নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মঞ্চ এবং জীবন দুই এর মাঝে মঞ্চের কাছেই প্রেম বেশি ঋণী। মঞ্চে অভিনীত প্রেম অধিকাংশে মিলনান্ত, সিমীত ক্ষেত্রে বিয়োগান্তক। কিন্তু বাস্তব জীবনে প্রেম অত্যন্ত ক্ষতিকর। সেখানে তার আবির্ভাব কখনও মায়াবিনীর বেশে, কখনও প্রলয়ংকরী মূর্তিতে।
বিশেষ ভাবে প্রাণীধানের ফলে দেখা যাবে যে প্রাচীন অথবা সাম্প্রতিক স্মরনীয়, মহৎ ও গুনীদের কেউ প্রেমের নামে পাগল হন নাই। এতে বোঝা যায় যে যারা মহৎ চিন্তা এবং বড় কাজের ব্যাপৃত থাকেন তারা নিজেদের এই দুরবলতা থেকে যথা সম্ভব দূরে রাখেন। তাই বলে ব্যাতিক্রম একেবাড়েই নেই বলা যায়না। যেমন Murcus Antonius যিনি অর্ধ রোম সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন এবং Appius Claudius যিনি ছিলেন রোম সাম্রাজ্যের শাষন পরিষদের অন্যতম সদস্য এবং বিখ্যাত আইন প্রণেতা। প্রথমোক্ত ব্যাক্তি বাস্তবে অত্যধিক ইন্দ্রীয় পরায়ণ ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যাক্তি তো কঠিন নিয়ম নিষ্ঠ ও জ্ঞানী বলে খ্যাত ছিলেন। রোমের উপকথা অনুসারে তিনিও অনূরা Virginia এর সৌন্দর্যে আত্মহারা হয়ে নিতান্ত অসংযত আচরণ শুরু করেছিলেন। যার ফলে দেশে একটি গণ অভ্যুথান পর্যন্ত হয়েছিল। অতএব দেখা যায় প্রেম শুধু অসাবধান ও উন্মূক্ত হৃদয়ের ব্যাক্তিকেই গ্রাস করেনা, বিশেষ সতর্কতার অভাব হলে এটা সুরক্ষিত মনেও নিজের জন্যে প্রবেশ পথ খুঁজে নেয়।
এপিকিউরাস (Epicurus) যে বলেছেন, আমরা দুজনই একটি বিরাত রংগ মঞ্চের জন্যে যথেষ্ট সে কথাকে তেমন গুরুত্ব দেয়া চলেনা। তা হলে প্রতিপন্ন হবে যে আকাশ ও পৃথিবী সম্পর্কে কত সব মহৎ চিন্তার জন্যে সৃষ্ট মানুষের একমাত্র কাজ হলো আপন প্রেমাষ্পদের পূজা করা এবং নিজেকে নিজের চোখ দুটির ভৃত্যে পরিণত করা। এবং এ আচরণের আর পাণব আচরণের মাঝখানে তফাৎ হবে শুধু তার প্রেয়সীকে দু নয়ন ভরে দেখা অথচ স্রষ্টা মানুষকে চোখ দিয়েছেন মহত্তর উদ্যেশ্যে। সত্যি, ভেবে আশ্চর্য হতে হয় যে, প্রেমের দুর্বলতা সব কিছুর অন্তর্নিহিত শক্তি এবং মূল্য কিভাবে এবং কতদূর নস্যাৎ করে দিতে পারে। কথার সৌন্দর্য এবং অতিরঞ্জন প্রেমের ক্ষেত্রে যেমন মানায় তেমন বুঝি আর কোথাও মানায় না। আর শুধু কথার বেলায় নয় চিন্তার বেলায় ও। সাধারণ তোষামোদ কারীদের ভিতরে যে ওস্তাদ তোষামোদ কারীর পদবাচ্য তার কথাকে অন্তর থেকে উতসারিত কথা বলে মনে হয়। কিন্তু প্রেম নিবেদনের ভাষা তার চেয়ে আরো বেশি কিছু দূর এগিয়ে যায়। অহংকারী মানুষ সাধারণতঃ নিজের সম্পর্কে অসম্ভব পর্যায়ের ভালো ধারনা পোষন করে কিন্তু প্রেমিক তা প্রেমাষ্পদ সম্পর্কে তার চেয়ে বেশি ভালো ধারনা পোষন করে। তাই মনে হয় একই সাথে প্রেমিক হওয়া এবং জ্ঞানী হওয়া যায়না বলে যে একটা কথা আছে তা অতি সত্যি। আর প্রেমিকের এই যে দুর্বলতা তা শুধু অন্যদের কাছে নয় প্রেমাষ্পদের কাছে ও ধরা পরে। এবং প্রেমাষ্পদের কাছেই সবচেয়ে নগ্ন ভাবে ধরা পরে যদি না প্রেমাষ্পদের পক্ষ থেকে প্রতিদানে আবার প্রেম না আসে।
