![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শবেকদর যাতে হাতছাড়া না হয় এজন্য শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতেকাফ করার বিধান রয়েছে। এই শবেকদরের রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। মুফাস্সিরগণ এই আয়াতের তাফসিরে বলেছেন, আরবিতে আনজালা শব্দটি ব্যবহৃত হয় কোন কিছু একসঙ্গে অবতীর্ণ করা অর্থে। আর নাজ্জালা ব্যবহৃত হয় অংশবিশেষ করে (সামান্য সামান্য) নাজিল করা অর্থে। কদরের রাতে লওহে মাহ্ফুজ থেকে একসাথে পূর্ণ কুরআন শরীফ প্রথম আসমানে নাজিল করা হয়েছে বলেই সূরা কদরে আনজালনা শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এবং পরবর্তীতে প্রথম আসমান থেকে এক আয়াত দুই আয়াত করে প্রয়োজন অনুযায়ী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাজিল হয়। এজন্য সূরা আল-ইমরানের ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেনÑ ‘নাহনু নাজ্জালনাল কোরআনা’। অর্থাৎ আমরা কোরআন নাজিল করেছি। এখানে নাজ্জালা শব্দটি সামান্য সামান্য করে নাজিল করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাহলে এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় কোরআন নতুন কোন ঐশীবাণী নয়। এটি আগে থেকেই লওহে মাহ্ফুজে সংরক্ষিত ছিল। আর কেয়ামত পর্যন্ত এটি লওহে মাহ্ফুজেই সংরক্ষিত থাকবে। সংরক্ষণের ব্যাপারে আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কোরআনের ৩০তম পারায় সূরা আল-বুরুজের ২১ ও ২২ নং আয়াতে বলছেন- ‘বাল হুয়া কোরআনুম মাজিদ, ফি লওহিম মাহফুজ’। অর্থাৎ- ‘বরং এটি কোরআন মজিদ, লওহে মাহ্ফুজে সংরক্ষিত রয়েছে।’ সুতরাং এই বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয় কোরআন শরীফ লওহে মাহ্ফুজে অনন্তকাল ধরে সংরক্ষিত ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সুতরাং কোন যুক্তিতেই বিশ্বাস করার সুযোগ নেই যে, কোরআনে এই নামগুলো কাফেরদের দেবতাদের নাম থেকে সংযোজন করা হয়েছে। কোরআন যেমন অনন্তকাল ধরে সংরক্ষিত ছিল, তেমনি আল্লাহ্তায়ালার নামগুলোও কোরআনে সংরক্ষিত ছিল।
তিন. হযরত নুহ (আঃ)-এর মহাপ্লাবনের পর থেকে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)- এর আগমনের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে মক্কা নগরীতে কোন মানুষের বসতি ছিলো না। বোখারী শরীফের ৮৩৩ নং হাদিসে এব্যাপারে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। হাদিসের সারসংক্ষেপ হচ্ছেÑ যখন ইব্রাহিম (আঃ)-এর স্ত্রী সারাহ ও হাজেরার মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, তখন তিনি আল্লাহতায়ালার নির্দেশে হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাইলকে নির্বাসনে পাঠাতে মক্কা নগরীতে নিয়ে গেলেন এবং বর্তমান জমজম কূপের পাশে জনমানবহীন ভূমিতে একা রেখে ফিরে গেলেন। তখন সেখানে কোন পানি ছিলো না। ইব্রাহিম (আঃ) তাঁদেরকে যে সামান্য খেজুর ও পানি দিয়েছিলেন তা কিছু দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। হাজেরা দুগ্ধপোষ্য শিশুকে পানি পান করানোর জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। সাফা ও মারওয়া পর্বত দুটোর উপরে উঠে সমতল ভূমির দিকে লক্ষ্য করে মানুষের খোঁজ করতে থাকেন। এভাবে তিনি সাফা ও মারওয়া পর্বতের একটি থেকে অপরটিতে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করেন (এ জন্য পরবর্তী হজের সময় হাজীদের ৭ বার দৌড়ানো অপরিহার্য হয়ে যায়)। একসময় তিনি একটি শব্দ শুনতে পান এবং একজন