নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হয়ে জন্মে যখন ফেলেছি, তাই নিরুপায় হয়ে মৃত্যুকে বরন করতেই হবে। পৃথিবীতে এসেছিলাম একা, জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে চলতে হয় একা, মরতেও হবে একা। তাই তো নিজের খুশি মতো বাচবার চেষ্টা করে চলেছি, আনন্দের সাথে। জন্ম নেবার সময় মাকে কষ্ট দিয়ে ছিলাম আর কিছু অক্ষমতার জন্য চলার পথে ইচ্ছে না থাকা সত্বেও কষ্ট দিয়েছি ভালোলাগা মানুষগুলোকে। তাই হয়তো পৃথিবীটা ছাড়বার সময় এদেরকেই আবার কষ্ট দিতে হবে ! তাই তো কেবল ভালোলাগার- ভালোবাসার এই মানুষগুলোকে গুরুত্ব দেই। সমাজ নামক জঞ্জালটাকে এড়িয়ে চলি আর প্রতিটা নিঃশ্বাসের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই সৃষ্টিকর্তাকে।
তুষারের দেশে আস্থার আশ্রয়.......।
প্রথম যখন এ্যলেন আর ববকে দেখলাম, কেন জানি খুব ভালো লেগেছিল। মনে হয়েছিল, আমি খুব নিরাপদ। আমার আর কোন ভয় নেই। খেয়ালও করিনি কোথায় আছি কিংবা এরা আমাকে পেল কোথায়? আমার কেবল মনে হয়েছে ছিল, আমার আর কোন ভাবনা নেই, আমি এবার আরামে ঘুমাবো।
ববকে অনেক পচ্ছন্দ করলেও আস্থাটা পুরোপুরি করতে ভয় পায় আনন্দ, ওর খামখেয়ালী আচরনের জন্য। কিন্তু এ্যলেন। নিজের চাইতেও বেশি ভরসা করে আনন্দ, এ্যলেনের ওপর। আস্থা শব্দটার সমার্থকশব্দই যেন এ্যলেন। মৃত্যুকে চোখের সামনে এগিয়ে আসতে দেখবার পর আর কোন কিছুই মনে ছিলনা আনন্দের, তাই তো এ্যলেন আর ববকে দেখে কতটা ভালো লেগেছিল আনন্দের তা সে নিজেও জানেনা। তাই হয়তো, কিছু বুঝে উঠবার আগেই আবারও ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। আসলে ওটা ঠিক জ্ঞান ফেরা ছিলনা, সামান্য তন্দ্রা কেটেছিল কেবল।
*****************************************************
এ্যলেন, যখণ অসুস্থ ছিল চেষ্টা করেছিলাম সাধ্যমত যত্ন করতে। নিজের একাকী জীবনে বেশ কবছর পর কেউকে যেন পেয়েছিলাম সেবা করবার মতো। আবার নিজের একাকী জীবনে এমন বিপদের আশংকাও যেন কিছুটা দূর্বল করে দিয়েছিল আমাকে। নিজের পরিবারের কোন আপনজনের স্থানেই বসিয়েছিলাম এ্যলেনকে, তাই হয়তো কোন কিছুই বোঝা মনে হয়নি। মনে হয়নি কোন বাড়তি কিছু করছি কারোর জন্য। সেটা যেন ছিল খুব স্বাভাবিক জীবনে চলার পথে ঘটে যাওয়া কাজ, যা আমার দায়িত্বের মাঝে পরে।
কাজ, পড়ালেখা, সাথে এ্যলেনের যত্ন নেয়া, প্রতি নিয়ত দুঃচিন্তা করা। রান্না করা, বাজার করা সাথে রাত জাগা। সব কিছু মিলিয়ে পরিশ্রমটা এতো বেশি হয়ে গিয়েছিল বোঝা যায়নি কেবল মানসিক শক্তির জোরে। পুরোপুরি সুস্থ হতে এ্যলেনের প্রায় দের মাস লেগে যায়। তখন শুরু হয় এ্যলেনের লেখাপড়ার চাপ, পিছিয়ে দেয়া ফাইনাল পরীক্ষা দেবার জন্য। পরের সেমিস্টারটারে এ্যলেনের কোন কোর্স নেবার দরকার ছিলনা, ওর কোর্সওয়ার্ক শেষ হয়ে গিয়েছিল, কেবল আন্ডারগ্রেড রিসার্চ ওয়ার্কের জন্য একটা প্রজেক্ট করা আর ওটার উপর একটা রিপোর্ট জমা দেয়া। তাই ভাগ্যক্রমে বেশি ক্ষতি হয়নি সেবার।
