নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমরা যারা আমাকে ভালবেসেছিলে

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:১০


কমলাপুর রেল স্টেশন।

কাকরাইল।

হাতিরঝিল।

রমনা পার্ক।

ঠিক কবে, কখন সময়কাল আজ আর সঠিক মনে নেই। হতে পারে দুবছর আগে, তিন বছর, চার বছরও হতে পারে। সময় যেন ঝরের গতিতে অনবরত বয়ে চলে! আমার মনে হচ্ছে যেন গতকালই এটা ঘটেছিল। স্মৃতিগুলো এতটাই সজিব আজও!
ঢাকাস্থ শিল্পকলা একাডেমীতে ফটোগ্রাফির কোনও এক প্রদর্শনীতে গিয়েছিলাম। এরকমই শীতকাল তখন। ঝরঝরে সতেজ রোদ্দুরের প্রাণোচ্ছল এক দুপুর। নীচতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাবো, এমন সময় হঠাৎ একজন মেয়ে পাশ থেকে জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা প্রদর্শনী কোন ফ্লোরে হচ্ছে জানেন?' দুতালা বা তিনতালা। জবাবে যা জানতাম জানিয়েছিলাম আমি। তারপর দুজনেই প্রদর্শনী কক্ষে গিয়ে যে যার মতো এটা উপভোগ করছিলাম। এমন সময় মেয়েটি আবার আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা প্রদর্শনী কতদিন পর্যন্ত চলবে?' এবার আমি কিঞ্চিত বিরক্ত না হয়ে পারলাম না। ভাবলাম আচ্ছা বোকা তো মেয়েটা! সবকিছু পোস্টার, ব্যানার, সাইনবোর্ড সবখানে স্পষ্ট লেখা আছে প্রদর্শনী কোথায় কোন ফ্লোরে চলছে, কতদিন চলবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সেগুলো দেখলেই তো হয়। আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করা কেন! খানিকটা বিরক্তির সাথেই হয়তো যা জানতাম তা জানালাম ওকে। এবার নির্ঘাত মেয়েটিও আমার বিরক্তি অনুধাবন করতে পেরে কিছুটা বিব্রত হলো। যতদূর মনে পড়ে এদুটোর মাঝখানে, আরও একটা কিছু ও জানতে চেয়েছিল আমার কাছে প্রদর্শনী সংক্রান্ত। এখন ঠিক মনে করতে পারছি না। নাও হতে পারে। হয়তো আমাকে ও ফটোগ্রাফার ভেবেছিল। আমি ফটোগ্রাফিতে শখ রাখি বৈকি। যতদূর মনে পড়ে সেসময় আমি আমার নোকিয়া এন ৯৫'র ফোন ক্যামেরা দিয়ে এখানে সেখানে দুদ্দাড় ছবি তুলে বেড়াতাম। খুব আনন্দ পেতাম এতে। নোকিয়া এন৯৫ পৃথিবীর প্রথম স্মার্টফোন যাতে একটি ৫ মেগা পিক্সেল'র লেন্স যুক্ত হয়েছিল। জার্মানির বিখ্যাত লেন্স নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কার্ল জাইস এই ফোনের জন্য প্রথম তাদের এতো ক্ষমতাসম্পন্ন স্মার্টফোন লেন্স স্থাপন করে। তখন কমপ্যাক্ট ও ইত্যাদি ক্যামেরাই সাধারণত ৫-১২ মেগা পিক্সেল লেন্স'র মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। ইত্যবসরে প্রযুক্তি অনেক, অনেক এগিয়ে গেছে! এলেখায় সেসময় আমার নোকিয়া এন৯৫'র ফোন ক্যামেরায় ধারণ করা কিছু ছবি যুক্ত করা হলো। ২০১২, ১৩'র বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় তোলা হয়েছিল ছবিগুলো। সাদাকালো ফিল্টারে এডিট করা। সেসময়ের থেকে বেশ বদলে গেছে ঢাকা, সেতো বলাই বাহুল্য। ছবিগুলো কেবলমাত্র সেই মেয়েটির সৌজন্যে যুক্ত করলাম। ওর সাথে সাথে সেদিনের ঢাকারও কিছু স্মৃতিচারণ হবে।
