নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিতে ৯৪’র ফুটবল বিশ্বকাপ

১০ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:০০



৯৪ সালে আমি খুব ছোটো ছিলাম, মাত্র সাত আট বছর বয়স। তবুও ফুটবল বিশ্বকাপের কথা মোটামুটি একটু আধটু ভালোই মনে করতে পারি। বিটিভি’র যুগ সেটা। স্যাটেলাইট তখনও আসেনি। টিভিসেটই ছিল হাতে গোনা! যাই হোক খেলা শুরুর আগে এ্যান্ড্রু কিশোর’র গান হতো, দিতি ইলিয়াস কাঞ্চন টিভি পর্দায় নাচতো; ‘রূপসী দেখেছি আমি কতো/ দেখিনি তোমার মতো’, ‘বেলি ফুলের মালা গেঁথে এক প্রেমিক তার প্রিয়াকে ঘরে তুলেছে/ যৌতুক টাকাকড়ি পা’য়ে দলেছে/ যারা পুরুষকে মন্দ বলে/ তারা এমন পুরুষ কি দেখেছে...’। এইসব সিনেমার গান খুব ভালো লাগতো আমার। ঢাকাই সিনেমায় তখন ইলিয়াস কাঞ্চনের দারুণ জয়জয়কার। পাশাপাশি রুবেলও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। আমাদের বাড়ির কাছেই একটা সিনেমা হল ছিল। মাঝে মাঝে বন্ধু বান্ধবদের সাথে সিনেমা দেখতামও বৈকি। বিশ্বকাপের খেলাও দেখতাম, কিন্তু বোঝার মতো পরিণত ছিলাম না। ফুটবল খেলার মোটেই কিছু বুঝতাম না, শুধু দেখতাম একদল হাফ প্যান্ট ও সাদা কালো জামা পরিহিত মানুষ ফুটবল নিয়ে এলোমেলো দৌড়াদৌড়ি করছে। খুব সম্ভবত খেলাটাকে তখন বিরক্তিকরই মনে হতো! সেবার ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন ও ইতালি রানার্স আপ হয়েছিল। চারিদিকে তখন ‘রোমারিও রোমারিও’ তোলাপার। এছাড়া খুব ভালো মনে করতে পারছি, বিশ্বকাপ শুরুর প্রাক্কালে ম্যারাডোনা’র ড্রাগ কেলেঙ্কারি, খেলা না খেলার দোলাচল নিয়ে সারা শহরজুড়ে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। হ্যা পরিষ্কারই মনে করতে পারছি ঘটনাগুলো, সমস্ত শহর তখন ম্যারাডোনাময়। সে কী উত্তেজনা ম্যারডোনা’কে নিয়ে। আমার ফুটবল পাগল পিতাও যারপরনাই উদ্বিগ্ন, সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যরাও। স্থানীয় অনেককেই ফুটবল নিয়ে আলোচনায় ফিফা, রেফারি, আমেরিকা (৯৪’র আয়োজক রাষ্ট্র) এর ওর গুষ্ঠি উদ্ধার করতে দেখেছি। অনেকের তো রীতিমতো শোকে জর্জর হয়ে কেঁদে ফেলবার মতো পরিস্থিতি। যাই হোক সেই প্রথম শৈশবে আমার বাবা ও পরিবারের সদস্যদের ম্যারাডোনাকে নিয়ে এই উদ্বিগ্নতা দেখে, মনে মনে ধরেই নিয়েছিলাম যে, ম্যারডোনা খুব সম্ভবত সম্পর্কে আমার চাচা। বিশ্বকাপ শেষ হলেই আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন। আত্মীয় না হলে কী আর আমার বাবার মতো এহেন কাঠখোট্টা মানুষও তাকে নিয়ে এমন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে! বেচারা সর্বত্র অস্থিরতা নিয়ে ঘোরাফেরা করছে, চেহারা যারপরনাই বিষণ্ণ, জীবনের প্রতি হঠাৎই যেন বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে। কারণ আর কি- ভাই বলে কথা। মায়ের পেটের না হলেও কোনওরকমের রক্তের সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে দুজনার মাঝে! আমি অনেকটা নিশ্চিতই ছিলাম এ ব্যাপারে যে, ম্যারাডোনা নির্ঘাত বাবার দিকের কোনও আত্মীয় আমার! হা হা হা।

