নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন মানুষ

সোনালী ঈগল২৭৪

সোনালী ঈগল২৭৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উন্নত দেশগুলোর চেয়ে কেন এখনো আমরা পিছিয়ে আছি ? : একটি বিশ্লেষণ

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৫



সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সেক্টর এ বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে , একথা দলমত নির্বিশেষে আমাদের সকলকেই মানতে হবে । মানবোন্নয়নসূচক এ বাংলাদেশ এখন তার নিকট প্রতিবেশী অনেক দেশের থেকেও ভালো করছে , কিন্তু এই উন্নয়ন সমষ্টিগত উন্নয়ন নয় অর্থাৎ দেশের সকল শ্রেণী কিংবা পেশার মানুষ এই উন্নয়ন এর সুফল পাচ্ছেনা । অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায় হয়তো অতিদরিদ্র অবস্থা থেকে বাংলাদেশের মানুষ কিছুটা মুক্তি পেয়েছে , কিন্তু এই উন্নয়ন কোনো টেকসই উন্নয়ন নয় । অতিদরিদ্র কিছু মানুষের আর্থিক অবস্থার হয়তো কিছুটা উন্নয়ন ঘটেছে । ব্যাক্তিগত ভাবে আমি অর্থনীতির শিক্ষার্থী না , বিজ্ঞানের ছাত্র কিন্তু অর্থনীতির চালচিত্র বুঝতে খুব বেশি একটা বেগ পেতে হয়না । তিনটি অংশে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিচ্ছি:

১ . একথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো বহুলাংশে বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স নির্ভর , যার বড় একটা অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিক থেকে । এই শ্রমিকদের বড় একটি অংশ হচ্ছে অদক্ষ শ্রমিক , টেকনোলজির যে উৎকর্ষতা আজকের পৃথিবীতে দেখা যাচ্ছে সেদিক বিবেচনা করলে আজ থেকে দশ বছর পর বহির্বিশ্বের শিল্পক্ষেত্রের এসব মানব শ্রম নির্ভর কাজ গুলো টেকনোলজির দখলে চলে যাবে । তখন কিন্তু এসব শ্রমিকের আর প্রয়োজন হবে না । যার কিছুটা রেশ আমরা কিন্তু এখন থেকেই দেখতে পাচ্ছি , বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিংবা যারা আছে তারা কাজ পাচ্ছে না । এসব শ্রমিকেরা কিন্তু বেশিরভাগ অদক্ষ , তারা সেখানে অন্য কোনো কাজও পায়না , এক পর্যায়ে দেশে চলে আসে । সমস্যার শুরু কিন্তু তখন , দেশে এসে তারা শুধু বাংলাদেশের বেকারের সংখ্যা বাড়ায় । আজ থেকে আগামী দশ বছর পর এই সমস্যা আরো ব্যাপক হবে , যার ধাক্কা লাগবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে , কারণ আমরা নীতি নির্ধারণের পূর্বে খুব বেশি দূর অর্থাৎ সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা করি না । আর এখানেই উন্নত দেশের সাথে আমাদের পার্থক্য !