ফেরেশতা দেখতে পান। ঐ ফেরেশতা পায়ের গোড়ালি দিয়ে মাটিতে আঘাত করেন। এতে করে কূপের সৃষ্টি হয় এবং মাটি ফেটে পানি বের হতে শুরু থাকে। এটাই হলো আজকের জমজম কূপ। পরবর্তীতে জমজম কূপ এলাকায় পাখির উড়াউড়ি দেখে দূর থেকে একদল লোক অনুমান করে সেখানে সম্ভবত পানি থাকতে পারে। তারা পানির অনুসন্ধানে সেখানে ছুটে আসে এবং পানি পেয়ে যায়। একসময় হাজেরার অনুমতি নিয়ে তাঁরা সেখানে বসবাস শুরু করে। ওরা ছিলো জুরহুম সম্প্রদায়ের লোক। ইসমাইল (আঃ) তাদের কাছ থেকে আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করেন। এভাবেই মক্কা নগরীতে মানুষের বসবাস শুরু হয়। পরবর্তীতে ইব্রাহিম (আঃ) ফিরে আসেন। তিনি ও পুত্র ইসমাইল মিলে কাবাঘর নির্মাণ করেন। তিনি শরীয়তপ্রাপ্ত হন এবং আল্লাহর একাত্ববাদ প্রচার শুরু করেন। তখন মক্কা নগরীর মানুষ এক আল্লাহর উপাসনা করতো। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করতো না। কাবাঘরে কোন মূর্তি কিংবা দেবতা ছিলো না। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর অনেক অনুসারী ধর্মকে বিকৃত করে মূর্তিপূজা শুরু করে। তারা কাবাঘরে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করে প্রত্যেকটির পৃথক পৃথক নামকরণ করে। আরবের বিভিন্ন স্থানে তারা লাত, ওজ্জা ও মানাত নামে তিনটি বড় দেবতা স্থাপন করে। কাফেররা বলতো এগুলো আল্লাহতায়ালার নাম। তাই আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের ২৭ নং পারায় সূরা আল-নজমের ১৯, ২০ ও ২৩ নম্বর আয়াতে এই তিনটি মূর্তির কথা উল্লেখ করে ঘোষণা দেন এসব নামের সঙ্গে তাঁর ন্যূনতম কোন সম্পৃক্ততা নেই। আল্লাহতায়ালা উক্ত তিনটি আয়াতে বলেন “তোমরা কি ভেবে দেখেছো লাত ও ওজ্জা সম্পর্কে এবং তৃতীয় আরেকটি (দেবী) মানাত সম্পর্কে? (মূলত) এগুলো কতিপয় (দেব-দেবীর) নাম ছাড়া কিছুই নয়, যা তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা ঠিক করে নিয়েছো। আল্লাহতায়ালা এর (নামে) সমর্থনে কোন রকম দলিল প্রমাণ নাজিল করেননি। সুতরাং, আল্লাহর গুণবাচক নাম আগে থেকেই ছিলো। কাফেররা মূর্তি তৈরি ও পূজা শুরু করে ইব্রাহিম (আঃ)-এর ইন্তিকালের অনেক পরে। সুতরাং দেবতার নাম থেকে আল্লাহর নামকরণের কোন সুযোগ নেই। কারণ আল্লাহর নাম অনেক আগে, দেবতা তৈরি ও পূজা শুরু হয় অনেক পরে। আর হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত হয়, আরবি ভাষা ছিলো ঐ জুরহুম সম্প্রদায়ের ভাষা। ইসমাইল (আঃ) তাদের কাছ থেকে ভাষা শিখেছিলেন। তাহলে আরবি কাফেরদের ভাষা ছিলো না, কাফেররা পরবর্তীতে এ ভাষায় কথা বলে। আর লাত, ওজ্জা ও মানাত সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে তাফসীরে ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, লাত নামে জাহিলিয়াত যুগে একজন সৎ লোক ছিলেন। তিনি হজ মওসুমে পানির সঙ্গে পাউডার মিশিয়ে হাজীদের পান করাতেন। তাঁর মৃত্যুর পর লোকজন তাঁর কবরের সেবা শুরু করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তার ইবাদত শুরু করে। এভাবেই তখনকার আরবে সৎ মানুষের নামে মূর্তি তৈরি করে লোকজন তাদের এবাদত (মূর্তিপূজা) করতো। চার. ইসলাম আসার আগে কি আরবে আল্লাহর গুণবাচক নামের ব্যবহার ছিলো? এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই দেখা দিতে পারে। হ্যাঁ, ইসলাম আসার আগেও আরবে আল্লাহর অনেক নামের ব্যবহার ছিলো। কারণ মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আগে আরও লক্ষাধিক নবী পৃথিবীতে এসেছেন। কেউ নতুন শরীয়ত পেয়েছেন, কেউ পুরাতন