সেকারনেই সুস্থ হাওয়ার সাথে সাথেই এ্যলেন কাজ খোজার চেষ্টা করতে থাকে আর আমার বাসারই নীচ তলায় চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই হঠাৎ আমি অসুস্থ হয়ে পরি খুব, নোরো ভাইরাস একটা ভাইরাল জ্বরে পুরোপুরি বিছানা নেবার মতো হয়ে যায়। বিশেষ করে, ডাক্তারের কথা মতো চলতে গিয়ে সমস্যা আরো বেড়ে যায় বহুগুন। এই ভাইরাসটা মানুষের স্পর্ষ থেকেও ছড়ায়, তাই ডাক্তার বলে ছিল রুমমেট হচ্ছে বিপদসীমার সবচেয়ে কাছে।
ডাক্তারের সাথে ফোনে কথা বলবার পর, নিজের শারিরীক কষ্ট কিংবা অন্য চিন্তার চাইতেও বেশি ভাবনায় ফেলে দেয় ভাইরাসটা না ছড়ানোর সচেতনতা। আমি যা কিছুই ছুতে যাই মনে হয় এ্যলেনের পরীক্ষা আগামী সপ্তাহে। ওর জ্বর হলে বিপদ তিনগুন। মাইক্রোওয়েভ, প্লেট, হাড়ি-পাতিল কোন কিছুই স্পর্শ করার কোন উপায় ছিলনা। টিসু দিয়ে ধরে কেবল ফ্রীজ খুলে পাউরুটি আর কলা খেয়ে কাটিয়ে ছিলাম প্রথমদিনটা, যতক্ষন না এ্যলেন জানতো। আমার নিরবতার কারনে প্রথমরাতে, এ্যলেনও চুপচাপ পড়ালেখা করে নিজের ঘরে। ইচ্ছে করেই বুঝতে দিতে চাইনি, অসুস্থতার কথা। কিন্তু পরে ওকে সচেতন করে দেবার জন্য জানাতে হয় সব।
জানতে পাবার পর এ্যলেন যত্ন নিয়ে ছিল খুব। প্রথমদিন কি করবে, না করবে বুঝে উঠতে না পেরে এক ইন্ডিয়ান রেস্টুডেন্ট থেকে কিনে আনে মুরগীর সুপ। যা মসলাদার ঝোল ছাড়া আর কিছুইনা, খুব ঝাল, সাথে কয়েকটুকরো মুরগীর বুকের মাংস। আমি হালাল মাংস খাই, কিন্তু এই হালাল বস্তু খানা কি তা তার অজানা, জানেও না আমার কি পচ্ছন্দ। তাই সে বহু খুজে সেই সুপের ব্যবস্থা করেছিল।
সবচেয়ে ভালো লেগেছিল, দ্বিতীয় দিন সকালে। আমি ঘুম থেকে উঠে ওয়াসরুম থেকে ফিরে দেখি আমার বিছানা টানটান করা, টেবিলের পানির বোতল হালকা কুসুম গরম পানিতে পূর্ন, আমার এটো প্লেট বাটি গুলো নিয়ে গিয়েছে।
ছোটবেলায় অসুস্থ হলে আমার মাকে দেখতাম, সকালে আমরা ওয়াসরুমে গেলে বিছানা গুছিয়ে রাখতেন। বলতেন, অসুস্থ মানুষদের নাকি পরিপাটি রাখতে হয়, এতে রুগীর মন ভালো থাকে। এ্যলেন অসুস্থ থাকা কালে চেষ্টা করতাম কাজ গুলো করতে, কিন্তু আমি তো সব সময় ওর রুমে ঢুকতাম তাই বিষয়টা এতোটা প্রকটভাবে চোখে পরতোনা। কিন্তু আমার রুমে এ্যলেন কখোনই ঢুকতোনা, এমনকি সেদিন সকালেও আমি রুম থেকে বের হবার সময় কিংবা ফিরেও এ্যলেনকে দেখিনি। অথচ, টেবিলের রাখা ডিমের দুটো পোচ, টোষ্ট করা পাউরুটি আর ঢেকে রাখা কফির মগটা যেন আমার মায়েরই ছায়া একে ছিল মনের মধ্যে।
সেদিন ভাইরাসটার কথা বলে সাবধান করে দেয়াতে বিপদ হলো আরো বেশি। এ্যলেন কিনে আনলো অনেকগুলো ওয়ানটাইম ইউজার প্লেট-বাটি-চামচ। বুঝলাম সে অনেক সময় নিয়ে এই বুদ্ধি বের করেছে, তারপর থেকে খরচ কমাবার জন্যই আমি বলে দিতাম কি করতে হবে। আমি কি খাব কিংবা আমার কোন কোন খাবারে সমস্যা নেই।
বুঝতাম পড়ালেখার পাশাপাশি আমার প্রতি এক দায়িত্ববোধ বেচারীকে অনেক বেশি সজাগ দৃষ্টি রাখবার জন্য বাধ্য করছে, যা আমাকে বিব্রত করতো খুব। কিন্তু এড়াবার উপায় ছিলনা।
