নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমিও একদিন লাশ হব, সেই লাশ মাটির নিচে থেকে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে অংগার হবে। বৃষ্টি ভিজা কাদায় শরীর ভিজে যাবে, শুধু অনুভবে নিথর লাশ হয়ে রয়ে যাব শেষ বিচারের অপেক্ষায়.......

ফেনা

মুক্ত ও সাদা মনের মানুষ হতে আগে চাইতাম। এখন আর চাই না। এখন একটু মুক্তি চাই, চাই জীবনটা শেষ হবে এই অপেক্ষার অবসান। [ মৃত্যুটা খুব স্বাভাবিক; বেঁচে থাকাটা অস্বাভাবিক।]

ফেনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি মিসির আলী ২

২৩ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮



ছবিঃ গুগল মামা থেকে নেওয়া।

আজ দিনটা বুধবার। সন্ধ্যার আজান (মাগরিবের আজান) হয়ে গেল। কেউ ঘরে ফিরছে আবার কেউ রাস্তার পাশে ছোট ছোট দোকানগুলিতে ভির জমাচ্ছে। এখানে বসে চা -সিগারেট আর দেশ, খেলা আর দেশের রাজনীতি নিয়ে সে রকম আলোচনা চলবে। মাঝে মাঝে আলোচনা শুনলে মনে হয় তাদের থেকে প্রধান্মন্ত্রী শেখ হাসিনাও কম বুঝে। হাসিনার বুদ্ধিজীবি হিসাবে তাদের নিলে হাসিনার ঠগ হবে না।

আমিও ঘর থেকে বের হয়ে একটা দোকানের দিকে যাচ্ছি। ভাবছি কয়েকটা সিগারেট নিয়ে রাস্তার ধারে বাশ ঝারের নিচে গিয়ে বসব। ঘরে আজ সারা দিন একটা কথা শুনতে শুনতে কান একেবারেই শেষ। জিন ভুত বাশ ঝাড়ে থাকে বেশি। আজ দেখব তাদের, সাথে একটু গল্প করব সিগারেট খেতে খেতে। অবশ্য তাদেরও সিগারেট অফার করা যাতে পারে।

দোকানে একটা এক হাজার টাকার নোট দিলাম। দোকানদার আমার দিকে হা করে চেয়ে রইল। গ্রামের দোকান। এখানে এত বড় নোট খুব কমই আসে। টাকাটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, আমাকে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট দেন। দোকানদার আমার দিকে বেশ কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে এক প্যাকেট বেনসন সাথে ভাংতি দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করল ভাইজান আপনি কি করেন? আমি কথাটা স্পষ্টই শুনেছি। কিন্তু না শুনার মত করে চলে এলাম। সময়টা শীতের শুরু। কিন্তু সেই সন্ধ্যা থেকে আমার জিছুটা গরম লাগছে। অদ্ভুত গরম। কিছুটা গা জ্বলছে।

প্রায় দশ কি বার মিনিট পর সেই বাশ ঝাড়ের নিচে এসে বসলাম। সিগারেট একে একে সাতটা জ্বালিয়ে দিলাম। সাথে মোবাইলে একটা পিডিএফ বই পড়ে শেষ করলাম। ঘড়িতে চেয়ে দেখি সময় গড়িয়ে রাত প্রায় ১১ টা বাজে। এবার উঠতে হবে। নিজেকে নিজেই বলে মোবাইলটা পকেটে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। সেই সাথে পকেটে রাখলাম সিগারেট আর লাইটারটাও। বাড়ির দিকে নিরবে হাটা দিলাম।

ঘরের দরজার সামনে আসার পর মনে হল - এত সময় বাশ ঝাড়ের নিচে বসে আসলাম কিছু দেখলাম না!!! কেউ ত আসলনা!!! কিছুইত হল না আমার!!!
যাই হোক ঘরে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলাম। এমনি এক চাচী এলেন ঘরে। বউ এর সাথে বেশ কিছুক্ষণ কি যেন কথা বলে তারপর আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। অনেকটা কাচু মাচু করে বললেন- কাহা একটা কথা কমু??? আমি এক ঝলক চাচীর দিকে তাকিয়ে -বলেন। চাচী মাথাটা নিচু করে বলতে লাগলেন- কাহা তোমার চাচারে কালকে একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। যদি দশ হাজার টাকা ধার দিতা........ বলতে বলতে গলার আওয়াজটা কেমন শেষে এসে মলিন হয়ে গেল।

