নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানলা আমার মানেনা আজ ধর্মের বিভেদ/জানলা জাতীয়তাবাদের পরোয়া করে না

অঞ্জন ঝনঝন

অঞ্জন ঝনঝন আমার আসল নাম না। আমি সামুর নিয়মিত ব্লগারও না। মাঝেমধ্যে ঘুরে যাই ভাল্লাগে।

অঞ্জন ঝনঝন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেম্নে কি-০০১: বাত্তি জ্বলে কেম্নে? (Incandescent Lamp- মানে ষাট, একশ ওয়াটের হলুদ বাল্ব গুলা আরকি)

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৮


এনার্জি বাল্বের আগমনের ফলে হলুদ বাতিগুলার চল দিনদিন উইঠা যাইতেছে। তবে এখনো এগুলারে অনেক বাসাবাড়ির বাথরুমে দেখা যায়। বাসার সব জায়গায় এনার্জি লাগাইলেও মানুষ বাথরুমে হলুদ বাতি লাগায় ক্যান এটা একটা গবেষণার বিষয় হইতেই পারে। :P

তবে এই হলুদ বাতি একটা অস্থির জিনিস। সেই এডিসন সাহেব প্রায় দুইশ বছর আগে যেই বাতি বানাইছিলেন তার সাথে এইটার খুব বেশী তফাৎ নাই। চলেন দেখি এই বাল্ব কেম্নে আলো দেয়? এর মধ্যে দিয়া বিদ্যুৎ গেলে এমন কি হয় যে এইটারে আলো দিতে হয়?

আলো সম্পর্কে বেসিক কিছু কথাবার্তাঃ

আলো হচ্ছে শক্তির একটা রূপ যা কোন পরমানু থেকে নির্গত হতে পারে। আলো "লাইট ফোটন" নামে একধরণের ভরহীন, শক্তিবহনকারী কনার সমষ্টি । একটি পরমানুর ইলেকট্রন গুলো যখন উত্তেজিত অবস্থায় থাকে তখন পরমানু এই লাইট ফোটন নির্গত করে।



আমরা সবাই মোটামুটি জানি যে ইলেকট্রন হচ্ছে পরমানুর নেগেটিভ আধানযুক্ত কনা। যা পরমানুর নিউক্লিয়াসের চারপাশে কিছু কক্ষপথে ঘুরে। পরমানুর ইলেক্ট্রন বিভিন্ন শক্তি সম্পন্ন হয়। যার শক্তি যত বেশী সেটি নিউক্লিয়াস থেকে তত দূরে অবস্থান করে। এখন পরমানুর মধ্যে শক্তি কমলে বা বাড়লে ইলেক্ট্রন লাফঝাঁপ মারা শুরু করে। শক্তি যদি বাড়ানো হয় তবে কিছু ইলেক্ট্রন এ শক্তি সংগ্রহ করে লাফ দিয়ে নিউক্লিয়াস থেকে দূরবর্তী একটা কক্ষপথে চলে যাবে। কিন্তু সেখান থেকে আবার সাথে সাথে (এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে) কাছের কক্ষপথে চলে আসবে। এই আবার কাছের কক্ষপথে চলে আসার সময় এটি ফোটন আকারে কিছু শক্তি নির্গত করবে। এই শক্তি একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের ভিতর হলে ফোটন গুলা হবে "লাইট ফোটন"। মানে আলো আকারে শক্তি নির্গত হবে অর্থাৎ আমরা আলো পাবো। আবার আলোর এই রং কেমন হবে এটিও নির্ভর করে নির্গত শক্তির মানের উপর। শক্তি আবার নির্ভর করে ইলেক্ট্রনের কোন স্তর থেকে কোন স্তরে ঝাঁপ মারছে তার ওপর।
এইহল বেসিক কথাবার্তা আরকি।

এতক্ষন ধৈর্য ধইরা পড়ছেন যেহেতু আপনারে একটা পুরষ্কার দেই। একটা লাইট বালব কৌতুক শুনেন।

প্রশ্নঃ " বলেনতো কয়জন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মিলে একটা লাইট বাল্ব পাল্টাইতে পারব? "

