারেখাটা আমরা জানি না। কিন্তু শহরে-বাজারে যা দেখি, তাতে আরব মরুভূমিতে শেখের তাঁবুতে সেই উটটির কথা মনে পড়ে, যে শীতের মধ্যে মাথাটা প্রথমে ঢুকিয়েছিল, পরে পুরো তাঁবুটাই যার দখলে চলে যায়। চারপাশের সংবাদ মাধ্যম, শিক্ষা ব্যবস্থা, বাপ-মায়ের উচ্চাকাক্সক্ষা, বহুজাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা- কোনো কিছুই মাতৃভাষাকে রক্ষায় বা ভালোবাসায় উৎসাহ দেয় না, ব্যাপারটাকে প্রায় এক নির্বোধ প্রকল্প হিসেবে তুলে ধরে। বলে, বাস্তব বড় কঠিন, এখানে ভাষা নিয়ে ছেলেমানুষি আবেগের কোনো মানে হয় না।

আমি জানি, অনেক কথার বাংলা হতে পারে, আবার অনেক কথার বাংলা হতে পারে না। যেগুলোর বাংলা করা কঠিন, সেগুলো ইংরেজিই থাক আপাতত। কিন্তু বাংলাভাষাপ্রেমী মানুষেরা নানা ব্যবসা-বিপণির বাংলা নাম ভাবুন না। ‘মেডিকেল স্টোর্স’-কে ‘ওষুধের দোকান’ বললে ক্ষতি কী? কিংবা ‘দাওয়াই-ঘর’? আমার চেয়ে পাকা পাকা মাথা লাগুক এই কাজে। বাংলা একাডেমি তুলে নিক এই কাজ, ভাষাবিদদের বসিয়ে দিক মাথা ঘামাতে।

লিখেছেনঃ পবিত্র সরকার, সাবেক উপাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, লেখক।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:


"লিখেছেনঃ পবিত্র সরকার, সাবেক উপাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, লেখক। "

-এই লেখক ও আপনার চৈতন্যের উদ্ভব ঘটেনি এখনো; আপনি ও লেখক বাংলা ভাষার মুল সমস্যা বুঝতে পারেননি; বাংলা ভাষার মুল দু:খ হচ্ছে, এই ভাষার সব মানুষ এই ভাষায় লিখতে ও পড়তে পারে না।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৫০

জিসান অাহমেদ বলেছেন: যথার্থই বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.