নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল

আরাফাত শাহরিয়র

আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!

আরাফাত শাহরিয়র › বিস্তারিত পোস্টঃ

উত্তরার ভোজন ভজন

১৩ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৪৯

সেদিন দুপুরের খাবার খেতে গিয়েছিলাম অফিসের কাছের একটা ছোট রেস্তোরাঁয়। দেয়ালের সাথে ভারী কাচ আড়াআড়িভাবে এঁটে দিয়ে টেবিল আর বসার জন্য সিলিং-ফ্যানের মাথার আকারের ছোট ছোট টুল– এই ছিল রেস্তোরাটির বসার ব্যবস্থা। টেবিল-চেয়ারের ব্যবস্থায় এমন কৃচ্ছতা স্বত্বেও একসাথে চার পাঁচ জনের বেশি লোকের সঙ্কুলান হয় না ভেতরে। খাবার অর্ডার করার যে ব্যবস্থাটি তারা অনুসরণ করে সেটাকে অনেকে সেট-ম্যানু বলে। যেমন ফ্রাইড রাইসের (ভাত ভাজা) সাথে টমেটো সস প্রধান চিকেন মাসালা অথবা রূপচাঁদা মাছ ভাজা কিংবা গরুর মাংস ভুনা- এরকম, সেট বা প্রস্ত ভিত্তিক। রেস্তোরাঁটির (রেস্তোরাঁ না বলে খাবারের দোকান বললেই বোধহয় বেশী মানানসই হয়) একদিকের দেয়ালে সেঁটে রাখা লোভনীয় চেহারার খাবারের ছবিগুলো দেখে যেটা খেতে বেশি ইচ্ছে করবে সেটা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে পাঁচ মিনিট লাগবে বললেও, অন্তত পনের মিনিটের ব্যবধানে এসে হাজির হবে তা; গরম গরম। বেশ সুস্বাদু কিন্তু পরিমিত! খাওয়া শেষে স্বাদের সাথে একটু ক্ষুধাও থেকে যেতে পারে শরীরে।



যাই হোক, সেদিন খাবারের অর্ডার দিয়ে যখন অপেক্ষা করছিলাম, আমি ছাড়াও আরও দুজন লোক ছিল তখন দোকানের ভেতর। লোক দুটো উচ্চতায়-আকারে প্রায় একই রকম– মাঝারী এবং স্থূলকায়। চেহারায়ও মিল ছিল তাদের। ভাই হবেন হয়ত! দুজনেই মধ্যবয়স্ক হলেও তাদের দশাসই গড়ন উপেক্ষা করা গেলে বেশভূষা দেখে মনে হবে তারা যেন কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয়-বর্ষের ছাত্র এবং হল’এ থেকে পড়াশুনা করেন। দুর্বিনীত, প্রাণোচ্ছল ভাবভঙ্গী কিন্তু মলিন পোশাকআশাকের বিন্যস্ততায় উদাসীনতা স্পষ্ট। দোকানটির ভেতর এত কম জায়গা যে না চাইতেও তাদের কথাবার্তা কানে আসছিল। না এলে এমন মানুষও যে পৃথিবীতে আছে, সেটা হয়ত কখনই জানা হত না আমার! দোকানটিতে ঢোকার পর থেকে বেরুনোর আগ পর্যন্ত আমাকে তাদের যেসব কথাবার্তা শুনতে হয়েছিল তা জুড়ে ছিল শুধু ভোজ, ভোজন ও ভক্ষ্য সামগ্রী! ঐসময় দোকানটিতে মাছের পদগুলো শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে তারা যেভাবে আক্ষেপ করছিলেন তা শুনে মনে হচ্ছিল তারা যেন ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার টিকেটের দীর্ঘ লাইনে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে মাত্র শুনলেন যে সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে! তবে আফসোস করেই ক্ষান্ত হলেন না, বরং দোকানের একজনের ফোন নম্বর নিয়ে রাখলেন আরেকদিন নিশ্চিত হয়ে এসে মাছের পদগুলো খেয়ে যাওয়ার জন্য। তারপর শুরু হল তাদের খাওয়ার গল্প, চলল একের পর এক প্রস্তের অর্ডার! খেতে খেতে গ্লপ গ্লপ শব্দ করে কি একটা রেস্টুরেন্টের কথা বলছিলেন যেখানে নাকি মাত্র ১৫০০ টাকায় অসাধারণ ব্যুফে খাওয়া যায়। এন্ড লেস (সীমাহীন) খাবারের সমাহার ঘটে নাকি সেখানে! বলছিলেন, “জাপানী, চীনা, আফ্রিকান, ইংলিশ, ফরাসী? কি চাই? ইউ নেইম ইট”। আমার দুর্ভাগ্য যে আমি তাদের সেই মহান রেস্তোরাঁটির নামটি খেয়াল করতে পারিনি। তবে রেডিসনের খুব সমালোচনা করলেন তাদের একজন। সেখানে নাকি খরচ বিবেচনায় (এটা খুব জোড় দিয়ে বলছিলেন) একেবারে যাচ্ছেতাই খাবার পরিবেশন করে ব্যুফেতে। বিফ স্টিক, ফিস স্টিক ইত্যাদি পদগুলো নাকি আক্ষরিক অর্থেই কাঠির মতই পড়ে পড়ে থাকে!



