![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
সুলতান মাহমুদ গজনী (৯৭১-১০৩০ খ্রি.), ইতিহাসের এমন একটি নাম যা আজও বিতর্কের জন্ম দেয়। কেউ তাকে দেখেন ইসলামের একজন মহান যোদ্ধা ও বিজেতা হিসেবে, আবার সমালোচকরা তাকে চিহ্নিত করেন একজন নিষ্ঠুর লুটেরা ও ধ্বংসকারী হিসেবে। যখন আমরা তার জীবন ও কাজকে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করি, তখন দেখতে পাই তার মূল লক্ষ্য ছিল ধর্ম নয়, বরং অর্থ ও ক্ষমতা অর্জন।
গজনীর শাসক হিসেবে সুলতান মাহমুদ তার রাজ্যকে এক বিশাল সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত করেন। তার শাসনামলে গজনী ছিল একটি ছোট, পার্বত্য শহর। এই শহরকে একটি সমৃদ্ধ, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করার উদ্দেশ্যেই তিনি ভারতে বারবার আক্রমণ চালান। "ক্যামব্রিজ হিস্টোরি অফ ইন্ডিয়া" অনুযায়ী, গজনীর এই সমৃদ্ধির প্রধান উৎস ছিল ভারত থেকে লুট করা সোনা, রুপা এবং অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ। মাহমুদ প্রতিটি আক্রমণকে ‘জিহাদ’ বা ধর্মযুদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন করলেও, তার আসল লক্ষ্য ছিল ভারতের বিপুল সম্পদ লুট করা। ভারতের তৎকালীন রাজনৈতিক বিভাজন এবং দুর্বল হিন্দু রাজাদের মধ্যেকার কোন্দল তাকে সহজেই বিজয় এনে দেয়।
সুলতান মাহমুদকে অনেকে ধর্মপ্রচারক বললেও, তার কর্মকাণ্ড প্রকৃত ধর্মীয় নীতির সঙ্গে মেলে না। ১০০০ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি ভারতে ১৭ বার অভিযান চালান। সোমনাথ মন্দিরে তার একমাত্র আক্রমণেই প্রায় দুই কোটি দিনার লুট হয়। ইতিহাসবিদদের হিসাব অনুযায়ী, তার মোট লুটের পরিমাণ ছিল ট্রিলিয়নের কাছাকাছি। এই লুট শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতা দৃঢ় করার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তার সেনাবাহিনী লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে বা বন্দী করে বিক্রি করে, যা মানবিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তার দরবারের ইতিহাসবিদ আল-উতবি তার "তারিখ-ই-ইয়ামিনি" গ্রন্থে লিখেছেন যে "কাফেরদের রক্ত এত বেশি প্রবাহিত হয়েছিল যে নদীর পানি রঙিন হয়ে গিয়েছিল এবং মানুষ তা পান করতে পারছিল না।"
প্রকৃত ধর্মপ্রচারকরা মসজিদ-মাদ্রাসা তৈরি করেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে ধর্ম প্রচার করেন। এর বিপরীতে, মাহমুদ ভারতে একটিও মসজিদ বা মাদ্রাসা তৈরি করেননি। ভারতীয় মুসলিমদের কল্যাণেও তিনি কোনো কাজ করেননি। তার একমাত্র কাজ ছিল মন্দির ধ্বংস করা এবং সম্পদ লুট করা। আল-বালাজুরি-এর "কিতাব ফুতুহ আল-বুলদান" গ্রন্থে উল্লেখিত আছে যে, আরব ব্যবসায়ীরা ৬১২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম মসজিদ কোডুঙ্গাল্লুর-এ তৈরি করেছিলেন, যা শান্তিপূর্ণ ধর্মপ্রচারের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। সোমনাথের শিবলিঙ্গের টুকরোগুলো গজনীর জামি মসজিদের সিঁড়িতে বসিয়ে দেওয়ার ঘটনা তার ধর্মীয় স্থানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলে
মাহমুদ গজনবীর চরিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি তার পৃষ্ঠপোষকতা। তিনি তার রাজধানী গজনীকে কেবল একটি সামরিক শক্তিকেন্দ্রই নয়, বরং একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক নগরী হিসেবেও গড়ে তোলেন। তার রাজদরবারে বহু কবি, পণ্ডিত ও দার্শনিকের সমাবেশ ঘটেছিল, যাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন মহাকবি ফেরদৌসী। ফেরদৌসী তার মহাকাব্য "শাহনামা"-এর জন্য মাহমুদের কাছ থেকে আংশিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন, যদিও এই গ্রন্থটি মূলত স্বাধীনভাবেই রচিত হয়েছিল এবং এতে প্রাক-ইসলামি পারস্যের গৌরবকাহিনি বর্ণিত হওয়ায় মাহমুদের ইসলামিক রাজনৈতিক আদর্শের সাথে কিছুটা বৈপরীত্য ছিল। এছাড়াও মাহমুদ গজনীতে মসজিদ, মাদ্রাসা ও গ্রন্থাগার নির্মাণ করে শিক্ষা ও স্থাপত্যের বিকাশে ভূমিকা রেখেছিলেন। এই সবকিছুই ইঙ্গিত দেয় যে তিনি কেবল একজন বিজয়ী সুলতানই নন, বরং সংস্কৃতির উন্নয়নে অবদান রাখা একজন জটিল ও বহুমাত্রিক শাসক ছিলেন।