২. একটা দেশ গড়ে উঠে তার কিছু সুস্থ এবং কর্মক্ষম জনগণ নিয়ে , দেশের মানুষ যদি সঠিক আর সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠতে না পারে তবে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে না। একটি শিশুর জন্মের পর বেড়ে ওঠা পর্যন্ত তার সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন , বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় একজন শিশু কি পরিমান পুষ্টি পাচ্ছে সে সম্পর্কে আমাদের নীতিনির্ধারকদের কোনো ধারণা নেই। একটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন সব ধরণের খাদ্য উপাদান এবং পর্যাপ্ত পরিমানে প্রোটিন । নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূলের এই উর্ধগতির যুগে একটা বাড়ন্ত শিশু ঠিকমতো প্রোটিন পাচ্ছে না , প্রোটিন জাতীয় খাবার বলতে আমি মাছ , মাংস এবং ডিম আর দুধ কে বোঝাচ্ছি , ক্রমাগত দামবৃদ্ধির কারণে গরুর মাংস বাংলাদেশের অনেক মধ্যবিত্তের নাগালের বাহিরে চলে গেছে , আর অন্য গুলোর কথা নাই বা বললাম । পড়ালেখা এবং গবেষণার কারণে পৃথীবির অন্যতম উন্নত একটা দেশে আমাকে থাকতে হচ্ছে , খুব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেছি , তারা কখনো তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার বিশেষ করে মাছ , মাংস , ডিম, দুধ আর শিশুজাত খাবারের দাম বাড়তে দেয়না ! আজ থেকে তিন, চার বছর আগের যেই দাম আজও তাই রয়ে গেছে , তারা এসব ব্যাপারে খুবই সতর্ক । আমাদের দেশে তার উল্টো আমরা একটি সুস্থ আর সবল প্রজন্ম পাওয়ার লক্ষে কাজ করছি না , তার উপর বিভিন্ন রাসায়নিক এর যথেচ্ছা ব্যবহারের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা যেভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে তাতে আজ থেকে ১৫ কিংবা ২০ বছর পর একটা অসুস্থ আর রোগাক্রান্ত প্রজন্ম দেখার অপেক্ষায় আমরা আছি যেখানে ক্যান্সার এর মত রোগ থাকবে অহরহ । এই রোগাক্রান্ত প্রজন্ম কিভাবে অর্থনীতিকে সামনে নিয়ে যাবে ??? কেউ মানুক আর না মানুক এই চাপ বাংলাদেশের সার্বিক ইকোনমি নিতে পারবে না ।

৩ . শিক্ষা ব্যাবস্থার বেহাল দশা সম্পর্কে আর না বলি ! আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল আছি এই ব্যাপারে । শিক্ষা ব্যাবস্থার এইযে বেহাল দশা , এর ফল জাতি বুঝবে আর বছরখানেক পর , এই সার্টিফিকেট না আসবে কোনো কাজে আর এই সার্টিফিকেটধারীরা না পারবে কোনো ধরণের টেকনোলোজিক্যাল কাজ করতে , সরকারের উচিত প্রতি বছর এভাবে হাজার হাজার গ্রাজুয়েট তৈরী না করে এখন থেকেই মুড়ি মুড়কির মত কর্মমুখী শিক্ষা তথা ভোকেশনাল এডুকেশনের ব্যাবস্থা করা , অন্যথায় এতো বেশিই পরিমান শিক্ষিত বেকারের বোঝা বাংলাদেশ নিতে পারবে না , এর প্রভাব অর্থনীতি ছাড়াও সামাজিক , রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রেই ।

উপরের তিনটি বিষয়েই অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে , কিন্তু আমাদের পলিসিমেকাররা কতটুকু চিন্তা করেন এই বিষয়গুলো নিয়ে ???? শেষ করছি একটি ঘটনার কথা বলে , সম্প্রতি কি একটা যেন প্রসঙ্গে আমি আমার পিএইচডি সুপারভাইসর কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম , ″আচ্ছা আপনারা এতটা উন্নত কিন্তু আমাদের মেধাও তো কম নয় , তবে আমরা পিছিয়ে আছি কেন″ ? খুবই শান্ত আর তীঘ্ন দূরদৃষ্টির অধিকারী অধ্যাপক কিছুটা সময় নিলেন , ভেবে বললেন, ″ধরো তুমি আর আমি দুজন দুটো পাহাড়ে উঠছি , পাহাড়টায় ওঠার আগে আমি অনেক পড়াশুনা করে , এর উচ্চতা , পাহাড়ের প্রকৃতি , সম্ভাব্য বিপদ আর বিপদে পড়লে তার সমাধান সবকিছু ভেবে একটু সময় নিয়ে ওঠা শুরু করলাম আর একসময় চূড়ায় উঠে গেলাম , আর তুমি কিছু না ভেবেই ওঠা শুরু করে দিলে মাঝপথে সমস্যায় পরে তোমাকে সেখানেই আটকে থাকতে হল অথবা তুমি ফিরে আসলে , এখানেই তোমার আর আমাদের দেশের মধ্যে পার্থক্য ″।

আমরা যাই করি না কেন আমাদের কোনোকিছুই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে করি না , আমাদের সমস্ত নলেজ হচ্ছে ভাসা ভাসা । টেকসই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি সে সম্পর্কে প্রচুর পড়াশোনা আর অন্য দেশের অভিজ্ঞতা আহরণ প্রয়োজন , অন্যথায় মানুষের হাতে কিছু টাকা আসবে কিন্তু সামষ্টিক উন্নয়ন হবে না ।

