নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল

আরাফাত শাহরিয়র

আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!

আরাফাত শাহরিয়র › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বকাপ, থানকাপড়ের দোকান, ভিউকার্ড এবং ইন্টারনেট

০৫ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮

বিশ্বকাপকে ঘিরে গোটা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষের এই অদ্ভুত উন্মাদনা নতুন কিছু নয়। আগে, ফেসবুক ছিল না বলে খেলার ফলাফল সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী, খেলা দেখার সময় উল্লেখযোগ্য-উত্তেজনাকর বা হয়ত নেহায়েত সাধারণ মুহূর্তগুলো নিয়ে মানুষ মুহুর্মুহু স্ট্যাটাস-আপডেট দিতে পারত না ঠিক, কিন্তু প্রিয় দলগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে গলাবাজি, ঝগড়াঝাঁটি, রাত জেগে (স্বাগতিক দেশের সাথে সময়ের পার্থক্য অনুযায়ী) ফ্লাস্ক ভর্তি চা, খাবারদাবার সামনে নিয়ে খেলা দেখার আয়োজনের কোনোরূপ কমতি ছিল না। ছেলেমেয়েদের মধ্যে সবসময়ই ছিল বাড়ির ছাদে প্রিয় দলের– বিশেষ করে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, ইতালি ইত্যাদি বিশ্বকাপ বিজয়ী দেশের পতাকা ওড়ানোর এই অদ্ভুত প্রবণতা! প্রিয় দলের প্রতি ভালবাসা প্রকাশে একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে পকেটের টাকা খরচ করে তারা বাড়িয়েছে পতাকার আকার, ঔজ্জ্বল্য! তবে আগে অন-লাইন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো না থাকায় দলের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সমর্থকদের এই বনিয়াদি বাকবিতণ্ডা, তর্কবিতর্ক শুধু বন্ধুবান্ধব, পরিবারপরিজন, পরিচিত মহলের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকত, যা আজ ইন্টারনেটের কল্যাণে ছাড়িয়ে গেছে সমস্ত সীমা-পরিসীমা, সঙ্কোচ, সীমাবদ্ধতা এবং বোধহয় খানিক কাণ্ডজ্ঞান ও ভব্যতাও।



আগেও, বিশ্বকাপ কাছিয়ে এলেই বাজারের থান-কাপড়ের দোকানগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেত ছেলেমেয়েদের আনাগোনা। অক্লান্ত পরিশ্রম করে; পকেটের টাকা, পরিকল্পনা একত্র-একাট্টা করে তারা তৈরি করত, বিশেষ করে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের বিশালাকারের সব পতাকা। আর তারপর চার-পাঁচ তলা দালানের একপাশের ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দিত সেগুলো- বিশ্বকাপ শেষ হয়ে রোদে জ্বলে, বৃষ্টিতে ভিজে পচে নষ্ট হয়ে খসে খসে পড়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপ মৌতাতের সাক্ষী হয়ে নির্বিবাদে ঝুলে থাকার জন্য। দোকানে দোকানে দেদার বিক্রি হত তারকা খেলোয়াড়দের ছবির ভিউ-কার্ড। হল্যান্ডের রুডগুলিত, কলোম্বিয়ার ভালদেরামা, আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা-ক্যানিজিয়া-গয়কোচিয়া, ইতালির রবার্তো ব্যাজিও, ব্রাজিলের রোমারিও-বেবেতো ইত্যাদি কিংবদন্তী খেলোয়াড়দের ভিউ-কার্ডগুলোর কথা ভুলবার নয়। বিশেষ করে “ওরা আমাকে এত মারে কেন” লেখা, দুজন ডিফেন্ডার দ্বারা রীতিমত নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগ মুহূর্তে ম্যারাডোনার ব্যথায়-বিকৃত মুখের ভিউকার্ডটি কালজয়ী।



