নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই ব্লগের সকল লেখা একান্তই আমার নিজস্ব মতামত ও আমার ভাললাগা। সবার ভাল নাও লাগতে পারে। কারও কিছু খারাপ লাগলে আমি অত্যান্ত দুঃখিত।

আনন্দ ধারা

আমি আনন্দধারা। লিখতে ভালবাসি। ভালবাসি অনলাইনে ঘুরে বেড়াতে।

আনন্দ ধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনের বিবর্তন ধারা

০৪ ঠা জুন, ২০১৮ ভোর ৬:৫২

নিজের কথাই বলি। হয়ত কারো সাথে আমার মতামত মিলে যাবে, হয়তোবা কেউ এসব নিজের গায়ে মেখে নিয়ে আমাকে দোষী করবে। আবার কেউ হয়ত প্রতিটা লাইনের কাউন্টার মূলক মন্তব্য করবে। তাই বলছি এসব একান্তই আমার নিজের কথা, কাউকে ছোট করা বা নিজেকে মহৎ বানানোর উদ্দেশ্যে নয়। না কারো কাছে সমবেদনা বা করুন, না কারো কাছে কোনরূপ কটাক্ষ বা ভালোবাসা চাই। নিজে হালকা হবার জন্য লিখি। তাই লিখি, শুরু করি তাহলে,,,,

যখন খুব ছোট ছিলাম বাবা মা বড় ভাই বোনের স্নেহ, ভালোবাসা, কেয়ারিং, শাসনে বড় হয়েছি। তখন ভাবতাম কবে আমি বড় হব, নিজের ইচ্ছায় চলতে পারবো, কোন কিছু করার জন্য কার কাছে জবাবদিহি করতে হবে না? খুব অপেক্ষায় ছিলাম বড় হবার। সবার ভালো শাসন গুলোকে তখন মনে হত বাঁধা। কোনো সময় মনে হয়েছে বড়রা কত সুখী তারা নিজের ইচ্ছে মত চলতে পারে ! তখন বুঝতাম না এই শাসন-বারণ গুলোই আমার পরবর্তী জীবনের চলার পথের শক্তি হয়ে কাজ করবে। ভালো-মন্দ, ভুল-ত্রুটি গুলো বুঝতে শিখাবে।
যখন বড় হতে থাকলাম তখন আস্তে আস্তে এসবের সাথে মানিয়ে চলা শিখে গেলাম। বুঝলাম এমন কিছু করা যাবে না যা ফ্যামিলির মানসন্মানের উপর আঘাত হানে। ঠিক তখনই শুরু হল জীবনের আরেকটি অধ্যায়। এই অধ্যায়ের নাম দিলাম সেক্রিফাইস। হ্যাঁ, নিজের ইচ্ছা করলেও এমন কিছু করা যাবে না যা অন্যকে কষ্ট দেয়। এটাই তো সেক্রিফাইস তাই না?

আমার মনে আছে দাদা আমাকে 24 ঘন্টা নজরে রাখত। কোথায় যাই, কার সাথে কথা বলি এমন কি কলেজে গেলেও নজরে রাখত। ঐ সময় আমার বান্ধবীরা একা একা সব জায়গাতে যেত। কিন্তু আমি একা কোথাও যেতে পারতাম না। ভীষণ রাগ হত দাদার উপর। মনে মনে ভাবতাম যাদের বড় ভাই নেই তারা অনেক হ্যাপি। সময়ের সাথে সাথে মানুষের বুঝার ক্ষমতাও বদলে যায়। সেই সময় একটা জিনিস দেখেছি মেয়ে হিসেবে অন্যরা যখন ছেলেদের কাছে ইভটিজিং এর শিকার হত তখন এই দাদার কেয়ারিংয়ের জন্য আমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহসও পেত না।

ঢাকায় এসে যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম তখন বুঝতে পারলাম দাদার সেই কেয়ারিংটা কি দরকার ছিল। একা একা ভার্সিটিতে যেতে ভয় লাগত। নিজেই নিজের দায়িত্ব নেয়াটা এত সহজ না। মানুষিক একটা চাপ মাথায় থাকত সব সময়। যে চাপ দাদা এতদিন বহন করে এসেছে। সত্যিই এটা কঠিন ছিল।

