নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভবঘুরে মানুষ । ভবের ঘরে প্রবেশের নেশায় ঘুরে ফিরি দিবানিশি।

আলী নওয়াজ খান

ভবঘুরে মানুষ আমি । ভবের ঘরে প্রবেশের নেশায় ছুটে মরি দিবানিশি। তবুও পাইনা খুজে তারে।

আলী নওয়াজ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র কোরআনের আলোকে ভিন্ন মতাদর্শীদের প্রতি গালিগালাজ বা অভিশাপ

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৬



গালিগালাজ ও অভিশাপ বর্ষন এমন একটি বিষয় যা ইসলামী ইতিহাসের শুরু থেকে আলোচিত হয়ে আসছে । আর এবিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব , পারস্পারিক অপবাদ মারামারি কাটাকাটিসহ বহু রক্ত বির্ষজন দিতে হয়েছে । এমন কি অনেককে লানত না করার অভিযোগে তলব করা হয়েছে।
লানত ও গালিগালাজ বিষয়টি মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন দল ও উপদলের মধ্যে বিরোধ, মারামারি কাটাকাটি সংঘাত সৃষ্টিতে যুগে যুগে রসদ দিয়েছে । মুসলিম উম্মাহর অনেক ঐক্য প্রচেষ্টাও এজাতিয় চিন্তার কারণে ভুলন্ঠিত ও ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহ রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষে লিপ্ত হয়ে নিজেদের শক্তিকে খর্ব করে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
ইতিহাসে অনেক স্বৈরাচারী শাসক এজাতিয় চরমপন্থার চিন্তাধারাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিপক্ষকে কঠরভাবে দমনের হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তিগুলোও এজাতিয় তুচ্ছ বিষয়কে পুজি করে বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে নিজেদের অশুভ লক্ষ্য সাধনে সক্ষম হয়েছে। শুধু অতীত নয় বর্তমানেও মুসলিম উম্মাহর শত্রুরা এই বিরোধপূর্ণ আচারণ গালীগালাজ ও লানত বিষয় কাজে লাগিয়ে মুসলিম উম্মাহর বিরোধমুলক বিষয়গুলোকে দগদগে করে তুলে পরস্পরকে সংর্ঘষের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তাই এবিষয়টি নিয়ে আরো চিন্তা করা উচিত । আমরা এখানে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিষয়টিকে পর্যালোচনা করার চেষ্টা করবো। আশা করি এই সামান্য প্রচেষ্টা সকলের উপকারে আসবে এবং অশুভ উদ্দেশ্য প্রণীত কাজ থেকে আমাদের বিরত রাখতে সক্ষম হবে।

গালিগালাজ [(السبّ)] ও লা'ন [لعن]
প্রাথমিক ভাবে শব্দ দুটিকে সর্মাথক শব্দ মনে হলেও পবিত্র কুরআন ও হাদিস নিয়ে গবেষণা করলে বোঝা যাবে শব্দদুটি একই অর্থ প্রকাশ করে না।
প্রথম প্রশ্ন গালিগালাজ ও লানত কি সমার্থক শব্দ ?
পবিত্র কুরআন কি অভিশাপ ও গালিগালাজ করতে অনুমতি দিয়েছে ? মহানবী (স.) কি অভিশাপ ও গালিগালাজ করতে নিষেধ করেছেন ? ইসলাম কোনসব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে লানত করতে বলেছে আর কোনসব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে লানত করতে নিষেধ করেছে ?



গালিগালাজ ও লানত
আরবী শব্দবিধ জনাব ইবনে মানজুরসহ জনাব তারেহী ও ইবনে আসির বলেছেন :
গালিগালাজ বা (السبّ) হল মন্দ কথা বলা।
"السبّ: الشتم.