আমি খাওয়াটা বন্ধ করে বাকি ভাতের উপর হাত ধুয়ে উঠে চাচীর শাড়ির আচল দিয়েই মুখটা মুছে নিলাম। উনি আমার চাচাত চাচার চাচাত ভাই এর বউ। বয়স ত্রিশ বা বত্রিশ হবে। চাচার বয়সটাও তেমন নয়, আটচল্লিশ থেকে পঞ্চাশ এমনি হবে।

যাই হোক আমি মুখটা মুছে চাচীকে বললাম এই বেটা ত আর বাঁচত না। যখন তখন মরে যাবে। হের পিছনে টাকা নষ্ট করে লাভ কি!!! ঋণ বাড়ায়ে লাভ নাই। আপনি দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ খুবই ভাল। নিজের আরেকটা বিয়ের চিন্তা করেন। ছেলে পুলা নাই। বয়স কম। এইভাবে আর কত দিন চলতে পারবেন।
এই বলেই আমি অদ্ভুত ভাবে হাসতে হাসতে সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম।

পরের দিন খুবই ভোরে ঘুম থেকে উঠে শহরে চলে গেলাম। আমার এক ফুপু অসুস্থ। তাকে দেখতে। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ফুপুর বাসায় পৌছালাম। তার ঠিক পনের মিনিট পরই বউ মোবাইলে কল দিল। কলটা রিসিভ করতেই- এই তুমি আসলে কি বলত!!! জলদি বাড়িতে আস। কেন কি হয়ছে। তুমি যদি জানই যে তালিব কাহা মারা যাবে তবে তুমি আজ বাড়ি থেকে গেলা কেন। বিকালে বা পরের দিনই যেতে পারতা..... তালিব কাকা সকাল পাঁচটার সময় মারা গেছে। তুমি জলদি বাড়ি আস।

বাড়িতে আসলাম। আসতে আসতে প্রায় বারটাই বেজে গেল। গোসল করে লাশ নিয়ে কবরে দিকে রওয়ানা দিলাম জানাজার জন্য। দাফনের কাজ শেষ করে বাড়িতে আসলাম। খাওয়া দাওয়া সেরে গেলাম তালিব কাহার ঘরে। মরা বাড়িতে যেমন অদ্ভুত থমথমে পরিবেশ আর থেকে থেকে কান্না কাটি চলে এখনেও তার ব্যাতিক্রম নয়। আমি ঘরে ঢুকতেই চাচী কানতে কানতে আমাকে এসে জরায়ে ধরে আরো জোরে চিল্লানি দিয়ে কাঁদতেছে। আমার কান ফাটার অবস্থা।
আমাকে জড়ায়ে ধরে কান্নার সময় তার মুখটা আমার কান বরাবর। তাই কানে কান্নার আওয়াজটাও বেশ লাগছে। হঠাত কান্না কিছুটা বন্ধ হয়ে চাচী আমার কানে অনেকটা ফিস ফিস করে বললেন- তুমি কেমনে জানলা আমার জামাই মইরা জাইব!!! তুমি সাধারণ কেউ না। এখন তুমি ছাড়া আমার কেউ নাই, কোন উপায় নাই। আমি তোমার পিছু ছাড়ব না। মরার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আমি তোমাকে পিছু করব।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪২

বিজন রয় বলেছেন: করুণ আর আর্তনাদ!!

২৩ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৬

ফেনা বলেছেন: পড়ার এবং মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

ভাল থাকুন।

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৪৫

কামাল১৮ বলেছেন: এই গল্প লিখে আপনি কি বুঝাতে চাইছেন।আমরাও আপনার কাকীর মতো বলবে,তুমি অসাধারণ।তা কাকী কি আছে নাকি পিছু ছাড়ছে।
লেখার হাত ভালো কিন্তু বিষয় ভালো না।

২৩ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৪৮

ফেনা বলেছেন: লেখা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

চাচীর পর্ব শেষ। =p~

৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: পড়তে তো ভালোই লাগলো।

২৪ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৪২

ফেনা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনাদের ভাল লাগাই ত সামনে এগিয়ে যাবার আনন্দ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.