আমার অসুস্থতার দুইসপ্তাহ, কোনদিন এ্যলেন আমার ঘরে ঢোকেনি যখন আমি ঘরে থাকতাম। কোনদিন আমার সাথে কথা বলেনি সামনাসামনি। দরজার আড়াল থেকে জনতে চাইতো আমি কেমন আছি। বহুবার বলেছি, আমার সামনে আসতে, কিন্তু আসেনি। ভিনদেশী ছন্নছাড়া যুবকের এই দায়িত্ববোধ সাথে আমার ব্যক্তিগত সংস্কারকে সম্মান করা, বিষয়গুলো খুব ভালো লাগতো, নিজের অজান্তেই শ্রোদ্ধা যেন বহুগুন বেড়েও গিয়েছিল সেই সাথে।
এই সব বিষয়গুলো সব সময়ই এ্যলেনকে খুব বেশি আলাদা একজন হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল অল্প সময়ের মাঝে। এ্যলেন অন্য বাসায় চলে যাবার পর, কোনদিনই আমাকে একা ফিরতে দিতনা, ওর সাথে দেখা করবার পর কিংবা অন্য কোন জায়গা থেকে ফিরবার সময়। যত কাছে কিংবা দুরেই হোক সে পথ, হেটে হেটে ফিরে আসতাম আমার বাসা পর্যন্ত তারপর এ্যলেন ফিরে যেত নিজের বাসায়। বহুবার এমন হয়েছে, আমার বাসার সামনের রাস্তায় আসার পরও গল্প শেষ হতো না, হাটতাম আর চক্কর দিতাম আসপাশের অলিগলিতে। পরে একটা সময় ক্লান্ত হবার কারনে কিংবা পরের দিনের কাজের তাগিদে ফিরে যেত এ্যলেন।
এ্যলেনর ব্যক্তিত্ব, সাথে কাটানো সময় আর আমাদের সম্পর্ক এমন একটা জায়গায় নিয়ে আমাদের দাড় করিয়েছিল যে, চোখ খুলে এ্যলেনকে দেখবার পর আমার কোন শংকাই ছিলনা। কিন্তু ববের কথাগুলো শুনবার পর আরো বেশি ভালো লাগায় আমি আর আমাকে নিয়ন্ত্রন করতে পারিনি, নিরাপদ আশ্রয়ে নিশ্চিন্তের ঘুমই যেন ছিল প্রথম কাজ।
এদিকে বব আর এ্যলেন ভাবতেও পারেনা আনন্দ এভাবে খুব স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেব সব কিছু। তাইতো পরের রাতেও বব এ্যলেনের বাসায় থেকে গিয়েছিল, আনন্দকে সামাল দেবার চেষ্টায়। মাঝ রাতে আনন্দের ঘোর কেটে যায় পুরোপুরি, তখন বুঝতে পারে সব কিছু। আনন্দের নড়াচড়ার শব্দে এ্যলেন দরজার পাশ থেকে জানতে চায়, সব ঠিক আছি কিনা।
আনন্দকে সাহায্য করে প্রথমবারের মতো হাত দিয়ে পানির গ্লাস ধরতে। চব্বিশ ঘন্টারও বেশি সময় পর সেটাই ছিল আনন্দের প্রথম কিছু খাওয়া। অনুভূতি গুলোও কিছুটা যেন অস্বাভাবিক ছিল ওর জন্য, মনে হচ্ছিল হাত-পা গুলো ঠিক যেন নিজের নিয়ন্ত্রনমত কাজ করছেনা । অদ্ভুদ সেই অনুভূতি আনন্দকে খুব ভাবনায় ফেলে দেয় ঠিকই, তবু এ্যলেন আর ববের পাশে থাকাটা যেন ছিল নির্ভরতার একমাত্র অবলম্বন।
[চলবে......]
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
আনন্দক্ষন বলেছেন: খালি ভালো ভালো গল্প শুনতে মন চায়, না ভাই? কিন্তু কি করা বেচারী আনন্দ এই তুষারের দেশে আনন্দের দর্শন পাওয়ার চেয়ে কষ্টের সাথেই বেশি সাক্ষাৎ করছে। তাই তো এই দশা।
আর দের মাস শয্যাশায়ী মানে বুঝেন তো? মায়ের কোলে তো থাকেন, বুঝবেন কেমনে?
তার চেয়েও বড় কথা, আপনার মতামতের কারনেই তো পর্বগুলা ছোট ছোট করছি, সেকারনেই তো বিপদ কাটতেও তিন পর্ব লেগে গেছে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯
রবিউল ৮১ বলেছেন: তুষার দেশে আনন্দের সেই যে বিপদ শুরু হইছে এহনতক শেষ হইতাছে না কেন ?