নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হয়ে জন্মে যখন ফেলেছি, তাই নিরুপায় হয়ে মৃত্যুকে বরন করতেই হবে। পৃথিবীতে এসেছিলাম একা, জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে চলতে হয় একা, মরতেও হবে একা। তাই তো নিজের খুশি মতো বাচবার চেষ্টা করে চলেছি, আনন্দের সাথে। জন্ম নেবার সময় মাকে কষ্ট দিয়ে ছিলাম আর কিছু অক্ষমতার জন্য চলার পথে ইচ্ছে না থাকা সত্বেও কষ্ট দিয়েছি ভালোলাগা মানুষগুলোকে। তাই হয়তো পৃথিবীটা ছাড়বার সময় এদেরকেই আবার কষ্ট দিতে হবে ! তাই তো কেবল ভালোলাগার- ভালোবাসার এই মানুষগুলোকে গুরুত্ব দেই। সমাজ নামক জঞ্জালটাকে এড়িয়ে চলি আর প্রতিটা নিঃশ্বাসের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই সৃষ্টিকর্তাকে।
আনন্দের আত্বীয় সমাচার
মানসিকভাবে খুব বেশি দিশেহারা সময় কাটিয়েছে আনন্দ বহুবার। সবাই যেন পাশেই ছিল। তবু সে ছিল নিঃসঙ্গ, একাকী।আনন্দের ব্যক্তিগত বলে কিছু ছিলনা, ছিলনা একান্ত আপন এতটুকু সময়। দোষটা আনন্দ সব সময়ই নিজেকেই দেয়।
বাস্তব জিনিসের প্রতি কোন মোহ না থাকা ভালো। কিন্তু এমন অনেক কিছুই তো আছে, যেখানে একান্ত ব্যক্তিগত বলে কিছু থাকা একজন জীবিতের জন্য স্বাভাবিক। নিজের কিছু চাওয়া, একান্তভাবে কিছু সময় প্রত্যাশা করা। কিংবা ভালো লাগা- না লাগার মতো কোন বিষয়ে, মতামত প্রকাশ করার ইচ্ছা । বাড়ির অন্য সবারই এমন ব্যক্তিগত বলে কিছু আছে এবং অন্যরা সবাই সেটাকে সম্মান করা চলে। তবে আনন্দের বেলায় ব্যতিক্রম কেন? দোষটা তবে আনন্দের নিজেরই।
হ্যা, আনন্দ নিজেই কোনদিন নিজের বলে কোন কিছুকে আলাদা করেনি। নিজের ব্যপারে পরিবার থেকে দেয়া মোটামোটি সব সিদ্ধান্তই সে মেনে নিয়েছে। কখোনবা নিজেই বেছে নিয়েছে এই মুখাপেক্ষীতা, কিংবা খুশি হয়েছে অন্যের এই খবরদারিতে, ভেবেছে এতে দায়িত্বের ভার কম। নিজের প্রতি এই দায়িত্ব এড়াবার প্রবনতা, কি বাস্তবজ্ঞানহীন হবার ভয় থেকে এসেছে তার? তবে কেন নিজ উদ্দোগে জ্ঞানের পরিধিটা বাড়ায়নি সে?
কারন কি ছিল কোন? হ্যা, ছিল। আনন্দ নিজের মাঝে হীনম্নতায় ভূগতো। তার রেজাল্ট ভালো না পরিবারের অন্যদের মতো। সে বুদ্ধিদীপ্ত না । বিশেষভাবে লক্ষ্য করবার মতো কোন গুন নেই তার। সে যেন খুব সাদামাটা ঘরোয়া, যার উপস্থিতি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করবার মতোও না। চারপাশের মানুষের মাঝে সে কোনদিন বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়নি, পেতে চাইতোও না। তবে তার আশপাশের বিশেষভাবে প্রধান্য পাওয়া মানুষগুলোকে দেখতো সে, হিংসা করতো কি? নাহ। তবে লক্ষ্য করতে ভালো লাগতো কিন্তু অনুকরন করবার ইচ্ছে হতো না ।
বাস্তবতা থেকে পালিয়ে বেড়ানো আনন্দ, কেবল স্বপ্নচারী হয়ে বেচে থাকতে চাইতো। কোনদিন প্রকাশ করেনি, তার পচ্ছন্দ-অপচ্ছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, এমন কি সামান্য কোন চাওয়াও। অনেক বড় বড় ছাড় দিতে দিতে একটা সময় সে নিজই খেয়াল করেনি, ছোট ছোট বিষয়গুলোতেও সে আর কোন আগ্রহ খুজে পায়না। কষ্ট হয় তখন আনন্দের , কিন্তু বহুদিনের গড়া শক্ত দেয়াল দিয়ে ঘেরা তার ছোট্ট, অসহায় পৃথিবীটা থেকে বের হতে পারেনা, কখোনবা চায়ও না।
এক্ষেত্রেও সেই নিজেকেই দায়ী করে। সে ভাবতো, সবার তো দরকার নেই সব কিছু জানবার, বুঝবার, কঠিন দুনিয়াটা চোষে বেড়াবার। হয়তো পারতোও সে এমনিভাবে বাস্তবতাকে এড়িয়ে চলতে, যদিনা কঠিন সময়গুলো তাকে আঁশটে পিষ্ঠে বেঁধে না ফেলতো।