শরীয়ত প্রচার করেছেন। কারো উপরে বড় ধর্মগ্রন্থ, আবার কারো উপর ছোট ধর্মগ্রন্থ (সহিফা) নাজিল হয়েছে। এসব ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছে এবং আরবে এর প্রচলন ছিলো। এতো সাধারণ একটি বিষয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মতো একজন বিজ্ঞ সাংবাদিকের কাছে কেন পরিষ্কার নয়, এটা আমার বোধগম্য নয়। তবে ধর্ম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে এই সাধারণ ভুলগুলো যে কারো ক্ষেত্রেই হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অতিসম্প্রতি যেমনটি করেছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রেডিওকার্বন বিভাগের একদল গবেষক। বার্মিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবিষ্কৃত পবিত্র কোরআনের প্রাচীনতম পা-ুলিপিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁরা ৯৫ ভাগ নিশ্চয়তার সঙ্গে বলেছেন, এটি ৫৬৮ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কোন সময়ে লেখা। কিন্তু আমার মতে পা-ুলিপিটি যতই প্রাচীন হোক এটি ৬০৯ খ্রিস্টাব্দের আগে লিপিবদ্ধ করার কোন সুযোগই নেই। কারণ রাসুল (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে। আর ৬০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি যখন ৪০ বছর বয়সে উপনীত হন তখন নবুয়ত (কোরআন নাজিল শুরু হয়) লাভ করেন। অর্থাৎ ৬০৯ খ্রিস্টাব্দে কোরআন শরীফ অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়ে দীর্ঘ ২৩ বছরে (৬৩২ খ্রিস্টাব্দে) তা পরিপূর্ণ হয়। তাহলে বলতে হবে ৬০৯ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অথবা এরও অনেক পরে কোন এক সময় এই পা-ুলিপি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এটা অতি সাধারণ একটি বিষয় হলেও পাশ্চাত্যের গবেষকদের তা বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ হয়তো তাদের ইসলামবিষয়ক জ্ঞান একেবারেই সীমিত। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বেলায়ও এমনটি হতে পারে। তিনি সাংবাদিক হিসেবে বিজ্ঞ হতে পারেন। তাঁর লেখার শত শত পাঠক থাকতে পারে। কিন্তু এজন্য তিনি যে সব বিষয়েই পারদর্শী হবেনÑএমন কথা বলা যাবে না। যে যে বিষয়ে পারদর্শী সে বিষয়েই কাজ করা উচিত। সারাবিশ্বে সাংবাদিকতায় বিট (নির্দিষ্ট বিভাগ) পদ্ধতি আছে। অর্থনীতি বিটের সাংবাদিককে যেমন পলিটিক্যাল বিটে রিপোর্টিংয়ে পাঠানো হয় না, তেমনি রমজান মাসকে স্বাগত জানিয়ে কোন স্পোর্টস রিপোর্টারকে নিউজ লিখতে বলা হবে না। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ‘একাডেমিক’ আলোচনায় কোরআন-হাদিস নিয়ে নাড়াচাড়া না করলেই পারতেন। কারণ এটি তার বিট-এর আওতায় নয়। আবু হোরায়রা ও আবু বকর নামের অর্থ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রাসুল (সাঃ)-এর সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) ও ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর নামের অর্থ ব্যাখ্যা করে এসব নাম কেন রাখা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে বাংলাদেশের মানুষ এসব নামের অর্থ না জেনে, না বুঝেই রাখে। আরবের মানুষ এই নামগুলো ব্যবহার করেন না। তিনি নামের অর্থ অনুবাদ করেছেন এভাবেÑ আবু হোরায়রা অর্থ বিড়ালের বাবা, আবু বকর অর্থ ছাগলের বাবা। এখানে তিনি কী ভুল করেছেন নিচের নামবিষয়ক আলোচনা থেকে পরিষ্কার হবে। প্রতিটি ভাষায় একটি শব্দের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ হয়ে থাকে। তেমনি আরবি ভাষায়ও