ছবি সূত্র : দ্যা ইকোনমিক টাইমস

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৮

আখেনাটেন বলেছেন: চমৎকার একটি লেখা লিখেছেন। আপনার প্রথম পাতায় এখনও মনে হয় একসেস নেই। এভাবে আর দু একটা লিখুন। এমনিতেই সেফ হয়ে যাবেন।

শেষের কথাটাই সব কিছু বলছে:

আমরা যাই করি না কেন আমাদের কোনোকিছুই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে করি না , আমাদের সমস্ত নলেজ হচ্ছে ভাসা ভাসা । টেকসই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি সে সম্পর্কে প্রচুর পড়াশোনা আর অন্য দেশের অভিজ্ঞতা আহরণ প্রয়োজন , অন্যথায় মানুষের হাতে কিছু টাকা আসবে কিন্তু সামষ্টিক উন্নয়ন হবে না ।

শিক্ষা ও গবেষণায় জাতি মনোযোগী না হলে কখনই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে না। এভাবেই ধুঁকতে ধুঁকতে অগ্রসর হতে হবে। যার বেশির ভাগ উন্নয়নই হবে নন-সাসটেইনেবল। এগুলো নিয়ে আমিও বেশ কিছু লেখা লিখেছি। পলিসি মেকাররা এগুলো বুঝলেই হয়।

চমৎকার লেখাটির জন্য আবারো ধন্যবাদ।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩১

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার অনুপ্রেরণামূলক মন্তব্যের জন্য , আজকেই মাত্র ব্লগে সেফ হলাম

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: গত ১০ বা ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ চিন্তা করেন। আর আজকের বাংলাদেশ চিন্তা করেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৩

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি হচ্ছে খুব দরিদ্র পরিবার হয়তো তাদের দারিদ্রতা দূর করতে পারছে , কিন্তু অন্যদিকে , আবার অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার নতুন করে দারিদ্রতায় নিপতিত হচ্ছে

৩| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:০৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: এই সুচিন্তিত এবং সুলিখিত পোস্টটির জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন! পোস্টে দ্বিতীয় প্লাস + রেখে গেলাম।
আমাদের সমস্যার মাত্র কয়েকটার উপর আপনি আলোকপাত করেছেন, তবে যেটুকু বলেছেন, ঠিকই বলেছেন। আমাদের সব সেক্টরে কোন ম্যাক্রো প্ল্যানিং নেই, কয়েকটাতে যেটুকু আছে, তা অদূরদর্শী এবং অস্থিতিশীল। আজ এ সরকার এসে কিছু করে গেল, তো কাল আরেক সরকার এসে তা স্থগিত কিংবা একেবারেই নিশ্চিহ্ন করে দিল।
খাদ্যে বিষ মিশিয়ে যারা উপার্জনের পথ খোঁজে, তাদের প্রতি সরকার কেন যে এত সহনশীল, তা আমার বোধগম্য নয়। এর দীর্ঘ প্রতিক্রিয়ায় জাতি লাভ করবে একটি অসুস্থ মানবসমাজ, যার চিকিৎসার ভার বহন করতে দেশের ইকোনমি ন্যুব্জ হয়ে যাবে। এমনি এমনিতেই এখন দেশে ক্যান্সার, কিডনী রোগের এতটা প্রসার ঘটেনি। এর সাথে জড়ানো আরো অন্যান্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তো আছেই। অধুনা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো সহজ হবেনা। এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে জাতিকে ভোগাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা তো রীতিমত ভয়াবহ। উপাচার্যদের মানের অবনতি দৃষ্টিকটু এবং লজ্জাস্কর (ছা, ছমুছা, ইত্যাদি)।
আপনার পিএইচডি সুপারভাইজারের কথাটি বেশ প্রণিধানযোগ্য।

২৬ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৩৬

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: ধন্যবাদ খায়রুল হাসান ভাই আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য , আমি দীর্ঘদিন ব্লগে অনিয়মিত ছিলাম , এমনকি আসিনি , প্রায় মাস পাঁচেক পর ব্লগে আবার নিয়মিত হয়েছি , দেরিতে মন্তব্যের উত্তর প্রদানের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত , আপনার অনুপ্রেরণামূলক ও আশাজাগানিয়া মন্তব্যঃ আমার চিন্তাশক্তিকে আরো শানিত করার সুযোগ দেবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.