নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মোদি ভক্ত ! এটা জেনে আপনি দুঃখ পেলে আমি আনন্দিত হব।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোলকাতার নাটক বনাম বাংলাদেশী নাটক!

১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:০৫


বাংলাদেশের নাটক দেখে দেখে বেশ অনেকগুলো নতুন প্রয়োগ শেখা হয়েছে।

যেগুলো মনে আসছে, সেগুলো বলি। আমরা যেমন কাউকে ফোন করি, বাংলাদেশে ফোন দেয়। কেন দেয়? কলকাতায় যেমন হিন্দিভাষীদের দৌরাত্ম্যে ‘কিঁউ-কি’ বাংলায় কারণ ছেড়ে ‘কেন-কি’ হয়ে গেছে, ওখানে হয়ত ‘গিভ হিম এ কল’ হয়ে গেছে ‘ওরে ফোন দাও’।

ওখানে পানি খায়। এমনিতে সমার্থক পানি আর জল নিয়ে অসুবিধার কিছু নেই, কিন্তু যে জিনিসটা পান করা হয় বলেই তার নাম পানি, সেটাকে খায় শুনলে একটু কেমন কেমন লাগে না? ছোটবেলায় রেডিও বাংলাদেশ ঢাকা থেকে ক্রিকেটের ধারাবিবরণীতে ‘পানি পানের বিরতি’ শুনতাম, সেটা এখন ‘পানি খাওয়ার ব্রেক’ হয়ে গেছে কিনা জানি না।

আমরা যেমন বলি, ‘ওর কথা শুনে আমার তো মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়,’ ওখানে বলে – ‘পুরাই মাথা নষ্ট!’ ‘নষ্ট’ বিশেষণটা অন্য অনেককিছুর সঙ্গে চালিয়ে দিলেও মাথার আগে আমরা ব্যবহার করেছি কি?

যে কোনো খাবার স্বাদু হলে আমরা বলি – দারুণ খেতে, ভীষণ ভালো খেতে, খুব সুস্বাদু। ওখানে বলে – অনেক মজা বা জোস হইসে।

সম্পর্কের ডাকাডাকি আলাদা, সে তো সবাই জানে। বাবা-মা-ঠাকুরদা-ঠাকুরমা-দাদু-দিদা-কাকা-কাকী-মামা-মামী-মাসি-মেসো-পিসি-পিসে-দাদা-বৌদি-দিদি-জামাইবাবু যথাক্রমে আব্বা-আম্মা-দাদা-দাদী-নানা-নানী-চাচা-চাচী-মামা-মামী-খালা-খালু-ফুফা-ফুফি-ভাইয়া-ভাবী-আপা-দুলাভাই। কিন্তু আমরা এখানে বাড়ির ‘ডমেস্টিক হেল্প’কে আগে যেমন ‘কাজের মাসি’ বলতাম, এখন সম্ভবত ‘কাজের দিদি’ বলি, ওখানে ডাকে ‘বুয়া’। ছেলেও ডাকে বুয়া, বাবাও ডাকে বুয়া। হিন্দিভাষীরা পিসিকে বুয়া ডাকে। কিন্তু ওখানে পিসি হচ্ছে ফুফা বা ফুপু।

আমাদের ইউনিভার্সিটি ওদের শুধু ভার্সিটি।

আমাদের তরকারি ওখানে ভর্তা বা ভাজি। সিদ্ধ-ভাজা-ঝাল-ঝোল-অম্বল-শুক্তো-ছ্যাঁচড়া-কষা-কালিয়া-দোলমা-চচ্চড়ি-ভাপা-পাতুরি-চাটনি সমৃদ্ধ আমাদের যে বিচিত্র রন্ধনপ্রণালী নিয়ে বাঙালরা গর্ব করে, রান্নার এই বৈচিত্র্য ওদের নাটকে আমি খুঁজে পাইনি। খাওয়ার কোনো দৃশ্য থাকলে শুধুই দেখি/শুনি হয় ভর্তা নয় ভাজি!

কলকাতার টিভি সিরিয়াল দেখলে যেমন বোঝা যায় খাজা অশিক্ষিত দর্শকদের জন্যেই ওগুলো তৈরি, যার মাথামুন্ডু কিস্যু নেই, বাংলাদেশের নাটক তার তুলনায় হাজারগুণ ভালো। প্রতি নাটকেই আউটডোর শ্যুটিং থাকে। সেগুলোর প্রাকৃতিক দৃশ্য বেশ মনোরম, যদিও ঢাকা শহরের রাস্তার দৃশ্যে রিকশার প্রাবল্য অতি বেশি। নায়িকা ঝটপট রিকশায় উঠে পড়ে ‘ভার্সিটি’ যেতে। নায়ক বা ভিলেন এসে তার রাস্তা আটকালে রিকশাচালক চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখে। প্রেম বা ছিনতাই হ্যান্ডেল করার দায়িত্ব নায়িকার একার।

রাস্তার পাশের দোকানদার বা রিকশাওলাদের ওদেশে সম্বোধন করা হয় মামা বলে, এদিকে বাংলার বাইরে, বিশেষ করে মুম্বইতে যে সম্বোধন বরাদ্দ ট্রাফিক পুলিশের জন্যে। অবশ্যই তাচ্ছিল্যে।

আমাদের ধরা পড়া ওদের ধরা খাওয়া। আমাদের কান্নাকাটি করা ওদের শুধু কান্না করা। সাক্ষাতের পর সৌজন্যে আমাদের ‘কেমন আছেন?’ ওদের ‘কী অবস্থা?’ আর আমাদের ‘কী খবর?’ ওদের ‘কী সমস্যা?’

