নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহমেদ শুভ৬৯৬

আহমেদ শুভ৬৯৬ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজয়ের হাসি...............।।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০২


“ প্রান যে আমার সুখ বিলায়ে মুখ যে হাসি হাসি,
মন যে আমার বলছে বাংলা,
তোমায় ভালোবাসি । ”
টেবিলের উপরে রাখা ডায়েরীর মতো প্যাডটাতে দুটো লাইন লিখলেন আতিকুর রাহমান । আতিকুর রহমান কোন ঘোষিত কবি না তবে মাঝে মাঝেই কবিতার কয়েক পঙক্তি লিখেন, বেশ ভালোই লিখেন। এখন ঘর থেকে বেরিয়ে যাবেন শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে । যাবার আগে ভাষার তরে দুইটা লাইন লিখে গেলেন । প্রতিদিন ই বিভিন্ন বিষয়ে দু লাইন করে লিখে রাখেন এই প্যাডটাতে । আজ ও তাই ব্যতিক্রম হয়নি । তিনি আজ দফদফে সাদা এক পাঞ্জাবি পড়েছেন। পাঞ্জাবির মাঝে মাঝে লাল বর্ণের আঁকা কিছু দাগের প্রতিচ্ছবি, ভাষা শহীদের সাদা মনে যেমন টি রক্ত দাগ বসিয়েছিলেন হানাদাররা।
আতিকুর রহমানের জন্য আজকের দিনটা অন্য রকম । কারণ আজ ২১ এ ফেব্রুয়ারি, রিকশা নিয়ে তিনি শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন।
দূর থেকে মাইকের আওয়াজে ভেসে আসছে গান…
‘‘ আমি বাংলায় গান গাই
আমি বাংলার গান গাই
আমি আমার আমিকে চিরদিন
এই বাংলায় খুঁজে পাই। ”
মুখের হাসি আরেকটু চওড়া হল উনার । যাক্ আজ তাহলে অনেকের মনে আছে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারদের । আজ যেন ঘরের বাইরে ভেতরে সব জায়গায় এক অন্যরকম ব্যস্ততা বিরাজ করছে । বাইরের ব্যস্ততাকে নিয়েই ঘরের ব্যস্ততা । এই ব্যস্ততাতে যোগ দিয়েছে উনার ১১ বছরের মেয়ে নওরিনও । মেয়েকে বাংলাদেশের কালারের জামা পড়িয়ে দিয়েছেন উনার স্ত্রী । তাকে নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাচ্ছেন আতিকুর রাহমান । ঘর থেকে বের হয়েই নওরিন বায়না ধরল চকলেটের জন্য । তা ও একটা না, ২১ টা কিটকেট নাকি কিনবে সে । শহীদ মিনারে সবাই ফুল দেয় । আর ও নাকি দিবে কিটকেট ।
যাই হোক, আজ মাতৃভাষা দিবস হওয়ায় মেয়েকে কিছু বলতে চাইলেন না আতিকুর রাহমান । চুপচাপ মেয়ের কথা রাখলেন । তবে ২১টা কিনে না দিয়ে দশটা কিনে দিলেন । পাশের দোকান থেকে একটা খাম নিয়ে ওটার ভেতর চকলেট গুলো ঢুকিয়ে নওরিন খামের উপর গুটি গুটি হাতে লিখল
“ বাংলার নায়করা তোমাদের শুভেচ্ছা ।’’
রিকশা থেকে নামল নওরিন আর ওর আব্বু । সারা রাস্তা র্যাললি দেখে আর গান শুনে এসেছে তারা । শহীদ মিনারের ওখানে ভীর থাকায় কিছুটা আগেই ওদেরকে নামতে হল । এটুকু রাস্তা হেঁটেই যেতে হবে । শহীদ মিনারের কাছে আসতেই আতিকুর রহমানের মন কেমন যেন এক আনন্দ অনুভুতিতে ভরে উঠলো। তাকিয়ে দেখলেন নওরিনের দুই ঠোট ও দুই দিকে প্রসারিত হয়েছে । বাবা-মেয়ে দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভেতরের আনন্দ প্রকাশের জন্য একটু হাসলেন ।
একটু পরে বাবা মেয়ে দুজনে আরও অনেকের দিকে তাকিয়ে দেখলেন সবার মুখই হাসি হাসি । কেউ আলতো করে মুচকি হাসছে, কারো চোখ মুখ উদ্ভাসিত হয়ে আছে আর কেউ কেউ চোখ উজ্জল করে তাকিয়ে দেখছে সব কিছু।
– “অদ্ভুত ব্যাপার তো! সবাই হাসছে কেন আব্বু ?” নওরিন প্রশ্ন করলো।
– “হাসবেনা ? এ যে বাংলার অনুভুতি,বাংলা মায়ের হাসি । শহীদের প্রান্তরে যে এসেছে সবাই । বুকের আবেগ তো চুখে মুখে দেখা যাবেইরে মা । ’’

