![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ। একটি দেশ, একটি স্বাধীন বাংলাদেশের নাম। যে স্বাধীনতার মুল্য দিতে গিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষ ৩০ লক্ষ জীবন আরো অনেক মা-বোনের সম্মান বিলিয়ে দিয়েছিলেন। লক্ষ্য ছিলো একটাই শুধু মুক্তি, যে বৈষম্য পাকিস্থান আমাদের সাথে করেছিল তাঁর থেকে মুক্তি। স্বপ্ন ছিল শান্তিতে সবাই সবার অধিকার নিয়ে বাঁচার। কিন্তু তা কি পুরন হয়েছে, আমরা কি স্বাদ পেয়েছি সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার?
আমরা মনে হয় নিজেদের দায়িত্ব ভুলে গেছি। সবার মাঝে নিজের কাজ ফেলে অন্যের কাজে বেশি মনোযোগ। আর সেক্ষেত্রে যত বিড়ম্বনা শুরু হয়। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, সাংবাদিক, প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষক এমনকি একজন সুইপারের ও দায়িত্ব এখানে নির্ধারিত। তারপরও কেমন যেন একটা খিচুরির মত পরিবেশ সব জায়গায়। আর এর জন্য দায়ী কয়েকটা বিষয়- নিজের দায়িত্ব পালন না করা, দায়িত্বের বাইরে খবরদারী করা, মানুষকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া।
সাংবাদিকদের জাতির বিবেক ভাবা হতো একসময়। কিন্তু এই বিবেক আজ দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে জড়িত। তারা জাতির সামনে অনেকসময় আংশিক সত্য খবর প্রকাশ করে আবার কখনো অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করে যা জাতিকে বিভ্রান্ত করে। আবার এই সাংবাদিক সমাজ তাদের দায়িত্ব পালনে অনেকসময় বাধার মুখে পড়েন। অনেক সাংবাদিককে শুধু সংবাদ প্রকাশের কারণে মার খেতে হয়েছে, পঙ্গু হতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে। সবথেকে মর্মান্তিক বিষয় হলো অনেকে রাষ্ট্রের আক্রোশের শিকার হয়ে কারাগারের অন্ধকারে বন্দি আছেন বহুদিন ধরে। অনেকে আবার অল্পদিন পরে মুক্তি পেয়েছেন। সর্বশেষ এই তালিকায় যোগ হয়েছেন প্রবীর শিকদার(বিশেষ বিবেচনায় মুক্তিপ্রাপ্ত) ও শওকত মাহমুদ। আর মাহমুদুর রহমান এর কথা না বললেও সবার জানা। সাংবাদিকতার মত মহান পেশা আজ রাষ্ট্রীয় আক্রোশ আর দলীয় লেজুড়বৃত্তির দ্বারা চরমভাবে কলঙ্কিত ও হুমকির সম্মুখীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবা হত জাতির সবথেকে মেধাবী। কারন প্রথমত মেধাবীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়, এরপর সেখানে যারা মেধার সাক্ষর রাখতে পারে তারাই বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান করে পরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে। সেখানে তারা গবেষণা করবে, ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করে যাবে, জাতির বিভিন্ন সংকটে তাদের মেধা দিয়ে জাতিকে উদ্ধার করবে। রাজনীতিবিদেরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে তাদের থেকে পরামর্শ নিবে। বিশ্ববিদ্যালয়, এর শিক্ষক, এর ছাত্রছাত্রী সবসময় থাকবে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বাইরে। ছাত্র-শিক্ষক এর মাঝে সম্পর্ক হবে একটা পবিত্র সম্পর্ক। কিন্তু আজ ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক অনেক বেশি খারাপ। যা অনেক সময় দলীয় রাজনীতি দিয়ে বিচার করে থাকে ছাত্র ও শিক্ষক উভয়েই। অনেক ছাত্র তাঁর শিক্ষককে অপমান করে থাকে আবার অনেকে হুমকিও দিয়ে থাকে। শুধু তাই নয় অনেক ছাত্রী আবার তাঁর পিতৃতুল্য শিক্ষকের কাছ থেকে অনেকসময় অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে থাকে। ছাত্রী-শিক্ষক এর পবিত্র সম্পর্ক কলঙ্কিত হয়েছে বহুবার আমাদের মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দ্বারাই। আবার পদোন্নতিসহ একাধিক বিষয় নিয়ে দন্দের কারণে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের দ্বারা লাঞ্চিত হয়েছেন এমনকি খুনের শিকারও হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ একাধিকবার বিঘ্নিত হয়েছে সমাজের মেধাবী এই শিক্ষকদের ব্যক্তিগত স্বার্থের কারনে। সামগ্রিকভাবে দেখলে এটা অনেকটা পরিষ্কার যে, আজ জাতীয় রাজনীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির দ্বারা। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে , ২০১৩ সালের যে সরকারবিরোধী আন্দোলন হয়েছিলো তাতে যদি ছাত্রদল ক্যাম্পাসে একটা অবস্থান তৈরি করতে পারলে ফলাফল অন্য রকম হত। হাসিনা সরকারের আজকের যে অবস্থান তাঁর পিছনে বড় ভুমিকা রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক ও ছাত্রলীগ।
