নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলিক চক্রবর্ত্তী

অলিক চক্রবর্ত্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নয়া মহাভারতের শুনানি

২৬ শে মে, ২০১৬ রাত ৮:২৫

দার্জিলিঙের শৈল’বুকে ইন্দ্রপ্রস্থ তৈরী হলে কেমন হতে পারতো তার স্থাপত্য, সেটাই দেখতে চায় পঞ্চপান্ডব বন্ধু। উত্তরপ্রদেশের যুধিষ্ঠীর দেশপান্ডে ব্যাস্ত হয়েছে স্থাপত্য চিত্র পরিকল্পনা আঁকার কাজে’ চেন্নাই’য়ের ভীমা রঙ্গনাথন আপাতত টাইগার হিলের পাদদেশের কিছু বস্তি উচ্ছেদ কর্মসূচী নিয়ে গা ঘামাচ্ছে; রাজস্থানের অর্জুন সিং ব্যাস্ত এলাকা থেকে শুরু করে রাজ্যস্তরের নেতা মন্ত্রী আমলা’দের মুখবন্ধ করতে; কলকাতার লেবার কন্ট্রাক্টর নকুল পোদ্দার তাবড় তাবড় মিস্ত্রী আর জোগারী জোগারের কাজে লেগে পড়েছে; এদিকে চা বাগানের একাংশের লিজ্ নেওয়া মালিক পাঞ্জাবের সহদেব সাচদেও আপাতত স্থানীয় মাফিয়া’দের সামলাতে অনেক কিছুই খসিয়ে চলেছে। এরা পাঁচ বন্ধু একসময় একসাথে একই ক্লাসে, দার্জিলিঙের কনভেন্ট স্কুলে পড়াশুনা করেছে, একসাথে বেড়ে উঠেছে; এখন সখ হয়েছে এমন এক ইমারত তৈরী করা, যেখানে একসাথে এদের পাঁচ পরিবারের ঠাঁইও করে দেবে, আবার একত্রে অংশীদারী কারবারে ট্রাভেল এজেন্সী হাউসের ব্যবসাও সামলে দেবে। এতটাই অটুট বন্ধুত্ব যে, আর আলাদা থাকতেও মন সায় দিচ্ছে না! এই ইমারতের নাম এরাই একত্রে স্থির করেছে, ইন্দ্রপ্রস্থ। আহারে!
কিন্তু মহাভারত-মার্কা নাম থাকলে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ তো থাকতেই হবে একটু হলেও, তাইনা? আপাতত দার্জিলিঙের ঐ অঞ্চল কুরুক্ষেত্র করে তুলেছে স্থানীয় বিরোধী এক বস্তি’মুক্তি মোর্চার জাঁদরেল নেতা, দুর্যোধন তামাং। তার ইস্যু হচ্ছে, ঐ এলাকার বস্তি উচ্ছেদের বিরোধীতা। কোন্দল মোকদ্দমা টানলো শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারকক্ষের এক নম্বড় কোর্ট পর্যন্ত। পঞ্চপান্ডব বন্ধুর পক্ষে সওয়াল করছে ভারতবিখ্যাত উকিল, দেওয়ানী এবং ফৌজদারী উভয় মোকদ্দমার স্পেশ্যালিস্ট, নয়াদিল্লীর শ্রীকৃষ্ণ ভাটিয়া; বিরোধী পক্ষে বা বিবাদী পক্ষের হয়ে লড়ছেন প্রখ্যাত উকিল এবং কৃ্মী’নাল মনোবিশেষজ্ঞ, বেঙ্গালুরু’র শকুনী সুন্দরাইয়া। বিচারকের আসনে বর্ষীয়ান ধৃতরাষ্ট্র চাড্ডা। আজও শুনা্নি চলছে বিচারালয়ে, মানে ঐ শুরু হচ্ছে আর কি!- ধৃতরাষ্ট্র চাড্ডা’র কনট্যাক্ট্ লেন্স চোখে গোঁজার পর্ব চলছে। ঐ বসছেন আরাম কেদাড়া’য়; এবার বোধ করি অন্ধ শুনানি নাটক শুরু হবে। হ্যাঁ, শুরু হ’ল।