নওরিন প্রথমবারের মতো শহীদ মিনারের দিকে তাকাল । এতো মানুষের ভিড়ে ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছেনা যদিও, কিন্তু একটু একটু বুঝা যাচ্ছে । ফুলে ফুলে লাল হয়ে আছে মিনারের প্রাঙ্গণটা । নওরিনের ভাবতে ভালো লাগলো এগুলো ফুল না, এগুলো যেন শহীদের রক্ত । একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। । ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৯) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি বর্ষণ করে এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্রযুবক শহীদ হন। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

আতিকুর রহমান মেয়েকে বেশ ভালো বাংলা শিখিয়েছেন । উনার মন যেন শান্ত হতে চাইছেনা । অজানা এক উত্তেজনা তার মাঝে । সবার মতো তিনি ও চান বাংলার সবাই যেনো বাংলা ভাষায় কথা বলে, বাংলার ই গান গায়, সবাই বাংলাদেশকেই ভালবাসে । কিন্তু আজকের এই যুগে হিন্দি চ্যানেল গুলো যেনো বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । হঠাৎ করেই আতিকুর সাহেবের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল ।
নওরিন তাকালো আব্বুর দিকে । আব্বুর মুখটা কেমন যেন শক্ত দেখাচ্ছে । কিন্তু এই দিনেতো আব্বুর মুখ শক্ত হবার কথা না । নিশ্চয়ই কঠিন কিছু ভাবছেন । কি যে এতো কঠিন জিনিষ ভাবেন আব্বু, নওরিনের ছোট্ট মাথায় তা ঢুকেইনা । নওরিন অন্য দিকে মন দিলো । বেশির ভাগ ছেলে মেয়েরাই সবুজ আর লাল কাপড় পরেছে । ছেলেরা মাথায় কি যেন বেঁধেছে ও । আর চারিদিক থেকে মাইকের আওয়াজ ভেসে আসছে । গমগমে একটা পরিবেশ বিরাজ করছে ।
হঠাৎ করেই নওরিনের মাথা ব্যথা শুরু হল। সে আর ভেতরে যেতে চাইলোনা । আতিকুর রহমানের অফিসের কলিগরাও চলে এসেছেন শ্রদ্ধাঞ্জলি নিয়ে । আব্বু ডাকলেন নওরিনকে তাদের সাথে যাওয়ার জন্য । নওরিন যেতে চাইলনা । আঙ্কেলরা জোর করলে সে বলল তার খুব মাথা ব্যথা করছে । ভেতরে সে যাবেনা আর । আতিকুর রহমান মেয়েকে গেটে দাড় করিয়ে বললেন এখানেই থাকতে, কোথাও যেন না যায় । নওরিন সুবোধ বালিকার মতো মাথা নাড়ল ।
আতিকুর রহমান আর তার কলিগরা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিয়ে ব্যস্ত । নওরিনের হঠাত মনে হল, চকলেটগুলো তো রয়ে গেল । শহীদ মিনারে তো দেয়া হয়নি । এগুলো কি দেয়া হবেনা ? কিন্তু আব্বুতো বলে গেছে এখান থেকে না সরতে, যদি এখন ভেতরে যায়, তাহলে আবার বকবে । নওরিন ভাবতে লাগলো কি করা যায় ! হঠাত করে রাস্তার ঐ পাশে নজর গেল নওরিন এর । দুইটা দোকানের পাশে একটা খালি জায়গা । ওখানে বসে কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে কি যেন খেলছে । সবাই প্রায় ওর বয়সি । গায়ের কাপড় নেই কয়েকজনের, যাদের আছে তাও দেখার মতো না ।
নওরিন এগিয়ে গেল ওদের দিকে, সবার হাতে একটা করে কিটকাট তুলে দিলো । চকলেট পেয়ে তাদের হাসি আনন্দ দেখে কে ? নওরিন নিজে ও একটা নিল, কিন্তু তারপর ও একটা রয়ে গেল ।
সে ভাবছে ঐ একটা কিটকাট কি করবে, তখন ই পেছন থেকে একটি হাত এগিয়ে আসলো । সে ফিরে তাকিয়ে দেখে, আব্বু হাত বাড়িয়ে দাড়িয়ে আছেন । মুখের শক্ত ভাবটা বদলে গিয়ে এখন হাসিতে রূপ নিয়েছে । সে চকলেট টি আব্বুর হাতে দিয়ে ওদের সাথে খাওয়ায় মন দিল ।
আতিকুর রহমানের চোখে এক একধরনের মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছেন । শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে তিনি যতটা আনন্দ পান নি, মেয়েটার কাজে তো তার চেয়ে ঢের বেশী আনন্দ পেলেন । এটা যে তারই মেয়ে ভাবতেই গর্বে বুকটা ভরে উঠলো উনার ।
শহীদরাও তো যুদ্ধ করে সবার মুখে হাসিই ফুটিয়েছেন । আজও তো এই নিঃস্ব বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটাল নওরিন । এ যেন এক অন্যরকম বিজয় । যে বিজয় সবার হাতের মুঠোয় থাকা সত্ত্বেও সবাই পায়না । সে বিজয় আজ পেয়েছে নওরিন । ঠিক করলেন আতিকুর সাহেব, আর যতবার ই মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা আর বিজয় দিবস আসবে, তিনি সেগুলোতে অর্ধেক টাকা দিয়ে ফুল কিনবেন, আর বাকি অর্ধেক দিয়ে এইসব নিঃস্বদের মুখে হাসি ফুটিয়ে অন্যরকম বিজয় লাভ করবেন । যে বিজয়ের পথ আজ তাকে নওরিন দেখাল ।
মুখে গর্বের হাসি ফুটিয়ে কিটকেটে একটা কামড় দিয়ে নওরিনের দিকে তাকালেন আতিকুর রহমান। বাচ্চাগুলো চকলেট খেতে খেতে হাসছে । নওরিন হাসছে । হঠাৎ করে আতিকুর উনার মনে হল, নওরিনের সাথে যেন তার লাল সবুজের জামা টাও হাসছে । এ যেন লাল সবুজ আর চকলেটের বিশ্বজয় । কেউ কোন কথা বলছেনা, তারপরও সবাই সবার মনের তৃপ্তি বুঝতে পারছে আর হাসছে । এ যেন মাতৃভাষার দিনে এক নতুন ভাষা আবিষ্কৃত হল আজ । এরপর থেকে তিনি এই ভাষাও জয় করবেন । করবেন ই ।