মজার ব্যপার হলো, এই খুব সাধারন, ছোট-ছোট চাওয়া-পাওয়ার মতামতের মাঝেই যেন অস্তিত্বের হারিয়ে যাওয়াটা বুঝতে পারে সে। কিন্তু এই বুঝে ওঠাও অনেক দেরীতে। সব কিছুরই যেন সময় আছে। সময় পেরিয়া গেলে নিজের চাওয়াগুলোর জন্য, আওয়াজ তুললেও যেন বেমানান শোনায়, নিজের কাছে, চার পাশের মানুষদের কাছেও। আর তখন থেকেই পাল্টে যেতে থাকে চারপাশ, কাছের মানুষগুলো, এমনি ভাবে সবই।
***********************************
বাংলার এক প্রান্তে থাকে এক প্রগতিশীল পরিবার। সদস্যরা সবাই শিক্ষিত, উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত, রাজনীতি ও সংস্কৃতি সচেতন ,অত্যন্ত উদারমনা হিসেবে পরিচিত। যেকোন অন্যায়ের প্রতিবাদ তারা করে। ছোট মফস্বল শহরে তাই তদের সূনাম যথেষ্ট।
পরিবারের এক কন্যা সন্তান, আনন্দ। রাধঁতে যার ভালো লাগে, শুঁচের কাজ তার পরিবারের বাহিরেও সমাদৃত, সেবা পরিচর্যার সুনামের কারনে মামা-খালাদের শ্বশুড় বাড়িতেও তার দায়িত্ব পরে। বাড়িতে যেকোন দাওয়াত সে একাই সামাল দেয়, হাসি মুখে।
কার কোন জিনিস পচ্ছন্দ, সেটা তার মুখস্ত। পরিবারের সবার ভালোবাসার মধ্যমনি সে । মামীরা ভাগ্নীর গুনে মুগ্ধ, যেন পরিবারের এক আদর্শের দৃশ্টান্ত। কেবল পড়াশোনায় তেমন ভালোনা। তা নিয়ে কারোর কোনো কষ্ট নেই, কারন সে যে তাদের আদরের ভাগ্নী । তবে প্রসংশা করবার সময়, অন্য আত্বীয় যাদের লেখাপড়ার ইতিহাস ভালো তাদের গল্প আনন্দকে প্রায়ই শুনতে হয়।
এস এস সি, এইচ এস সি পার করার পর নিজ জেলার পাবলিক এক বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ঠাঁই হলোনা। দুরের শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাগ্য নির্ধারন করলেন বিধাতা। জীবনে প্রথম, বাঁধার সামনে পরলো সে।
কেউ তাদের আদরের ভাগ্নীকে দুরে যেতে দেবেনা, শত অনিশ্চয়তায় ভীত। যেন মা-মামা-মামীরা কেউ দুরে পড়ালেখা করেনি। মা- মামা- মামী সবাই হলে-হোষ্টেলে থেকেছে '৭০ দশক থেকেই। তাহলে আজ এই বাধাঁ কেন?
কি জানি, মানুষের মন বোঝা ভার। দুঃখের হলেও সত্য, তার কয়েক বছর বাদে মামারা তাদের প্রিয় সন্তানদের হলে (হলে মারামারি হয় ঠিকই , তবে আজও প্রতিটা হলেই আছে অনেক নিয়ম-কানুন, যা উঠতি বয়সের একটা ছেলে/ মেয়ের জন্য প্রয়োজন) না "ম্যাসে" থাকবার অনুমতি দিল, তাও আবার ভর্তি পরিক্ষার কোচিং করার জন্য। এই হলো বিধাতার বান্দাদের "দুই নীতি" আচরন ।
থাক সেসব, এবার ভাগ্নীর প্রসংগে আসি। সব অজুহাতকে উপেক্ষা করে ভাগ্নীর এক কথা । সে কোন কলেজে অর্নাস করবেনা (খালাকে সে দেখেছে, প্রথম বিভাগে পাশ করার পরও,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ না করার অজুহাতে চাকরী পেতে কত কষ্ট পোহাতে হয়েছে তা), পড়বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুবা বিএ পড়বে। পরিবারের কারোর কোন কথায় কান দেবার তার দরকার ছিলনা। কারন তার মা , তার পক্ষে। তার পরও সে তো লক্ষী মেয়ে, সবার মন জয় করে চলা তার ধর্ম। সবাইকে মানিয়ে নিয়ে এবার তার যাত্রা সফল হলো।
যাত্রা করলো , নতুনের দেশে। মামা রাজি না থাকলেও যাবার বেলায় বিদায় দিল হাসিমুখে। চাচারা খুশি না হলেও, মানিয়ে নেবার চেষ্টা করলো। কি আর করা, ভাতিজী চান্স পায়নি কাছে পিঠে। তাই দূরেই পড়ুক।
এই হলো একটা মেয়ের জন্য, সমাজ। তার জন্য বাবা-মায়ের অনুমতির পরও অপেক্ষা করতে হয় অন্য অনেক অনুমতির। যা হোক, ভাগ্নী শেষ করলো অনার্স। সবার আগ্রহের পরও অবিবাহিত থাকাটা ছিল অনার্সের সার্টিফিকটার মতোই কষ্টসাধ্য এক অজর্ন।
আশ্চর্য হলেও সত্য, পরিবারের সবারই জানা, ভাগ্নী শারীরিকভাবে একটু দূর্বল, অসুস্থতা তার নিত্যসংগী। রেজাল্টও তেমন ভালোনা তারপর আবার সে নিজেও ভুব বেশী ঘরোয়া- সুতরাং বিয়ে করাটা এককথায় মেয়েটার জন্য নিজের পায়ে কুড়াল মারা, যেখানে মা-মামী-খালা থেকে সকলেই উচ্চশিক্ষিত, অন্তত এই মেয়েটা অনার্স পাশ করবে এতোটুকু কি খুব বেশী চাওয়া?