একটি শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। কোন কোন সময় একটি শব্দের ১০-১২টি অর্থও হয়। ‘আবু’ শব্দটির একটি অর্থ হচ্ছে পিতা। কিন্তু এর একাধিক অর্থ রয়েছে। আবু হোরায়রা নামের ক্ষেত্রে আবু শব্দটি ওয়ালা বা অধিকারী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে বলেই আরবি ভাষাবিদরা অভিমত দিয়েছেন। আর হোরায়রা অর্থ বিড়াল। সুতরাং আবু হোরায়রা নামের অর্থ বিড়ালওয়ালা অথবা বিড়ালের মালিক। আবু হোরায়রা (রাঃ)-এর প্রকৃত নাম ছিলো আবদুল্লাহ বা আবদুর রহমান। তিনি বিড়াল ও বিড়ালের বাচ্চা খুব বেশি পছন্দ করতেন। একদিন তিনি রাসুল (সাঃ)-এর সম্মুখে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ তার আস্তিন বা জামার ভেতর থেকে একটি বিড়ালের বাচ্চা বের হয়। এ দেখে রাসুল (সাঃ) তাঁকে মৃদু হেসে বলে উঠেন, হে আবু হোরায়রা। অর্থাৎ হে বিড়ালওয়ালা বা বিড়ালের মালিক। এখানে রাসুল তাঁকে বিড়ালের বাবা অর্থে সম্বোধন করেন নি। অনুরূপ আবু বকর নামটিরও সুন্দর অর্থ রয়েছে। বকর শব্দটি বুকরা থেকে নির্গত। বুকরা অর্থ প্রত্যুষ। আবু বকর অর্থ যিনি প্রত্যুষে বা সর্বাগ্রে চলেন। যিনি অগ্রগামী। আর আবু শব্দটি যেহেতু ওয়ালা অর্থে ব্যবহৃত হয় তাই আবু বকর অর্থ হচ্ছে যিনি আগে চলেন। শুদ্ধ বাংলায় বললে অর্থ দাঁড়াবে অগ্রপথিক। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে বকর শব্দটি যুবক উট অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ ক্ষেত্রে আবু বকর শব্দযুগলের অর্থ দাঁড়াবে উটওয়ালা বা উটের মালিক। কিন্তু আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কেন আবু বকর নামের অর্থ ছাগলের বাবা বললেন জানি না। সাধারণত বাংলাদেশে ছাগলকে বকরি বলা হয়। তিনি সম্ভবত বাংলাদেশী তরজমাটি গ্রহণ করে বলেছেন, আবু বকর অর্থ ছাগলের বাবা। তিনি আরও বলেছেন, এসব নামে আরবে কোন মানুষের নাম নেই। কিন্তু অনুসন্ধানে এই নামে শত শত মানুষ পাওয়া যাবে। আবু বকর আল রাজি, আবু বকর আল জাযায়েরী, আবু বকর আল জাস্সাস নামক শিক্ষক ও প-িত ব্যক্তিদের নাম রয়েছে আরবে। আবু হোরায়রা ছিলেন রাসুল (সাঃ)-এর একজন বিশ্বস্ত সহচর। তিনি সার্বক্ষণিক রাসুল (সাঃ)-এর সাহচর্যে থাকতেন। চরম ক্ষুধায় ছটফট করলেও মসজিদে নববীতে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)কে একা ফেলে তিনি কখনো ঘরে ফিরে যেতেন না। কারণ আল্লাহর রাসুল কখন কী বলেন, আর তিনি যদি না শুনেন তাহলে তা হয়তো পরবর্তীতে হাদিস হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে না, এই ভয়ে। তাইতো তিনি আজ বোখারী মুসলিমসহ সকল হাদিস গ্রন্থের শিরোমণি। সিংহভাগ হাদিসের শুরুতেই “আন আবি হোরায়রাতা (রাঃ) আনহু...” বলে হাদিস শুরু করতে হয়। অন্যদিকে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা। যে ১০ সাহাবা আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর কাছ থেকে বেহেশতের সার্টিফিকেট পেয়েছেন তাদের মধ্যে আবু বকর হচ্ছেন একজন। সুতরাং নামের শাব্দিক অর্থ বিবেচনা না করে বরং মর্যাদার দিক বিবেচনা করে এই দুই নামে যদি কেউ নিজের সন্তানের নামকরণ করে থাকে, তাহলে মন্দের কিছু দেখি না। নাম দুটো নিয়ে উপহাসের ছলে কথা বলারও কোন কারণ দেখতে পাই না। বরং দুইজন বড় সাহাবী হিসেবে তাঁদের নাম সম্মানের সঙ্গে উচ্চারণ করা উচিত ছিলো। শবেকদর যাতে হাতছাড়া না হয় এজন্য শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতেকাফ করার বিধান রয়েছে। এই শবেকদরের রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। মুফাস্সিরগণ এই আয়াতের তাফসিরে বলেছেন, আরবিতে আনজালা শব্দটি ব্যবহৃত হয় কোন কিছু একসঙ্গে অবতীর্ণ করা অর্থে। আর নাজ্জালা ব্যবহৃত হয় অংশবিশেষ করে (সামান্য সামান্য) নাজিল করা অর্থে। কদরের রাতে লওহে মাহ্ফুজ থেকে একসাথে পূর্ণ কুরআন শরীফ প্রথম আসমানে নাজিল করা হয়েছে বলেই সূরা কদরে আনজালনা শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এবং পরবর্তীতে প্রথম আসমান থেকে এক আয়াত দুই আয়াত করে প্রয়োজন অনুযায়ী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাজিল হয়। এজন্য সূরা আল-ইমরানের ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেনÑ ‘নাহনু নাজ্জালনাল কোরআনা’। অর্থাৎ আমরা কোরআন নাজিল করেছি। এখানে নাজ্জালা শব্দটি সামান্য সামান্য করে নাজিল করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাহলে এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় কোরআন নতুন কোন ঐশীবাণী নয়। এটি আগে থেকেই লওহে মাহ্ফুজে সংরক্ষিত ছিল। আর কেয়ামত পর্যন্ত এটি লওহে মাহ্ফুজেই সংরক্ষিত থাকবে। সংরক্ষণের ব্যাপারে আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কোরআনের ৩০তম পারায় সূরা আল-বুরুজের ২১ ও ২২ নং আয়াতে বলছেন- ‘বাল হুয়া কোরআনুম মাজিদ, ফি লওহিম মাহফুজ’। অর্থাৎ- ‘বরং এটি কোরআন মজিদ, লওহে মাহ্ফুজে সংরক্ষিত রয়েছে।’ সুতরাং এই বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয় কোরআন শরীফ লওহে মাহ্ফুজে অনন্তকাল ধরে সংরক্ষিত ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সুতরাং কোন যুক্তিতেই বিশ্বাস করার সুযোগ নেই যে, কোরআনে এই নামগুলো কাফেরদের দেবতাদের নাম থেকে সংযোজন করা হয়েছে। কোরআন যেমন অনন্তকাল ধরে সংরক্ষিত ছিল, তেমনি আল্লাহ্তায়ালার নামগুলোও কোরআনে সংরক্ষিত ছিল।
তিন. হযরত নুহ (আঃ)-এর মহাপ্লাবনের পর থেকে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)- এর আগমনের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে মক্কা নগরীতে কোন মানুষের বসতি ছিলো না। বোখারী শরীফের ৮৩৩ নং হাদিসে এব্যাপারে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। হাদিসের সারসংক্ষেপ হচ্ছেÑ যখন ইব্রাহিম (আঃ)-এর স্ত্রী সারাহ ও হাজেরার মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, তখন তিনি আল্লাহতায়ালার নির্দেশে হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাইলকে নির্বাসনে পাঠাতে মক্কা নগরীতে নিয়ে গেলেন এবং বর্তমান জমজম কূপের পাশে জনমানবহীন ভূমিতে একা রেখে ফিরে গেলেন। তখন সেখানে কোন পানি ছিলো না। ইব্রাহিম (আঃ) তাঁদেরকে যে সামান্য খেজুর ও পানি দিয়েছিলেন তা কিছু দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। হাজেরা দুগ্ধপোষ্য শিশুকে পানি পান করানোর জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। সাফা ও মারওয়া পর্বত দুটোর উপরে উঠে সমতল ভূমির দিকে লক্ষ্য করে মানুষের খোঁজ করতে থাকেন। এভাবে তিনি সাফা ও মারওয়া পর্বতের একটি থেকে অপরটিতে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করেন (এ জন্য পরবর্তী হজের সময় হাজীদের ৭ বার দৌড়ানো অপরিহার্য হয়ে যায়)। একসময় তিনি একটি শব্দ শুনতে পান এবং একজন ফেরেশতা দেখতে পান। ঐ ফেরেশতা পায়ের গোড়ালি দিয়ে মাটিতে আঘাত করেন। এতে করে কূপের সৃষ্টি হয় এবং মাটি ফেটে পানি বের হতে শুরু থাকে। এটাই হলো আজকের জমজম কূপ। পরবর্তীতে জমজম কূপ এলাকায় পাখির উড়াউড়ি দেখে দূর থেকে