নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্তাক্ত ৪ আগস্ট: স্বৈরাচারের কবরে শেষ পেরেক !

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:১২


২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি দিন। এই দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে সারাদেশে কমপক্ষে ৯৩ জন মারা যান । তাদের রক্তের বিনিময়েই পরদিন 'মার্চ টু ঢাকা'র পথ সুগম হয়েছিল। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল এই ৪ আগস্ট থেকেই।

দিনটি শুরু হয়েছিল তুলনামূলক শান্ত পরিবেশে। কিন্তু দুপুরের পর থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। স্বৈরাচারী সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এবার মাঠে নামে সাধারণ জনগণ। শুধু ছাত্র-ছাত্রী নয়, এবার অভিভাবক, শিক্ষক, দিনমজুর, সমাজকর্মী ও বিভিন্ন পেশাজীবীরাও যোগ দেন এই সংগ্রামে। ঢাকার শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, ধানমন্ডি-২৭, মিরপুর-১০, উত্তরা, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। এটি ছিল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণ।

বিকেল ৩টার দিকে শাহবাগে দাঁড়িয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা করেন চূড়ান্ত লক্ষ্য। তিনি বলেন, "আমাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও গন্তব্য এক- বিজয় ছাড়া কিছু নয়। আমরা এখনো সময় দিচ্ছি। সরকার যদি সহিংসতা চালিয়ে যেতে থাকে, আমরা জানিয়ে দিতে চাই, আমরা গণভবনের দিকে তাকিয়ে আছি।" তার এই বক্তব্য ছিল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, "যদি আমার ভাইদের বুকে গুলি করা হয়, যদি আমার বোনেরা আর আহত হয়, তাহলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলুন।" এই আহ্বান জনগণের হৃদয়ে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তিনি শিক্ষার্থীদের শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শহীদদের মরদেহ নিয়ে বের হয় এক আবেগময় মিছিল। ঢামেক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এই মিছিল যায়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা গর্জে ওঠেন বিপ্লবী স্লোগানে। "আমার ভাই মরলো কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই", "লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই", "দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ" - এই স্লোগানে কেঁপে ওঠে স্বৈরাচারের ভিত্তি। কিন্তু মিছিল শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছানোর পর পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।

শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেই দেখা দেয় গন জোয়ার। অন্তত ২০টি জেলায় জনগণ রাস্তায় নেমে আসেন স্বৈরাচারী সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে। এই সংগ্রামে মারা যান অসংখ্য মানুষ । লক্ষ্মীপুরে ৮ জন, ফেনীতে ৮ জন, বগুড়ায় ৫ জন, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ৫ জন, রংপুরে ৪ জন, সিলেটে ৪ জন মারা যান । রাজধানী ঢাকায়ই মারা যান অন্তত ১২ জন । তাদের রক্তে রঞ্জিত হয় মুক্তির পথ। বিভিন্ন এলাকায় সরকারদলীয় সমর্থক ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের তীব্র সংঘর্ষ হয়। শাহবাগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

দেশব্যাপী জনগণের এই জাগরণে ভীত হয়ে পড়ে স্বৈরাচারী সরকার। তারা জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি দমনমূলক পদক্ষেপ নেয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাজধানী, বিভাগীয় শহর, জেলা সদর, উপজেলা সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও শিল্পাঞ্চলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে। দ্বিতীয়বারের মতো সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৫ আগস্ট থেকে তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জনগণের দৃঢ় সংকল্প কোনো কারফিউ বা দমন-পীড়ন দিয়েই থামানো যায়নি।

দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি এবং দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এটি ছিল স্বৈরাচারের প্রতীকের বিরুদ্ধে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জেলার কোতোয়ালী থানা আক্রান্ত হলে পুলিশ গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এদিন একটি যুগান্তকারী প্রস্তাব পেশ করে। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য শিক্ষক, বিচারক, আইনজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়া চালুর আহ্বান জানায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবে বলা হয়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।

দিনশেষে পরিস্থিতির তীব্রতা দেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। তারা তাদের পরিকল্পিত ৬ আগস্টের 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচি একদিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করেন। সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ এক বিবৃতিতে বলেন, "পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ৬ আগস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট করা হলো।" তিনি দেশের সকল ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার আহ্বান জানান।

৪ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এদিনের ৯৩ জন মানুষের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। তাদের রক্তের বিনিময়েই পরদিন 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এই দিনটি প্রমাণ করে যে, জনগণের ন্যায্য দাবির কাছে কোনো স্বৈরাচারী শক্তিই টিকে থাকতে পারে না। এই অগ্নিঝরা দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে ।

বাংলা ট্রিবিউন /সোনালি নিউজ

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৪

অরণি বলেছেন: ৪ আগস্ট অফিস থেকে বাসা ফেরার সময় মনে হচ্ছিলো এই বুঝি শেষ আর বাসা ফেরা হবেনা। সব খানে গুলি আর গুলি।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সেদিন হিউজ গোলাগুলি হয়েছিলো ।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৬

কিরকুট বলেছেন: বীভৎস একটা দিন !!

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৫

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: এক বছর আপা ক্ষমতায় নাই এটা কি ভাবা যায়? কোথায় হারিয়ে গেলো আপার হাঁস গুলো?

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: তিনি বেঁচে আছেন। তাঁর কবরে পেরেক মেরে কি হবে?

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: স্বৈরাচারের কবরে শেষ পেরেক।আর কেউ যাতে এমন না হয় ।

৫| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৯

রাসেল বলেছেন: যুগে যুগে এভাবেই সাধারণ মানুষ নিজেকে উৎসর্গ করে, অপরদিকে চোর বাটপাররা এর ফল ভোগ করে। এখনো আশাবাদী, সাধারণ মানুষ ২০২৪ সালের ত্যাগের ফল পাবে, এছাড়া আর কিইবা করার আছে।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: লড়াই শেষ হয় নি। সামনে পথ আরো কঠিন।

৬| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৬

সপ্তম৮৪ বলেছেন: আল্লাহ যাহা করেন ভালোর জন্যই করেন।

৭| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:০৫

লোকমানুষ বলেছেন: এমন বীভৎস সময়ের মুখোমুখি যেন ভবিষ্যতে আর হবে না হয়।

৮| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:৩৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এখনো পিচাশদের একদলকে বলতে শুনি এটা সাজানো ঘটনা, এর জন্য দায় নিতে রাজি নয় ওরা!

৯| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:৩৪

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: স্বৈরাচারের কবরে শেষ পেরেক।আর কেউ যাতে এমন না হয় । নব্বইয়ে স্বৈরাচারের কবরে শেষ পেরেক মারা হয়েছিল। তারপর খালেদা ও হাসিনা স্বৈরাচার হয়েছেন। সুতরাং স্বৈরাচারের কবরে শেষ পেরেক মেরে মূলত কোন লাভ নাই।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:৩৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: খালেদা-হাসিনা বাদ। এবার ভোট দিবো জামাত কে। :)

১০| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:১২

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: খালেদা-হাসিনা বাদ। এবার ভোট দিবো জামাত কে। জামায়াত ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র বাদ দিয়ে খেলাফত কায়েম করবে। তখন তাদের দলের মজলিশ ই শুরা রাষ্ট্র নায়ক নির্বাচন করবে।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:১৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কিংবা এরদোয়ানের মতো টাউটগিরি করবে । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.