নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনে ক্লান্ত হলেও বিশ্রাম নিতে শিখিনি :)

অ্যাপল ফ্যানবয়

where oceans bleed into the sky………

অ্যাপল ফ্যানবয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প → দুর্নিবার

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৫৭

যতো দিন যাচ্ছে জীবনটা নিয়ে ততো ভাবতে শিখছে সাকিব । জীবনটা কখনোই সুখের ছিলোনা ওর জন্য । অনেক চড়াই-উৎরাই পার করেই আজ সে “নেস্টল্যাব” নামের একটা টেকনোলজি কোম্পানির কো-ফাউন্ডার ও সিইও ।
.
— আসবো স্যার ?
— এসো মুহিব, তোমাকেই খুঁজছিলাম মনে মনে ।
— ধন্যবাদ স্যার ।
রুমে ঢুকলো মুহিব, জনাব সাকিবের পিএ । ঢুকেই জিজ্ঞেস করলো, “স্যার, যদি কিছু মনে না করেন, আমাকে খুঁজছিলেন কেন সেটা জানতে পারি ?” “নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই । বসো মুহিব ।” “ধন্যবাদ স্যার,” বসতে বসতে বললো সে । “আজকে তোমাকে একটা গল্প বলবো, মুহিব । যদি গল্পের মাঝে ঢুকতে পারো, তাহলে মনের অনেক খোরাক পাবে, অনেক প্রশ্নের উত্তরও । তোমার মনের ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তা থেকে কিছুটা হলেও উপশম পাবে আশাকরি ।” “স্যার‍, আপনি কিভাবে জানলেন যে আমার মনের অবস্থা ঠিক নেই ? আমি তো আমার সব দায়িত্ব ঠিকভাবেই পালন করার চেষ্টারত ।” কিছুক্ষণ হেসে নিয়ে সাকিব উত্তর দিলেন, “তুমি তো জানো, মুহিব, তোমরাই আমার সব । এই নেস্টল্যাবই আমার পরিবার । পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যের খোঁজ রাখা সম্ভবত আমার দায়িত্বের মাঝেই পড়ে ।” “জ্বী স্যার । আচ্ছা স্যার, আপনি যে সারাজীবন ব্যাচেলর রয়ে গেলেন, এর কারণ কি ছিলো ?” “এতো অধৈর্য্য হয়োনা মুহিব, আমি নিশ্চয়ই চাইনা নেস্টল্যাবের ভবিষ্যত ভুল মানুষের হাতে তুলে দিতে । আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই । তবে মুহিব, আমার পরে তুমিই হবে নেস্টল্যাবের সিইও । অভিনন্দন তোমায় ।” একথা শুনে কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মুহিব । “শোনো তাহলে,” বলেই অফিসের ১৪তলার জানালা দিয়ে বাইরে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন সাকিব, কিন্তু অপরাহ্নের নীলাকাশের দিকে আগ্রহ নেই তার, কারণ ততোক্ষণে তিনি ফিরে গিয়েছেন তার অতীতে…
.
“আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স ৩ । স্বাভাবিকভাবেই ঐবয়সের স্মৃতি কারোর থাকেনা । তাই আমার মায়ের স্মৃতিও নেই আমার । আমি এমনকি ওঁনার ছবিও দেখিনি, কারণ শুনেছি তিনি কখনো ছবি তুলতে চাইতেননা । কিন্তু তোমরা সবাই আমার মা'কে দেখেছো । তিনি আমার সৎমা । তিনি কখনোই আমাকে মায়ের অভাব সেভাবে বুঝতে দেননি, সবসময় আগলে রেখেছিলেন আমায়, পরম মমতায় । আমার বয়স যখন ৭, তখন আমার একটা বোন জন্ম নেয়, মৌফিয়া, তাকেও দেখেছো তোমরা । কিন্তু তারপর থেকেই আমার বাবা কেমন যেন বদলে যেতে শুরু করেন । ঘর-ন্যাওটা যাকে বলে ! প্রচণ্ড কর্মঠ মানুষটা হঠাৎ করেই ঘরকুনো হয়ে পড়েন । আসলে তিনি অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন জীবনের ওপর । মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে সবাই মিলে সিলেটে যাওয়ার জন্য রেলের টিকিট বুকিং দেন । মা অনেক রাগ করেছিলেন, সংসারে হালকা টানাটানি ছিলো । এরকয়েকদিন পরেই আমার বাবা মারা যান । তখন আমার বয়স ১১ । পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব চলে আসে আমার ঘাড়ে, কারণ বাবা'র মৃত্যুটা মা সহজভাবে নিতে পারেননি । এক সহজ-সরল ভালোবাসা ছিলো তাঁদের মাঝে, যেটার ব্যাখ্যা আমি আজও পাইনি । তাঁদের ভালোবাসার কথা মনে পড়লে আজও হিংসে হয় আমার ।”