একদল লোক অনুমান করে সেখানে সম্ভবত পানি থাকতে পারে। তারা পানির অনুসন্ধানে সেখানে ছুটে আসে এবং পানি পেয়ে যায়। একসময় হাজেরার অনুমতি নিয়ে তাঁরা সেখানে বসবাস শুরু করে। ওরা ছিলো জুরহুম সম্প্রদায়ের লোক। ইসমাইল (আঃ) তাদের কাছ থেকে আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করেন। এভাবেই মক্কা নগরীতে মানুষের বসবাস শুরু হয়। পরবর্তীতে ইব্রাহিম (আঃ) ফিরে আসেন। তিনি ও পুত্র ইসমাইল মিলে কাবাঘর নির্মাণ করেন। তিনি শরীয়তপ্রাপ্ত হন এবং আল্লাহর একাত্ববাদ প্রচার শুরু করেন। তখন মক্কা নগরীর মানুষ এক আল্লাহর উপাসনা করতো। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করতো না। কাবাঘরে কোন মূর্তি কিংবা দেবতা ছিলো না। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর অনেক অনুসারী ধর্মকে বিকৃত করে মূর্তিপূজা শুরু করে। তারা কাবাঘরে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করে প্রত্যেকটির পৃথক পৃথক নামকরণ করে। আরবের বিভিন্ন স্থানে তারা লাত, ওজ্জা ও মানাত নামে তিনটি বড় দেবতা স্থাপন করে। কাফেররা বলতো এগুলো আল্লাহতায়ালার নাম। তাই আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের ২৭ নং পারায় সূরা আল-নজমের ১৯, ২০ ও ২৩ নম্বর আয়াতে এই তিনটি মূর্তির কথা উল্লেখ করে ঘোষণা দেন এসব নামের সঙ্গে তাঁর ন্যূনতম কোন সম্পৃক্ততা নেই। আল্লাহতায়ালা উক্ত তিনটি আয়াতে বলেন “তোমরা কি ভেবে দেখেছো লাত ও ওজ্জা সম্পর্কে এবং তৃতীয় আরেকটি (দেবী) মানাত সম্পর্কে? (মূলত) এগুলো কতিপয় (দেব-দেবীর) নাম ছাড়া কিছুই নয়, যা তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা ঠিক করে নিয়েছো। আল্লাহতায়ালা এর (নামে) সমর্থনে কোন রকম দলিল প্রমাণ নাজিল করেননি। সুতরাং, আল্লাহর গুণবাচক নাম আগে থেকেই ছিলো। কাফেররা মূর্তি তৈরি ও পূজা শুরু করে ইব্রাহিম (আঃ)-এর ইন্তিকালের অনেক পরে। সুতরাং দেবতার নাম থেকে আল্লাহর নামকরণের কোন সুযোগ নেই। কারণ আল্লাহর নাম অনেক আগে, দেবতা তৈরি ও পূজা শুরু হয় অনেক পরে। আর হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত হয়, আরবি ভাষা ছিলো ঐ জুরহুম সম্প্রদায়ের ভাষা। ইসমাইল (আঃ) তাদের কাছ থেকে ভাষা শিখেছিলেন। তাহলে আরবি কাফেরদের ভাষা ছিলো না, কাফেররা পরবর্তীতে এ ভাষায় কথা বলে। আর লাত, ওজ্জা ও মানাত সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে তাফসীরে ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, লাত নামে জাহিলিয়াত যুগে একজন সৎ লোক ছিলেন। তিনি হজ মওসুমে পানির সঙ্গে পাউডার মিশিয়ে হাজীদের পান করাতেন। তাঁর মৃত্যুর পর লোকজন তাঁর কবরের সেবা শুরু করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তার ইবাদত শুরু করে। এভাবেই তখনকার আরবে সৎ মানুষের নামে মূর্তি তৈরি করে লোকজন তাদের এবাদত (মূর্তিপূজা) করতো। চার. ইসলাম আসার আগে কি আরবে আল্লাহর গুণবাচক নামের ব্যবহার ছিলো? এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই দেখা দিতে পারে। হ্যাঁ, ইসলাম আসার আগেও আরবে আল্লাহর অনেক নামের ব্যবহার ছিলো। কারণ মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আগে আরও লক্ষাধিক নবী পৃথিবীতে এসেছেন। কেউ নতুন শরীয়ত পেয়েছেন, কেউ পুরাতন শরীয়ত প্রচার করেছেন। কারো উপরে বড় ধর্মগ্রন্থ, আবার কারো উপর ছোট ধর্মগ্রন্থ (সহিফা) নাজিল হয়েছে। এসব ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছে এবং আরবে এর প্রচলন ছিলো। এতো সাধারণ একটি