নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়া নগরীতে প্রাতরাশ

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:৩১


এইতো গুরু তেজ বাহাদুর নগরে, মহেন্দ্র আমার জন্য ঘুম ঘুম চোখে চা বানাচ্ছে। আমি ছিলাম প্রথম খদ্দের। আশা করি ওর ব্যবসা ভালো গেছে সারাদিন।


পোহা। আন্ধেরি স্টেশনের পাশে একটি ঘরোয়া, বোধহয় গুজরাটি হোটেল। ওখানে খুব খেয়েছি।

আসলে এটা আমাদের দেশের চিড়াই, সিদ্ধ করে বা ভিজিয়ে হলুদ আর বাদাম দিয়ে পরিবেশন করা হয় 'পোহা' নামে। মুম্বাইয়ের অন্যতম প্রধান খাবার। সকালের নাস্তা হিসেবে সেখানে পোহা ব্যাপক প্রচলিত; মানে সকালেই মূলত পাওয়া যায় খাবারটি। অনেকবার খেয়েছি মুম্বাই থাকাকালীন। খেতে খুব যে সুস্বাদু, তা নয়, মোটামুটি। কিন্তু দারুণ প্রচলিত একটি খাবার সেখানকার। ছোট ছোট হোটেল রেস্টুরেন্টে একটি বন প্লেটে পরিবেশিত হয় পোহা। বিশ থেকে ত্রিশ রুপিতে পাওয়া যাবে। ছবিতে যেমন দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাতে খুব সকাল সকাল ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে পোহা, উপমা, শিরার। ওরা আটটা থেকে দশটা সাড়ে দশটার মধ্যেই সব বিক্রি করে চলে যায়। ওদের কাছে খেতে হলে প্রস্তুতি নিয়ে সকাল সকাল জায়গা মতো যেতে হবে। দাম বেশ সস্তা ওখানে; দশ পনের রুপিতে এক প্রিচ পাবেন। এমনকি দুটো আইটেম একসাথে যুক্ত করারও ব্যবস্থা আছে; মানে দুটো খাবার এক প্রিচে পাশাপাশি। সকাল সকাল চোখে পড়বে, সড়কের পাশে লোকজন একেবারে ঘিরে রেখেছে বিক্রেতাকে। সব শ্রেণী পেশার মানুষকে সকালবেলা খেতে দেখেছি ওখানে। একদিন সকালে আন্ধেরিতে মানুষের বড়সড় একটা জটলা দেখে, দুর্ঘটনা সন্দেহ করে যেয়ে, আবিষ্কার করি ছোট্ট ভ্রাম্যমাণ দোকানটি। এমনিতেই মুম্বাই এসব স্ট্রিট ফুডের ওপর দারুণ রকম নির্ভরশীল। দেদার বেচাকেনা চলে সারাদিন। ওখানকার খাবার দুতিন ঘন্টার মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এতো চাহিদা! বেশ কবারই ভোরবেলা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পরম তৃপ্তিভরে খেয়েছি সেখানে। আমি মূলত শিরা আর পোহাই খেয়েছি। উপমা আমার ভালো লাগে না, নোনতা। পোহার কথা তো আগেই বলেছি। শিরা খেতে মিষ্টি, রঙ টকটকে লাল। আমি অনেকটাই নিশ্চিত যে, ওটা খাবারের লাল রঙ নয়। খাবারের রঙ অত্যন্ত মূল্যবান, ওই দামে দেয়া সম্ভব নয়। ওটা কিছুতেই ফুড কালার নয়, হয়তো জামাকাপড়েরই রঙ! তাই শিরা খাবারটা আমি ঠিক কাওকে খাবার জন্য পরামর্শ দিতে পারছি না; রক্তের মতো টকটকে লাল রঙ! স্বাস্থ্য সচেতন হলে না খাওয়াই ভালো। পোহাতেও যে আমাদের দেশের হলুদই দেয়া হয়, তাও নিশ্চিত নই! আমি শুধু আশা করতে পারি, ওটা হলুদই, রঙ নয়। খেয়ে ঠিক নিশ্চিন্ত হতে পারিনি, হলুদ কিনা! ওইসব ভ্রাম্যমাণ দোকানে খেতে হলে খুব সকালে যেতে হবে। খাবারের তিনটি ড্রাম নিয়ে আসে বিক্রেতারা দুতিন ঘন্টার মধ্যে সব বিক্রি শেষ করে বাড়ি ফিরে যায়। চার্চগেট আন্ধেরিতে ভোরবেলা বেশ কয়েকবার খেয়েছি। খুব উপভোগ করেছি সময়টা। আমার শিরাটাই বেশি খাওয়া হয়েছে। শিরা ও উপমা খাবার দুটি চালের গুড়ো বা সুজিটুজি দিয়ে বানানো হয়। আমি খেয়ে এর উপাদান সম্পর্কে ঠিক নিশ্চিত হতে পারিনি! এগুলো মুম্বাইয়ের স্থানীয় খাবার। সকালেই মূলত পাওয়া যায়। নাস্তা হিসেবে প্রচলিত।
