নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলিক চক্রবর্ত্তী

অলিক চক্রবর্ত্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক গুপ্তচরের পেনড্রাইভ

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:৪৪

সি বি আই দপ্তর; সকাল এগারোটা, হঠাৎই উচ্চপদস্থ চার অফিসারের ডাক আসে সি ও-র দপ্তর থেকে; জরুরী তলবের ভিত্তিতে অরুনেশ, পান্ডে, রামালিঙ্গম এবং রাজপুত পৌঁছায় দপ্তরে।
“কি হয়েছে স্যার?”- অরুনেশ জিজ্ঞাসা করে
“সাংঘাতিক খবর চ্যাটার্জী! ভারতীয় প্রত্নতত্ব সংস্থা থেকে একটা খবর এসেছে, অন্ধ্রপ্রদেশের কলাপক্কমের এক পাহাড়ি জঙ্গল-সংকুলিত গ্রামে বিগত বেশ কয়েক দিন ধরে নতুন কোন সভ্যতা আবিষ্কারের জন্য তারা খনন কার্য চালাচ্ছে; কাল রাতে আচমকা সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া বেশ কিছু সাড়ে ছয় হাজার বছর আগের কঙ্কালের মধ্যে একটির ফরেন্সিক টেস্ট করতে গিয়ে ধড়া পড়েছে যে, সেটি ছ’হাজার বছর আগের কঙ্কাল’দের মধ্যস্থ মোটেই নয়, বরং সাম্প্রতিক কালের কোন মানুষের!”
“হোয়াট!”
“হ্যাঁ, তার চেয়েও বিস্ময়কর খবর হলো এই যে, সেই কঙ্কাল’টির সাথেই পাওয়া গেছে তাঁর পাঁজড়ের ফাঁক থেকে একটি অত্যাধুনিক পেনড্রাইভ্! যেটা বহু বছর মাটির তলায় চাপা পড়ে থেকেও একটুও ক্ষতিপ্রাপ্ত হয়নি! আরকিওলজিক্যাল সার্ভে সেটা সংরক্ষিত করে রেখেছে আমাদের জন্য”
“কতদিন আগের কঙ্কাল বলে তাদের মনে হয় স্যার?”
“বছর দশেক হবে খুব জোর”
“আর কিছু তথ্য স্যার?”
“না, বাকীটা তোমাদের যা করার করতে হবে; ভীষণ জটিল কেস বলেই মনে হয়েছে আমার, তাই তোমাদের ডাকলাম। এই কেস’টা অরুনেশ চীফ্ হিসেবে হ্যান্ডেল করো, বাকীরা তোমায় সাহায্য করবে”
“কবে যেতে হবে স্যার?”
“এখুনি বেরিয়ে পড়ো, অন্ধ্র”
“যেস্ সা……”

ফ্লাইটে রামালিঙ্গম শুধু একটাই প্রশ্ন করলো অরুনেশ’কে;
“স্যার, কেস’টা কি সত্যিই জটিল বলে মনে হচ্ছে আপনার?”
“না বুঝে কি করে সেটা বলি বলো! আমার সবচেয়ে বেশি ইন্টারেস্টিং লাগছে কোন্ পয়েন্ট টা জানো?”
“কোনটা স্যার?”
“পেনড্রাইভ; যা থাকার ওতেই আছে, আর আছে, লাশের পরিচিতিতে”
“এটা যদি খুনের বিষয় হয়, তাহলে খুনির বুদ্ধির তারিফ করতেই হবে স্যার! কি অসাধারণ জায়গা বেছেছে লাশ পোঁতার জন্য!”
“শুধু তাই নয় রামালিঙ্গম, খুনি প্রচন্ড প্রভাবশালী কোন ব্যাক্তি বা সংগঠণের সাথে যুক্ত, নইলে সেই জায়গায় লাশ পোঁতার সাহস বা অবকাশ কোনভাবেই পেত না; তার সাথে সে আমাদের দেশের অনেক ঐতিহাসিক রহস্যের নাড়ি-নক্ষত্র বেশ ভালোভাবেই জানে; চলো দ্যাখা যাক্ ভবিষ্যত কি রেখেছে কলাপক্কমে”।