নওরিনকে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন আতিকুর রহমান । কাছেই কোথাও আবার বেজে উঠলো,
“ আমি বাংলায় কথা কই,
আমি বাংলার কথা কই,
আমি বাংলায় হাসি, বাংলায় ভাসি,
বাংলায় জেগে রই…। ”
মুখের হাসিটা আবারো চওড়া হল উনার । যদি ও তিনি সবসময় নওরিনকে বেশি বেশি চকলেট খেতে বারণ করেন, তাও আজ আরও দুটো কিটকেট কিনে দিয়েছেন মেয়েকে নওরিনের আম্মুর জন্য একটা গোলাপ ও কিনলেন আজ ।
এখন আতিকুর সাহেব রিক্সায় বসে বসে হাসছেন আর উনার মাথায় কবিতা এসেছে । ভাবতে লাগলেন আতিকুর সাহেব,
“ শান্ত হল হৃদয় আমার বাংলা মায়ের কোলে…”
পরের লাইনটা কি হতে পারে …?
পরিশিষ্টঃ- বিকেলে মাঠে খেলা শেষে একটি ছোট্ট ছেলে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় একটা খাম পড়ে থাকতে দেখল । তাতে আঁকাবাঁকা করে কে যেন লিখে রেখেছে, “ বাংলার নায়করা, তোমাদের শুভেচ্ছা ।” ছেলেটা কি ভাবল কে জানে ! কিছুক্ষণ পর শহীদ মিনারে রাখা বড় একটি শ্রদ্ধাঞ্জলির উপর খামটি রেখে চলে আসলো সে । অতঃপর কোন এক অজানা কারনে তার মুখে ও ক্ষীণ হাসি দেখা গেল …


__ আহমেদ শুভ৯৬৯
ahmd shuvo969

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৬

বিজন রয় বলেছেন: “ প্রান যে আমার সুখ বিলায়ে মুখ যে হাসি হাসি,
মন যে আমার বলছে বাংলা,
তোমায় ভালোবাসি ।

খুব ভাল লিখেছেন।

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৯

মুখোশধারী মুসাফির বলেছেন: ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.