আরবী ভাষাবিদ জনাব রাগেব বলেন :

"السبّ: الشتم الوجیع.
গালিগালাজ বা (السبّ) হল ক্রোধসসৃষ্টি করে এমন মন্দ কথা বলা।
তাজুল উরুজ বলেন :
"السبّ: الشتم.
গালিগালাজ বা (السبّ) হল মন্দ কথা বলা
"سبّه و قیل کلام القبیح.
ইবনে মানজুর বলেন : গালিগালাজ বা (السبّ) হল অশোভনীয় মন্দ কথা বলা।
"قبیح الکلام و لیس فیه قذف.
অতএব গালিগালাজ বা (السبّ) হল : নোংড়া, অশোভনীয়, তিরোস্কার, অপমানসূচক বাক্য ।

লা’ন [لعن] বা অভিশাপ শব্দ
লানত শব্দের অর্থ হল রহমত থেকে বঞ্চিত এবং প্রভুর আক্রোশে পতিত হওয়া ।
মাকানিসুল লুগাহ্ নামক শব্দকোষে বলা হয়েছে: লা’ন শব্দের অর্থ হল কাউকে কোন কিছু থেকে বঞ্চিত করা । মহান প্রতিপালক শয়তানকে লা’ন করেছেন অর্থাৎ বেহেশত ও এশী কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করেছেন। [معجم مقائیس اللغه، ج5 / 252. ]

আরবী ভাষাবিদ জনাব জওহারী বলেন : লা’ন হল কল্যাণ থেকে দূরে রাখা বা বঞ্চিত করা। আর লানআত হল লা’ন শব্দের নামবাচকশব্দ, লাআনাত বা লা’আন হল বহুবচন, অভিশপ্ত ব্যক্তিকে লা’ইন বা মালউন বলা হয়ে থাকে।
আরবী ভাষাবিদ জনাব রাগেব , মুফরাদত গৃন্থে বলেন :
লা’ন : রাগান্নিত হয়ে কাউকে বঞ্চিত বা বিতাড়িত করা, আল্লাহর পক্ষ থেকে হলে পরকালে শাস্তি রয়েছে আর দুনিয়াতে রহমত ও তৌফিক থেকে বঞ্চিত হবে। আর মানুষের মাধ্যমে লা’ন হলে অন্যের প্রতি অভিশাপের দোয়া করা। [مفردات، ص 742. ]
অতএব লানত শব্দটি মুলত আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে আর যখন কোন বান্দা কারো প্রতি লানত করেন তার অর্থ সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্রোধে পতিত হোক।

পবিত্র কোরআনে লানত শব্দের ব্যবহার

পবিত্র কোরআনে মোট ৩৭ আয়াতে ৪১ বার লা’ন শব্দটির বিভিন্ন রূপ ব্যবহৃত হয়েছে। এসমস্ত আয়াতে বিভিন্ন শ্রেণী লানত বা অভিশাপ প্রাপ্ত হয়েছেন।
(১) কাফেরগন : ৫টি আয়াতে
(২) মুশরিকগণ :
(৩) মুনাফিকগণ : তিনটি আয়াতে [দুটি ক্ষেত্রে কাফের ও মুশরিকদের সাথে]
(৪) অত্যাচারীগণ : চারটি স্থানে
(৫) মিথ্যুকরা : দুটি স্থানে
(৬) শয়তান : দুটি স্থানে
(৭) খুনী :
(৮) কিতাব অস্বীকারকারীগণ :
(৯) যারা মহান আল্লাহ ও মহানবীকে কষ্ট দিয়েছে;
(১০) যাদের অন্তর রোগগ্রস্থ :
(১১) সতীদেরকে অপবাদদানকারী:
(১২) আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী :
(১৩) যারা আল্লাহর প্রতি খাবাপ ধারণা পোষন করে:
(১৪) রক্তের সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী : দুই বার
(১৫) ভূ-পৃষ্ঠে ফেসাদ সৃষ্টিকারীগন:
(১৬) হযরত আদ (আ.)এর গোত্র :
(১৭) ফেরউন ও তার গোত্র :
(১৮) ইব্রাহীমের গোত্র :
(১৯) অন্যান্য গোত্রসমুহ : তিনবার
(২০) ইয়াহুদ জাতি আটটি কারণে অভিশাপ প্রাপ্ত হয়েছেন যথাক্রমে :
(ক) শরীয়তি প্রতারণা
(খ) সৎ কাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ থেকে বিরত থাকার কারণে :
(গ) সত্যকে গোপন রাখা
(ঘ) এই চিন্তার কারণে যে আল্লাহ হাত বাধা রয়েছে:
(ঙ) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ :
(চ) এই চিন্তার কারণে যে আমাদের অন্তর বন্ধ হয়েগেছে:
(ছ) ঐশী গ্রন্থ বিকৃতি :
(জ) অপশক্তি ও জাবত-এর প্রতি বিশ্বাস
(২১) অভিশপ্ত বৃক্ষ