“মৃতদেহটা রুবায়েদ দ্যভোলস্কি’র”- বললেন পুরাতত্ব বিভাগের ফরেন্সিক প্রধান অরভিন্দ ভাটনাগর;
“কি করে জানলেন?”- অরুনেশের প্রশ্ন
“আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগের কথা, আমরা তখন প্রথম স্থির করেছিলাম কলাপক্কমের এই গ্রামে আমাদের কাজ শুরু করবো; সেইমতো প্রস্তুতি শুরুও হয়েছিলো, হঠাৎই রাশিয়া থেকে দ্যভোলস্কি এসে উপস্থিত হয় আমাদের দপ্তরে; আমরা তার থেকে জানতে পারি, সে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা ও প্রত্নতত্ব নিয়ে গবেষণারত এবং কলাপক্কমের এই সভ্যতা উদ্ধারের সম্ভাবনা নিয়ে তার গবেষণাপত্র দেখে আমরা রিতিমতো স্তম্ভিত হয়ে যাই! এতো গভীর গবেষণা ততদিনে আমরাও করে উঠতে পারিনি! আমরা তাকে আমাদের দলে সামিল করে নিই এবং কলাপক্কমে চলে আসি। ছেলেটির বয়স তখন বছর পঁয়ত্রিশেক হবে, লম্বা সুদর্শন, চটপটে, পরিশ্রমী তো বটেই সাথে অগাধ জ্ঞান এবং অসাধারণ প্রাণশক্তিতে ভরপুর বলে আমাদের সকলের চোখের মণি হয়ে ওঠে সে! তার কথা মনে করলে আমার আজও চোখে জল চলে আসে!”
ভাটনাগরের গলা একটু কেঁপে উঠলো, চোখদুটোও ছলছল করছিলো; সে তার ট্রাইজারের ডান পকেট থেকে একটা রুমাল বার করে আলতো করে কচলে চোখ’দুটো মুছলো।
“তারপর?”
“তারপর আমাদের খনন শুরু হওয়ার পর কয়েক মাস বাদে আচমকাই সে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, আর কোনভাবেই তার হদীশ পাওয়া যায়নি অনেক খুঁজেও! পাওয়া গেলো তো গেলো এত বছর পর! এই অবস্থায়! অতো সুন্দর ছেলেটার কি হাল হয়েছে! ঈশ্বর সত্যিই এতো নিষ্ঠুর হতে পারেন!”
আবার চোখ মুছলো ভাটনাগর। রাজপুত আলতো করে অরুনেশের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো;
“স্যার, এত জল কি সত্যিই বেরোচ্ছে!”
অরুনেশের ঈশারায় রাজপুত দমে গেলো। অরুনেশ জিজ্ঞেস করলো;
“রুবায়েদ দ্যভোলস্কির সাথে কাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্ব ছিল জানতে পারি?”
“তার সাথে সবারই বেশ জমে উঠতো, তবে সে ঐ বয়সের দোষেই হোক আর যাতেই হোক, একটু বেশিই মেয়ে-ঘ্যাষা ছিলো, মেয়েদের মন জয় করতেও বেশ ওস্তাদ ছিলো সে, দারুন কবিতা লিখতে পারতো, আরও অনেক প্রতিভা ছিলো, আমাদের দলে চারটি মেয়ে ছিলো, চারজনের সাথেই ওর বেশ ঘণীষ্ঠতা ছিলো বলেই আমার জানা; সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় যেটা ছিলো, চারটি মেয়েই ছিলো বাঙালী, আর বেশ বুদ্ধিমতী এবং সুন্দরী”
“তাদের ডিটেলস্ আমার চাই”
“নিশ্চই! আমি আপনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি, আপনি বিশ্রাম করুন”
“তার সাথে ঐ পেনড্রাইভ’টাও পাঠাবেন অণুগ্রহ করে”
“নিশ্চই”
“এক্ষুনি”
“বেশ বেশ”
ভাটনাগর চলে গেলো।
একটা বড়ো তাবুতে অরুনেশ’দের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে; তারা সেখানেই বসলো মালপত্র রেখে। একজন এসে কিছুক্ষণ পর অরুনেশের চাহিদা মতো সব দিয়ে গেলো, সাথে দিয়ে গেলো গরম কফি আর স্যান্ডুইচ।

বেশ কিছুক্ষণ সময় কেটে গেলো; অধৈর্য রামালিঙ্গম অবশেষে ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে বললো;
“না স্যার, এই পেনড্রাইভের পাসওয়ার্ড আমার পক্ষে বের করা অসম্ভব! আমি অনেক রকম ভাবে চেষ্টা করলাম, প্রথমতো এর প্রোগ্রামিং ফিক্সড্ করা হয়েছে ভোকাল পাসওয়ার্ড দিয়ে, তাও এমন পাসওয়ার্ড যা বের করা যাচ্ছে না কোনভাবেই! আর কণ্ঠস্বর সম্ভবত রুবায়েদ দ্যভোলস্কি’র নিজেরই!”
“বের করতে হবেই রামালিঙ্গম, এই কেসের মূল ভিত্তি ঐ পেনড্রাইভের মধ্যে লুকিয়ে আছে, ওটা ছাড়া এগতে গেলে কেসের কিচ্ছু হদীশ পাওয়া যাবে না! অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে ছুঁড়ে চলার কেস এটা নয় মনে রেখো!”
এদিকে অরুনেশ সেই চারটি মেয়ের ডিটেলস্ পর্যবেক্ষণ করে যেগুলো পেলো তা এই;
চন্দ্রা অধিকারী; বাড়ি লেক গার্ডেন্স; কলকাতা;
ওয়েন্দ্রিলা সান্যাল; বাড়ি হালতু, ঢাকুরিয়া; কলকাতা;
প্রচেষ্টা রায়; আদি বাড়ি বোলপুর, শান্তিনিকেতন; পড়াশুনা সূত্রে দমদম; কলকাতা;
মেঘনা পাড়ুই; এ প্রবাসী বাঙালী; বাড়ি নয়ডা; নিউ দিল্লী;
অরুনেশ বললো;
“তুমি ঐ পাসওয়ার্ড বের করার চেষ্টা করতে থাকো রামালিঙ্গম; পান্ডে আর রাজপুত, তোমরা দ্যভোলস্কি’র ডিটেলস্ নিয়ে রাশিয়া যাও; ওখানে গিয়ে তার সম্বন্ধে যতদূর জানা যায় তথ্য জোগাড় করে আমায় পাঠাও; গোপণে; আমি কলকাতায় যাচ্ছি; ক্লীয়ার?”
“যেস্ সা……”

