![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আনোয়ার শাহজাহান :
আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে। দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী চলা ওই যুদ্ধের ইতিহাস বড়ই বেদনাবিধুর। তারই একটি ঘটনা আদিত্যপুর গণহত্যা। ১৯৭১ সালের ১৪ জুন। ভোররাতে পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করে বালাগঞ্জ উপজেলার আদিত্যপুর গ্রামে। এ সময় আব্দুল আহাদ চৌধুরী ওরফে ছাদ মিয়া ও মসরু মিয়া নামের দুজন রাজাকার গ্রামে প্রচার করে, আদিত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শান্তি কমিটির কার্ড বিতরণ করা হবে। উল্লেখ্য, কার্ড নিতে আসা গ্রামের পুরুষেরা বিদ্যালয়ের মাঠে জড়ো হলে পাকিস্তানি সেনারা মুসলমানদের বাদ দিয়ে ৬৫ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। অন্যদিকে রাজাকার আব্দুল আহাদ চৌধুরী আর মসরু মিয়ার নেতৃত্বে লুটপাট চলতে থাকে এলাকার প্রতিটি ঘরে। সেই সঙ্গে তাদের প্ররোচনায় দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয় ৬৩ জন হিন্দু ব্যক্তিকে।
আদিত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেদিনের গণহত্যায় যাঁরা শহিদ হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে সেদিন সুখময় চন্দ ও কঙ্কন সেন নামের দুজন ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। তাঁদের লক্ষ্য করে গুলিও করা হয়েছিল। কিন্তু গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত ও নিস্তেজ শরীর দেখে পাকিস্তানি ঘাতকেরা ভেবেছিল, তাঁরাও মারা গেছে। পরে রাজাকারসহ পাকিস্তানিরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। এ দুজনের কাছ থেকেই জানা গেছে সেদিনের ওই লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক ঘটনার বিবরণ। পাকিস্তানিদের পৈশাচিক পদক্ষেপে যাঁরা সেদিন শহিদ হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রাধিকা রঞ্জন সেন, শৈলেন চন্দ্র দেব, দীনেশ চন্দ্র দেব, ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব, সুরেশ চন্দ্র দেব, সুখেন্দ্র সেন, দক্ষিণা দেব, মতিলাল দেব, সুধীর চন্দ্র দাশ, বিপুল চন্দ্র দেব, অতুল আচার্য, নরেশ দাশ, যতীন্দ্র দাশ, রাকেশ শব্দকর, হৃদয় শুক্লবৈদ্য, সুরেশ শুক্লবৈদ্য, সুধন দাশ, কৃষ্ণ শীল, দিগেন্দ্র চন্দ্র শীল, বিহারী নমঃশূদ্র, বসন্ত নমঃশূদ্র, প্রভাত নমঃশূদ্র, বলাই নমঃশূদ্র, ধনাই নমঃশূদ্র, মহেন্দ্র নমঃশূদ্র, ইশাম নমঃশূদ্র, বনই নমঃশূদ্র, নারায়ণ নমঃশূদ্র, সতীশ দাশ, দীনেশ দেব, নরেশ ধর, খোকন, দিগেন দেব, দীনেশ, যতীন্দ্র দত্ত পুরকায়স্থ, কলিম শব্দকর, অমর দেব, ননী দেব, পরেশ শব্দকর প্রমুখ।
আদিত্যমারীর নির্মম এই গণহত্যায় স্বজন হারানো কয়েকজনের কাছ থেকে জানা গেছে, ঘটনার দিন চারটি সাঁজোয়া যান নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে পাকিস্তানি সেনাদের ২৫-৩০ জনের একটি দল। ফলে ভোরবেলা থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করে। আদিত্যপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী তিলাপাড়া, সত্যপুর, সোনাপুর, চরভিতা, ইলাশপুর গ্রামের কয়েকজনকেও ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
ভয়ে ও আতঙ্কে আদিত্যপুর গ্রাম সেদিন লোকশূন্য হয়ে গিয়েছিল। অনেকে আশ্রয় নিয়েছিল আশপাশের গ্রামে। স্বজনেরা সেদিন শহিদদের লাশ দেখারও সুযোগ পাননি। নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞের পর কোনো ধরনের ধর্মীয় আচার ছাড়াই সব মৃতদেহ রাতের অন্ধকারে মাটিচাপা দেওয়া হয়। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন ওই সময় বালাগঞ্জ থানায় দায়িত্বরত ওসি আব্দুল জব্বার।
মর্মান্তিক এ ঘটনার খবর পেয়ে সে সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী। তিনি মাটি খুঁড়ে লাশগুলো তোলার নির্দেশ দেন। এরপর সেগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় সিলেট সদর হাসপাতালে। সেখানে দেশি ও আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সামনে লাশগুলো গোনা হয়। তারপর সেগুলো আবার আদিত্যপুর গণকবরে সমাহিত করা হয়।
উপজেলা পদ্ধতি চালু হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লতিফুর রহমানের উদ্যোগে ৬৩ জন শহিদের এই বধ্যভূমিকে ২৪ হাত দীর্ঘ এবং ৯ হাত প্রস্থ সীমানাদেয়াল দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় প্রাণ বিসর্জন দেওয়া এই শহিদদের স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখার জন্য সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবছর ১৪ জুন এই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে তাঁদের স্মরণ করা হয়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।