বিষয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মতো একজন বিজ্ঞ সাংবাদিকের কাছে কেন পরিষ্কার নয়, এটা আমার বোধগম্য নয়। তবে ধর্ম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে এই সাধারণ ভুলগুলো যে কারো ক্ষেত্রেই হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অতিসম্প্রতি যেমনটি করেছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রেডিওকার্বন বিভাগের একদল গবেষক। বার্মিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবিষ্কৃত পবিত্র কোরআনের প্রাচীনতম পা-ুলিপিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁরা ৯৫ ভাগ নিশ্চয়তার সঙ্গে বলেছেন, এটি ৫৬৮ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কোন সময়ে লেখা। কিন্তু আমার মতে পা-ুলিপিটি যতই প্রাচীন হোক এটি ৬০৯ খ্রিস্টাব্দের আগে লিপিবদ্ধ করার কোন সুযোগই নেই। কারণ রাসুল (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে। আর ৬০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি যখন ৪০ বছর বয়সে উপনীত হন তখন নবুয়ত (কোরআন নাজিল শুরু হয়) লাভ করেন। অর্থাৎ ৬০৯ খ্রিস্টাব্দে কোরআন শরীফ অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়ে দীর্ঘ ২৩ বছরে (৬৩২ খ্রিস্টাব্দে) তা পরিপূর্ণ হয়। তাহলে বলতে হবে ৬০৯ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অথবা এরও অনেক পরে কোন এক সময় এই পা-ুলিপি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এটা অতি সাধারণ একটি বিষয় হলেও পাশ্চাত্যের গবেষকদের তা বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ হয়তো তাদের ইসলামবিষয়ক জ্ঞান একেবারেই সীমিত। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বেলায়ও এমনটি হতে পারে। তিনি সাংবাদিক হিসেবে বিজ্ঞ হতে পারেন। তাঁর লেখার শত শত পাঠক থাকতে পারে। কিন্তু এজন্য তিনি যে সব বিষয়েই পারদর্শী হবেনÑএমন কথা বলা যাবে না। যে যে বিষয়ে পারদর্শী সে বিষয়েই কাজ করা উচিত। সারাবিশ্বে সাংবাদিকতায় বিট (নির্দিষ্ট বিভাগ) পদ্ধতি আছে। অর্থনীতি বিটের সাংবাদিককে যেমন পলিটিক্যাল বিটে রিপোর্টিংয়ে পাঠানো হয় না, তেমনি রমজান মাসকে স্বাগত জানিয়ে কোন স্পোর্টস রিপোর্টারকে নিউজ লিখতে বলা হবে না। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ‘একাডেমিক’ আলোচনায় কোরআন-হাদিস নিয়ে নাড়াচাড়া না করলেই পারতেন। কারণ এটি তার বিট-এর আওতায় নয়। আবু হোরায়রা ও আবু বকর নামের অর্থ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রাসুল (সাঃ)-এর সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) ও ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর নামের অর্থ ব্যাখ্যা করে এসব নাম কেন রাখা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে বাংলাদেশের মানুষ এসব নামের অর্থ না জেনে, না বুঝেই রাখে। আরবের মানুষ এই নামগুলো ব্যবহার করেন না। তিনি নামের অর্থ অনুবাদ করেছেন এভাবেÑ আবু হোরায়রা অর্থ বিড়ালের বাবা, আবু বকর অর্থ ছাগলের বাবা। এখানে তিনি কী ভুল করেছেন নিচের নামবিষয়ক আলোচনা থেকে পরিষ্কার হবে। প্রতিটি ভাষায় একটি শব্দের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ হয়ে থাকে। তেমনি আরবি ভাষায়ও একটি শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। কোন কোন সময় একটি শব্দের ১০-১২টি অর্থও হয়। ‘আবু’ শব্দটির একটি অর্থ হচ্ছে পিতা। কিন্তু এর একাধিক অর্থ রয়েছে। আবু হোরায়রা নামের ক্ষেত্রে আবু শব্দটি