“হ্যাঁ স্যার, আমার মনে রুবায়েদের প্রতি দূর্বলতা ছিলো, আজও আছে; ওর মতো মানুষ আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি! আই রিয়্যালি মিস্ হীম! ও চলে যাওয়ার পর আমাদের অভিযান সে সময়ের মতো বন্ধ হয়ে যায়, তারপর আজ আপনারই মুখে শুনলাম যে, কলাপক্কমের সেই প্রজেক্ট আবার নতুন করে শুরু হয়েছে!”- বললো চন্দ্রা।
“রুবায়েদের মৃত্যু কোন সাধারন মৃত্যু নয় মিস্ অধিকারী; হত্যা! তাই আপনি যতোটা সাহায্য করতে পারেন আমাদের, খুব উপকার হয়”- সহানুভুতিশীল হয়েই বললো অরুনেশ। চন্দ্রা চোখের জল মুছলো।
“ওর মতো স্টুডিয়াশ আর ব্রেইনী মানুষ আজকাল পাওয়া যায় না! মাত্র তিন মাসের মধ্যে দারুন বাংলা শিখে গিয়েছিলো আমাদের থেকে! রীতিমতো অনেক বাঙালির চেয়েও ভালো বাংলা লিখতে পড়তে বুঝতে আর বলতে পারতো, তাও এমনভাবে, যেন কোন বাঙালি কথা বলছে! আমি ওর সাথে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মূহুর্তগুলো কাটিয়েছি! আজ, সবই ইতিহাস”
“উনি কি আপনাকে নিজের বিষয়ে কিছু বলতেন?”
“হ্যাঁ, ও খুব মিস্ করতো নিজের দেশ’কে; সোভিয়েতের ভাঙন’টা ও মেনে নিতে পারেনি কোনদিনই; তা নিয়ে ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করতো! বলতো ওর দেশের বন্ধু’দের কথা, বলতো বর্তমান রাশিয়ার অবক্ষয়ের কথা, বলতো ওদের দেশের সভ্যতার কথা, আমাদের দেশের পরিস্থিতির কথা আমাদের চেয়ে ও বেশি জানতো জানেন? উপলব্ধি করতো অন্তর থেকে! যা আমরাও পারি না!”
“আর?”
“কথায় কথায় কবিতা বলতো, কিছু চেনা কিছু অচেনা, ওর দেশের কবিতা, ওর সমাজের কবিতা, ওর নিজের লেখা প্রেমের কবিতায় আমার মন চঞ্চল হয়ে উঠতো ভীষণ! মনে হতো ওর সাথে এসব কিছুর বাইরে, কোথায় কোন দূরে একলা দীপে ভেসে গেছি একসাথে! যেদিন আমাদের শেষ দেখা, সেদিন ও আমায় একটা ইংরাজী কবিতা নিজের হাতে লিখে দিয়ে গিয়েছিলো, আমি বুকে আগলে রেখেছি সেটা আজও! আর ওর কোন স্মৃতিই আমার কাছে নেই!”
“যদি কিছু মনে না করেন, একবার সেটা দেখতে পারি?”
“নিশ্চই, আমার হাতের কাছেই আছে”
কথা’টা বলে টেবিলের উপরে রাখা কয়েকটা মোটা বই-এর মধ্যে একটির ভিতর থেকে সেই কবিতা লেখা কাগজ’টা বের করে চন্দ্রা, অরুনেশের হাতে দিলো। অরুনেশ সেটা দেখলো মনযোগ দিয়ে; মাত্র চার লাইনের অসাধারণ ইংরাজী কবিতা; যার কোন শিরোনাম নেই! আর আছে ওর নিজের ভয়েজে বলা কিছু কবিতা যেগুলো আমরা রেকর্ড করেছিলাম আমাদের মোবাইলে, সেগুলোও আপনি ব্লু টুথে নিয়ে নিতে পারেন স্যার।
“ও বলে গেছিলো, আমায় এর শিরোনাম উদ্ধার করতে হবে! আমি পারিনি!”
অরুনেশ লেখাটা পড়লো;
Most powerful arm
You are in my arm
You can be destroyer
You can be creator.
“এটা তো কোন সাধারণ কবিতা নয় মিস্ অধিকারী, এটা ধাঁধা, কিছু একটা ঈঙ্গিত দিচ্ছে এই লেখা’টা!”
“কি ঈঙ্গিত!”
“সেটা ভাবতে হবে! আমি এই লেখা’টা ফটোকপি করে নিয়ে যাচ্ছি, কোন আপত্তি নেইতো?”
“একদমই না! রুবায়েদের খুনী ধরা পড়ুক, এর বেশি আমার কি চাওয়ার থাকতে পারে আর!”
“ধন্যবাদ”

ওয়েন্দ্রিলা একই কথা বললো; কিছুটা নতুন জুরে;
“মিস্টার চ্যাটার্জী, রুবায়েদের চোখ’দুটোয় খুব গভীরতা ছিলো, আমি ওর কথা শুনতে শুনতে ভেসে যেতাম কতদূর জানিনা! ও বলে যেতো ওর কোন এক গভীর উদ্দেশ্যের কথা!”
“কি উদ্দেশ্য?”
“তা কোনদিন বলেনি! তবে বলতো, যা চলছে সারা দুনিয়া জুরে, এটা সভ্যতা’কে ভুল পথে চালিত করে নিয়ে যাচ্ছে! এতে মানুষ আরোও বেশি পরাধীন হয়ে পড়ছে, বিশ্ব’বাজারের ক্রীতদাস হয়ে পড়ছে খোলা বাজার অর্থনীতির জন্য! আরও অনেক কিছুই বলতো, যা বুঝে উঠতে পারতাম না! ব্যাস্ শুনে যেতাম”
“আর?”
“আমি জানতাম, ইনফ্যাক্ট আমরা সবাই জানতাম, ও আমি ছাড়া চন্দ্রা মেঘনা আর প্রচেষ্টা’র সাথে একইভাবে মিশছে, আমাদের সবার মনেই ওর প্রতি ভীষণ উইক একটা জায়গা তৈরী হলেও আমরা একে অপরকে হিংসা করতে পারতাম না, কিছু বলতে পারতাম না! কারণ জানতাম, ওর প্রেমে যে কেউ পড়তে পারে, সে ক্ষমতা ওর আছেই। কিন্তু ও কনদিন কোন নোঙরামী করেনি আমাদের সাথে! আমরা অনেকবার ওর ঘণিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু, ও সরে গেছে! দেওয়ার মধ্যে দিয়ে গেছে একটা শিরোনামহীণ ইংরাজী ধাঁধাটে চার লাইনের কবিতা”
“আপনাকেও?”
“হ্যাঁ, আমি জানি বাকীদেরও দিয়ে গেছে, আলাদা আলাদা; আমিও আগলে রেখেছি বাকী তিনজনেরই মতো”
অরুনেশ ওয়েন্দ্রিলা’র থেকে যেটা পেলো সেটা হলো এই;
May be together
May be alone
We or me in a home
What is the relation?