মুম্বাইয়ের মানুষ বেশ স্বল্পাহারী। হোটেল রেস্টুরেন্টে ওদের খাবার দেখেছি, পরিমাণে বেশ কম। ওভাবেই খেয়ে থাকে তারা। সবাই খেয়ে চলে যায়। কেউ কোনটাই দুবার অর্ডার করে না। অনেক সময় আমার এমন হয়েছিল যে, ভেবেছিলাম আরও এক প্লেট পোহা বা অন্যকিছু অর্ডার করি। কিন্তু লজ্জা লাগতো, কে জানে, লোকজন রাক্ষস টাক্ষস ভেবে বসে নাকি আবার! হা হা হা। যাই হোক নিয়মিত দুতিনবার ভিন্ন ভিন্ন হোটেলে অল্প অল্প করে খেতে হতো। এছাড়া মুম্বাইয়ের সবখানেই মোটামুটি সকালবেলায় পুড়ি সবজি পাওয়া যায়, প্যাকেজ সিস্টেম; রেস্টুরেন্টের মান ভেদে দামের তারতম্য আছে। পাঁচ ছয়টা মাঝারি সাইজের পুরি, মিক্সড সবজি দিয়ে পরিবেশন করা হয়; আন্ধেরিতে পঞ্চাশ রুপির মতো দাম, অন্যান্য জায়গায় আরও সস্তায় পাওয়া যাবে। মসজিদ বন্দরে একই পুরি সবজি ত্রিশ পঁয়ত্রিশ রুপিতেই মিলবে। আমি হিন্দু হোটেলে রুটি, পরোটা এসব দেখিনি; মুসলিম এলাকায় মুসলিম হোটেলগুলোতেই এগুলো পাওয়া যায়। সিঙ্গারার ভালো প্রচলন আছে সেখানে, যদিও নাম সিঙ্গারা নয়, সামোসা। মাংস, বিরিয়ানি, রুটি ইত্যাদি সকালেও পাওয়া যায় মুসলিম হোটেলগুলোতে। মুম্বাইয়ে 'নাগরী চায়েআলা' নামে এক ধরণের ছোট চা নাস্তার একাধিক দোকান দেখেছি বেশ কয়েক জায়গায়। চা পাওয়া যায়, কাটিং ছয়, ফুল দশ বা বার রুপী, আরও টুকটাক হালকা নাস্তা। 'নাগরী চায়েআলা'র বিভিন্ন শাখায় বেশ কয়েকবারই চা সিঙ্গারা খেয়েছি। বান্দ্রা স্টেশনের কাছে নাগরী চায়েআলার এক বৃদ্ধ দোকানদারের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এছাড়া মাঝেমাঝেই আমি সকাল সকাল মসজিদ বন্দরের ভিতরে ছোট ছোট হোটেলে রুটি, মাংস, কিমা, ইস্টু, হালুয়া এসব নিয়ে বসতাম। দাম খুব সস্তা! মোটামুটি ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ রুপিতে দিব্যি ভরপেট নাস্তা হয়ে যাবে। মাংসের তরকারিগুলো যথেষ্ট ঝাল, খেতেও সুস্বাদু। যদিও পরিবেশ তেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নয়। অতো সস্তায় আর কীইবা আশা করতে পারি! ওই হোটেলগুলোতে আমি মহিলা খদ্দের দেখিনি। সকালবেলায় খুব ভিড় হয়, ধুন্ধুমার বেচাকেনা।
শুরুর দিকে একবার আন্ধেরিতে ম্যাকডোনাল্ডস'র ভিতরে বসে একটা বার্গার আর এক কাপ রেগুলার ক্যাপুচিনো খেয়েছিলাম, দুশো বিশ, ত্রিশ রুপি বিল উঠেছিল। 'ম্যাকডোনাল্ডস ম্যাকডোনাল্ডস' করে দুনিয়াজোড়া এতো মাতামাতি কেন বুঝলাম না! ওখানে ওদের বার্গারে বিশেষ কী পেলাম জানি না! খুবই সাধারণ লাগলো আমার কাছে। এর থেকে মেট্রো স্টেশনের প্লাটফর্মগুলোতে অর্ধেক মূল্যে এর থেকেও সুস্বাদু বার্গার পাওয়া যায়। বার্গার ওখানে মোটামুটি সবখানেই পাওয়া যায়। এছাড়াও মুম্বাইয়ে আরও অনেকরকম ব্যবস্থাই আছে প্রাতরাশের। বিরাট শহর! ইডলি, দোসা, কিছু চাইনিজ আইটেমও পাওয়া যাবে ছোটবড় বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়। ইডলি খাবারটা আমার খুব ভালো লাগে। বেশ খেয়েছি মুম্বাইয়ে। ইডলি এখন কোলকাতাতেও পাওয়া যায়। ইডলি খাবারটা স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো। আসলে আমি যা খেয়েছি, আমি যা দেখেছি, আমার যা অভিজ্ঞতা, আমি তা নিয়েই শুধু বলতে পারি। মোটামুটি এই আমার মুম্বাই শহরে সকালের খাবারের অভিজ্ঞতা। এছাড়া রেল স্টেশনের প্লাটফর্মেও এটাওটা হালকা খাবার খেয়েছি সবসময়। চা কফি জুস ইত্যাদি ঠান্ডা গরম পানিয় দিনরাত সবসময় তো খেয়েইছি থেকে থেকে!

