![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বলার মত কোন বিশেষ গুনাবলি আমার নাই ।
বঙ্গভূমিতে জম্নলাভ করেও শত বাধায় মাঝে বেড়ে উঠতে উঠতে হয়ে উঠেছিলো বাংলার উজ্জ্বল নক্ষত্র।তার নামের পরে ছিলো অনেক গুলো পরিচ্য।কখনো গল্পকার,কখনো ঔপন্যাসিক কিংবা চলচ্চিত্র পরিচালক।তার কাজগুলো এমনই ছিলো যে আজ ৪ দশক পরে এসেও আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি মাথা উঁচু করে,আর এদেশের ইতিহাস আজো তার কাজের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য।জীবনের অধ্যায়ের কোন পরিচ্ছেদেই তাকে থেমে থাকতে হয়নি কোথায়ও কোন দিন। জীবন অধ্যায়ের প্তিরটি পরিচ্ছেদে প্রতিটি পরিচয়ে নিজেকে রাঙিয়েছেন নিজের মত করে। তিনি ছিলেন শুধুই একজন,আমাদের একজন জহির রায়হান।
১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত নোয়াখালীর মজুপুর গ্রামে জন্মছিলেন তিনি।১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন।১৯৫০ আমিরাবাদ হাইস্কুল (ফেনী) থেকে মেট্রিক পরীক্ষা দেন তিনি সেই বছরই তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন।১৯৫১ কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সরাসরি জড়িত হয়ে পরেন।স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ঢুকে পড়েন কলেজের গন্ডিতে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ছাত্র অবস্থাতেই ৫২র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন,উপস্থিত ছিলেন ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল তা প্রমাণ আমরা দেখতে পাই তার পরের জীবনের পরিচ্ছেদ গুলোতে।
১৯৫৩ ঢাকা কলেজ থেকে আই.এস.সি পাশ করে ভর্তি হন চিকিৎসাশাস্ত্ে। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়।১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন।৫৮ সালেই ত্যাগ করেই চিকিৎসাশাস্ত্র পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি করেই সেই শুরু আর থেমে থাকা হয়নি জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত কাজ আর জীবন ২টি একই ভাবে বয়ে চলছিল তার হাত ধরে।চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাবেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি যে নদী মরুপথেতেও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে এ দেশ তোমার আমার এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান, জহির এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন।১৯৬০ সালে তার প্রথম উপন্যাস শেষ বিকেলের মেয়ে প্রকাশ পায়।১৯৬১ সালে তিনি রূপালী জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।এই ছবির মধ্য দিয়েই চিত্রনায়িকা হেনা লাহিড়ী সুমিতা দেবীর সাথে পরিণয় হয় তার। ৬২ও৬৩ সালে তিনি সোনার কাজল ও কাঁচের দেয়াল(নিগার পুরস্কার লাভ শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে)নামে ২টি চলচিত্র নিরমান করেন।
১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি)এবং একই বছর হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য আদমজী পুরস্কার লাভ করেন।পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি দেন।১৯৬৮ চিত্রনায়িকা কোহিনূর আকতার সুচন্দার সাথে পরিণয় হয়।তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন সেই বছরই প্রকাশ পায় তার আরো ২টি উপন্যাস”আরেক ফাল্গুন”(বায়ান্নর রক্তস্নাত ভাষা-আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত কথামালা)বরফ গলা নদী (অর্থনৈতিক কারণে বিপর্যস্ত ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্ত পরিবারের অসহায়ত্ব গাঁথা)।১৯৭০ সালে নির্মাণ করেন তার অমর চলচ্চিত্র “জীবন থেকে নেওয়া”।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন।নির্মাণ করতে থাকে মুক্তিযুধের উপর একের পর এক ছবি ।১ম প্রকাশ করা চলচ্চিত্র”স্টপ জেনোসাইড” বিশ্ব দরবারে জানান দেন আমাদের প্রতি অবিচারের,জানিয়ে দেন নিরিহ বাঙালিদের উপর গণহত্যার সেই সব কথা গুলো।নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র এ “স্টেট ইজ বর্ন” এবং সবশেষ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ৩য় চলচ্চিত্র “ইনোসেন্ট মিলিয়ন”(পরিচালকঃ বাবুল চৌধুরী)এবং লিবারেশন ফাইটার্স (পরিচালকঃ আলমগীর কবীর)-এর তত্ত্বাবধান।বুদ্ধিজীবীদের বাংলাদেশ মুক্তি পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত।
তারপর দেশ স্বাধীন হবার পর দেশে ফিরেই ১৯৭২ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি গঠন করেন।পরে তার নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে শুরু করেন যিনি স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে পাকিস্তানী আর্মির এদেশীয় দোসর আল বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলেন।১৯৭২ সালের ৩০ শে জানুয়ারী ভাইয়ের সন্ধানে মীরপুরে যান এবং সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি জহির রায়হান। মীরপুর ছিল ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত বিহারী অধ্যুষিত এলাকা এবং এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে সেদিন বিহারীরা ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালালে তিনি নিহত হন।
তার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য গল্পগুলো হলো সোনার হরিণ,সময়ের প্রয়োজনে,একটি জিজ্ঞাসা,হারানো বলয়,বাঁধ,নয়াপত্তন,মহামৃত্যু,ভাঙাচোরা,অপরাধ,স্বীকৃতি্,অতি পরিচিত,ইচ্ছা অনিচ্ছা,জন্মান্তর,পোস্টার,ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি,কতকগুলো কুকুরের আর্তনাত,সংলাপ,দেমাক,ম্যাসাকার,একুশের গল্প এবং উপন্যাস আর কত দিন,কয়েকটি মৃত্যু,একুশে ফেব্রুয়ারি ইত্যাদি।তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার ,৭৭ সালে চলচ্চিত্রে মরণোত্তর একুশে পদ,১৯৯২ সালে সাহিত্যে মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন।
এরপর এই স্বাধীন বঙ্গে অনেক ২১ এলো গেলো কেউ আমাদের জহির রায়হানের মত করে একুশের গল্প বলেনি,বলেনি হারিয়ে যাওয়া তপুকে খুজে পারাব কথা কোন পড়ন্ত বিকেলে।শত ছবির মাঝে খুজে ফিরে আজো জহির রায়হান এর ছায়া খুজে পাইনি,হয়তো আর পাবো ও না আর কোন দিন।
জহির রায়হান এই বঙ্গের শত শত সন্তান হাজারো কাজের মাঝে তোমাকে যে খুজে ফিরে আজো সে কথা তুমি জানো কিনা জানি না, শুধু প্রাথনা যেখানেই থাকো ভালো থাকো।২১ এর গল্পের হারিয়ে যাওয়া তপুর মত করে তোমাকে খুঁজে পাবো কোন এক শেষ বিকেলে সেই আশা করি না তবে
#এখাচা_ভাঙবো_আমি_কেমন_করে……
©somewhere in net ltd.