একইভাবে প্রচেষ্টা’র থেকে পেলো;
Can you be Ravana?
Can you be king as him?
Can you be create kingdom
Like him?

আবার মেঘনা’র থেকে যেটা পাওয়া গেলো সেটা এইরকম;
I am the gross-boss
I am the feeder of all
But what’s left for me?
We are running into the loss.

শুধুমাত্র চারটে ধাঁধাটে শিরোনামহীণ কবিতা নিয়ে ফিরে এলো অরুনেশ আবার কলাপক্কমে সেই অঞ্চলে আবার।
সেদিন রাত্রে অরুনেশ আর রামালিঙ্গম তাঁবুতে বসে মাথা ঘামাচ্ছিলো দুটো বিষয় নিয়ে, রামালিঙ্গম এখনও চেষ্টা করে চলেছে পেনড্রাইভের পাসওয়ার্ড উদ্ধার করার, এদিকে এক মনে ধাঁধা’গুলো নিয়ে ভেবেই চলেছে অরুনেশ।
“না রামালিঙ্গম, নিছক ছড়া কাটা নয় এগুলো! যদি তেমন কিছু লিখতেই হতো তাহলে, চার প্রনয়িনীকে চারটে প্রেমের কবিতা লিখে দিয়ে যেতে পারতো রুবায়েদ! তার ওপর দ্যাখো কবিতা’গুলোর বিষয়, সৃষ্টি-ধ্বংস; ঘর-পরিবার; হঠাৎ কোত্থেকে ঢুকে গেলো রাবণ! তারপর শেষ হলো কি দিয়ে?- ফসল-মজুরি-লোকসানের গল্প! এগুলো অন্য কিছু ইন্ডিকেট করছে, রুবায়েদ কিছু বলতে চেয়েছে এগুলো থেকে রামালিঙ্গম; কিছু একটা অন্য গল্প আছে, যা এখনও আমাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে; কে ছিলো আসলে রুবায়েদ! কি আছে এই পেনড্রাইভে! কি সংকেত দিচ্ছে এই ধাঁধা’গুলো! কিছু বের করতে পারলে রামালিঙ্গম?”
“না স্যার! যেখানে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে, নাকানি-চোবানী খাইয়ে দিলো একেবারে এই পেনড্রাইভ’টা!”
অরুনেশ আবারও ভাবতে বসলো।