যারা লা’নত করেছেন
(১) আল্লাহ :
(২) লানতকারীগণ :
(৩) জাহান্নামবাসী একে অপরকে লানত করেছে:
(৪) নবীগণ [ হযরত দাউদ ও ইসা (আ.)]
(৫) ফেরেশতাগণ:
(৬) মানুষ সকল :

মহানবী (স.) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েত সমূহে লা'ন শব্দ
আহলে সুন্নতের হাদিস গ্রন্থসমুহের মধ্যে আমরা যদি কানজুল উম্মাল হাদিস গ্রন্থে একবার সার্চ করি তাহলে দেখতে পাব।
৫৯ বার লা'ন শব্দ আর ৬০ বার মালউন শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
আর অধিকাংশ লা'নের বিষয়বস্তু হল ; যারা সুদ ও ঘুষ গ্রহণ করেন, মদ পান করেন
যেসকল স্ত্রী তাদের স্বামীদেরকে তাদের সাথে সঙ্গমে বাধা দেন। যারা অত্যাচারে বিরুদ্ধে মজলুমের পাশে অবস্থান নেন না ইত্যাদি ।

পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে গালিগালাজ:
পবিত্র কোরআনে মাত্র একবার গালাগালির কথা এসেছে আর সেটাও মুসলমানদেরকে গালাগালি করতে নিষেধ করার নির্দেশ স্বরূপ এসেছে। অতএব পবিত্র কোরআনে বর্ণিত গালাগালি [السبّ] ও অভিশাপ [لعن] শব্দদয় বিশ্লেষণ করলে উভয় শব্দের মধ্যে যে বিশাল একটি ব্যবধান রয়েছে প্রতীয়মান হয়ে ওঠে । আর এজন্যে পবিত্র কোরআনে মহান প্রতিপালক বিভিন্ন অবস্থায় লানাত করলেও কোথাও কিন্তু গালাগালি করেননি বরং অন্যদের কে গালাগালি করতে নিষেধ করেছেন।
[وَلاَ تَسُبُّوا الَّذِینَ یدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ فَیسُبّوا اللّهَ عَدْوًا بِغَیرِ عِلْمٍ کذَلِک زَی نَّا لِکلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ ثُمَّ إِلَی رَبِّهِم مَرْجِعُهُمْ فَینَبِّئُهُم بِمَا کانُوا یعْمَلُونَ."] সুরা আনয়াম ১০৮ নম্বর আয়াত
ঠিক একই ভাবে মহানবী (স.) বিভিন্ন ক্ষেত্রে লানাত করলেও কিন্তু তিনি কখনো কাউকে গালাগালি বরেন নি বরং রেওয়ায়েত সমগ্রে গালাগালি দিতে তিনি নিষেধ করেছেন। লা'ন করা বৈধ থাকলেও একথার অর্থ এটা নয় যে যখন তখন যাকে তাকে লা'ন করা যাবে। ইসলামে অধিকাংশ লা'ন ব্যক্তির উপর হয়নি বরং ব্যক্তি নেতিবাচক বৈশিষ্টের উপর লা'ন করা হয়েছে ।
আর এজন্্যই মহানবী (স.) বলেন :
إنی لمْ أبْعَثْ لعَّاناً و إنّما بُعِثتُ رَحمة."
আমি মানুষকে লা'ন করার জন্য নবুয়াত লাভ করিনি বরং আমি রহমতের জন্যই নবুয়াত প্রাপ্ত হয়েছি । [کنز العمال، ج3 / 615، ح 8176.]
উপরোক্ত হাদীসের পরবর্তী অংশ হল
لا یکونُ المُؤْمِنُ لعّاناً
যারা মুমিন তারা অধিক অভিসম্পাতদানকারী নন। [کنز العمال، ج3 / 615، ح 8176.]

অতএব ইসলাম কোন ভাবেই কাউকে গালিগালাজ ও তিরোস্কার করার অনুমতি দেননি । আর লানত কথার অর্থ হল মহান প্রতিপালকের কাছে আবেদন করা যেন তিনি ঐব্যক্তিকে বরকত ও রহমত থেকে বঞ্চিত করেন।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫

যোখার সারনায়েভ বলেছেন: জানলাম।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১৯

আলী নওয়াজ খান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর বিষয় নিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন ভাই সাহেব।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৫২

আলী নওয়াজ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.