নোকিয়া এন ৯৫ কিংবা আমার ফটোগ্রাফি নিয়ে অন্য কোনও লেখা লেখা যেতে পারে। এখানে আমি শিল্পকলা একাডেমীর সেদিনের চিত্র প্রদর্শনীর সেই মিষ্টি মেয়েটিকে নিয়ে লিখতে বসেছি। সেখানেই থাকি যেখানে ছিলাম। মেয়েটি তখন আমার বিরক্তি বুঝতে পারে। এরপর সেখানে আমাকে আর কোনরকম বিরক্ত করেনি ও। তখন পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল, মেয়েটা আর কিছু নয়, আসলে একটু নির্বোধ টাইপের। পোস্টার, ব্যানার, সাইনবোর্ড ইত্যাদি প্রদর্শনীর বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত জিনিসগুলো ভালভাবে না দেখে, আরেকজন দর্শনার্থীকে এটা ওটা প্রশ্ন করে বিরক্ত করে! মেয়েটির বুদ্ধি কম। তখন পর্যন্ত বিন্দুমাত্র অন্যকিছু মাথায় আসেনি।
এভাবে প্রদর্শনী শেষ করে আমি ফিরে আসছিলাম। সেসময়, ঠিক ওখান থেকে ফিরে আসার মুহূর্তে মনের মধ্যে কেমন যেন খচখচ করতে লাগল। মেয়েটি কি আমাকে কিছু বলতে চায়! ভাবলাম। বারবার আমার কাছে এটা ওটা জানতে চাইছে কেন! নাহ কি বলবে, বলার কি আছে! তখনও সংশয় মনে।
নীচে নেমে দেখলাম মেয়েটি নীচে একাডেমী ভবনের বারান্দায় একা দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু করে। খুব বিষণ্ণ ও হতাশ দেখাচ্ছিল ওকে। আমি যখন ওর পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম, তখন সবকিছু দিবালোকের মতো পরিষ্কার বুঝতে পারি। আমি নিজেও ভিতরে ভিতরে খুব ব্যথিত হয়ে পড়ি এসময়। বুঝতে পারছিলাম না, আমি এখন কি করব, আমার কি করা উচিৎ! আমি কি ওকে হাত বাড়িয়ে ডাকব, কাছে যেয়ে দাঁড়াব। যেয়ে বলব আসুন না পাশের কফি হাউজটা এসময় একেবারে খালি পড়ে থাকে। চলুন না দুজনে কিছুক্ষণ সেখানে পাশাপাশি বসে গল্প করি।
কিন্তু উপস্থিত মুহূর্তে কিছুই বলা হলো না। হয়তো বলা যায়ও না! মেয়েটার তরফেও আর কিছু হলো না। ওকে ছাড়িয়ে পনের বিশ কদম যাবার পর বুকের ভিতর কেমন যেন এক তীব্র শূন্যতা অনুভূত হতে লাগলো। মনে হচ্ছিল আমি যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফেলে যাচ্ছি পিছনে, যা আমি আর কোনদিন ফিরে পাব না। অদ্ভুত সেই শূন্যতা নিয়ে আমি পিছু ফিরলাম, দেখলাম ও তখনও আগের মতোই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এসময় পাশ থেকে একটি সাদা কার এসে দাঁড়াল ওর সামনে। ড্রাইভার বেরিয়ে গেট খুলে দিলে মেয়েটি চড়ে বসলো গাড়িতে। তারপর ড্রাইভার সা করে সেই গাড়িটা কিছু মুহূর্তের মধ্যেই ছুটিয়ে নিয়ে গেল আমার দৃষ্টি সীমার আড়ালে।
সেদিন প্রদর্শনী থেকে ফিরে আসার সময় ওর সেই লজ্জানত, ব্যথাভরা, শীতল, করুণ মুখটাই ওখানে তখন আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছিল। ওর সেই করুণ, ব্যাকুল মুখখানি আমি জানি আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না। ওটা ভোলার নয়। এরপর আরও হাজারবার কারণে অকারণে গিয়েছিলাম শিল্পকলা একাডেমীতে। কিন্তু মেয়েটিকে আর কোনদিন দেখিনি। এই পোস্টের মাধ্যমে মেয়েটিকে জানাতে চাই, তোমার এই পবিত্র ভালবাসা আমি হৃদয়ে নিলাম। এভালবাসা ফুলের মতো নিষ্পাপ ও শুদ্ধ। বিশ্বাস কর, আমি কোনদিন নাচিনি, শখ করেও কখনও গান গাইনি কোনও আড্ডা বা আসরে। আমার কোনও জন্মদিন উদযাপন হয়নি কখনও। তোমরা আমাকে যারা এভাবে অকারণে এতো ভালবেসেছিলে; আমার মাঝেমাঝে বড্ড ইচ্ছে করে এর প্রতিদানে আমি তোমাদের জন্য প্রাণভরে শুধু নাচি, গান গাই ইচ্ছেমত।#