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘Show must go on...’(অনুষ্ঠান নিশ্চয় চলতে থাকবে)। কথাটা এই মানবজীবন’রই অত্যন্ত সার সত্য। কারও জন্যেই কিছু থেমে থাকে না। ৯৪’র বিশ্বকাপও ম্যারাডোনার জন্য থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে দেখেছি, একই ক্রীড়া প্রেমিক মানুষগুলো মেতে উঠেছে ব্রাজিলীয় রোমারিও’কে নিয়ে। চারিদিকে ‘রোমারিও রোমারিও’ হৈ চৈ। এর মাঝে আরও অন্যান্য বেশ কিছু খেলোয়াড়ের নামের সাথেও এর ওর মুখে শুনে ভালো পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম। যেমন- বেবেতো (ব্রাজিল), ক্যানিজিয়া, বাতিস্তুতা (আর্জেন্টিনা), রজার মিলা (ক্যামেরুন), রবার্টো ব্যাজিয়ো (ইতালি) ইত্যাদি। সেবার ব্রাজিল’র হাতে চতুর্থ বারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি ওঠে। রানার্স আপ হয়েছিল ইতালি। খেলার ফলাফল এক্সট্রা টাইমসহ সম্পূর্ণ ম্যাচ গোলশূন্য, টাইব্রেকারে ব্রাজিল ৩ - ২ ইতালি। সেই বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল পাওয়া সেরা ফুটবলার রবার্টো ব্যাজিয়ো পেনাল্টি মিস করেছিল ফাইনালে। খুব সম্ভবত সেটাই এযাবতকালের একমাত্র গোলশূন্য বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ।

এই তো মনে পড়ছে, শহরজুড়ে হৈ চৈ, ইতিউতি ব্যস্তসমস্ত আলোচনা মানুষের, বাবার চেহারায় উদ্বিগ্নতা; খেলা চলছে, ফুটবল... বিশ্বকাপ ফুটবল। শেষের কয়েকটি তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে টুকে দিয়েছি। আগেই বলেছি, খেলা বোঝার মতো পরিণত তখন ছিলাম না আমি, মাত্র সাত আট বছর বয়স। অনেকটা এমনি এমনিই বসে থাকতাম টিভিসেটের সামনে, কিন্তু উল্লেখিত ঘটনাগুলো দারুণভাবে মনে আছে। আর মনে আছে দিতি, ইলিয়াস কাঞ্চনের সিনেমার গানগুলো, ‘বেলি ফুলের মালা গেঁথে এক প্রেমিক তার প্রিয়াকে ঘরে তুলেছে/ যৌতুক টাকাকড়ি পা’য়ে দলেছে/ যারা পুরুষকে মন্দ বলে/ তারা এমন পুরুষ কি দেখেছে...’। খেলার থেকে তখন এই গানগুলোই বেশি আকর্ষক ছিল আমার কাছে।

আহ্ ৯৪! আহ্ দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা! সময় যেন বহতা পানি। ২৪ বছর চলে গেছে মাঝখান, দু’ দুটি যুগ, অথচ মনে হচ্ছে যেন এই তো সেদিনেরই কথা!

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:০৮

অচেনা হৃদি বলেছেন: আপনি কি আর্জেন্টিনা ফ্যান ?