অবশ্য বর্তমানে, স্যাটালাইটের আশীর্বাদেই,বাংলাদেশী ফুটবল-প্রেমীদের খেলা সংক্রান্ত বুঝ-জ্ঞান, প্রতীতি বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। তারা বছর জুড়ে হওয়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, স্পেনের লা-লীগা, জার্মানির বুন্দেজ-লীগা, ইতালির সিরিএ– ইত্যাদি জনপ্রিয় ইউরোপীয় লীগগুলোর খবর রাখে বলে বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়, তাদের বর্তমান ফর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে পারে। আর সেকারণেই আজ ফুটবল ভক্তদের কাছে এই বিশ্বকাপের উন্মাদনা চলে গেছে এক অভূতপূর্ব উচ্চতায়! তবে এর সাথে সাথে এক অদ্ভুত বিরক্তিরও সম্মুখীন হতে হয় এদের। সেটা হল, বিশ্বকাপ ঘনিয়ে এসে এর প্রমত্ততা দারুণভাবে জেঁকে বসলে, ফুটবল সম্পর্কে সাধারণত কোনো প্রকার আগ্রহই রাখেন না- এমন অনেকেই সত্যিকারের ভক্তদের বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে দিয়ে চোখের পলকে বিরাট ফুটবল-সমঝদার বনে যান। এ এক ব্যাপক বিনোদন, কারণ যারা এমনটা করে থাকেন, তারাও মূলত জেনেশুনেই অন্তর্দৃষ্টি বহির্ভূত মন্তব্য-ক্রসফায়ারে ফুটবলের সত্যিকারের সমঝদারদের গায়ে জ্বালা ধরান!



এদিকে, দলই যে সব; বড় বড় নামও যে দলীয় শক্তি , সঙ্ঘবদ্ধ নৈপুণ্যের অভাবে ম্লান হয়ে যেতে পারে, বিশ্বকাপ চূড়ান্ত পর্বই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আইভরি কোস্টের ইয়াইয়া টোরে (ম্যানচেস্টার সিটি), ইংল্যান্ডের রাহিম স্টার্লিং (লিভারপুল),জ্যাক উইলশেয়ার (আর্সেনাল), ঘানার মাইকেল এসিয়ান (মিলান), ক্রোয়েশিয়ার লুকা মড্রিচ (রিয়েল মাদ্রিদ), স্পেনের ফেব্রিগাস (বার্সেলোনা), জুয়ান মাতা (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), সান্তি-কাজোর্লা (আর্সেনাল), ক্যামেরুনের অ্যালেক্স সং (বার্সেলোনা) সহ ইউরোপীয় লীগগুলোর এমন অনেক বিশ্ব-নন্দিত তারকা তো এবার বিশ্বকাপে তেমন সুযোগই পেল না নিজেদের প্রমাণ করার! এদিকে অ্যালেক্স সং তো একেবারে লাল কার্ড দেখে নিন্দিত হয়েই দেশে ফিরে গেলেন! ফুটবল প্রেমীরা নিশ্চয়ই মনে মনে আক্ষেপ করলেন- যারা শুধু বিশ্বকাপেই ফুটবল দেখে, তাদের কি করে বোঝাবেন যে কি অসাধারণ ফুটবলই না এই তারকারা সাধারণত খেলে থাকেন!



পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদর্শনী এমনই নির্মমভাবে ব্যাপক। এর দুটি কি তিনটি ম্যাচই যেকোনো খেলোয়াড়কে পরিণত করতে পারে একজন মহানায়কে অথবা ঠিক তার উল্টোটায়। আবার কী অবলীলায়ই না ম্লান করে দেয় তাদের, যারা বছর জুড়ে চোখ ধাঁধানো ফুটবল প্রদর্শন করে বেড়ান লীগগুলোয়! এ যেন এক কৃষ্ণ গহ্বর, হাইপার ডাইভে যার ভিতর দিয়ে চোখের পলকে খেলোয়াড়েরা স্থান করে নিতে পারে পৃথিবীর অবিনশ্বরদের কাতারে। আর তাই, সিরিয়াস-দর্শক হোক আর সিরিয়াল-দর্শক, প্রিমিয়ার লীগ ত্রাতা হোক আর প্রিয়িমাম দাতা– ফুটবল বিশ্বকাপ এদের সবাইকে এক অচিন্তনীয় নেশায় একত্র করে; অন্যত্রে এতটুকু মনোযোগ দেবার সুযোগ দেয় না, যতক্ষণ না তার মহা প্রদর্শনীর অবসান হয়! এ যে কেমন উন্মাদনা, মানুষের জীবনযাত্রার মানকে তুচ্ছ করে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে যে দেশে এইবারের বিশ্বকাপ মঞ্চস্থ হল, সেই ব্রাজিলের আন্দোলনকারীদের চেয়ে ভাল আর কে বেশি টের পেল?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.