বোন দিবসে - আমার ছোট্ট আপুনসোনাকে!

০৭ ই আগস্ট, ২০১১ ভোর ৪:২৭

আজ আগষ্ট মাসের প্রথম রবিবার- সিস্টার'স ডে।তাই, আজ আমার বোনদেরকে লেখা যান্ত্রিক এক খোলা চিঠি।



তিতলী বুড়ী আর আপু,



এক্কেবারে ছোট্ট বেলায় আমার খুব দু্‌ঃখ ছিল- আমার দুলাভাই নাই আর একটা ছোট বোন নাই। দুলাভাই না থাকাটা এতো বড় বিষয় কেন ছিল জানিনা , তবে ছোট বোন থাকলে অনেক লাভ, সেটা দেখেছি।

পিচ্চি, আগে বাড্ডায় থাকার সময়, দুপুরে আম্মা বাসা থেকে বের হতে দিতেন না, তাই খেলতেও পারতামনা। একটা সাথী থাকলে খেলা যাবে,আমার ফুট-ফরমায়েস খাটবে, আমার সাথে খেলবে। সোজা কখা - আমার একটা হাতের কাছের চেলা পাওয়া যাবে( আর সেক্ষেত্রে ছেলেরা খুব একটা সুবিধার হয়না)। তুই ছিলি স্রষ্টার কাছে চাওয়া- আমার সেই কাঙ্খিত বন্ধু।

৮৮ সালের কথা। আমার বন্ধুর মা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন- তুমি কি চাও- ভাইয়া না আপু? এক সেকেন্ডের মাঝে উত্তর - বোন। বিধাতাকে জানাই ধন্যবাদ , আমার সৌভাগ্যের জন্য। তিনি আমাকে দিয়েছেন অতি সাধারন একটা বোন- সুশ্রবনকারীকে (আমার বোনের নামের অর্থ), আমার তিতলী বুড়ীকে।মানুষের নাম যে এতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা বিশ্বাস হয়না, তোকে না দেখলে। মজার ব্যাপার কি জানিস, আমি ভুলে যাই অনেক কথা, অনেক ঘটনা। তাই মাঝে মাঝেই তোর মনে করিয়ে দেয়া তথ্যই হয় , আমার সাক্ষী। (সত্যই সে সুশ্রবনকারী - যে আজ আমার বন্ধু, যাকে বলা যায় সব কথা। যে কিনা আবার অভিভাবকও, মাঝে মধ্যে আমারকে আবার জ্ঞানও দেয়। সে আমার সব কথা মন দিয়ে শোনে, পরে কোন এক সময়ে আবার মনে করিয়ে দেয়।) )



আপু,জানেন- যত বড় হলাম , ততই অনুভব করলাম একটা বড় বোনের অভাব। ততদিনে আমার খেলার সাথী অথবা চেলার প্রয়োজন, ছাড়াও একজন পরামর্শদাতার প্রয়োজন। স্রষ্টার অশেষ কৃপা। এই মাঝ বয়সে আমার সেই সাধও পূরণ হলো। দেখা পেলাম আপনার, সাথে দুলাভাই আর দুইটা ভাগ্নী ফ্রী।(ফুলের নামে নাম এক অসাধারন মানুষ , আপু আর দুলাভাইয়ের সাথে সক্ষ্যতা- হোষ্টেলে থাকার সময়ে।), চলমান সময়ে , আপনাদের এই পাশে থাকাটা তেমন ভাবে অনুভব করিনি। বাধঁনটা রক্তের না হওয়ার কারনে অধিকারবোধটা যেন কেমন আলগা ছিল। কিন্তু একদিন হঠাৎ, আমার এক অচেনা বিপদের দিনে, অজানা গন্তব্যের পথে আমি জেনেছি- এই আপনারা দুটো মানুষ আমার না বলা সব কথা কেমন করে যেন জেনে ফেলেছেন। বুঝে নিয়েছেন, আমাকে, যা হয়তো পারেনি যারা আমাকে চেনে আমার জন্মলগ্ন থেকে ।



পিচ্চি আর আপু, "সে আমার ছোট বোন, বড় আদরের ছোট বোন"- গানটা মান্না দে যেন তার ভালোবাসার, আদরের এক বন্ধুর জন্য গেয়েছিলেন। যখন জেনে ছিলাম , এটা মান্না দে'র জীবনের সত্য ঘটনা । সেদিন থেকে আর গানটা শুনতে ভালোলাগতোনা। মনে হতো যেন -সময়ের কাছে হাত কড়া পরা এক অসহায় ভাই । আমি মান্না দে'র অবস্থান কল্পনা করে শিউরে উঠি, ভাবি মনে মনে, আমাকে যেন বিধাতা কোন দিন এই পরীক্ষার মুখোমুখি না করেন। যদি কোন এক আগষ্টের প্রথম রবিবারে , তোমাদের মনে পরে আমাকে- জেনে রেখ, তোমাদের আমি খুব ভালোবাসতাম।

তোমাদের .......।



[আমার এই ব্লগ লেখা, আমার এই প্রিয়মানুষগুলো থেকে লুকিয়ে রাখা একমাত্র পরিচয়।কেন যেন মনে হয়- থাকনা আমার পরিচিতের গন্ডির বাহিরে কোন এক অজানা চেহারা। যেদিন আমি থাকবোনা- সবার মাঝে, আমাকে যারা ভালোবাসে, হয়তো তারা কেও একজন খুজে পাবে আমার এই যান্ত্রিক চিঠি। জানবে আমার না বলা ভালোবাসার পৃথিবীটাকে।]

৬ টি +২/-০