![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
মিরপুর ফ্লাইওভারটি তৈরি করার আগে উত্তরা থেকে মিরপুর যাওয়া-আসা করা অত্যন্ত ঝামেলার এবং আক্ষেপের ছিল! ‘আক্ষেপের’ ছিল কারণ, পরস্পরের অবস্থান ঢিল ছোড়া দূরত্বের মধ্যে হওয়া স্বত্বেও মিরপুর থেকে উত্তরা (এবং তদ্বিপরীত) যাতায়াত করতে তুলনামূলক অনেক বেশি সময়-খরচ স্বীকার করতে হতো। মিরপুর-উত্তরা যাতায়াত করার সরাসরি পথটি ধরলে ক্যান্টনমেন্ট ও সামরিক নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ ঠেলে যেতে হত বলে তা ছিল অস্বস্তিকর। ক্যান্টনমেন্ট হওয়া আড়াআড়ি এই পথটা ছাড়া আর যে দু-তিনটি রাস্তা ছিল উত্তরা-মিরপুর করার, সেগুলোর যেকোনো একটি ধরা মানে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা উধাও; বিশেষ করে সেটা যদি হত চাকুরেদের অফিস গমন কিংবা ঘরে প্রত্যাবর্তনের ঘণ্টায়। ফ্লাইওভারটির নির্মাণ-কাজ চলাকালীন ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচল শিথিল করা হলেও চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন মুখগুলোকে ব্যাখ্যা করতে হত- ‘মশাইদের কোথায় যাওয়া হচ্ছে। এবং অতঃপর নির্ভর করতে হতো তাদের মর্জি-বিবেচনার ওপর। কখনো তারা অনুমতি দিতেন; কখনো দিতেন না। যখন দিতেন না, তখন আবার গাড়ি ঘুরিয়ে ক্ষোভ-আক্ষেপ অবদমন করতে করতে ঐ লিঙ্ক রোডটি ধরতে হতো যেটা অধিকাংশ দিন তার ‘লিঙ্ক’ নামটি সার্থক করতে পারত না। তাছাড়া এই পথটি নিলে আমার গন্তব্যের মাঝখানে পড়ত মিরপুর-দশ নামক একটি গণ্ডগোলের মোড়; যেখানে সিগন্যাল পেরোতে গাড়িগুলোকে পরস্পরের কাঁধে হাত দিয়ে পেছনে জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পিটি করতে হয় দীর্ঘ সময়। চলমান গাড়িতে সন্ধ্যাকালীন ক্ষুধা চেপে বসে থাকা যায় (এমনকি প্রকৃতির ডাকও), কিন্তু স্থির দাঁড়িয়ে থাকা ইঞ্জিনে-জীবন্ত, কম্পমান গাড়ির ভেতর বসে থেকে ক্ষুধা সহ্য করা যে কতটা কঠিন কাজ, তা ঢাকাবাসীদের চেয়ে ভাল আর কে জানে? কিন্তু কর্মময় দিন শেষে অবসরের ভাগ থেকে দেড়-দুই ঘণ্টা জ্যামের বেদীতে বিসর্জন দিয়ে শেষ পর্যন্ত বাসায় পৌঁছলে সন্ধ্যের খাবার তো দূরের কথা, রাতের খাবারটি খাওয়ার মানসিকতা পর্যন্ত পানি হয়ে যেত। অবশ্য কোনও কোনও দিন ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করার অনুমতি পাওয়া গেলেও এলোমেলো গাড়ি-বহরের সাথে ভেতরের সাজানো-গোছানো পরিবেশের নিয়ন্ত্রিত নীরবতা ভঙ্গ করায় অংশগ্রহণ করতে সত্যিই খারাপ লাগত।
মূল শহরে জ্যাম বেশি থাকলে কিংবা ক্যান্টনমেন্ট হয়ে যাওয়ার অস্বস্তিটা অসহনীয় বোধ হলে ঘরে ফিরতে মাঝেমাঝে শহরটাকে পিছন দিক দিয়ে পেঁচিয়ে থাকা আশুলিয়া-সড়কটি নিতাম। ওদিক দিয়ে গেলে চারিদিক প্লাবিত করা সোনালী জলরাশিতে টইটুম্বুর নদীর সান্ধ্য সৌন্দর্য খানিক উপভোগ করা যেত বটে কিন্তু বেড়িবাঁধ থেকে মিরপুরের দিকে নেমে যাওয়ার পর যে কাচা রাস্তাটি পড়ত, সেটার অবস্থা ছিল একেবারে যাচ্ছেতাই! খানাখন্দ, এলোমেলো ভাঙা ইটের টুকরা, ইতস্তত বালিয়াড়িতে বোঝাই রাস্তাটায় নির্বিচার ঝাঁকিতে ঝালমুড়ি হয়ে শেষ পর্যন্ত যখন ঘরে পৌঁছতাম, তখন বমির উপক্রম হতো। এই অবস্থাটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য-তিক্ত