বিচারক ও পুলিশ। একজন আইনের আলোকে অপরাধিকে সাজা দিবে অপরজন আইন প্রয়োগ করবে। কিন্তু পুলিশকে এখন দেখা যায় নিজে নিজেই আইন কার্যকর করতে। তারা অনেকবার বিতর্কিত করেছে তাদের ভুমিকাকে। তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে ক্রসফায়ারে অপরাধীদের হত্যা করে অনেকবারই তারা আইনের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন। ইদানিংকালে সরকারদলীয় কিছু মানুষ হত্যার ফলে খোদ সরকারের ভিতর থেকেই এই ঘটনার বিষয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। যদিও বিরোধী নেতাকর্মীরা ক্রসফায়ারে মারা যাবার ঘটনায় সরকারের যেসব এমপি-মন্ত্রীরা বিভিন্নরকম ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তারাই এখন বিরোধিতা করে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। খালি হাতে গ্রেফতার করে মাদকের মামলা দেয়া, নিরপরাধ মানুষ ধরে মামলা দেয়া, চাঁদা না দেয়ায় মামলা দেয়া এরকম হাজারো বিতর্কিত কাজ করে পুলিশ কলঙ্কিত করেছে তাদের পবিত্র ইউনিফর্ম ও ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে করা তাদের শপথকে। এমনকি টাকার বিনিময়ে ঢাকায় অনেকজন ব্যবসায়ীকে হত্যার অভিযোগ আছে খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে। ঝালকাঠির লিমনের ঘটনা তাদের বিতর্কিত কর্মের একটা জ্বলন্ত উদাহরণ। এছাড়া ঘুষের বিনিময়ে মিথ্যা অভিযোগপত্র দেয়ার অভিযোগ বহুপুরনো। এমনি হাজারো অপকর্মে কলঙ্কিত রাষ্ট্রের এই বাহিনী।
দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে যাদের অবদান সবথেকে বেশি সেই প্রকৌশলীরাও আজ দায়িত্ব থেকে বেশ দূরে। তাদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ বহু পুরনো। তবে অনেক সময় ঠিকাদারদের চাপে ঘুষ নিতে বা খারাপ মানের কাজ করতে তারা বাধ্য হন। ঠিকাদারদের কথামত কাজ না করায় অনেক প্রকৌশলীকে জীবন দিতে হয়েছে অতীতে। অনেকে আবার শাস্তিমূলক বদলীর শিকার হয়েছেন। অতিসম্প্রতি সরকারদলীয় এমপি কর্তৃক কক্সবাজারে একজন প্রকৌশলী লাঞ্চিত হবার ঘটনা ঘটেছে।
মানুষ মনে করে স্রষ্টার পর কেউ যদি মানুষকে বাঁচাতে পারে তবে সে হলো ডাক্তার। এত বিশ্বাসের পাত্র ডাক্তাররাও আজ বহুলাংশে বিতর্কিত। ব্যক্তিগত চেম্বারপ্রীতি, অতিরিক্ত টেস্ট ধরিয়ে দেয়া, তুলনামূলক কম মানের ওষুধ লেখা, কম সময় নিয়ে রোগী দেখা, নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো এমন অভিযোগে অনেক আগে থেকেই এরা অভিযুক্ত। ইদানিংকালে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে খুব বেশি শোনা যায়। যদিও তারা নিজেদের মত ব্যাখ্যা করে থাকেন।
সমাজের প্রতি স্তরে আজ দায়িত্বে অবহেলা বা নির্ধারিত কাজ না করার প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায়। অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ বা খবরদারীর প্রবণতা খুব বেশি। মানুষের মাঝ থেকে উঠে গেছে পরমতসহিষ্ণুতা। মানুষ খুব বেশি অস্থির প্রকৃতির হয়ে গেছে। সামান্য সহ্য ক্ষমতাটুকুও হ্রাস পাচ্ছে। হিংস্রতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। নৈতিক অধঃপতন, ক্ষমতার অপব্যবহার সব মিলিয়ে এমন এক বাংলাদেশে আমরা এখন বসবাস করছি, তার সাথে আমাদের সেই বাংলাদেশ যার স্বপ্ন দেখা হয়েছিলো ১৯৭১ সালে কোন মিল নেই। বরং সম্পূর্ণ উলটা একটা অবস্থায় রয়েছে দেশ। সেই কাংখিত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ চাইলে দেশের মানুষকে সব খারাপ সংস্কৃতি বর্জন করে একটি সুখি, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে হবে সেই সাথে নিজেদেরকে সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক নাগরিক হবার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আগাতে হবে।
©somewhere in net ltd.