১০ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬

অর্ক বলেছেন: জি আমি এখন আর্জেন্টিনা ফ্যান! :)

২| ১০ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১০

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: দারুন স্মৃতিময় বিশ্বকাপ ফুটবল।

১০ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১৭

অর্ক বলেছেন: এলোমেলো কিছু স্মৃতি, বড্ড ক্ষীণ! ধন্যবাদ।

৩| ১০ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:২৯

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালো লাগলো পুরনো স্মৃতি পড়ে, ছোটসময় বিশ্বকাপ কিছু বুঝতামনা, তবে রাতজেগে ঠিকই দেখতাম সবার সঙ্গে বসে।

১০ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৩

অর্ক বলেছেন: অত্যন্ত মধুর সে সময়। ধন্যবাদ কবি বন্ধু নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন।

৪| ১০ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৩

কাইকর বলেছেন: অতীত মনে পরে গেল।এলাকার টং দোকানে অনেক ভিড় জমিয়ে খেলা দেখতো সবাই।

১০ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৬

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ কাইকর। ঢাকায় তো বিভিন্ন জায়গায় জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হবে। আগে কোনও লেখায় বলেছিলাম, একটি মাস শুধুই ফুটবলের।

৫| ১০ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৪

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ১৯৯৪ এর বিশ্বকাপ ব্রাজিলের জন্য যেমন আনন্দের, আর্জেন্টিনার জন্য তেমনি কষ্টের। আমি তখন ক্লাশ সেভেনে পড়ি তাই আমার স্মৃতি এখনো স্পষ্ট। ভাল লাগলো ৯৪ বিশ্বকাপ স্মৃতি।

১০ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:০২

অর্ক বলেছেন: তাহলে তো আপনার পরিষ্কার মনে আছে। মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

৬| ১০ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


বাংগালীরা ফুটবল ভালোবাসেন, ভালো খেলতে পারেন না, সমস্যা

১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:৩৫

অর্ক বলেছেন: খেলেও ভালো। অন্তত খেলতো বলতেই পারি। আলফাজ আহমেদ, রজনী কান্ত বর্মণ, মতিউর মুন্না, জুয়েল রানা, গোল্কিপার আমিনুল ইসলাম- এরা সবাই বিশ্বমানের ফুটবলার ছিলেন। শূন্য দশকের কথা বলছি। আমি স্টেডিয়ামে খেলা দেখেছি। সাফ-এ ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ, পাকিস্তান নয়। এক পর্যায়ে নেপাল আর মালদ্বীপ ভালো করা শুরু করলো। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ফুটবল এক্কেবারে রসাতলে গেল। একবার ভারতকে হারিয়ে সাফ গেমস জিতেছিল। এরকম আরও কিছু ভালো অর্জন আছে। ভারতের পরই বাংলাদেশ’র নাম আসে। আর ফুটবল গ্লোবাল খেলা। সব দেশ খেলে। ভারতকে টেক্কা দেয়াই বাংলাদেশের জন্য বিরাট গৌরব হতে পারে।

ধন্যবাদ চাঁদগাজী ভাই।

৭| ১০ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: '৯৪ বিশ্বকাপ আমার মত অনেক আর্জেন্টাইন সমর্থকেরই বেদনার বিশ্বকাপ। হঠাৎ ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে ম্যারাডোনাকে বহিস্কার করা হয়। এমন কি খেলার মাঝপথে তাকে ফিফার কর্মীরা ধরে মাঠের বাইরে নিয়ে যায়। এখনও ম্যারাডোনার সেই কান্না মুখ(বিশ্বকাপে কান্নার রেকর্ডও মনে হয় ম্যারাডোনার!) ভেসে আসে মনে। স্বাভাবিকভাবে তৎকালীন ফিফা সভাপতি হ্যাভেলাঞ্জ(ব্রাজিলিয়ান)-এর মুন্ডুপাত করা হয় মিডিয়াতে। অনেকে এতে তার ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়। অনেকে বলে, ম্যারাডোনা ঐ ড্রাগ মাদক হিসেবে নিতেন না। নিতেন এনার্জি হিসেবে ব্লা ব্লা ব্লা। প্রথম রাউন্ডে দুর্দান্ত খেলা আর্জেন্টিনা ম্যারাডোনার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় রাউন্ডেই ঝরে যায়। সেই সাথে ম্যারাডোনারও ক্যারিয়ার সমাপ্ত হয়।
ঐ বিশ্বকাপ আমার একটা ব্যক্তিগত বেদনার কারণ ছিল। ২১ শে জুন খেলা ছিল আর্জেন্টিনা-গ্রীস(৪-০)। বাতিস্তুতা হ্যাট-ট্রিক আর ম্যারাডোনা একটা গোল করে। সেই রাতেই আমার নানুর অসুস্থতার খবর আসে। পরদিন মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা বাড়িতে যাই। জানাজা, কবর পর্ব শেষ করে ছোট মামার সাথে দেখা। আমি কী মনে করে মুচকি হেসে বললাম, আর্জেন্টিনা গতকাল জিতেছে বা (৪-০ গোল দিয়েছে)!!!

