নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/allen.saiful

অ্যালেন সাইফুল

An inhuman never explain himself.

অ্যালেন সাইফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিকথা ও বাঙালি কিশোরী !

২৬ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৩৫



দু'দিন থেকে একটানা বৃষ্টি। পুরো শহরের সবগুলো রাস্তা পানির নিচে চলে
গেছে। হাটু সমান পানি। ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। আবহাওয়া বিদরা ঘূর্ণিঝড়টার নাম দিয়েছে
রোয়ানু। আমি এই নামের অর্থ বা সার্থকতা কিছুই বুঝিনা!
ঘরে বসে থেকে নিজেকে কেমন জেলখানার কয়েদী বলে মনে
হচ্ছে। বাহিরে এত সুন্দর একটা প্রকৃতি অপেক্ষা করছে আর আমি যাবনা না তা কী
হয়! হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি গায়ে চাপিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই পা বাড়ালাম। চশমাটা ভুলে
রেখে এসেছি। এমন সুন্দর বৃষ্টিতে চশমা পড়ে বের হতে হয়। বৃষ্টিভেজা চশমা
দিয়ে সুন্দর পৃথিবীটা ঝাপসা করে দেখার মধ্যে একধরনের আনন্দ আছে। আমি
এখন সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত।

বৃষ্টির মধ্যে আশিকের সাথে দেখা। এই ছেলেটা আমাকে দেখলেই দু একটা
আহম্মকি কাণ্ড করে বসবে। আজকেও করেছে। রাস্তার নোংরা পানি দিয়ে
আমাকে গোসল করিয়ে দিয়েছে। গোসল হয়ে যাবার পর আমি রীতিমত
শীতে কাঁপছি। আশিক আমাকে কাঁপিয়ে দিয়েই চলে গেল। একা একাই চা'য়ের
দোকানের দিকে পা বাড়ালাম। সারা শহরে যেন এই একজন মাত্র চা বিক্রেতা। ওনার
ব্যবসা আজকে জমজমাট। প্রতিকুলতাকে হারিয়ে দিয়ে যারা নিজের কাজ করে
যেতে পারে তারা সবসময় সফল হয়।

এতবড় একটা চা'য়ের দোকানে পা ফেলার মত
জায়গাটুকু নেই। চারিদিকটা কেমন লোকালয়ে পরিনত হয়েছে। সবার মুখে একই
কথা, "এইখানে চা দেন"।
দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আমিও চা দিতে বললাম। টিনের চালা চুইয়ে চুইয়ে টুপটাপ
বৃষ্টি পড়ছে মাথায়। ডান দিকে নারিকেল গাছগুলো দুলছে। কে কত বেশি দুলতে
পারে এমন অবস্থা। আমি নারিকেল গাছের দোলাদুলি দেখছি।
চা বিক্রেতা চা বাড়িয়ে দিল। বেখেয়ালে পানি ভেবে চুমুক দিয়ে দিয়েছি। যা হবার
তাই হয়েছে। আজকেও জিহ্বা পুড়ে গেছে। ভাগ্যিস সাথে রিমু নেই। এই
মেয়েটা আমার ছোটবোন। ওর একমাত্র কাজ আমার আহম্মকি কর্মকাণ্ড নিয়ে
হাসাহাসি করা। আমাকে আহম্মক প্রমাণ করাতেই যেন ওর সব আনন্দ!

চা খাওয়া শেষ। রাস্তার কোথায় কি আছে তা বোঝা মুশকিল। খুব সাবধানে পা
ফেলতে হয়। একটু এদিক ওদিক হলেই ড্রেনের মধ্যে চুবনি খেতে হবে। এই
মুহূর্তে অবশ্যই ড্রেনে চুবনি খেতে চাচ্ছিনা। গেঞ্জি আর প্যান্ট শরীরের
সাথে লেপ্টে গেছে। অস্বস্তি লাগছে খুব। বাসায় ফিরতে হবে। কয়েকদিন
আগে একটা সিনেমায় দেখেছি নায়ক প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে হেলেদুলে
হাঁটে। ব্যাপারটা বেশ লেগেছিল আমার কাছে। প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে
আমিও হেলেদুলে হাঁটতে লাগলাম।

বাসার সামনে এলাহি কাণ্ড। লোকজন রাস্তার উপরেই মাছ ধরছে। নানান জাতের পুঁটি
মাছ। মহিলাকে দেখলাম গান গাইতে গাইতে হাঁটছে। সেদিন দেখা সিনেমায় নায়িকার
স্টাইল এমন হওয়া উচিত ছিল। আমি যদি কখনও সিনেমা বানাই তাহলে নায়িকাকে দিয়ে
এমনভাবে হাঁটাবো।

দুপুর হয়েছে। খেতে হবে অবশ্যই। গত দু'বেলা অলসতার জন্য খাওয়া হয়নি।
ভেজা অবস্থায় হোটেলে বসে খেতে ইচ্ছে করছে। মানুষের বিরক্তির কথা
চিন্তা করে মন সায় দিলনা। তার থেকে খাবার নিয়ে বাসায় চলে যাব। কাপড় পাল্টে
আরাম করে খাওয়া যাবে। অন্তক খাবারের সময়টা মানুষের আরামে থাকা উচিত।
প্রতিদিন যে হোটেলে খাই সেটা বন্ধ। নিশ্চয়ই সবাই বৃষ্টিবিলাসে! খাওয়া নিয়ে
দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। বাম দিক থেকে একজন ডাক দিয়ে বলল, "আসেন ভাই
আসেন। গরম গরম ভাত খান"। না আমাকে বলেনি হোটেলের কর্মচারী কথাটা
সবার উদ্দেশ্যে বলেছে। আমি এই হোটেলে কখনও ভাত খাইনা। আমার মতে,
শহরের সবথেকে বাজে হোটেল এটা। আজ কিছুই করার নেই। মাথার মধ্যে
শহিদ স্যারের সেই উক্তিটা নড়েচড়ে উঠল, "উপায় নেই গোলাম হোসেন, খাল
সাঁতরাও"। আর কিছু না ভেবে হোটেলে ঢুকলাম। ম্যানেজারকে বললাম পার্সেল
দিতে। হোটেলের সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে। ছাতা ছাড়া এই ঝুম বৃষ্টির
মধ্যে আমি এইসব নিয়ে কিভাবে যাব সবাই এটা চিন্তা করে অবাক হচ্ছে। যেহেতু
আমরা বাঙালি সেহেতু আমার থেকে এই চিন্তা এখন তাদের বেশি।

দশ টাকার ভাত আর ৩৫ টাকার মুরগির মাংস নিয়ে বৃষ্টিতেই হাঁটছি। কানের মধ্যে খিলখিল
হাসির শব্দ! চমকে উঠলাম। পাশ থেকে এক কিশোরী যাচ্ছে। তার হাসার কারন
আমার হাতে থাকা ভাত আর মাংসের ভিজে যাওয়া। বৃষ্টিভেজা কোনো কিশোরীর
দিকে বেশিক্ষন তাকাতে নেই। প্রেমে পড়ে যাবার ভয় থাকে। অনেক কষ্টে
গিয়ে বাসায় উঠলাম।
ঝুম বৃষ্টির মধ্যে গরম গরম ভাত আর মুরগির মাংস! যত স্বাদই লাগুক না কেন খুব দ্রুত
ভুলে যাব। কিন্তু সেই কিশোরীর খিলখিল হাসি (!) না, বাঙালি কিশোরীদের হাসি এত
সহজে ভোলা যায়না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.