উত্তরঃ যতজনই হোক পারব না। কারণ এটা একটা হার্ডওয়্যার রিলেটেড সমস্যা :P


আচ্ছা এইবার আসেন একটু বাল্বের ষ্ট্রাকচার বা গঠন দেখিঃ
হাতের কাছে এমন বাত্তি থাকলে নিয়া দেখেন। ভাল কইরা বুঝতে চাইলে ভাইঙ্গাও ফালাইতে পারেন :P
থাক ভাই থামেন কিছুই করা লাগবনা :D এর ষ্ট্রাকচার খুবই সিম্পল। খালি এই ছবি দেখেন।

বাতির একদম নিচের দিকে দুইটা মেটাল অংশ থাকে যেগুলা কারেন্টের সকেটের সাথে কানেক্টেড করা হয়। এই দুইটা থেইকা দুইটা দৃঢ় তার বের হয়ে যুক্ত হয় একদম সরু একটা মেটাল "ফিলামেন্টের" সাথে। কাঁচের একটা গঠন এই ফিলামেন্ট টাকে ধরে রাখে। এরপর এই ষ্ট্রাকচারটাকে একটা নিষ্ক্রিয় গ্যাস (যেমন আর্গন) ভর্তি বাল্বের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলা হয়। ব্যাস হয়ে গেল।

এখন যখন বাল্বকে আপনি পাওয়ার সাপ্লাইর সাথে যুক্ত করেন (মানে সুইচ টেপেন আরকি) তখন কারেন্ট এর একপ্রান্তের মেটাল দিয়ে ঢুকে >দৃঢ় তার> ফিলামেন্ট হয়ে অন্য প্রান্তের মেটালিক প্রান্ত দিয়ে বের হয়া যায়। আর আমরা তো জানিই কারেন্ট মানে হচ্ছে ইলেক্ট্রন এর প্রবাহ এগুলা পাওয়ার সাপ্লাইর নেগেটিভ প্রান্ত হতে পজেটিভ দিকে যায়। তার মানে এই তার, কারেন্টের ভিতর দিয়ে কারেন্ট যাওয়া মানে ইলেক্ট্রনের প্রবাহ হয় আরকি!

এখন ইলেক্ট্রনের ফ্লো টা যখন ফিলামেন্টের ভেতর দিয়ে যায় তখন এটি ফিলামেন্টের পরমানুর সাথে লাগাতার সংঘর্ষ করতে থাকে। এর ফলে এটি উত্তপ্ত হতে থাকে। আর ফিলামেন্ট যেহেতু খুবই সরু মেটাল ( সরু মেটাল মোটা মেটালের তুলনায় কারেন্ট প্রবাহে অধিক বাঁধা দেয়)
তাই এটি দ্রুত উত্তপ্ত হয়। এবং এই তাপ শক্তির ফলে এক পর্যায়ে ফিলামেন্টের পরমানুগুলা উত্তেজিত হয়। এবং উত্তেজিত হলে কি ঘটে তাতো আগে বলছিই ইলেকট্রন লাফ ঝাঁপ মারে এবং একসময় ফোটন নির্গত হয়। সাধারণত যে ফোটুনগুলো নির্গত হয় তা হল "ইনফ্রারেড ফোটন" যা মানুষের চোখে দৃশ্যমান না। কিন্তু ফিলামেন্ট যদি একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জে উত্তপ্ত হয় (৪০০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা ২২০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) তখন একটা বেশ কিউট দৃশ্যমান আলো নির্গত হয়।

ফিলামেন্ট নিয়া কিছু কথাঃ
★ এই জিনিসটা খুবই সরু। লম্বায় প্রায় সাড়ে ছয় ফিট অথচ সরু এক ইঞ্চির প্রায় একশ ভাগের এক ভাগ। এই সাড়ে ছয় ফিট জিনিসটা কদ্দুর জায়গা নেয় বাল্বে? -এক ইঞ্চির চেয়েও কম। কয়েল বানায়া রাখা হয় আরকি।

★ ফিলামেন্ট তৈরীতে সাধারণত টাংস্টেন ব্যবহার করা হয়। কারণ একটু আগে আমরা দেখছি যে আলো বাহির করার জন্য ফিলামেন্টরে খুবই উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করতে হয়। এত উচ্চ তাপমাত্রায় অধিকাংশ ধাতুই গলে যায় কিন্তু টাংস্টেন অস্থির একটা মাল এর গলনাঙ্ক খুবই বেশী হওয়ায় এটা এই তাপমাত্রায় ও গলে না।