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:৫১

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: এ দেখি খাওয়া দাওয়ার এক বিশাল !
পোহা দেখে খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:১০

অর্ক বলেছেন: পোহা মুম্বাইয়ের খাবার। এখানেও দিব্যি বানানো সম্ভব। চিড়া ভিজিয়ে বা সিদ্ধ করে বাদাম দিয়ে পরিবেশন করা হয়। নেটে সার্চ করলেই রেসিপি পেয়ে যাবেন। হয়তো দেখা যাবে নুডলস রান্নার মতোইই নির্ঝঞ্ঝাট।
ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৩

শায়মা বলেছেন: পোহা দেখে আমার মোটেও খাবার ইচ্ছা হলো না! তার থেকে মনে হয় চিড়া ভাঁজাও অনেক মজা! আর মুম্বাইতে ভালো সকালের কানা পাওয়া যাবেনা বলেই আমার মনে হচ্ছে ভাইয়া! তবে রুমালী রোটি মাংস ভুনা এসব হলে আমি আছি ! :)

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৯

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ শায়মা।

৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৪১

ফয়সাল রকি বলেছেন: রুমালী রোটি মাংস ভুনা হলে তো আমিও আছি!
তবে ছবিটা দেখে কিন্তু প্রথমে খিচুড়ি ভেবেছিলাম।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৯

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৫

হাসান রাজু বলেছেন: আমিও ভেবেছি খিচুড়ি । সবজি খিচুড়ি বুঝি লেবু দিয়ে।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৯

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৪৬

কোলড বলেছেন: Hotel is where you sleep the night and restaurant is where you eat. Although some hotels do contain onsite restaurant.

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:২৫

অর্ক বলেছেন: The hotel called al harm or something like this, near masjeed bandar. They don't have any restaurant. I don't write diary, it's just impossible for me to recall all the names and other details. I hope you can understand. Thanks and best wishes.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.