১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:৪০

অর্ক বলেছেন: চমৎকার এই মন্তব্য। সব বিস্তারিত বলে দিলেন। ম্যারাডোনাকে নিয়ে ভীষণ তোলপাড় চলছিল। কেমন যেন অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। ম্যারডোনা নিজে কখনওই কল্পনা করতে পারবে না, বাংলাদেশের মানুষ সে সময় কী পরিমাণ ভালবাসতো তাকে!

অজস্র ধন্যবাদ বিচার মানি তালগাছ আমার।

১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:৫৭

অর্ক বলেছেন: আপনার নানুর বিয়োগ সত্যি শোকাতুর করে দিলো! তার পারলৌকিক শান্তি কামনা করেছেন। এর মাঝে পিতাসহ আরও বেশ কিছু আত্মীয়, আপনজন গত হয়েছে। আমরা সবাই রয়েছি এর মাঝে। তবে এরকম বিশেষ সময়ে আপনজন বিয়োগ সত্যিই ভীষণরকম দুঃখজনক! কী আর করা- প্রকৃতির ক্রীড়ানক আমরা সবাই।

শুভকামনা অন্তহীন।

৮| ১১ ই জুন, ২০১৮ ভোর ৫:১৮

কিশোর মাইনু বলেছেন: আমার তখন জন্ম ও হয়নাই।

তবে খেলা বুঝতে শেখার আগেই রোনালদো-রোনলদিনহো-রিভালদো-রিকার্ডো এই ৪জনকে চেনা হয়ে গিয়েছিল।
রিকার্ডো কাকা আর রোনালদিনহোর ফ্যান ছিলাম।
রোনালদিনহো বার্সায় খেলতো।তাই তখন থেকেই ব্রাজিল-বার্সার সাপোর্টার।অথচ ব্রাজিল-বার্সার মধ্যে পার্থক্যটাও বুঝতামনা।
২০০২-র কথা মনে নাই আমার ওরকমভাবে,তখন খেলা ও বুঝতাম্না অত।কিন্তু ৬-এ কাকা আর মেসি কে কাক আর মাছি বানানোর প্রতিযোগিতায় আমিও ছিলাম এবং ততদিনে ডাইহার্ড ফ্যান।
এবার ও সেই উত্তাপটা টের পাচ্ছি।বরং একটু বেশী ই পাচ্ছি

১১ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৯

অর্ক বলেছেন: ভীষণ সুন্দর মন্তব্য। আপনি তো দেখছি, খুবই ছোটো! হা হা হা। আমি ব্রাজিলের না হলেও রোনালদিনহোর একজন গুণ মুগ্ধ শুভাকাঙ্ক্ষী। বার্সেলোনা মাতিয়েছিলেন বেশ অনেকটা সময়। সত্যিই একজন অনন্য ফুটবলার, একজন কিংবদন্তী।

ধন্যবাদ ও অজস্র শুভকামনা Kishor Mainu।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.