নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অঞ্জন ঝনঝন আমার আসল নাম না। আমি সামুর নিয়মিত ব্লগারও না। মাঝেমধ্যে ঘুরে যাই ভাল্লাগে।
অনেকদিন আগে সাতচল্লিশের দেশভাগ নিয়ে নসীম হেজাজীর "রক্তাক্ত ভারত" উপন্যাসটা পড়ছিলাম। কিন্তু তখনকার ভয়াবহ পরিবেশের জন্য একতরফা হিন্দু, শিখদের দোষারোপ করা হয়েছিল সেখানে ।
তাই খুশবন্ত সিং এর লেখা উপন্যাসটা সম্পর্কে জেনে পড়ার আগ্রহ হল, যে মুদ্রার অপর পিঠটা একটু দেখা যাবে। সে প্রত্যাশা ভালভাবেই পূরণ হল। লেখক এখানে কোন পক্ষের গুনকীর্তন না করে আসল চিত্র ফুটিয়ে তুলতেই চেষ্টা করেছেন।
কাহিনী সংক্ষেপঃ দেশভাগের ফলে প্রায় এককোটি লোককে পালিয়ে যাতে হল নিজেদের বাস্তুভিটা ছেড়ে। এরমধ্যে প্রান হারালো প্রায় দশ লাখ লোক। দেশজুড়ে এমন উত্তাল অবস্থার মধ্যেও সীমান্তের কাছাকাছি ভারতের একটি গ্রাম "মানো মাজরায়" শান্তি বিরাজ করছিল। শিখ অধ্যুষিত গ্রামে তারা এবং তাদের মুসলমান প্রজারা সাম্প্রদায়িক ভেদেভেদ ভুলে বাস করছিলো নিত্যকার মতো। লেখক এটি ফুটিয়ে তুলেছেন নিচের দৃশ্যকল্প দিয়েঃ " মসজিদের মোল্লা জানে এটা ফজরের নামাজের সময়। সে খুব দ্রুত ওজু সেরে পশ্চিমদিকে মক্কার দিকে মুখ করে দু'কানে আঙুল গুঁজে চড়া সুরেলা গলায় আজান দেয় - "আল্লাহু আকবর"। শিখ মন্দিরের গুরু মোল্লার আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত বিছানায় থাকে। তারপর সেও ওঠে। উঠোনের কুয়ো থেকে এক বালতি পানি তুলে সে শরীরে ঢেলে দেয় এবং গানের সুরে স্বর ওঠা নামা না করে মন্ত্র উচ্চারণ করতে থাকে; পানির ছপছপ শব্দের সাথে মিশে যায় সে মন্ত্রোচ্চারণ"
এছাড়াও দেখা যায় গল্পের নায়ক শিখ কৃষক জুগগাত সিং এর সঙ্গে মুসলমান ইমামের মেয়ে নূরণ এর প্রেমকাহিনী। এসব তাদের মধ্যকার অসাম্প্রদায়িক মনোভাবই ফুটিয়ে তোলে।
কিন্তু হঠাৎ একদিন পাকিস্তান থেকে বিভীষিকার মত আভির্ভাব হলো একটি ভুতুড়ে ট্রেনের।
যে ট্রেন কোন প্রানের চিহ্ন বয়ে আনেনি। নিয়ে এসেছে ট্রেনভর্তি লাশ। ছেলে,বুড়ো,নারী,শিশুর লাশ। যারা সবাই ছিল পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসতে চাওয়া শিখ ধর্মের লোক। তাদের খুন করে "উপহার" হিসেবে পাঠানো হয়েছে পাকিস্তান থেকে। একসাথে জড়ো করে পুড়িয়ে ফেলা হলো লাশগুলোকে, এরপর আবার এলো আরেকটি ট্রেন, তাদের গাদাগাদি করে মাটিচাপা দিয়ে নিশ্চিহ্ন করা হল পৃথিবী থেকে। তখন নদীর স্রোতেও ভেসে আসতে থাকল পঁচা, গলিত বহু মানুষের শরীর। একের পর এক এমন ঘটনাগুলো নাড়িয়ে দিল গোটা মানো মাজরাবাসীর অন্তঃকরণ।
এদিকে পাকিস্তান থেকে শিখ, হিন্দু শরনার্থীরাও আসছে মানো মাজরায়। যাদের অনেকেই হয়তো মুসলমানদের হাতে হারিয়েছে আপনজন। তারা মুসলমানদের উপর প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠার সম্ভাবনা আছে। তাই প্রশাসন চায় সব মুসলমানদের পাকিস্তান পাঠিয়ে দিতে।যাদের মধ্যে আছে জুগগাতের প্রেমিকা নূরন ও। তবে তারা কি চলে যাবে তাদের শতবছরের বাস্তুভিটা ছেড়ে?