প্রেমের সত্যিকার ধর্ম এই যে প্রেমিকের ভাগ্যে পুরষ্কার হিসেবে হয় আসবে প্রেমাষ্পদের ভালোবাসা না হয় আসবে প্রেমাষ্পদের অন্তর্নিহিত ঘৃনা। এই যে আসক্তি শুধু তার জন্যেই, অন্য কিছুর জন্যে নয়। এমনকি নিজেকেও হারিয়ে ফেলার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা। সে সম্পর্কে কবির বর্ণনা মতে আমরা সুন্দর প্রতিফলন দেখতে পাই। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায় ইলিয়াডের (Illiad) প্যারিস সুন্দরী হেলেনকে লাভ করতে গিয়ে যুনোর ডান শক্তি আধিপত্য এবং মিনার্ভা (Minereva)র ডান শক্তি হারিয়েছিলেন। বস্তুতঃ যে ব্যাক্তি কারো প্রেমকে বেশি মূল্য দেয় তাকে যুগপৎ ঐশ্বরয্য ও জ্ঞান হারাতে হয়। আর মানুষের মনোরাজ্যে যখন বিশেষ দুর্বলতার মুহূরত আসে যেমন সম্পদের বা বিপদের সময়ে তখন যেন প্রেমের আসক্তি তার প্রাবল্য নিয়ে আসে। এই দুটি সময়ে মানুষের মনে প্রেমের আগুন যেন সহজে প্রজ্বলিত হয় এবং প্রেম যেন জমেও ভালো। এতে প্রমানিত হয় প্রেম হলো নিরবুদ্ধিতা স্বরূপ। অবশ্য মানুষের দুর্ভাগ্যের সময়ে প্রেমাসক্তি অপেক্ষাকৃত কম হয়ে থাকে। তারাই কিন্তু সবচেয়ে ভালো করেন যারা নিজেদের মনের উপর প্রেমের প্রভাবকে প্রতিরোধ করতে না পারলেও অন্ততঃ সে প্রভাবকে যথাসম্ভব সীমাবদ্ধ এবং জীবনের কঠিন বাস্তব বিষয়াদি ও কাজ কর্মের দিক থেকে সম্পূর্ণ শুন্য করে রাখেন। প্রেম ঘটিত ব্যাপার যদি বিষয় কর্মের সাথে পরে তা হলে মানুষের সম্পদ ও সৌভাগ্য বিপন্ন হয় ও মানুষের কর্তব্যপরায়নতা বিঘ্নিত ও বিনষ্ট হয়। কারন বলতে পারিনা তবে দেখা যায় যুদ্ধে ব্যাপৃত লোকেরা সর্বদাই প্রেমের ব্যাপারে লিপ্ত থাকেন। মনে হয় তাদের জন্যে প্রেমাসক্তি ও পানাসক্তি একই রকমের ব্যাপার। বিপদে ভাবনাকে ভুলে থাকার জন্যে আনন্দের মাদকতার প্রয়োজন।
মানুষের প্রকৃতিতেই অপরকে ভালোবাসার প্রবৃত্তি নিহিত রয়েছে। সেই প্রকৃতি যদি ব্যাক্তি বিশেষে বা সীমিত সংখ্যার মানব মানবীর প্রতি প্রসারীত হবার পথ না পায় তা হলে তা স্বাভাবিক ভাবেই তা বহুর প্রতি প্রসারীত হওয়ার জন্যে পথ খুঁজে ফলে মানুষ দয়ার্দ্র চিত্ত ও উদার পন্থী হয়ে থাকে। বিত্তহীন ও নিষ্ঠাবান অনেক সাধু সন্যাসীর বেলায় এই সত্য প্রকট হয়ে থাকে।
বিবাহীত জীবনের প্রেম মানুষকে সত্যিকার মানুষ হতে সহায়তা করে। বন্ধুত্বের প্রেম ভালোবাসাকে অকৃত্রিম করে তুলে।
কিন্তু স্বকাম ও অপবিত্র ভালোবাসা প্রেমকে নিম্নস্থরে নিয়ে যায়।
০৯ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৬
আমি মিহু বলেছেন: আপনার কথার পক্ষ নিয়েই বলি, ফ্রান্সিস ব্যাকন ও চেষ্টা করেননি ব্যাখ্যা করতে। উনি বলেছেন এটা সবার মধ্যেই আসতে পারে। তবে কোন ব্যাক্তি কেন্দ্রীক ভালোবাসা সামগ্রীক ভালোবাসাকে কমিয়ে দেয়। তাই ব্যাক্তি কেন্দ্রীক ভালোবাসা থেকে সাবধান হতে বলেছেন। আর বিবাহের পরের প্রেম ও বন্ধুত্বের প্রেমের পক্ষে বলেছেন।
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:০৯
বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: পোস্ট ভালোলাগলো। কিন্তু এইসব ব্যাপার সম্পর্কে ধারনাই করা যায়, সমীকরন জুড়ে দেয়া যায়না। প্রেম একটা অন্যরকম ব্যাপার, একেক মানুষের কাছে উপলব্ধি একেকরক হবে। মানুষ হলে তা সে যে চরিত্রেরই হোক, এটা তাকে আকর্ষন করবে, কিন্তু কেন করবে এটার ব্যখ্যা খোজা অনর্থক ব্যাপার হবে।