আমাদের ‘খুব ভালো’ ওদের ‘অনেক ভালো’। আমরা কন্যা বা ভগিনীর স্বামীকে জামাই বলি, ওরা নিজের স্বামীকেই জামাই বলে। আমাদের বাচ্চা ওদের পিচ্চি। আমরা বাচ্চাদের সোনা, মানিক এইসব বলি, ওরা বলে ‘কলিজার টুকরা’। আমরা শুধু বড়দের কাছে ‘আশীর্বাদ’ প্রার্থনা করি, ওরা সকলের কাছে ‘দোয়া’ চায়। পকেটে পয়সা না থাকলে আমরা ভিখারি/ভিকিরি, ওরা ফকির।

আমাদের ফালতু বকবকানি ওদের আজাইরা প্যাচাল। বকবক ‘করার’ বস্তু, কিন্তু প্যাচাল গাছের ফলের মতো ‘পাড়ার’ জিনিস।

আমরা লেখাপড়া করি, ওরা পড়ালেখা করে। আমাদের ঢপবাজি ওদের চাপাবাজি।

ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় ‘তুমি’ করে যাদের সম্বোধন করা হয়, তাদের ক্ষেত্রে আমাদের নদীয়া জেলায় এখনও ‘যাবা, খাবা, পরবা’ ইত্যাদি চালু আছে। নদীয়া পেরিয়ে চব্বিশ পরগণায় ঢুকে গেলেই ওগুলো ‘যাবে, খাবে, পরবে’ হয়ে যায়। আমি ভাবতাম, এটা বুঝি আমাদের জেলার বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের নাটকে দেখলাম এটাই রীতি। প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরকে যাবা-খাবা-ই বলে।

কিন্তু সবচাইতে বড় পার্থক্য যেটা বুঝলাম, ওদেশে বিয়ে করা খুব সহজ। ফট করে যাকে খুশি বিয়ে করে ফেলা যায় দশ মিনিটেই, এমনকি সেদিনই যদি কিছু সময় পরে পাকা-কথাবার্তা-হয়ে-থাকা বিয়ের আয়োজন ঠিক থাকে, তবুও। শুধু 'কাজি অফিস' বোর্ড ঝোলানো একটা জায়গা পেয়ে গেলেই হ'ল। ভালোবাসা প্রগাঢ় হ'লে বা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কেটে গেলে নাটকে এগুলো প্রায়শ হয়।

আর হ্যাঁ, আমাদের বাড়ি ওদের বাসা। ভালো বাসা।

চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, অপূর্ব, নিশো – সবাই ভালো অভিনেতা। তিশা, তানজিন তিশা, মেহজাবিন চৌধুরী, সাবিলা নূর, তাসনিয়া ফারিন – সবাই সুন্দরী ও ভালো অভিনেত্রী। B:-)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:২০

কামাল১৮ বলেছেন: অনেক দিন পর দাদা গাছ খেকে নামলেন।কোনবনে লুকিয়ে ছিলেন এত দিন।

২| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:২৩

লোকমানুষ বলেছেন: নাটক আর ভাষার ব্যবহারের দারুণ বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন!
আরও একটা বিষয় যুক্ত করি- ওদের নাটকগুলিতে ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডের অযাচিত ব্যবহার আর ওদের কথা বলার টোন মাঝে মধ্যে খুব কানে লাগে। এমনিতে খুব একটা নাটক দেখা হয় না, তবে আপনার বিশ্লেষণধর্মী পোস্টে অনেক কিছুই জানা হলো।

৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:৩৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কলকাতার গুলোকে নাটক বলে?

৪| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২০

জনারণ্যে একজন বলেছেন: @গেছো, সবচেয়ে বড়ো পার্থক্য আমি যেটা বুঝি তা "আধখানা ডিমের পুরোটাই খেয়ে যাবেন কিন্তু" এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত।

কিংবা ধরুন, "দাদা, খেয়ে এসেছেন নাকি যেয়ে খাবেন" এটাও দুই বাঙলার পার্থক্য বোঝাতে ব্যবহৃত হতে পারে।

৫| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২২

বিজন রয় বলেছেন: কোলকাতায় নাটকের নামে যা হয় ওগুলো কি?

বাংলাদেশের নাটক অনেক ভালো। কিচু খারাপ হয় নির্মাতার দোষে।

তবে আপনার লেখায় সবসময় উইট থাকে।

গেগগগগ গেছো দাদা।

৬| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২৩

গেছো দাদা বলেছেন: @জনারন্যে একজন , ঠিক বলেছেন। এটা কলকাত্তাইয়া দের বৈশিষ্ট্য। ঈশ্বর কে ধন্যবাদ, আমি এদের মধ্যে belong করি না।

৭| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২৫

গেছো দাদা বলেছেন: @কামাল 18 , ব্যক্তিগত কারনে একটু ব্যস্ত আছি। সেজন্যই অনিয়মিত।

৮| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২৭

গেছো দাদা বলেছেন: @বিজন রয়,কোলকাতার নাটক একদম ফালতু। overall বাংলাদেশের নাটক আমার ভালো লাগে।

৯| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২৯

গেছো দাদা বলেছেন: @সৈয়দ কুতুব, কোলকাতার নাটক একদম ফালতু। এগুলো না দেখাই উচিত।

১০| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩০

গেছো দাদা বলেছেন: @লোকমানুষ, ঠিক ধরেছেন। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.