মাহমুদের চরিত্রে তিনটি দিক স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রথমত, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি, যার যুদ্ধ কৌশল ও সেনা ব্যবস্থাপনা ছিল প্রশংসনীয়। দ্বিতীয়ত, তিনি ছিলেন একজন চতুর রাজনীতিবিদ, যিনি রাজনৈতিক বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা বিস্তার করেছিলেন। তৃতীয়ত, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো তিনি ছিলেন একজন নিষ্ঠুর লুটেরা, যিনি মানবিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় শ্রদ্ধা এবং সাধারণ মানুষের জীবনকে উপেক্ষা করেছিলেন। তার ধর্মীয় পরিচয় ছিল কেবল তার ক্ষমতা ও সম্পদ অর্জনের হাতিয়ার। মুহাম্মদ হাবিব তার "সুলতান মাহমুদ অফ গাজনিন" গ্রন্থে মাহমুদের অভিযানকে "ধর্মীয় যুদ্ধ" নয়, বরং "অর্থনৈতিক সন্ত্রাস" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মুঘল সম্রাট আকবরের প্রধানমন্ত্রী আবুল ফজল তার "আইন-ই-আকবরী" গ্রন্থে মাহমুদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেছিলেন যে এটি সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বের জন্য ক্ষতিকর।
সুলতান মাহমুদকে "ধর্মপ্রচারক" বলার কোনো সুযুক্তি নেই। তিনি ছিলেন একজন সুযোগসন্ধানী শাসক, যিনি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মের অপব্যবহার করেছিলেন। তার কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। তার আক্রমণে হাজার হাজার বছরের পুরাতন মন্দির ও শিল্পকর্ম ধ্বংস হয়েছে, যা ছিল অপূরণীয় ক্ষতি। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে চিরস্থায়ী বিভাজন তৈরি হয়েছে। ভারতীয় অর্থনীতির বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে বা দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েছে। তাই, ইতিহাসের সত্যিকারের শিক্ষা হলো, মাহমুদকে যা-ই বলা হোক না কেন, তিনি কখনোই একজন ধর্মপ্রচারক ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন সুযোগসন্ধানী শাসক যিনি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মের অপব্যবহার করেছিলেন।
Source: মুহাম্মদ নাজিম-এর "History of Mahmud Ghaznavi", এ. এল. ব্যাশাম-এর "The Wonder That Was India", এবং উপিন্দর সিং-এর "Early Medieval India and its Invaders"। এছাড়াও, আল-উতবি-এর "তারিখ-ই-ইয়ামিনি", আল-বালাজুরি-এর "কিতাব ফুতুহ আল-বুলদান", আবুল ফজল-এর "আইন-ই-আকবরী", মুহাম্মদ হাবিব-এর "Sultan Mahmud of Ghaznin", এবং আন্দ্রে উইঙ্ক-এর "Al-Hind: The Making of the Indo-Islamic World" ।
১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:০৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: উনাকে আমার ছোটোকাল থেকে ভালো লাগে না । ভারত বরষো কে খোকলা করে দিয়েছে ।
২| ১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:০৭
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: শুধু উনি না, মোগলসহ আরও যারা ছিল এরা কেউই ইসলামের জন্য আসেনি। ক্ষমতার জন্য নিজের ভাইদেরও হত্যা করেছে। আর এদের নারী লোলুপতা তো সর্বজনবিদিত।
১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:১১
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: জটিল বিষয় নিয়ে আলাপচারিতা থেকে বিরত থাকলাম; রাজাদের যুগ বড়োই কঠিন । সুলতান মাহমুদ ভারতের মুসলমানদের ও ঠকিয়েছেন ।
৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:৫৬
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: শুধু রাজা-বাদশাহ না, জমিদাররাও প্রজাবান্ধব ছিলেন। খাজনার জন্য নিপীড়ন চালিয়েছেন। এদের প্রতি সহানুভূতি আসার কথা না কারও।
১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:০০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কি কঠিন সময় মানুষ পার করে এসেছি আমরা ।
৪| ১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ ভোর ৪:০৬
কিরকুট বলেছেন: মুসলিমদের মানুষ ঘৃণা করার জন্য এরাই দায়ী
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫৬
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: এসব লুটেরাকে যারা ধর্মপ্রচারক ও বীর হিসেবে স্বীকার করেন, তারা নিজেরাও রক্তলোলুপ ছাড়া কিছু না। এদের দ্বারা ধর্মের ক্ষতি বৈ উপকার হয়নি।