তারিখ-পে-তারিখ তারিখ-পে-তারিখ; শুনানি চলতে থাকে। এদিকে বস্তি’গুলো তলায় তলায় একের পর এক খালি হতে থাকে! প্রচুর অর্থ পাওয়া নেতা মন্ত্রী, রুলিং-অপোনেন্ট, আমলা পুলিস প্রশাসন, মাফিয়া সকলেই মুখে কুলুপ এঁটে বিলিতি ডুকু-ডুকু’তে দিন ভালোই কাটাচ্ছে। বেওয়ারিশ লাশ হয়ে পড়ে থাকে স্থানীয় গুন্ডা’দের হাতে খুন হওয়া একের পর এক দুর্যোধনের নিরানব্বই বিপ্লবী ভাই; ধর্ষিতা হয়ে খুন হয় সেই ভায়েদের মা-বোন-স্ত্রী-মেয়ে-প্রেমিকা’রা, রাতের আঁধারে! যারা বেঁচে যায়, তারা ভয়ে সপরিবারে পালিয়ে যায় অন্যত্র, অন্য জীবনের খোঁজে। সব খুন, উচ্ছেদ, রাহাজানি, ধর্ষণের শুনানি আদালতে উঠতেই প্রমাণের অভাবে, এবং অবশ্যই শ্রীকৃষ্ণ-শকুনী’র ব্যক্তিগত গুপ্ত কোরাপশান’তুতো ভ্রাত্ত্বের আঁতাতে, ধোপে টেকে না! এদিকে লড়তে লড়তে ‘একলা চলো রে’ গেয়ে গেয়ে প্রতি শুনানি’তেই আদালতে হাজির হয়, দুর্যোধন তামাং। প্রথম শুনানি’তে দল থেকে দুর্যোধনের পিছনে ছিল তার নিরানব্বই ভাই, এখন সে একা!
আজ শুনানির শেষ দিন। বিচারে রায় বেরোতে বাকী শুধু, সামান্য কয়েকটা মিনিট। দুর্যোধন তামাং আজও এসেছে একলা, সোজা হয়েই, কি সাংঘাতিক যুদ্ধং দেহী মনোভাব! দেখলে লোভ হয়। একাই লরে চলেছে!
অবশেষে রায় বেরোল,- সবই আইনী মতেই হয়েছে, শুধু দুর্যোধনের লড়াইটাই বে’আইনী হয়ে গেছে! জানাই ছিল যদিও সবার, এটাই রায় হবে। যাই হোক, সবুজ আবীরের রঙে ‘রাঙিয়ে দিয়ে যা’ব এবার যাবার আগে’ গান দুর্যোধন’কে শুনিয়ে পঞ্চপান্ডব সেযাত্রা চিরতরে বিদেয় নিল কোর্টের দুয়াড় থেকে। এখনও বিপ্লবী’র চীৎকার ভেসে এলো, এবার সে সুপ্রিম কোর্টে যাবেই! কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। এ তো মহা জ্বালা হ’ল!
অতো অবধি আর যেতে হ’ল না! রাতের চোরা অন্ধকারে, ভীমা রঙ্গনাথনের ছোঁড়া গুলি’তে, প্রথমে দুর্যো্ধন তামাং-এর ঊরু’ভঙ্গ হ’ল, তারপর একটা ছোট্ট ধাক্কায় পাহাড় থেকে সাত হাজার ফুট খাঁদে তলিয়ে গেলো সব বিপ্লব! শুনেই আত্মহত্যা করল স্ত্রী, ভানুমতী তামাং। ব্যাস্, আর ভয় কি পঞ্চপান্ডবের?- রাজধানীর রাজপথে ট্রাফিক জ্যাম্ হওয়ার আর কোন ভয় বা বিরক্তি, কিছুই বাকী রইল না।
আরাম’সে তৈরী হ’ল ইন্দ্রপ্রস্থ। সব দেখে’শুনে দারুন খুশী পঞ্চপান্ডব বন্ধু’দের সকলের প্রিয়, গরীব’দের প্রতি ছূৎমার্গী, বিশ্বায়নের সুগায়িকা, কনভেন্টের একসময়ের ইংরাজী সাহিত্যের শিক্ষিকা, বর্তমানে বর্ষীয়সী, ধনী পরিবারের ছাত্র’দের জন্য মা সারদা, এন্ জি ও রাজনীতিবিদ বুদ্ধিজীবি, মুসোলিনী’র স্নেহধন্যা, মাদাম কুন্তী বন্দোপাধ্যায়। তিনি সহাস্যে সগর্বে সজল’নয়না হয়ে বলে গেলেন;
‘আহা! অপূর্ব! আমিও আজ থেকে এখানেই থাকবো!’
আহ্লাদে আটখানা শিখন্ডি’র জারজ ছানা’পোনা! শুধু, দ্রৌপদী’কেই খুঁজে পাওয়া গেলো না ষোলো’কলা পূর্ণ করতে।
____________________

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.