এবার শুরু হল জীবনের আরেকটি অধ্যায়। এই অধ্যায়ের নাম দিলাম রেস্পনসেবলিটি। নিজের দায়িত্ব নিজের যখন বহন করতে হল তখন বুঝলাম আমি বড় হয়েছি। ভেবে দেখলাম সেই ছোটবেলাতেই তো ভালো ছিলাম, কোনো দায়িত্ব ছিল না, কোন চিন্তা ছিল না। বড় হওয়াতে তো আসলে সুখ নেই! কিন্তু এখন এই কথা ভেবে লাভ কি? মানুষ তো আর পেছনে ফিরে যেতে পারে না। সময়ের সাথে সাথে সামনের দিকেই যেতে হয়। কি আর করার, মেনে নিলাম। আর তো কোনো অপশন নেই না মানার। যাই হোক,,,

বড় হলে মানুষের স্বপ্ন গুলোও বড় হয় বা বদলে যায়। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল সেলফ ডিপেন্ডেড হব। সবাইকে নিজের ইচ্ছে মত কিছু কিনে দিব। কাজ বা টাকার জন্য কারো কাছে দয়া নিব না। পারলে নিডি মানুষদের পাশে দাঁড়াব। পড়াশুনায় খারাপ ছিলাম না। বন্ধু-বান্ধব বলতে ফ্যামিলির মধ্যেই ছিল। ড্যামকেয়ার ভাব, বাইরে ঘোরাফেরা, অশালীন আচরণ এসবের ধারের কাছেও ছিলাম না। এসবই ছিল ফ্যামিলির শিক্ষা। সুতরাং ব্রাইট ফিউচার সামনেই ছিল। তবুও জীবনে কিছু হতে পারিনি নিজের একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য। এই প্রসঙ্গটা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেলাম, কারণ আগেই বলেছি বিতর্কিত কোনো কিছু লিখবো না।

আমার ধারণা মেয়েরা যতই সেলফ ডিপেন্ডেড হোক না কেন তারা যখন থেকে বুঝতে শিখে তখন থেকে একটা সংসারের চিন্তা করে। যে সংসারে সে বড় হয়, সে জানে এমন একটা সংসার একদিন তার নিজেরও হবে। প্রত্যেকটি মেয়ের মাঝেই তার নিজের সংসার কল্পনাতে সাজানোর একটা প্রবৃত্তি থাকে। যে মানুষটার সাথে বন্ধনে সে আবদ্ধ হবে সেই মানুষটা তার বাবার মত কেয়ারিং, লাভিং পার্সন হবে। নির্ভরশীলতা হয়ত মেয়েদের একটা বন্ডিং। তাই যতই সে স্বনির্ভর হোক তবুও সে চায় তার বাবার পরেই তার আশ্রয় হবে তার স্বামী। যার কাছে সে পৃথিবীর সব চেয়ে নিরাপত্তা পাবে। যে তার সমস্ত কিছুর আশ্রয়স্থল হবে। ভুল করলেও কোনদিন দূরে সরিয়ে দিবে না। শুধরে দিয়ে কাছে টেনে নিবে। ইগো নামক কোন দুর্গন্ধময় জিনিজ সে সম্পর্কে থাকবে না। বিশ্বাস আর আস্থার ও কেয়ারিং এর সমন্বয়কেই বলে ভালোবাসা। এটাই সম্পর্ক। এটাই ফ্যামিলি। প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন থাকে এমন হবে তার সংসার।

কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে খুব কম সৌভাগ্যবানের কপালে এমন সংসার জুটে। তবুও কোন মেয়ে চায় না সংসার ছেড়ে যেতে। যারা যায় তারা কতটা বাধ্য হয় এই কাজ করতে এটা শুধু তারাই বুঝে, অন্য কারো বুঝার ক্ষমতা নেই। কিন্তু সবাই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে অনেক অনেক জ্ঞান, উপদেশ, ভালো মন্দ, ভবিষ্যৎবাণী বলে যেতে ভুল করে না। আমরা মানুষরা এই কাজগুলো খুব ভালভাবে নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।

যাই হোক প্রসঙ্গ থেকে সরে যাচ্ছি, আবার ফিরে আসি। বয়সের সাথে সাথে মানুষের চিন্তা ভাবনারও পরিবর্তন হয়, আবার সময় পরিস্থিতি পরিবেশও মানুষকে বদলে দেয়। সময়ের সাথে সাথে এই বদলে যাওয়াটাই জীবন। আর এই সত্যটা যত সহজে মেনে নেয়া যায় জীবন তত সহজতর হয়। কিন্তু এটা বুঝতে মানুষ তার জীবনের অর্ধেক সময় ব্যয় করে ফেলে। কেউ কেউ আবার আজীবনেও বুঝতে পারে না।

