নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর্টিস্ট/ব্লগার/টুকটাক ধরনের গাতক------ ধুসর ক্যানভাস---জমাট বাঁধা রঙের তুলি--- কলমের সুচাগ্র ডগা-- গীটারের টুংটাং-- বেচে আছি এই তো।।

আর্টিিস্টক বিপ্লব

আমি বাস করি কল্পলোকে। আমি নিঃশ্বাস নেই অসীম শূন্যতায়।আমি আঁকি ছবি মনের রঙিন ক্যানভাসে।আমি কবিতা লিখি ভালোবাসার গদ্যলোকে।আমি গান গেয়ে যাই নিজ সুর অলিন্দে।তবুও করতে পারিনি স্পর্শ আমার আমি কে।।

আর্টিিস্টক বিপ্লব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালো তুমি খারাপ ও তুমি ।।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৪৬

অক্টোবর ১৯৯৭-- চিটাগং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিলেট যাচ্ছি-- বাস কাউণটারে টিকিট কিনতে গিয়ে এক ছেলের সাথে পরিচয় হল-- সেও বাড়ি যাচ্ছিল কুমিল্লায়-- পরিচয় পর্ব ছিল কিছুটা নাটকীয়--টিকিট কিনতে গিয়ে দেখে তার পকেটে টাকা নেই--কাউন্টার ম্যান ইতিমধ্যে টিকিট প্রিন্ট করে ফেলেছে--- দেখলাম ছেলেটার মুখ অনেকটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে-- আগ বাড়িয়ে গেলাম-- বললাম, ভাই আমিও যাচ্ছি একই বাসে,কোন সমস্যা??!-- আমতা আমতা করতে লাগলো-- বললাম,কত আছে আপনার কাছে --দেখাল মাত্র ৫০ টাকা-- আরও একশত বিশ টাকা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, নেন পরে দেখা যাবে ক্ষণ।
বাস ছাড়ল সন্ধ্যায় কুমিল্লার উদ্দ্যেশে-- একই আসনে বসলাম দুজন-- আস্তে আস্তে পরিচয়টা বন্ধুত্ব পর্যায়ে চলে গেল-- ডিরেক্ট বাস ছিলনা বলেই আমি কুমিল্লা গামী সোহাগ পরিবহন ধরতে বাধ্য হই-- রাত দশটার কুমিল্লা থেকে সিলেট লিঙ্কড টিকিট কাটি-- যাই হোক, সময় যাচ্ছিল ভালোই গল্পে আড্ডায়-- মনে হল অনেক ভালো ছেলে--আমার নাম ঠিকানা সবই নিল টাকা ফেরত দেবে বলে-- আমি শুধু বলছিলাম,এ আর এমন কি-- মানুষ মানুষের উপকার করে না??--- রাত ৮ টার দিকে হঠাৎ ড্রাইভার ঘোষণা দিল সামনে কোথায় যেন এক্সিডেন্ট হয়েছে-- গাড়ি একচুল ও আর যাচ্ছেনা-- ঘণ্টার পর ঘণ্টা যায়-- এবার আমার মুখ ফ্যাকাসে হবার পালা-- কুমিল্লার কাছেই ছিল জ্যাম-- তাই আমার সহযাত্রীর কোন বিকার ছিলনা-- রাত বাজে তিনটা-- আস্তে আস্তে জ্যাম ক্লিয়ার হল-- আমাদের বাস তার গন্তব্যের দিকে পৌছতে যাচ্ছে আর মাত্র এক ঘণ্টা-- ততক্ষনে আমার কুমিল্লা- সিলেট বাস থাকার কথা নয়----এই মাঝরাতে আমি কোথায় যাব -- ভাবতে ভাবতে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছিল-- হাতেও তেমন টাকা বাকি নেই যে ভালো হোটেলের চিন্তা করবো-- তাকে বললাম তার বাড়ি কোথায় কুমিল্লায় -- জানালো এই শাসন গাছা স্টেশনের কাছেই-- শাসন গাছা স্টেশন কুমিল্লা শহরের আগেই-- ভাবলাম, সে হয়তো আমাকে যেচেই বলবে বাড়িতে থেকে যাওয়ার জন্যে-- তার কোন ভাবান্তর নেই-- অবশেষে নিজেই যেচে যেচে বললাম '' তোমার বাসায় উঠা যাবে?? সকাল উঠেই সিলেটের বাস ধরে ফেলবো''-- সে ছিল নিরুত্তর। ভাবতেও পারছিলাম না এই মানুষটারই কত বড় উপকার করলাম আর সে এমন বিপদে আমাকে ফেলে তার বাসায় চলে যাচ্ছে ! বাস গিয়ে থামল কুমিল্লা শাসন গাছা স্টেশনে-- সে নেমে পড়লো--আমিও কি মনে করে তার