এই বিস্ময়কর ভোজন রসিকদের দেখে, তাদের আলাপআলোচনা শুনে ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁর সংখ্যার ঊর্ধ্বগতির একটি কারণ খুঁজে পাওয়া গেল। শুধু উত্তরার কথা যদি বলি, এখানে মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁ, খাবারের, পানীয়ের স্থায়ী, অস্থায়ী দোকানের সংখ্যা স্রেফ তাক লাগানো। কি খাবার চাই? ইন্ডিয়ান (এমন কি ধাবাও)? চাইনিজ? মালয়েশিয়ান? থাই? আমেরিকান? কোন দেশের খাবার পাওয়া যায় না? এমনকি টার্কিশ রেস্তোরাঁও আছে! শুধু ‘নামে’ টার্কিশ নয়, রেস্তোরাঁর ভেতরে সত্যি সত্যিই লম্বা-চওড়া উজ্জ্বল বর্ণের একজন আদর্শ টার্ক (তুর্কী) সশরীরে ঘোরাফেরা করে! আবার খাবারের মানের কথা যদি বলি, তিন নম্বর সেক্টরের কাছেই গ্রেট ইন্ডিয়া নামের একটি ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁ আছে যেটার ভেজ বা শাকসবজির কোর্স খেলেও বোঝার উপায় থাকে না আসলেই নিতান্ত নিরামিষ, নিরুত্তেজ, সাদামাটা সবজি খাওয়া হল নাকি শাহী কাবাব? এর কাছেই মেইন-ল্যান্ড চায়না নামক একটি চেইন আছে যারা সুউচ্চ দালানের শিখরে ঝকঝকে কাচের দেয়ালের পিছনে শহরটার একাংশের পরিষ্কার দৃশ্য উপস্থিত করে ক্রেতাদের গলায় ছুড়ি চালাতে উদ্যত, উন্মুখ হয়ে থাকে। তবু বিনীত অথচ নিরস চোখমুখের ওয়েটারদের ফলের রস বিক্রির বিনম্র অনুরোধ সামলানো গেলে সৌখীন ঔদারিকদের জন্য সেখানে গিয়ে একটা সন্ধ্যা কাটানো সুখকর হওয়ার কথা। আবার সিমসাম, সুন্দর কোনও বিকেলে যদি বাইরের আবহাওয়াটাকে উপভোগ করতে করতে কেউ হালকা কিন্তু মজাদার খাবার খেতে চায়, তাহলে আছে লা-বাম্বা। একটা সেক্টর পর পরই যেন তাদের একেকরকম শাখা! তাছাড়া এই কাবাব, সেই কাবাব, কাবাব ফ্যাক্টরি– আরো কত যে কাবাবের রেস্তোরাঁ এর আশেপাশে, তার ইয়ত্তা নেই। কেএফসি, পিজা-হাটকে কোণ ঠাসা করা ফরিদ ফ্রাইড চিকেন (FFC), আবুল ফ্রাইড চিকেন (AFC), ক্যালিফোর্নিয়া ফ্রাইড চিকেন (CFC), রেড চিকেন, পিজা ইন, কে জানে কি ইন– নামী বেনামী চিকেন ফ্রাইয়ের, পিজার দোকান তো যেন মোড়ে মোড়ে ঘাট খেলে!