★ টাংস্টেন এই তাপমাত্রায়ও গলেনা ঠিক আছে কিন্তু আরেকটা সমস্যা আছে এত বেশী পরিমান তাপমাত্রায় টাংস্টেন এ দহনের ফলে আগুন ধরে যাওয়ার কথা। দহন মূলত ঘটে অক্সিজেন এর সাথে অন্য মৌলের বিক্রিয়ায়। এই দহন যাতে না ঘটে এজন্যে বাল্ব থেকে সমস্ত বায়ু (যেহেতু বায়ুতে অক্সিজেন আছে) সরিয়ে ফেলা হয়।

যেকারণে নিস্ক্রিয় গ্যাস ব্যবহার করা হয়ঃ
★ এ পদ্ধতিতে আরেকটা ঝামেলা হয়। এত উচ্চ তাপমাত্রার কারণে টাংস্টেন এর পরমানু গুলা অনেক সময় এত কম্পিত হয় যে ধাতু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বাল্বের কাঁচে গিয়ে জমা হয়। এভাবে চলতে থাকলে ফিলামেন্টে ভাঙন ধরে এটির পরিমান কমাতে নিস্ক্রিয় গ্যাস ব্যবহার করা হয়। পরমানুগুলো ধাতু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিক্ষিপ্ত হলে নিস্ক্রিয় গ্যাসের সাথে সংঘর্ষ হয়ে আবার ধাতুতে ফিরে আসে। এতে ফিলামেন্ট থেকে পরমানু নির্গত হওয়া কমে।

মোটামুটি এই হচ্ছে আমাদের চিরচেনা বাল্বের গল্প। আশা করি কোন ভুল হলে সংশোধন করে দিবেন। হ্যাপী ব্লগিং

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০

ক্লে ডল বলেছেন: সহজ করে বুঝিয়ে লিখছেন। ধন্যবাদ।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৯

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: সেই চেষ্টাই করছি। :)
আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০

ক্লে ডল বলেছেন: সহজ করে বুঝিয়ে লিখছেন। ধন্যবাদ।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৬

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: সামুর কোন সমস্যা নাকি! আমারও কমেন্ট করতে গেলে ডাবল হয়ে যাচ্ছে!

৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৯

শূন্যপুরান বলেছেন: ভাষার সহজ ব্যাবহার, ধন্যবাদ লেখকে।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৬:০৬

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: সহজ ভাষায় লেখারই চেষ্টা করেছিলাম। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ শূন্যপুরান।

৪| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:১৫

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
হুটহাট ইঞ্জিনিয়ারিং পোস্ট??

যাই হোক, পোস্ট তো বেশ ভাল। +

তবে, লাইট বাল্ব কিন্তু আসলে এডিসন আবিষ্কার করে নাই। করছিল, জোসেফ সোয়ান আর হামফ্রে ডেভি নামের দুইজন। এইটা নিয়ে এডিসনের বিরুদ্ধে মামলাও হইছিল ঐসময়।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৬:১৩

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: সেদিন নেটে একটা বিষয় খুঁজতে গিয়া মনে হল এই টাইপ লেখা বাংলায় খুব কম। আর এই বাতি কিভাবে কাজ করে এ নিয়া মনে হয় নাই। আর ব্লগে নাকি সব কিছু নিয়ে লেখা যায়! সেটাও দেখতে চাইছিলাম যে কেমন সাড়া পাওয়া যায়।

আপনাদের মন্তব্য দেখে ভাল লাগল। আর এডিসন যে আবিষ্কার করে নাই এটা জানা ছিল।যদিও প্রায় সবাই এখন তার নামই জানে। তিনি উন্নতি করছিলেন। তবে এই কাঠামো টা মনে হয় তারই বানানো।

৫| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪০

জুন বলেছেন: সহজ ভাষায় লেখা হলুদ বাতির জন্ম বৃত্তান্ত পড়লাম। টিউব লাইট আসার পর তারা অনেকটাই হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে।
ভালোলাগা রইলো লেখায় অঞ্জন ঝন ঝন।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৩৫

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: ধন্যবাদ দিদি। সামনে টিউব লাইট, এনার্জি লাইট এগুলোর বৃত্তান্ত নিয়ে লেখারও ইচ্ছে আছে। :)
-অঞ্জন ঝন ঝন :) :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.