এর উপর মনো মাজরায় আভির্ভাব ঘটলো শিখ উগ্রবাদী দের। যারা এখানকার অধিবাসীদের উত্তেজিত করে তুলতে চায়। পাকিস্তানগামী মুসলমান শরনার্থীদের ট্রেনে হামলা চালিয়ে তারা পাকিস্তানকেও পাঠাতে চায় "উপহার"। তারা কি সফল হবে? ভেঙ্গে যাবে শত বছরের অসাম্প্রদায়িক বন্ধন?
এসব নিয়েই "গন্ধক, রক্ত এবং নাইট্রিক এসিডের সংমিশ্রণে এক তপ্ত গোলা" "ট্রেন টু পাকিস্তান"।
এছাড়াও এতে ম্যাজিস্ট্রেট হুকুম চাঁদের মাধ্যমে লেখক তখনকার প্রশাসনিক ব্যবস্থা দেখিয়েছেন । ইকবাল নামে এক বামপন্থী চরিত্রকে প্রবেশ করিয়ে (হয়তো নিজের) কিছু কথাও বলেছেন। এতো গেল গোটা উপন্যাসের কথা। এর মাঝেও ছোট ছোট অনেক গল্প রয়েছে যা মনে দাগ কাটে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের স্বরূপ। যেমন মীত সিং সম্পর্কে এক জায়গায় ইকবালের বিশ্লেষণ
"এই শিখ পুরোহিত মীত সিংয়ের মনোকষ্টের কারন এই নয় যে, জুগগা খুন করেছে; বরং সে মনে মনে তেতে আছে এই কারনে যে জুগগা তার নিজের গ্রামবাসীর রক্তে হাত রাঙিয়েছে। জুগগা যদি একই কান্ড পাশের কোন গ্রামে ঘটাত তবে দেখা যেত মীত সিং সোৎসাহে তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে গেছে। সে তখন পবিত্র গ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ করে বলত যে সময় খুনটা হয়েছে তখন জুগগা গুরুদুয়ারে প্রার্থনা করছিলো " এমন অসাধারণ সব গল্পে গাঁথা অনবদ্য এক উপন্যাস "ট্রেন টু পাকিস্তান "। তখনকার সময়কে অনুধাবন করতে অবশ্যপাঠ্য একটি বই।
তবে আমি "স্কাই পাবলিশার্স" থেকে প্রকাশিত মনজুর সামস এর অনুবাদ পড়ছিলাম। সম্পূর্ণ সাবলীল মনে হয়নি। অনেক সংলাপেও কাব্যিক ভাবটা অস্বস্তিকর লাগছে। এছাড়া কিছু বিরক্তিকর ঢঙের বর্ণনা বারবার সামনে এসেছে। তবে কাহিনীর মধ্যে ঢুকে গেলে এসব আপনার চোখেই পড়বে না।
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৯
অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:২৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভারত ভাগের সময় আসল দান্গা হয়েছে পাণ্জাবে; ১ মিলিয়ন শিখ ও এক মিলিয়ন মুসলমান প্রাণ হারায়েছে; কারণ, পান্জাব মানেই খুনীদের দেশ।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৩
অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: //পান্জাব মানেই খুনীদের দেশ।//
হেরাতো এইডা নিয়া গর্ব ও করে মনে হয় যে তারা বীর, লড়াকু জাতি।
৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮
বিজন রয় বলেছেন: আরো বিস্তারিত লিখুন।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪৮
অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: বুঝতে পারিনি আমারতো মনে হয়েছিল এটুকুই বড় হয়ে গেল কিনা!
সামনে আরো বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করবো
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯
রংবাজরঙ্গরাজ বলেছেন: বেশ ভালো লাগল, ক্যারি অন....।