অংশে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। তারপর হঠাৎ একদিন শুনতে পেলাম- আজীবন নির্মাণাধীন থাকবে বলে মনে হওয়া ফ্লাইওভারটি নাকি গাড়িদের পাখা মেলতে সাহায্য করার জন্য পুরাদস্তুর প্রস্তুত! দুর্ভেদ্য ক্যান্টনমেন্টের সাজানো-গোছানো জীবনে কোনরূপ প্রভাব না ফেলে বরং ওটাকে দারুণভাবে পাশ কাটিয়ে প্রায় উড়ে নাকি আমরা মিরপুর থেকে উত্তরা যাতায়াত করতে পারব। কি দারুণ! কিন্তু, ভাগ্য আমার সাথে হাস্যপরিহাস করেছে সারাটা জীবন। এবারও ছাড়ল না। শৈশবে যেমন নতুন জুতা কিনলে তা পড়ে স্কুল যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে রাতে ঘুমিয়ে সকালে উঠলে দেখতাম মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই নতুন জুতো জোড়া নয়, স্পঞ্জের কিংবা প্ল্যাস্টিকের স্যান্ডেল পরে স্কুলে যেতে হবে- ঠিক তেমনি ফ্লাইওভারটা যখন চালু হল তখন আমি ছিলাম চট্টগ্রামে। যাহোক, তারপর ঢাকায় ফিরে প্রথম যেদিন নিখুঁত সব বাঁক সম্বলিত ফ্লাইওভারটি ধরে শা করে বাসা থেকে মাত্র ২০ মিনিট সময়ে অফিস পৌঁছে গেলাম, সেই দিনের আনন্দের কথা ভাষায় প্রকাশ করার নয়।
প্রথমবারের মত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার পদক্ষেপ নেওয়া, ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা পাওয়া আওয়ামী সরকার দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ড মঞ্চস্থ করে জনমন জয় করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালালেও শেষ রক্ষা তাদের হবে না! শেয়ার-বাজার, পদ্মা-সেতু, হল-মার্কসহ নানান কেলেঙ্কারির কালিমা, ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ক্ষমতাহীন কঠিন দীর্ঘ সময়কাল অতিবাহিত করার খড়গ স্বীকার করা ব্যতীত মোচন হবে না। এ স্বত্বেও, খেলো শোনালেও আমাকে বলতেই হচ্ছে- ঢাকা শহরের এই অংশের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনে যে স্বচ্ছন্দতা বর্তমান সরকার এনে দিয়েছে, সেজন্য একটি উষ্ণ ধন্যবাদ তাদের প্রাপ্য। বাকী ষোলো-সতের কোটি জনমনের কথা জানি না, কিন্তু ঢাকা শহরের এই অংশে বসবাসকারী, মিরপুর থেকে উত্তরা পর্যন্ত সীমিত গতিবিধির এই নগণ্য নাগরিক-চিত্তকে প্রশ্ন করা হলে সে বলবে, “বর্তমান সরকারের পারফর্মেন্সে আমি সন্তুষ্ট।” অবশ্য আবেগপ্রবণ এইসব বিবৃতি প্রথম আলোর জরীপে কিংবা অনিবার্য ফলাফলে কোনোরূপ প্রভাব ফেলবে না।
http://www.notun-din.com/?p=10230
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৩
আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৩
নেক্সাস বলেছেন: এমন রুটিক ওয়ার্ক কমবেশী সব সরকারই করে।
৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৫
রাঘব বোয়াল বলেছেন: পোস্ট টা পড়ে খুব ভালো লেগেছে।
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৩
আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: ধন্যবাদ!
৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৩
আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৮
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
খুব ভাল লেখেছেন, মন দিয়ে পড়লাম।