দম নেয়ার জন্য থামলেন তিনি । মুহিবের মনে চিন্তার ঝড়, তাকে হঠাৎ এগুলো বলার অর্থ সে এখনো বুঝতে পারছেনা । বারান্দা থেকে এসে টেবিলে রাখা কফি'র কাপ হাতে নিয়ে অফিসে রাখা ইজিচেয়ারে বসে পড়লেন সাকিব, খুব ক্লান্ত মনে হলো তাকে ।
— আজ তবে থাক, স্যার ।
— [শুষ্ক হাসি] মুখবন্ধ শুনেই ক্লান্ত হয়ে গেলে মুহিব!
— না স্যার, আসলে…
— বাকিটা শোনো এবার, প্রায় পরিণতি'র দিকে যাচ্ছি আমরা
“আমার বয়স ১১, এবং সম্পূর্ণ পরিবারের দায়িত্ব তখন আমার । বোনটার বয়স মাত্র ৪, সে দুনিয়ার কিছুই বোঝেনা । আমিও বয়সের তুলনায় একটু কম ম্যাচিওর্ড ছিলাম, কারণ সারাজীবনই মাথার ওপর দুটি ছাতা পেয়েছি, এখন এক মূহুর্তের নোটিসে একটি কম । যাইহোক, ব্যাঙ্কে কিছু টাকা ছিলো, সেটা দিয়েই শুরু হয় নতুন জীবন । হিসেবী জীবন । মা অনেক শিক্ষিত ছিলেন, তাই একটা স্কুলের চাকরি জুটিয়ে নিতে অসুবিধে হয়নি তার । কিন্তু তখন সবচেয়ে দরকারী ছিলো মা'কে শক থেকে বের করে আনা, আমার ছোটবোন এতোটাই ছোট যে তার দেখভালের কাজই মা'কে শক থেকে বের করে আনে অনেকটা । আমিও লেখাপড়া শিখছি তখন, মোটামুটি ভালো রেজাল্ট ছিলো আমার । কিন্তু আমার আগ্রহ ছিলো মানব-মন নিয়ে, এলাকার লাইব্রেরী'তে সারাদিনরাত বসে থাকতাম তখন । লাইব্রেরীয়ান-দাদু খুব পছন্দ করতেন আমায় । ইতোমধ্যে আমার বোনও স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে তখন, সেও ভালোই করছিলো । এরপরে আমার বয়স যখন ১৬, তখন হুট করেই এক সহপাঠিনী'র প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে লাগলাম । কিশোর-বয়স, ভালোলাগা স্বাভাবিক ব্যাপার । কিন্তু মানব-মন নিয়ে আগ্রহ থেকে প্রচুর পড়ার কারণেই হয়তো আমি ঐবয়সেই ভালোবাসা আর ইমোশনের পার্থক্য করতে পারতাম । সে আমার ছোটবেলাকার বান্ধবী ছিলো, আর ও লেখাপড়ায় তেমন ভালো না হওয়ায় সারাক্ষণ আমার সাথেই থাকতো, আর এভাবেই প্রচুর পড়া হতো ওরও । আমার বাবা-মা'ও ওকে চিনতেন, এবং প্রচুর আদর করতেন ওকেও । আমার হিংসে হতো । ওর মা মারা যান ওর জন্মের সময় । ওর ভাইবোন ছিলোনা, আমার বোনটা ওকে নিজের বোনের মতোই দেখতো । এতোকিছুর চিন্তায় তাকে আমি আর আমার মনের কথা বলতে পারিনি তখন । ইতোমধ্যে একদিন ও বলে ও অন্য কাউকে ভালোবাসে । একদিন পরিচয়ও করিয়ে দিলো । কিন্তু তাও ওর সব কথা যেন আমার সাথে । বফের সাথে দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া, সবাই মিলে ফুচকা খাওয়া - সবকিছুর সাথী যেন আমি । ওর মন খারাপ হলে আমাকে প্রশ্ন করতো, ‘আমরা এমন কেন বলতো ? আমরা কি ভালোবাসা বুঝিনা, নাকি বুঝতে চাইনা ?’ আমি কিছু বলতাম না, শুধু ওর বড় বড় সিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম । মনে হতো ও চোখজোড়া'র দিকে তাকিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো । এরই মাঝে এসএসসি পরীক্ষা হলো, রেজাল্টও দিলো । দুজনেই বেশ ভালো রেজাল্ট করলাম । কিন্তু আমার কি হলো জানিনা, বাসা থেকে একাই পালিয়ে গেলাম রেজাল্টের পরদিন । আর তার ঠিক দুদিনের মাথায় ওর বাবা জেনে গেলেন যে ও কাউকে ভালোবাসে । বিয়ে দিয়ে দিলেন ওর । আমার মা-বোনের প্রতিবাদ ধোপে টিকলোনা । আমাদের দুজনকে ছাড়া তারা খুবই একা হয়ে গেলেন । কিছুদিন পরে আমি ফিরে এলাম, ভালো একটা কলেজে ভর্তিও হলাম । কিন্তু লেখাপড়ায় আর মনোযোগ নেই তেমন, কিন্তু কলেজেও আগের মতোই ভালো রেজাল্ট হতে থাকলো আমার । দুটো