হঠাৎই পরপর দুটো ফোন এসে এই কেসের ধাঁচ একেবারে বদলে দিলো, প্রথম ফোন’টা রাশিয়া থেকে রাজপুতের,
“স্যার, আমরা যতদূর রিপোর্ট সংগ্রহ করতে পেরেছি, নির্দিষ্ট ঠিকানা বলুন, আর অন্যান্য আশ-পাশ বলুন, রুবায়েদ দ্যভোলস্কি নামে এখানে কোনদিনই কেউ থাকেনি, ছিলো না, আজও নেই এরকম দেখতে কোন রুবায়েদ দ্যভোলস্কি! সম্পূর্ণ রাশিয়া’য় মোট আঠাশ জন রুবায়েদ দ্যভোলস্কি আছেন সেটা এখানকার দূতাবাস থেকে জানা গেছে, কিন্তু তাদের চেহাড়া-ছবি এবং কোন অন্য পরিচিতির সাথে দূর দূরান্ত পর্যন্ত আমাদের রুবায়েদের কোন যোগাযোগ নেই! কিছু একটা অন্য গণ্ডগোল আছে স্যার, কেস’টা বেশ জটিল লাগছে!”
দ্বিতীয় খবর এলো সি বি আই কলকাতা ডিপার্টমেন্ট থেকে এবং নিউ দিল্লী থেকে;
একসাথে চারটে খুন, তিনটে কোলকাতা’য়; একটা দিল্লী’তে; মোট চারজন, চন্দ্রা; ওয়েন্দ্রিলা; প্রচেষ্টা এবং মেঘনা।
“কেস আরও জট পাকিয়ে গেলো রামালিঙ্গম, পান্ডে আর রাজপুত’কে দিল্লী পাঠাও; আর কলকাতা’য় আর তুমি কলকাতা গিয়ে খুনের ডিটেলস্ রিপোর্টস্ নিয়ে এসো”।
“ঠিক কি মনে হচ্ছে স্যার?”- রামালিঙ্গম প্রশ্ন করলো।
অরুনেশ ধাঁধার কাগজ’গুলো চোখের সামনে নিয়ে বললো,
“গল্প সবে শুরু হয়েছে”।
চারটি মেয়ের হত্যার রিপোর্ট পাশাপাশি রেখে মেলাতে বসলো অরুনেশ;
“প্রত্যেকের খুন হয়েছে পিছন থেকে আঘাতে! চন্দ্রা আর মেঘনা’র মাথার পিছন দিকে কোন ভারী লোহা’র কিছু দিয়ে মারা হয়েছে; ওয়েন্দ্রিলা’র গলার নলী’তে ছুড়ি চালানো হয়েছে পিছন দিক থেকে; প্রচেষ্টা’কে মাথার পিছন দিক থেকে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে গুলি করা হয়েছে; সবই পিছন থেকে!”- ধীরে গলা নামিয়ে দেখতে দেখতে বললো অরুনেশ।
পান্ডে বললো;
“আরেকটা বিষয় দেখুন স্যার, তিনজনেই তখন চেয়াড়ে বসে টেবিলের সামনে কিছু একটা করছিলো, আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শরীর’গুলো পড়েছে সামনের দিকে টেবিলে মাথা ফেলে! এরা কি করছিলো স্যার ওভাবে!”
“সামনের দিকে মাথা রেখে!”- হঠাৎ প্রায় লাফিয়ে অরুনেশ বলে উঠলো; “পান্ডে, এদের কারোর ল্যাপটপ পেয়েছো? আমি এদের কাছে যেদিন তদন্তে গেছিলাম সেদিন ল্যাপটপ দেখেছিলাম, সকলেরই বাড়িতে, আর সকলেরই টেবিলের উপর, যে টেবিল’গুলোয় ওদের মৃতদেহের বুক অবধি অংশ’গুলো পড়েছিল, তোমাদের কথা অনুযায়ী”
“না স্যার! এটা সত্যিই খেয়াল করিনি! কোন ল্যপটপ কারোর বাড়ি’তে চিরুনী তল্লাশী চালিয়েও পাওয়া যায়নি কিন্তু!”- বললো উদগ্রীব পান্ডে।
“জানতাম!”
“তাহলে এখন স্যার?”
“দাঁড়াও, আমায় একটু মাথা ঘামাতে দাও। চারটে মেয়ে একসাথে খুন, মাথা’র পিছন দিক থেকে খুনী’র আঘাত; অবধারিত চার জনেই তখন একসাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছে নিজেদেরই মধ্যে, নিজেদের ল্যাপটপ থেকে; এমন কিছু বলছে যা ঘাতকের পছন্দের মোটেই নয়! চারটে আলাদা জায়গায় একই সময় খুন মানে, খুনীও আলাদা চারজন, যারা সেই সময় জানতো মেয়ে’গুলো কোথায় কি করছে, এমনকি কিভাবে বসে আছে কোন দিকে মুখ করে! তার মানে, খুনী’রা শুধুই খুনী, কন্ট্রাক্ট কীলার; আসল কাজ’টা করিয়েছে অন্য কেউ, যে সেই মূহুর্তে এই চার জনের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে ছিল, এই পঞ্চম ব্যাক্তি’টা কে, এইটা জানা খুব দরকার; সেই কনফারেন্সের প্রমাণ চেপে দিতে, ল্যাপটপ’গুলোও খুন’গুলোর মূহুর্তেই খুনী’দের সাহায্যে সরিয়ে দিয়েছে!”
“তাহলে সেগুলো উদ্ধার করতে হবে স্যার!”
“কি করে করবে? তোমার মনে হয় সেগুলো এখনও জীবিত আছে!”
“স্যরি স্যার! তাহলে?”
“তাহলে এই মূহুর্তে দরকার ধাঁধা’গুলো উদ্ধার করা আর, পান্ডে, তোমায় একটা লোকের ডিটেলস্ দিতে হবে আমায়, কাজ’টা খুব সাবধানে করতে হবে যেন কোনভাবে হাওয়াও না জানতে পারে, পারবে?”
“সিওর স্যার, বলুন”
পান্ডে নাম’টা জেনে চলে গেলো। ধাঁধা’গুলো নিয়ে বসলো আবার অরুনেশ;
ধাঁধা’গুলো এক নাগাড়ে পড়তে পড়তে কয়েক দিকে চোখ বুলালো অরুনেশ; মৃদু হাসলো;