ওয়ালা বা অধিকারী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে বলেই আরবি ভাষাবিদরা অভিমত দিয়েছেন। আর হোরায়রা অর্থ বিড়াল। সুতরাং আবু হোরায়রা নামের অর্থ বিড়ালওয়ালা অথবা বিড়ালের মালিক। আবু হোরায়রা (রাঃ)-এর প্রকৃত নাম ছিলো আবদুল্লাহ বা আবদুর রহমান। তিনি বিড়াল ও বিড়ালের বাচ্চা খুব বেশি পছন্দ করতেন। একদিন তিনি রাসুল (সাঃ)-এর সম্মুখে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ তার আস্তিন বা জামার ভেতর থেকে একটি বিড়ালের বাচ্চা বের হয়। এ দেখে রাসুল (সাঃ) তাঁকে মৃদু হেসে বলে উঠেন, হে আবু হোরায়রা। অর্থাৎ হে বিড়ালওয়ালা বা বিড়ালের মালিক। এখানে রাসুল তাঁকে বিড়ালের বাবা অর্থে সম্বোধন করেন নি। অনুরূপ আবু বকর নামটিরও সুন্দর অর্থ রয়েছে। বকর শব্দটি বুকরা থেকে নির্গত। বুকরা অর্থ প্রত্যুষ। আবু বকর অর্থ যিনি প্রত্যুষে বা সর্বাগ্রে চলেন। যিনি অগ্রগামী। আর আবু শব্দটি যেহেতু ওয়ালা অর্থে ব্যবহৃত হয় তাই আবু বকর অর্থ হচ্ছে যিনি আগে চলেন। শুদ্ধ বাংলায় বললে অর্থ দাঁড়াবে অগ্রপথিক। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে বকর শব্দটি যুবক উট অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ ক্ষেত্রে আবু বকর শব্দযুগলের অর্থ দাঁড়াবে উটওয়ালা বা উটের মালিক। কিন্তু আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কেন আবু বকর নামের অর্থ ছাগলের বাবা বললেন জানি না। সাধারণত বাংলাদেশে ছাগলকে বকরি বলা হয়। তিনি সম্ভবত বাংলাদেশী তরজমাটি গ্রহণ করে বলেছেন, আবু বকর অর্থ ছাগলের বাবা। তিনি আরও বলেছেন, এসব নামে আরবে কোন মানুষের নাম নেই। কিন্তু অনুসন্ধানে এই নামে শত শত মানুষ পাওয়া যাবে। আবু বকর আল রাজি, আবু বকর আল জাযায়েরী, আবু বকর আল জাস্সাস নামক শিক্ষক ও প-িত ব্যক্তিদের নাম রয়েছে আরবে। আবু হোরায়রা ছিলেন রাসুল (সাঃ)-এর একজন বিশ্বস্ত সহচর। তিনি সার্বক্ষণিক রাসুল (সাঃ)-এর সাহচর্যে থাকতেন। চরম ক্ষুধায় ছটফট করলেও মসজিদে নববীতে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)কে একা ফেলে তিনি কখনো ঘরে ফিরে যেতেন না। কারণ আল্লাহর রাসুল কখন কী বলেন, আর তিনি যদি না শুনেন তাহলে তা হয়তো পরবর্তীতে হাদিস হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে না, এই ভয়ে। তাইতো তিনি আজ বোখারী মুসলিমসহ সকল হাদিস গ্রন্থের শিরোমণি। সিংহভাগ হাদিসের শুরুতেই “আন আবি হোরায়রাতা (রাঃ) আনহু...” বলে হাদিস শুরু করতে হয়। অন্যদিকে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা। যে ১০ সাহাবা আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর কাছ থেকে বেহেশতের সার্টিফিকেট পেয়েছেন তাদের মধ্যে আবু বকর হচ্ছেন একজন। সুতরাং নামের শাব্দিক অর্থ বিবেচনা না করে বরং মর্যাদার দিক বিবেচনা করে এই দুই নামে যদি কেউ নিজের সন্তানের নামকরণ করে থাকে, তাহলে মন্দের কিছু দেখি না। নাম দুটো নিয়ে উপহাসের ছলে কথা বলারও কোন কারণ দেখতে পাই না। বরং দুইজন বড় সাহাবী হিসেবে তাঁদের নাম সম্মানের সঙ্গে উচ্চারণ করা উচিত ছিলো।
২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:০৩
আকতারুর্জ্জামান00 বলেছেন: জানার চেষ্টা করুন তাহলে শিখতে পারেবন
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:১৭
মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: ব্যাখ্যা তো দিলেন, কিন্তু গবেষকরা গবেষণা করে যা পাবেন তাই তো জানাবেন...রেডিও কার্বনের রেজাল্ট তো ধর্মের রেফারেন্স দিয়ে হবে না, কী বলেন?