নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন মানুষ

সোনালী ঈগল২৭৪

সোনালী ঈগল২৭৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাম্প্রতিক বাংলাদেশে উচ্চ আত্মহত্যাপ্রবণতার স্বরূপ উন্মোচন

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:০৮

শোনা গেল লাসকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে— ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হ’লো তার সাধ

রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাস তার আট বছর পরে শীর্ষক কবিতায় এভাবেই হয়তো তার কোনো নিকটজনের আত্মহত্যার প্লট তুলে ধরেছিলেন , কিন্তু আশ্চর্য কি ভাবতে ভাবতে বা ভাবনায় তিনি নিজেও তার জীবনকে চলন্ত ট্রামের নিচে বিসর্জন দিয়ে গেলেন ।
নির্বাচনের এই ডামাডোলের মধ্যে আপনারা খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা , সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় বনানী থেকে মহাখালী : আত্মহত্যার বদ্ধভূমি নামে একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে , লেখক খুব গুরুত্বসহকারে বনানী থেকে মহাখালীর দিকে যেই রেলক্রসিং গেছে তার নিকটবর্তী চা দোকানিদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছেন প্রকৃত অবস্থাটা কি ! প্রতি সপ্তাহে এখানে কেউ না কেউ আসে আত্মহত্যা করতে , কি তরুণ , চাকরি হারানো মাঝবয়সী লোক কেউ বাদ যায় না ।কাউকে হয়তো ফেরানো গেছে আর কেউ হয়তো জীবনকে দিয়ে যায় রেলের চাকার নিচে ! কোন হতাশায় স্বীয় প্রাণ সংহারী এই মানুষগুলো ??????

আমরা এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি , এক অদ্ভুত গ্রহণকাল চলছে বাংলাদেশে ,সবাই এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত , আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা এক বিশাল বেকার জনগোষ্ঠী তৈরী করেছে যার মধ্যে বিশাল সংখ্যায় উচ্চশিক্ষিত বেকার , কাঙ্খিত চাকরি না পেয়ে এসব বেকার তরুণেরা হতাশ । বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি আমাদের কারো অজানা নয় , সবার একইরকম আর্থিক সামর্থ থাকেনা , যখন তারা দেখে পাশের বাড়ির ছেলেটি কিংবা পরিচিত বন্ধু যোগ্যতাসম্পন্ন না হয়েও কেবল অর্থ আর খুঁটির জোরে চাকরি পাচ্ছে তখন এসব অসফল তরুণদের মনে বাসা বাধে একরাশ অতৃপ্তি আর হতাশা , পরিবার কিংবা বন্ধু সবাই এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করে , যার ফলে প্রথমে মনে জন্ম নেয় ক্ষোভ , একসময় পরিণত হয় হতাশা আর সবশেষে আসে বিষাদ । আর এই সময়ই তার নিজের জীবনকে নিজের কাছে তুচ্ছ আর অর্থহীন লাগে , আশা করার জায়গা গুলো ভরসা করার মানুষগুলো থেকে অবদমনের শিকার হয়ে সে কোনো আলো দেখতে পায়না , এই অবস্থায় আমাদের নার্ভাস সিস্টেমে হতাশা সৃষ্টিতে সহায়ক হরমোনের ক্ষরণ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে হয় , একপর্যায়ে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সে আত্মহত্যা করে বসে । সম্প্রতি ঢাকায় অবস্থানরত আমার জুনিয়র এক পরিচিত ছেলের সাথে কথা হচ্ছিলো , কথায় কথায় সে বললো . তাদের পাশের বাড়ির এক ছেলে বিসিএস প্রশাসন এ ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে , সেই দেখাদেখি তার পরিবার থেকে চাপ আছে তাকেও প্রশাসন ক্যাডার এ যেতে হবে নইলে প্রতিবেশী হিসেবে মুখ রক্ষা হবে না । ছেলেটা এতো মানসিক চাপের মধ্যে আছে যে প্রশাসন এ না হলে আত্মহত্যা ছাড়া নাকি আর তার কোনো গত্যন্তর নেই , এই সর্বনাশা বিসিএস প্রতিযোগিতা কোনো অংশেই কম দায়ী নয় সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পেছনে । বিগত মাস গুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যার ঘটনার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে এগুলোর অনেক গুলোর পেছনে ছিল বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হবার গ্লানি , এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করা দরকার । এছাড়া প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার ঘটনা নতুন করে বলার কিছু নেই , কিন্তু সম্প্রতি আত্মহত্যার তালিকায় মাঝবয়সী লোকদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে , সম্ভবত হঠাৎ চাকরি হারিয়ে মানসিক আর আর্থিক বিপর্যয়ে তারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ,

আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে নিজের চেয়ে বেশি মূল্যবান আর কেউ নেই , প্রতিদিন যেই নতুন সকাল শুরু হয় তার জন্য আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিতে হবে । মুক্ত বাতাসে যে নিশ্বাস আমরা নেই তার জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে । জীবন অনেক বড় , এখানে চ্যালেঞ্জ আসবে , এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে , প্রতিটা মানুষ আলাদা , তার যোগ্যতা আলাদা , নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা বন্ধ করতে হবে , আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে নিজের , নিজের যোগ্যতা অনুসারে । ভাবতে হবে আমি কি ছিলাম , এখন কোথায় আছি আর ভবিষ্যতে আমার যোগ্যতা আর পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় নিজেকে কোথায় নিতে পারবো ।এমন কিছু জীবনে প্রত্যাশা করা উচিত না যার জন্য সবদিক বিচারে আমি যোগ্য না , প্রত্যাশার সীমারেখা সম্পর্কে ধারণা থাকা ভালো , তাহলেই আমরা আমাদের হতাশার পরিমান অনেক কমিয়ে আনতে পারবো ।

একটা মেয়ে বা একটা ছেলে যখন সুইসাইড করে , তার শেষ ঠিকানা হয় লাশকাটা ঘরের টেবিলে, তার শরীর অনাবৃত করে তার পোস্টমর্টেম করা হয় । একবার ভেবে দেখেছেন কি , যেই শরীরকে লজ্জার হাত থেকে রক্ষার জন্য আমাদের এতো আয়োজন , এতো পোশাক , সেই শরীরকেই সবার সামনে অনাবৃত করে পোস্টমর্টেম করা হয় , আত্মহত্যাকরি ব্যাক্তি তো তার প্রাণ বিসর্জন দিয়ে গেলো কিন্তু মৃত্যুর পর এটাও কি কম বিসর্জন !!!! জীবন থাকতে কখনো কি সে তার এই পরিণতির কথা ভেবেছিলো ? এইভাবে জীবনের পরিসমাপ্তি কি তার কাম্য ছিল ?

কারো স্থান যেন হাসপাতালের লাশকাটা ঘরে না হয় এই কামনাই রইলো ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩৫

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: সুন্দর এবং মূল্যবান একটি পোস্ট।

আমার মনে হয়, যারা আত্মহত্যা করছে তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই পরিবারের সাথে বন্ধুত্বতামূলক সম্পর্কহীনতার কারনেই এমনটা হচ্ছে। হয়ত পরিবারের মূল্যবান মানুষগুলো তাদেরকে সেই পরিমানে সময় দিচ্ছে ; যতটুকু এই মানুষগুলোর প্রয়োজন।


২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৭

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য , ভালো থাকবেন

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের আশাবাদী হতে হবে।
দেশ কিন্তু একটু একটু করে সামনের দিকে এগোচ্ছে।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৮

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই মন্তব্যের জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.