অনার্সে শেষ সেমিস্টারের দুই সপ্তাহ আগে বিয়ের তোড়জোড়, যেন মনে হয় এখনই সেই ভদ্রলোকের বিয়ে করতে হবে, না হলেই না। ছেলের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচ্য - ঐ দিকে নিজেদের মেয়েটা মাত্র দুই সপ্তাহ আগে বিয়ে করে কেমন করে সেমিস্টার ফাইনালে বসবে তার চিন্তা কারোর নাই- তাদের এক কথা- বিয়ের একদিন আগে হোস্টেল থেকে আসবে- বৌভাতের পর দিন চলে যাবে- পড়ার তেমন ক্ষতি হবেনা। মজার ব্যপার একটা মেয়ের বিয়ে কি কেবল একটা "সই"-একটা অনুষ্ঠানে "অংশ" নেয়া? তার মানুষিক-পারিবারিক পরিবর্তন, তাও আবার সারাজীবনের জন্য। সে কি পারবে পড়াশোনা করতে বিয়ের আগের একমাস অথবা পরের একমাস? বিশেষ করে- এইমেয়েটাকে যারা চেনে? তারা তো জানে- মেয়েটা কেমন? বাদই দিলাম বিশেষভাবে একটা মেয়ের ব্যপার। যেখানে মামী নিজে একজান মেয়ে এবং সে একজন উচ্চশিক্ষিত - তিনি তো জানেন একটা মেয়ের জন্য বিয়ের অনুভূতি এবং সেমিস্টার ফাইনালের প্রস্তুতি কি পরিস্থির সৃষ্টি করে?
কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য- এই উচ্চ শিক্ষিত আপন মানুষগুলোই ছিল এই মেয়েটার বড় শত্রু (হ্যা , আমি শত্রুই বলবো, পরিবারের যে মানুষটা আমার মঙ্গলের চেয়ে, নিজেদের স্বার্থটাকে বড় করে দেখে, তাদেরকে শত্রু ছাড়া আর কোন উপাধি দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না)। মেয়েটার ভাগ্য অনেক ভালো।
মেয়েটা পেরেছিল নিজের বাবা-মাকে বোঝাতে। আর তার চেয়েও সৌভাগ্য তার নিজের পরিবারের সর্মথন ছিল অনেক দৃঢ়, আত্বীয়দের এতো জোর জবরদোস্থির পরও তারা মেয়েটার কথা ভেবেছিল। তাই হয়তো , আজও মেয়েটা সবার উপরে তার বাবা-মা আর পরিবারকে বিবেচনা করে।
আর সেকারনেই হয়তো আজ, অনেক সাধ্য-সাধনা, ইচ্ছা-চাওয়ার, কিংবা চাহিদাকেও ত্যাগ করতে প্রস্তুত আনন্দ, এই ত্যাগ স্বীকার সে কেবল করছে বাবা-মার জন্য। অন্যকোন কারনে না। কেবলই বাবা-মায়ের খুশির জন্য। জানেনা আনন্দ- হবে কি সবাই খুশি? পারবে কি, আনন্দ নিজেই?
জানে না। ভাবে কেবল, এটা সিনেমা না, এটা বদলে ফেলা যায়না। এটা কেবল তার একার জীবনটা নিয়ে গড়া কোন মাটির দুর্গ , সমু্দ্র সৈকতে। একটা ঢৈউই যথেষ্ঠ মিলিয়ে দেবার জন্য, নোনা পানি সরে গেলেই আবার সব আগের মতো!
©somewhere in net ltd.