“রামালিঙ্গম, রুবায়েদ বাংলা জানতো বলেছিলো না চন্দ্রা?”
“হ্যাঁ স্যার, ইনফ্যাক্ট চন্দ্রাই তো ওকে বাংলা শিখিয়েছিলো”
“যদি আমার আন্দাজ ঠিক হয়, তাহলে অবধারিত ব্রিলিয়ান্ট বলতে হবেই ছেলে’টাকে!”
“কি স্যার! আপনি ধাঁধা’গুলোর উত্তর পেয়ে গেছেন!”
“মনে হচ্ছে! আচ্ছা রামালিঙ্গম, ওই চারটে মেয়ের মোবাইল থেকে রুবায়েদের যে নিজের ভয়েজ্-এ বলা কবিতা’গুলো রেকর্ডেড আছে, সেগুলো শুনে তোমায় ভয়েজ্’টা নকল করতে বলেছিলাম, প্র্যাক্টিস্ করেছো?”
“হ্যাঁ স্যার”
“তাহলে এবার ওই পেনড্রাইভ’টা প্লাগ-ইন্ করে আমি যেটা লিখে দিচ্ছি, সেটা বলতো সেই নকল করা ভয়েজে;”
“ও কে স্যার”
ল্যাপটপের সামনে বসে, পেনড্রাইভ প্লাগ-ইন্ করে রামালিঙ্গম বলে উঠলো ভয়েজ রেকগ্নাইজার ডিটেকটারের সামনে;
“কলম্বাসী লঙ্কাচাষী”
সঙ্গে সঙ্গে ডিটেকটারে ধড়া পড়লো;
“ভয়েজ্ আইডেন্টিফায়েড্; ওয়েল্কাম স্যার”
“স্যার, প্রোগ্রাম খুলে গেছে!”- লাফিয়ে উঠলো রামালিঙ্গম।
এক মূহুর্তও দেরী না করে সব পেনড্রাইভ রহস্য উদঘাটনে বসে পড়লো অরুনেশ; বেরিয়ে পড়লো অনেক কিছুই; বেরিয়ে গেলো সমস্ত রহস্যের সমাধান। অরুনেশ বলে উঠলো;
“আসল জট তাহলে এখান থেকেই শুরু!”
“কি জট স্যার!”
অরুনেশ অভিভূত দৃষ্টি নিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রীনেই চোখ রেখে বলে উঠলো;
“অপারেশান চিলি!”
কলাপক্কমের ক্যাম্পে সবাই তখন উপস্থিত; অরুনেশ বলতে শুরু করলো;
“সবার আগে বলি আমি ওই চারটে ধাঁধা থেকে আমি কি করে পাসওয়ার্ড পেলাম; কবিতাগুলোর শিরোনাম আমি উদ্ধার করি কবিতাগুলো পড়ে, সেগুলো হলো, Pen; Dweller; Lanka; and Farmer। রুবায়েদ বাংলা জানতো, তাই সে পাসওয়ার্ড বানিয়েছিলো নিজের কণ্ঠস্বরে, বাংলা’তেই; যার মানে দাঁড়ায়, কলম-বাসী-লঙ্কা-চাষী। এবারের প্রসঙ্গ হচ্ছে প্রথমত কি ছিলো ওই পেনড্রাইভে আর কেনই বা এরকম একটা পাসওয়ার্ড সেট করা হলো?- আসল উচ্চারণ ছিলো কলম্বাসী-লঙ্কাচাষী, কলম্বাস বলতে বোঝানো হয়েছে নাবিক কলম্বাসের আবিষ্কার আমেরিকা’কে; লঙ্কাচাষ বলতে কি জানেন?- আমেরিকার নৃশংস অভিযান, অপারেশান চিলি!”
“হোয়াট?”- একসাথে অনেকের অভিব্যক্তি।
“রুবায়েদ দ্যভোলস্কির আসলে চিলি’র নাগরিক; আসল নাম, অরবেন লেবান। ১৯৫৮ সালে চিলি’র রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেশের অবিসংবাদিত বামপন্থী নেতা কমরেড সালভাদোর আলেন্দে পরাজিত হন মাত্র ৩% ভোটের ব্যবধানে। এই ঘটনায় নড়ে বসেছিলো পুঁজিবাদী ওয়াশিংটন। পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো ১৯৬৪ সালে, স্বাভাবিকভাবেই সি আই এ’র হানাদারীত্বের অগ্রনী তালিকায় চলে এসেছিলো চিলি, মার্কিন রক্তচক্ষু’র গ্রাস হয় চিলি’র আসন্ন সময়।
তারপর শুরু মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেনেডি’র নাশকতা’র ছক; সময়টা ছিলো ১৯৬১ সাল; ওয়াশিংটনে এই নাশকতা’র ব্লু-প্রিন্ট অনুযায়ী কমিটিও গঠিত হয় সি আই এ দ্বারা, কেনেডি’র মন্ত্রণায়, যেখানে মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং হোয়াইট হাউসের বেশ কিছু শীর্ষ নেতৃ্ত্বও যুক্ত ছিলেন একত্রে। এর সাথেই আবার সমান্তরালে গোপন কমিটি গঠিত হয় সান্তিয়াগোতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিলি’তে পাঠানো হলো সি আই এ’র ১০০ জন কর্মী’কে; আর সম্পূর্ণ কাজের প্রক্রিয়া গুটিয়ে ফেলা হয় ১৯৬২-র মধ্যেই। ১৯৬৪ তে চিলিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করার কথা ছিলো সালভাদোর আলেন্দে’র আবারও।
