নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুম্বাইয়ের অম্লমধুর কিছু স্মৃতি

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৯



(পূর্ব প্রকাশের পর)

একদিন ঝুম বৃষ্টির বিকেলে

মুম্বাইয়ে আন্ধেরির একটি হোটেলে দারুণ বৃষ্টিতে আটকা পড়েছি। ঝুম বৃষ্টি। থামার আর নাম নেই। কী বিড়ম্বনা! দুই গ্লাস কোকোম জুস খাওয়া হলো। মুম্বাইয়ে যেয়ে এই একটা জিনিসের প্রেমে পড়ে গেছি বললে ভুল হবে না! কোকোম জুস। প্রাণভরে খেয়েছি। ওই বিশেষ হোটেলটা তো আছেই। এছাড়াও স্টেশনের প্লাটফর্ম, ছোট রেস্টুরেন্ট, ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা যখন যেখানে পেয়েছি, খেয়েছি প্রাণ ভরে। ওখানে খুব প্রচলিত এই কোকোম জুস। সর্বত্রই পাওয়া যায়। খেতে কেমন যেন ঝাল ঝাল, বেশ ভালো লাগে।
যাই হোক বৃষ্টিতে আটকা পড়েছি সেই হোটেলে। হোটেলটা আমার খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিল অল্প কয়েক দিনেই। আন্ধেরি রেল স্টেশনের পাশে। হয়তো বাড়ির উঠোনকেই হোটেল বানানো হয়েছে! একেবারে নিরিবিলি ঘরোয়া পরিবেশ। অনেকটা ছোট একটি মাঠের মতো খোলামেলা। মুম্বাই থাকাকালীন খুব গিয়েছি ওখানে। প্রত্যেকদিন একবার হলেও যেতাম। জুস, কফি, পোহা, বড়া পাও ইত্যাদি খেতাম। সুন্দর কিছু সময় কেটেছে।
যাই হোক প্রায় ঘন্টা খানেকের মতো বৃষ্টি চললো একটানা। তারপর কিছুটা কমে এলে বেরিয়ে আসি সেখান থেকে। এ সময় স্টেশনে যাবার পথে আবার মুসল ধারে বৃষ্টি শুরু হলো। কী বিড়ম্বনা! কয়েকজন মানুষের সাথে পাশের একটা দোকানের সামনে, নিরাপদ আশ্রয়ে দাঁড়ালাম। বৃষ্টি চলছে। এ সময় একজন মধ্যবয়সী লোক দেখলাম, কনুই দিয়ে আমার কোমরে গুতো দিল।
'কী ব্যাপার?' বিরক্তির সাথে তাকে বললাম আমি। 'ওরকম করছেন কেন?’
'ওই যে দেখুন।' জবাবে সে বললো আমাকে।
তার চোখের ইশারায় নির্দেশিত দিকে তাকিয়ে দেখলাম, একজন লোক, ডান্ডা বিহীন অদ্ভুত একটি ছাতা হাতে নিয়ে বেশ ছোটাছুটি করছে সড়কে। হয়তো কোনও ঠিকানা খুঁজছিল সে। হা হা হা। সশব্দে হেসে উঠলাম দৃশ্যটা দেখে। লোকটার ছাতায় লম্বা যে ডান্ডা থাকে ধরার, সেটা নেই। বৃষ্টিতে মেলে দেয়া ছাতার একেবারে গোড়ায়, একটুকরো অবলম্বন কোনওরকমে কষ্টেসৃষ্টে ধরে আছে। ওতেই বেশ কাজ চলে যাচ্ছে। ছাতাটা দিব্যি কাজ করছে। বৃষ্টি আর পড়ছে না তার শরীরে। ওরকম একটা নষ্ট ছাতা নিয়ে ভদ্রলোক রাস্তায় নেমেছে কেন, বুঝতাম পারলাম না! হতে পারে, চলার পথে হঠাৎ ছাতাটা এমন নষ্ট হয়ে যেয়ে, বিপদে পড়েছে বেচারা!
হা হা হা। আমাদের হাসির সাথে আরও কয়কেজন যোগ দিল উদ্ভূত মজাদার পরিস্থিতি দেখে। যে লোকটি আমাকে দৃশ্যটি দেখিয়েছিল, তার তো দেখলাম তর্জনী নাচিয়ে নাচিয়ে হাসতে হাসতে একেবারে সেখানে গড়াগড়ি খাবার মতো অবস্থা। সত্যি দারুণ মজা পেয়েছিলাম ব্যাপারটা দেখে। আমি নিজেও আর না হেসে নিজেকে সংবরণ করতে পারিনি। যদিও মজার কিছু ছিল না। কিন্তু কী করবো! মানুষ তো! চেয়ার থেকে কাউকে 'ধপাস' করে চিৎপটাং হয়ে পড়তে দেখলে যেমন আমরা কিছুতেই আর না হেসে পারি না, মুখ টিপে হলেও হাসি; অনেকটা ওরকম পরিস্থিতি সেখানে আমাদের সবার।
সত্যি দারুণ মজার একটি স্মৃতি। আজ মনে পড়লে নির্মল আনন্দে প্রাণ ভরে ওঠে। ভালো থাক সেদিন বৃষ্টিস্নাত দিনের সেই হাসি খুশি সহজ সরল মানুষগুলো।