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:২১

সোহানী বলেছেন: নি:শব্দ ভালোবাসায় ভালোলাগা............

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:৩৭

অর্ক বলেছেন: যথার্থই বলেছেন ব্লগবন্ধু। কিন্তু কিছু করার থাকে না। হতে পারে মেয়েটি বয়সে আমার থেকে খানিকটা বড় হয়ে থাকবে, হয়তো বিবাহিতা হয়ে থাকবে। সে যাই হোক। সব এখন স্মৃতি। ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১১

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: এই ধরণের ভালোবাসা মানুষ কে ভাবায়, মনে শূন্যতা জাগায়।
ভালো লাগল আপনার আত্ম বিশ্লেষণ।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১৭

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:২৮

শায়মা বলেছেন: আহারে ভাইয়া!

তোমার গল্পটা পড়ে আমার এখন তোমাকে আমার একটা গল্প পড়ানোর ইচ্ছে হচ্ছে!

গল্পটা কি দেবো তোমাকে???

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১৯

অর্ক বলেছেন: নিশ্চয়ই, কেন নয়! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:২৯

শায়মা বলেছেন: আর হ্যাঁ কেমন আছো ভাইয়ামনি?
অনেকদিন পরে লিখলে মনে হচ্ছে!

৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৩০

শায়মা বলেছেন: তোমার পেছনের পোস্টগুলো ঘুরে এলাম। বাহ! ইদানিং তো রেগুলার হয়েছো আবার! সবগুলো পোস্টই পড়তে হবে! :)

৬| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪৭

শায়মা বলেছেন: এই যে গল্পটা ভাইয়া :)

৭| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: অর্ক ,



মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো । সাদাকালো ছবির মতোই সুন্দর, নিটোল ।

সমস্ত লেখাটি যেন বলছে ----
ইয়ে লামহে, ইয়ে পল হঁম
বরষো ইয়াদ করেঙ্গে,
ইয়ে মওসম চলে গ্যায়ে তো
হঁম ফরিয়াদ করেঙ্গে .........

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫১

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৮| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: একটা পরিচ্ছন্ন প্রেমানুভূতির গল্প। স্বচ্ছ আবেগ, সাবলীল বর্ণনা। + +

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২০

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৯| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৩৪

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: জীবনে চলার পথের মোড়ে হঠাৎ দাড়ালে সুখানুভুতির পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে অবলোকন করলে যে ছবিটি চোখের রেটিনায় ভাষে সে ফেলে আসা ক্ষন যদি সেখানে কোন বনফুল ও ছিল তাও আজ মোহিনী ।আপনার মোহিনী লিখাটি পড়ুক সেই কামনাই রইল।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২৪

অর্ক বলেছেন: অনেক, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর একটি মন্তব্যেরর জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.