সি আই এ চিলি’তে ঢুকে কি করলো?- অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃ্ত্ব’দের গোছা গোছা ডলার দিয়ে কিনে ফেলা হলো। যেখানে বামপন্থী’দের মূল শক্তি ছিলো চিলি’র অগুন্তি মেহনতী মানুষ; কৃ্ষক, বস্তিবাসী, সংগঠিতক্ষেত্রের শ্রমিক, ছাত্র এবং সংবাদমাধ্যম’গুলো কোটি-কোটি ডলারে বিক্রী হয়ে গেলো সি আই এ’র কাছে। এই সমস্ত মানুষ একজোট হয়ে চিলি’তে কমিউনিস্ট বিরোধী প্রচার শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে। এমনকি চিলি’র মধ্যপন্থী নেতা প্রার্থী এডুয়ার্ডো ফ্লেই এবং তার দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও নির্বাচনে বামপন্থী বিরোধীতায় অর্ধেকেরও বেশি খরচ বহণ করেছিলো সি আই এ’র সহযোগীতায়। ১৯৬৪’র নির্বাচনে সি আই এ’র গোপন নথি থেকে জানা যায়, জনসন অ্যান্ড গোল্ডওয়াটার প্রোপাগ্যান্ডা প্ল্যান’ শীর্ষক সি আই এ’র প্রচারে প্রতি ভোটদাতা পিছু খরচ করা হয়েছিলো ২০ ডলার করে! মোট প্রায় ২ কোটি মার্কিন ডলার! স্বাভাবিকভাবেই ৫৬% ভোট পেয়ে মধ্যপন্থী ফ্লেয়ার জিতে যায় নির্বাচনে; আলেন্দে পায় ৩৯% ভোট। এরপর অপপ্রচার সেই অব্যহতই থাকে চিলি’র বামপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে।
আরও অনেক কিছুই ঘটেছে যেগুলো এখন বলা অপ্রাসঙ্গি্ক হবে; আবার যখন সালভাদোর আলেন্দে বিপুল শক্তি নিয়ে ঝাঁপানোর প্রস্তুতি নেন তখন তাকে হত্যা করা হয় তার সমস্ত কমিউনিস্ট নেতা-কর্মী’দের সাথে একত্রে, ঘটনাটা ঘটায় সেই সি আই এ, সালটা ছিলো ১৯৭৩-এর ১১ই সেপ্টেম্বর!”
“এত তথ্য আপনি কোথা থেকে জানতে পারলেন স্যার?”- রামালিঙ্গমের প্রশ্ন।
“চিলি’র অনাম্নী গুপ্তচর, অরবেন লেবানের পেনড্রাইভ থেকে!”
“গুপ্তচর!”
“হ্যাঁ! সালভাদোর আলেন্দের হত্যার সময় ১৬ বছরের কিশোর অরবিন লেবানও মনে-প্রাণে কমিউনিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলো, কিছু কাজও করতে শুরু করেছিলো সে; যখন সি আই এ আর চিলি’র কমিউনিস্ট বিরোধী প্রশাসন কমিউনিস্ট নিধনে ব্যাস্ত তখন, কিশোর অরবিন’কে নিয়ে গোপনে পালিয়ে চলে আসে চিলি থেকে তার কাকা, আমেরিকায়। আমেরিকায় এসে নিজেদের নাম-পরিচয় পালটে ফেলে তারা, অরবিন লেবান হয়ে যায় জন আরউইন ডোভার; নিউইয়র্কে ইন্টিরীয়ার ডেকরেশানের ব্যবসা জমিয়ে অনেক রাজনৈতিক কর্তা’দের সাথে হাত করে অরবিন ওরফে জন-এর কাকা। সেই সূত্রে জন-এর উচ্চশিক্ষা শেষ হওয়ার পর তার মেধার জোরে সে সি আই এ এন্ট্রান্সে উত্তীর্ণ হয়ে সি আই এ-তে যুক্ত হয়। এসবই যদিও ছিলো তাদের কাকা-ভাইপোর গোপন মিশন! সি আই এ’তে থাকাকালীন নিজের কাজের জোরে খুব তারাতারি জন উচ্চ পদ দখল করে এবং তার হাতে আসতে থাকে সি আই এ’র অনেক গোপন নথি, যার মধ্যে ছিলো অপারেশান চিলি’র ষড়যন্ত্রের সমস্ত প্রমাণপত্রও; সেই সমস্ত প্রমাণ সে চিলি’র মানুষের কাছে কোনভাবে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে এবং সমস্ত বিশ্ব’কে আমেরিকার নৃশংস সমস্ত কারসাজী জানাতে একটি পেনড্রাইভে ডাউনলোড করে। ইতিমধ্যে সে বুঝতে পারে সে যেকোন মূহুর্তে ধড়া পড়তে চলেছে সি আই এ’র হাতে। অগত্যা তাকে পালিয়ে যেতে হয় আমেরিকা ছেড়ে, ইতিমধ্যে হত্যা করা হয় তার কাকা’কেও।
প্রথমে সে পৌঁছায় রাশিয়া’তে। সেখানে কদিন লুকিয়ে থাকে এবং নিজের একটা নকল পরিচিতি তৈরি করে, রুবায়েদ দ্যভোলস্কি নামে; তার রাশিয়ান এক বন্ধু এই বিষয়ে তাকে সমস্ত সাহায্য করে এবং পরচিতি দেয় এক ভারতীয় প্রাচীন পুরাতত্বের গবেষকের। প্রচুর পড়াশুনাও করে এই সময় অরবিন ভারতীয় পুরাতত্ব এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে।
এরপর সে ভারতে এসে এবং এখানে পৌঁছায় আপনাদের কাছে, সাথে থাকে তার নিজের বানানো থিসিস এবং সেই পেনড্রাইভ।
কোনভাবে সি আই এ টের পেয়ে যায় গপন সূত্রে যে অরবিন লুকিয়ে আছে ভারতে, এই কলাপক্কমে। তারা এই প্রজেক্টের এক বিখ্যাত মানুষকে কন্ট্যাক্ট করে, প্রচুর ডলার দেয় এবং তারই মাধ্যমে গোপনে খুন করিয়ে পুঁতে দেয় এক রাত্রে, অরবিন লেবান’কে। কিন্তু পেনড্রাইভ কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না! আসলে অরবিন বুঝতে পেরেছিলো এই ষড়যন্ত্রে কে যুক্ত আছে, সে এও বুঝতে পেরেছিলো যে সে আর পালাতে পারবে না! তাই সে পেনড্রাইভ-এর এমনই ব্যবস্থা সেদিনই রাত্রে করে ফেলে, যাতে সেটা কিছুতেই খুঁযে না পাওয়া যায়। অসীম দূরদর্শী অরবিন জানতো, কবে কোন সময় সে খুন হবে, তবুও সে পালিয়ে যায় নি কারণ সে বুঝতে পেরেছিলো এভাবে পালিয়ে পালিয়ে সে বেশিদিন বাঁচতে আর পারবে না! কিন্তু পেনড্রাইভের নথিপত্রে সে সেই মানুষের কথাও লিখে যায়, যে তাকে খুন করিয়েছিলো! তারপরই এখান থেকে প্রজেক্ট গুটিয়ে নেওয়া হয় তখনের মতো! অনেক চেষ্টা করা হয়েছিলো যাতে এখানে আর খননের কাজ শুরু না হয়, কিন্তু সেটা বছর দশেকের বেশি আটকে রাখা যায়নি! কি মিস্টার ভাটনাগর, তাইনা?”