টিউশনি নিলাম, মায়ের ওপর বোঝা কমলো । এভাবে কলেজের পরে ভার্সিটিও শেষ হয়ে গেল । তখন আমি একা, এই ঢাকা শহরে থাকি । সারাদিনে দুটো ছাত্র পড়াই, নিজে পড়ি । আর সারারাত ঘুরে বেড়াই, দুচোখে ঘুম আসেনা । শুধু মনে পড়ে আপন মায়ের কথা, সৎমার কথা, বাবার কথা, বোনের কথা, আর ওর কথা । ফেলে আসা নিরালা শহরের কথা । ওর কোনো খবর পাইনি আর, চেষ্টাও করিনি নেয়ার । বোনটা কলেজে পড়ে, সেও এখন অনেক বুদ্ধিমতী, সাহসী । মায়ের বয়স হয়েছে, চোখে ভালো দেখতে পাননা, সেদিকেও ওর তীক্ষ্ম নজর । মায়ের সকল দায়িত্ব নিজেই নিয়েছে সে, সকালে ঔষধ খাওয়ানো থেকে সবকিছু । আমাকে প্রতিদিনই ফোন দেয় বিকেলে, হয়তো সময় কাটেনা । আমি ভাবি । চাকরির চেষ্টা করি । হতাশ হই, বিষাদে ভরে ওঠে আমার এ একান্ত শহরটা । একদিন হঠাৎ করেই এক টিউশনির খোঁজ পাই, ছোট ক্লাস । আগ্রহ ছিলোনা, কিন্তু টাকার মায়া বড় মায়া । পড়াতে যেয়ে দেখি ছেলেটা ওর, আমার বাবা'র নামে নাম রেখেছে ছেলের । অনেককষ্টে একদিন পড়াই, এরপরে আর পড়াইনি । বাড়ি চলে যাই । অনেকদিন ছিলাম । এরপরে ফিরে আসি, সব টেক-স্যাভি ফ্রেন্ডদের একসাথে করে একটা কোম্পানি দাঁড় করাই, তখন প্রথম বছরে কর্মী ছিলো ৭জন । সেখান থেকে আস্তে আস্তে লাভের মুখ দেখতে দেখতে আমরা এখন দুনিয়ার সবচেয়ে দামী কোম্পানি, নেস্টল্যাব । মা এখন প্রায় অন্ধ, আমার সাথেই থাকেন । বোনটা নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করে সুখেই আছে । বোন-দুলাভাই প্রায়ই বিয়ে না করার জন্য হাসি-ঠাট্টা করেন, আমিও হাসি ওঁদের সাথে ।” “পরে আর ওঁনার কোনো খোঁজ পেয়েছিলেন স্যার ?” “পাওয়ার চেষ্টা করিনি । তবে ওঁর বাবা'র সাথে এখনো মাঝেমাঝে কথা হয়, উঁনি প্রায়ই বলেন যে মেয়ে সুখে আছে । কিন্তু কি জানো, বাবা'রা মিথ্যে বললেও তাঁদের চোখ কখনো মিথ্যে বলতে পারেনা ।”
— তার মানে কি স্যার……
— হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো । দাঁড়িয়ে থেকোনা, যাও । সে এখনো তোমার । যাও, বিয়েটা সে তোমাকেই করবে, তাঁর বাবা'ও মেনে নেবেন । এবং তোমার বাবা-মায়ের মনে কষ্ট দিওনা, তাঁদেরকে সুখী রেখো ।
— স্যার, আপনাকে যে কিভাবে ধন্যবাদ……
— আগের কাজ আগে করতে হয়, মুহিব । নাহলে নেস্টল্যাবের কি হবে বলতে পারো ?
— জ্বী স্যার, যাচ্ছি । আসসালামু আলাইকুম
— ওয়ালাইকুম আসসালাম
.
মুহিব বের হয়ে যেতেই দরজাটা লাগিয়ে দিলেন সাকিব সাহেব । অনেকদিনের পড়ে থাকা কাজটি আজকে তাকে শেষ করতেই হবে ।
.
একই দিন, রাত ১১টা । অফিসের লকড দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হলো নেস্টল্যাবের সিইও সাকিব'কে । তার কপালের পাশে একটি গুলি, ডানহাতে একটি রিভলবার । আপাতদৃষ্টিতে এটা আত্মহত্যা মনে হলেও মুহিব জানে, এটা আত্মহত্যা নয় । দুর্নিবারের আকর্ষণই খুন করেছে সবার প্রিয় বস সাকিব'কে । আর হলোনা দ্বিতীয়দিন পড়া । অজানায় পাড়ি জমিয়েছেন তিনি ।
.

.
#_দুর্নিবার
…লেখনী → অ্যাপল ফ্যানবয়

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১২

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পে কোথাও দুইটা সমস্যা আছে।
সমস্যাটা ধরতে পারছি না!

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৫৫

অ্যাপল ফ্যানবয় বলেছেন: মূল্যবান সময় ব্যয় করে গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ । আর আপনার মূল্যবান কমেন্টের জন্যও অসংখ্য ধন্যবাদ । দয়া করে জানাবেন ভুলদ্বয় সম্পর্কে - এই আশা রইল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.