আরও একটি ব্যাপার হল সত্য ও ন্যায়ের পথ। সত্যের অনেক বড় শক্তি যার কাছে হাজারটা মিথ্যা হেরে যেতে বাধ্য। তবে এটাও ঠিক সত্যের পথ সব থেকে কাঁটাযুক্ত, সেই পথে হাঁটতে গেলে দু'পা ক্ষতবিক্ষত হবেই। তবুও ডেডইন্ড এ সর্বশক্তিমান আল্লাহর আলোক-উজ্জ্বল কৃপাদৃষ্টি দেখতে পাওয়া যায়। আর মিথ্যার পথ মসৃন হলেও ডেডইন্ড এ অনন্ত অন্ধকার ছাড়া কিছুই নেই।


পরিশেষে আজ আমার অঢেল নেই। যা আছে তাই দিয়ে সম্মানের সাথে চলে যেতে পারছি। শুধু এতটুকুই বৈষয়িক চাওয়া ছিল আমার জীবনের কাছে। এর থেকে বেশি কিছু নয়। চরম কষ্টের দিনগুলোতেও হার মানিনি মিথ্যার কাছে, মান অভিমান, দুঃখ কষ্ট, অভিযোগ সব শুধু আল্লাহর কাছেই জানিয়েছি। প্রতি মোনাজাতে শুধু এই একটি কথাই তাঁকে বলেছি, "হার আমি মানবো না কোনো মানুষ বা পরিস্থিতির কাছে, আমিও দেখতে চাই তুমি আমাকে কত কত পরীক্ষা নিতে পারো, আমি রেডি, তুমি যত আমার পরীক্ষা নিবে আমি তত দৃঢ় হব নিজের কাছে। এটাই ঈমান। ভয় পাই না আমি। কারণ আমি জানি তুমি সত্যের সাথে সব সময় ন্যায় করো। আর আমার সব থেকে বড় শক্তি হল সত্য। তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া আমাকে সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পথে রাখো। আমিন"

আম্মার কাছে এই শিক্ষা পেয়েছিলাম। আম্মার মৃত্যুর আগে বেশ কিছু সময় আমি আম্মার সান্নিধ্যে ছিলাম। তখন বলেছিলেন, "প্রশ্ন যদি করতে হয় আল্লাহর কাছে করো, অভিযোগ করতে হলে তাও তার কাছে করো, তুমি নিজেও কল্পনা করতে পারবে না আল্লাহ তোমাকে কি সুন্দর করে সব প্রশ্নের জবাব দিবেন। মানুষ তার কর্মের ফল এই পৃথিবীতেই পেয়ে যায়। পার্থক্য শুধু সবার সেটা বুঝার ক্ষমতা থাকে না। সর্বশক্তিমান আল্লাহকে যখন তুমি তোমার কাজের মাঝে, জীবন চলার পথে অনুভব করবে তখন কোন মানুষের হেল্প তোমার লাগবে না। সব কিছু সহজ হয়ে যাবে। ঠিক তখনি তুমি তোমার সব উত্তর পেয়ে যাবে।"

আজ এত বছর পর আম্মার কথার প্রতিফলন পাচ্ছি নিজের জীবনে। আলহামদুলিল্লাহ। ভালো থাকুক সবাই এটাই প্রার্থনা করি।
আমীন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ সকাল ৮:২৭

নীল মনি বলেছেন: আমি লেখাটি পড়লাম। তার মনে পাহাড়সম ব্যথা। সে ব্যথাটা লুকাতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। তার দু:খের সাথে দারুণ অভিমান তাই বার বার দিক হারানোর মত গতিপথ বদলে যাচ্ছে।
শুনুন সাহস হারাবেন না। আল্লাহ্‌র উপর শতভাগ ভরসা রাখুন। মনে রাখুন নিশ্চয় কষ্টের পর স্বস্তি আছে। ইন শা আল্লাহ। আমার জীবনে অনেক না পাওয়া আছে কিন্ত কখনো অভিযোগ করিনি কারণ তিনিই আল্লাহ্‌ এবং আমাদের অভিভাবক এবং উত্তম ফয়সালাকারী যা ভালো মনে করেছেন বান্দার জন্য ঠিক তাই ঘটবে। সর্বাবস্থায় মনোবল দৃঢ় রাখবেন। আল্লাহ্‌ ইন শা আল্লাহ আপনাকে ও আপনার পরিবারকে নিরাপদে রাখুন ;সকল কষ্ট যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার করুন। আমিন।

২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ সকাল ৯:১০

রাজীব নুর বলেছেন: তুমি আছো জেগে-
যে আকাশ জ্বলিতেছে,তার মতো মনের আবেগে
জেগে আছো;

___জীবনানন্দ দাশ

৩| ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৩৪

লাবণ্য ২ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন আপি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.