মূহুর্তে মিস্টার ভাটনাগর পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পান্ডের মজবুত বাহুপাশে আটকা পড়ে যান এবং ছটফট করতে গিয়ে এক চাপড় খেয়ে গোঙাতে থাকেন! অরুনেশ আবার বলে;
“মিস্টার ভাটনাগরই সেই লোক যার সাথে সাথে সি আই এ কন্ট্রাক্ট করিয়ে অরবিন’কে খুন করিয়েছিলো; শুধু তাই নয়, অরবিনের লাশ পাওয়া যাওয়ার পর সেই পেনড্রাইভও যখন পাওয়া যায়, তখনই ভাটনাগর সেটা সরিয়ে ফেলার তালে ছিলেন, কিন্তু খননের সময় যেহেতু সেটা পুরো ইউনিটের চোখে পড়ে যায়, সেহেতু তিনি সেটা করতে পারেননি! পান্ডে, বুঝলে কেন সেদিন তোমায় গোপনে ভাটনাগরের ডিটেল্স যোগাড় করতে বলেছিলাম?”
“হ্যাঁ স্যার, এবার বুঝেছি!”
“ভাটনাগর যে লোভী এবং সুবিধের লোক মোটেও নয়, সেটা পান্ডে তার এই ইউনিটের লোকজনের থেকেই জানতে পেরেগেছিলো, বেশি বেগ পেতে হয়নি!
শুধু তাই নয়, ভাটনাগর বুঝতে পেরেছিলো অরবিনের প্রেমিকা’রা, মানে চন্দ্রা; ওয়েন্দ্রিলা; প্রচেষ্টা আর মেঘনা’র কাছে এমন কিছু নথি গোপনে অরবিন দিয়ে গেছিলো যার সাহায্যে আমি কিছু পেলেও পেতে পারতাম, তাই সে একই সময় তার পুরনো ছাত্রী’দের কনফারেন্সে ভিডিও কলিং-এ নিয়ে একইসাথে অরবিন ওরফে রুবায়েদের সম্বন্ধে কথা বলিয়ে বলিয়ে বের করার তালে ছিলো যে, আমার সাথে তাদের ঠিক কি কথা হয়েছে! আর সেই সময়ই বিপদ বুঝে বিভিন্ন কনট্রাক্ট কীলারের সাহায্যে খুন করায় পিছন দিক থেকে, কারণ ভাটনাগর দেখতে চেয়েছিলো নিজের চোখে, তাদের মৃত্যুটা ঘটেছে কি-না। আর ল্যাপটপ’গুলো কেন সরিয়ে ফেলানো হয় সেটা সবাই বুঝতেই পেরেছে এবার নিশ্চই!
এই হলো এই ঘটনার সার”।
“স্যার, একটা বিষয় বুঝলাম না!”- বললো রাজপুত।
“কি?”
“পেনড্রাইভ’টা অরবিন কোথায় লুকিয়েছিলো তাহলে?”
“এখনও বুঝলেনা রাজপুত!”- মুচকি হাসলো অরুনেশ; “পেনড্রাইভ’টা অরবিন গিলে ফেলেছিলো, তাই সেটা পাওয়া গেছিলো তার কঙ্কা্লের গলা থেকে বুকের মধ্যের অংশে, যেখানে জীবদ্দশায় সেটা আটকে গেছিলো! অরবিন জানতো সে সেই রাতেই গোপনে খুন হবে, তাই এত বড়ো রিস্ক’টা সে নিতে পেরেছিলো!”
“অসাধারণ স্যার!”- চোখে জল চলে এসেছিলো রাজপুতের। অরুনেশ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো;
“চলুন মিস্টার ভাটনাগর, বাকী রিসার্চ’টা নয় জেলেই গিয়ে করবেন এবার; পান্ডে, অ্যারেস্ট্ হীম”।
হাতে পেনড্রাইভ’টা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখছিলো সশ্রদ্ধ চোখে অরুনেশ; রামালিঙ্গম জিজ্ঞেস করলো;
“এটা কি করবেন স্যার?”
“রামালিঙ্গম, অরবিন-এর অসমাপ্ত কাজ’টা কোন না কোনভাবে কাউকে শেষ করতে তো হবেই! এমন কোন মানুষ কোথাও না কোথাও আজও সত্যিই আছে, যে এই কাজটা শেষ করবে, আমি যেদিন তাকে খুঁজে পাবো, সেদিনই এটা তার হাতে তুলে দেবো!”
“আর রিপোর্টে কি লিখবো স্যার?”
“লিখে দাও পেনড্রাইভ’টা অরবিনের গ্রাসনালী’তে দশ বছর যুক্ত থাকতে থাকতে, নষ্ট হয়ে গেছে!”
_______________________

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:৫২

সুমন কর বলেছেন: বড় লেখা !!

শুভ ব্লগিং..... !:#P

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:০৪

অলিক চক্রবর্ত্তী বলেছেন: একটু বড় দাদা, কিছু মনে করবেন না। নতুন রহস্য কাহিণী, পড়ে দেখুন, আশা করি ভালো লাগবে। ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই বলবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.