সি এস টি'র দুই লেডি পুলিশ

মুম্বাই সি এস টি স্টেশনে দুজন লেডি পুলিশ, একজন হলুদ একটি শাড়ি পড়া, আরেকজন খাকি প্যান্ট শার্ট। রাত গভীর হলে তাদের একশন শুরু হয়। বিশেষ করে খাকি ইউনিফর্ম পড়া ছোটখাটো গড়নের তরুণী পুলিশটির ব্যবহার! ওরে বাবা! ভীষণ বদমেজাজি স্বভাবের একজন নারী। এলোপাথাড়ি যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। যদিও কারণবিহীন নয় মোটেও। কিন্তু তার ব্যবহার অত্যন্ত রূঢ়। কোথাও যদি কাওকে শুয়ে থাকতে বা ঘুমোতে দেখে ফেলে প্লাটফর্মে, তাহলে আর রক্ষা নেই! খুব রেগে যায় সে, ভীষণ জোরেশোরে মেঝেতে তার ডান্ডা ঠুকে ঠুকে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, আর তারপর মিষ্টি কথার ফুলঝুরি তো আছেই! যাত্রী সাধারণের ভয়ে তখন আধমরা অবস্থা। আবার কেউ হয়তো নির্ধারিত পোলে মোবাইল চার্জে দিয়ে দূরে সরে গেছে বা শুয়ে পড়েছে কাছে কোথাও, তাকেও একইরকমভাবে তুলে, একেবারে পোলের কাছে ফোন হাতে নিয়ে চার্জ দিতে বাধ্য করে। উল্টাপাল্টা কিছু দেখলেই ভয়ঙ্কর দুর্ব্যবহার করে যাগ্রীদের সাথে। একবার তো দেখলাম, যাত্রীদের একজনের সাথে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে, লাঠি দিয়ে চার্জারের তারে আঘাত করে তার মোবাইলটাই মেঝেতে ফেলে দিল। ভীষণ বদমেজাজি ছিল সেই তরুণী পুলিশটি।
তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনরত শাড়ি পরা অপর পুলিশটি আবার ঠিক এর উল্টো, সবসময় শান্তশিষ্টই দেখেছি তাকে। সবাইকে ব্যাপারগুলো সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলতো সে, যে এখানে শোয়া বা ঘুমোনো নিষিদ্ধ, তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এগুলো দেখার জন্য, মোবাইল ফোন চার্জ দিতে হলে, তা হাতে নিয়ে পোলের সাথে দাঁড়িয়েই দিতে হবে, নইলে চুরি হয়ে যেতে পারে, টিকিট ছাড়া কেউ প্লাটফর্মে প্রবেশ করবেন না, বাচ্চা সবসময় নিজের সাথে রাখুন ইত্যাদি ইত্যাদি।
সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বভাবের দুই মেরুর দুজন মানুষ, দিনের পর দিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশাপাশি কাজ করে চলেছে! বদমেজাজি সেই তরুণী পুলিশটিকে আমি দারুণ ভয় পেতাম। তার কারণে তাদের দুজনকে সবসময় এড়িয়ে চলতাম। কে জানে, কখন কি না কি ভুল ধরে আবার আমাকে না লাঞ্ছিত করে বসে!
সত্যি দারুণ বদমেজাজি, রূঢ় স্বভাবের একজন পুলিশ হিসেবেই সেই খাকি ইউনিফর্ম পরা পুলিশ মেয়েটিকে আমি দেখেছি। কিন্তু তবু কেন যেন মনে হয়, ওই রুক্ষতার আড়ালে হয়তো একটি কোমল মন লুকিয়ে আছে মেয়েটির? হয়তো আছে, হয়তো নেই!
আমরা বাইরে থেকে যা দেখি, সেটাই কী সব? সেটাই কী শেষ কথা? অনেক কিছুই ঠিক আমাদের আড়ালে, অজানাই থেকে যায়, আমাদের চেনা জানা এইসব পরিচিত দৃশ্যপটের বাইরে। এইসব দূর থেকে দেখা মানুষগুলোরও, অনেক কিছুই আমাদের হয়তো অজানাই থেকে যায়! বাইরে থেকে যতোটুকু দৃশ্যমান, তা দেখেই আমরা শুধু সিদ্ধান্ত নিয়ে বসি, কেউ সাধু তো কেউ শয়তান।
(চলবে)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৬

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারন পড়ে ভাল লেগেছে।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৮

অর্ক বলেছেন: জেনে খুব খুশি হলাম। আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৯

জাহিদ অনিক বলেছেন:

কোকোম জুস
জিনিসটা কি ? কিসের জুস ? হোয়াট ইজ কোকোম ?

মুম্বাইতে কি করছিলেন? আপনার লেখা পড়ে মনে হয় আপনি অনেকদিন ভারতে ছিলেন। হিন্দিও ভাল পারেন ও জানেন।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫

অর্ক বলেছেন: কোকোম জুস কি আমি জানি না। অনুমান, আঙুরের মতো লাল বড় এক ধরণের ফল। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অম্ল মধুরই বটে ;)


কিছু কিছূ স্মৃতি আজীবনের জন্য মনে গেথে যায়....

ভাল লাগল স্মৃতিকথা +++

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৯

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ভৃগু ভাই। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০৩

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারণ।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৪২

অর্ক বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই। শুভকামনা।

৫| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩০

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: ভ্রমন কাহিনী সবসময়ই খুব মজা লাগে। পরের পর্বের অপেক্ষাতে থাকলাম।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫১

অর্ক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। চেষ্টা চলছে। সাথে থাকুন।

৬| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২৮

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: চমৎকার ভ্রমন কাহিনী।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৪

অর্ক বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.