পান-সিগারেটের দোকানের আকারের, এখানে কিছু ছোট ছোট ফলের রসের দোকান আছে যাদের নির্যাস-সম্ভারের বৈচিত্র্য দেখলে অবাক বনে যেতে হয়! কোনটা খেতে ইচ্ছে করতে পারে? জাম-আম-কামরাঙ্গা-কাঁঠাল (হ্যাঁ কাঁঠালও!)-তেঁতুল-আনারস-আমড়া-বেল-ডেউয়া? কোন ফলের রস চাই? বিস্ময়কর আয়োজন! এদিকে রাস্তার পাশে ঠেলাগাড়িতে করে যেসব খাবার বিক্রি হয় তার চাহিদাও কম নয়। সন্ধ্যা নেমে এলে তো ক্রেতাদের রীতিমত ভিড় জমে যায় ঐসব সচল দোকানগুলোর সামনে! এই দোকানগুলোর শেফদের উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রশংসা না করলে অন্যায় হয়। ছোট ছোট বন-রুটিগুলোকে আড়াআড়ি ভাবে কেটে এর ভেতর একপ্রকার ঘরে নির্মিত ঝাল সস মেখে তাতে ডিম-ভাজা পুরে দিয়ে তারা তৈরি করে ডিম-বার্গার। তাছাড়া কিমা বার্গারও করে দেবে, চাইলে। বাজি ধরে বলতে পারি বার্গার কিং’এও এত সহজ, হালকা কিন্তু এমন মজার বার্গার পাওয়া যাবে না।



অগণিত ছোট-বড়, বিগ-মিনি চাইনিস রেস্তরাঁগুলোর ফিরিস্তি আর নাই বা দিলাম; উল্লেখ করলাম না কুপার্স, ক্যাপ্টেন্স, বেক-ম্যান এবং অন্যান্য বেনামী বেকারিগুলোর নামও। তথাপিও কি চিন্তা করা যায় উপরোক্ত সমস্ত ভোজনশালা, খাবারের দোকানগুলোর অবস্থান বিশ-ত্রিশ টাকা রিকশা-ভাড়ার দূরত্বের ভেতর? এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে সেই আঁটসাঁট প্রস্ত-রেস্তোরাঁর ভাতৃদ্বয়ের মত সৌখীন খাদক আরও অনেক আছে বাংলাদেশে। আমার কেন যেন আজকাল মনে হয় আমি নিজেও ঠিক তাদের মতই অন্তত আরও একজনকে খুব ভালভাবে চিনি। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না সে কে!

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০৩

ক্যাতর আলী বলেছেন: খাইতে তো ভালোই ভালোই লাগে

১৩ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২১

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: হ্যাঁ, ভালই ভালই লাগে না তো কি! :)

২| ১৩ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:১০

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: :D :D :D

১৩ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: :)

৩| ১৩ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:১৮

কালোপরী বলেছেন: ভাল লাগল :)

১৩ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: খুশি হলাম শুনে। :)

৪| ১৩ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭

নীল-দর্পণ বলেছেন: খাওয়া-দাওয়া ভালা পাই :D

১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: :)

৫| ১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:২৬

তাসজিদ বলেছেন: বুফে খেতে মন চায়। :( :(

১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২৮

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: :)

৬| ১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৭

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:

ক্ষুধা লেগে গেলো ;) ;) ;)

১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২৮

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.