পিছু পিছু নেমে পড়লাম--- রাজ্যের আধার মুখে নিয়ে---ভাবলাম নেমেই পড়ি এই মফস্বলে-- আমাদের বাসের গন্তব্য ছিল মূলত কুমিল্লা মেইন শহরের দিকেই --ওখানে গিয়ে তো আর লাভ নেই--- আমাকে চৌরাস্তার মোড়ে বিদায় দিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে সে চলে গেল--স্তম্ভিত কতক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম--- অজ পাড়াগাঁয়ের চার দিকে তাকালাম ইতিউতি--মনে হল গ্রামের মতোই-- কানে হেড ফোন হাতে ছিল একটা ব্যাগ -- কেতাদুরস্ত লন্ডনী পোশাক-- দু একটা হোটেল খোলা -- কিছু মানুষের আনাগোনা-- দূরে একটা স্টেশন দেখা যাচ্ছিল-- কয়েকটা মুড়ির টিন বাস দাড়িয়ে আছে-- আনন্দে চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো -- ভাবলাম দেখি ওইরকম একটা বাসই যদি সিলেট যায় তাহলে চেপে বসব-- তখনো জানা ছিলোনা জীবনের চরম একটা ভয়াবহ শিক্ষা আমার জন্যে অপেক্ষা করছে-- হাতমুখ ধুয়ে পিঁর কাজ সেরে ভাবছিলাম বাসের দিকে যাব-- তাই একটা গলিতে ঢুকলাম----রেস্তোরাঁ টা দেখা যাচ্ছিল-- হটাৎ কোথা হতে ৫/৬ টা ছেলে উদয় হল-- বলা নেই কওয়া নেই আমার দিকে এলোপাথাড়ি ঘুষি লাথি মারতে লাগলো-- আমিও সমানে চালাতে লাগলাম-- টানা হেঁচড়ার সুবাদে আমার ব্যাগটা মাটিতে পড়ে যায়-- ওদেরই একজন ব্যাগটা হাতিয়ে নেয়---- কাবু করতে না পেরে কেউ একজন ভয়ঙ্কর চিৎকার করতে করতে বলতে লাগলো '' শালারে গুলি কর'' । সাথে সাথে হেঁচকা টান দিয়ে নিজেকে আলগা করি-- যা দেখলাম তাতে শিরদাঁড়ায় ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল-- দেখি আমার দিকে রিভল্বার তাক করে দাড়িয়ে আছে-- আর বাকি সব কটা হাঁপাচ্ছে--আমিও হাপচ্ছিলাম-- ও ঠাণ্ডা গলায় বলল'' বহুত দেখিয়েছিস যা আছে বাহির কর, নাহলে ফুটো করে দিমু''-- আমি নিস্তেজ দাড়িয়ে রইলাম--মাথা কাজ করতে লাগলো-- বোকামি করা ঠিক হবেনা আর--- সাথের সবকটা এসে পকেট থেকে টান মেরে সবকিছু নিয়ে গেল-- কি মনে করে বলে ফেললাম '' ভাই আমি সিলেটে যাব বাস ভাড়া টা দিয়ে যা''----রিভল্বার তাক করা জন কতক্ষন আমাকে দেখল ----পঞ্চাশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলল যা ভাগ এখান থেকে--- তারা কেটে পড়লো-- একজন লোককে দেখলাম দৌড়ে আসছে আমার দিকে-- হাপাতে হাপাতে বলল '' কি হয়েছে ভাই, অনেক গোলমাল শুনলাম--সব শুনে সে আমাকে নিয়ে চলল তার ডেরার দিকে-- জানালো,সে এখানকার ছেলে-- বাস স্টেশন এর সামনের একটা রেস্তরায় কাজ করে-- লজ্জায় তার মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে--রাগে গজ গজ করতে করতে নিয়ে গেল তার রেস্তোরাঁয়---- সবাই এসে ঘটনা শুনল-- সবাই খুবই লজ্জিত এই ভেবে যে বাইরের একজন যাত্রীর সাথে এরকম হয়েছে-- যাই হোক, পুঁটি মাছ দিয়ে ভালো করে আমাকে খাওয়ানো হল----মফস্বল এলাকা----তাদের দেখেই বুঝা যাচ্ছিল হত দরিদ্র মানুষ-- অবাক হলাম তাদের মানবতা বোধ দেখে-- তাদেরই একজন নিয়ে গেল বাস কাউনটারে ---- বাস পাওয়া গেল সকাল ৭ টার- টিকিটের দাম ১৪০ টাকা ---- আমার হাতে পঞ্চাশ টাকা-- অবাক করে দিয়ে ওই বাসের হেল্পার বলল ভাইয়া চিন্তা করবেন না আমি মেনেজ করে দিচ্ছি-- সে কোথা থেকে বাকি ৯০ টাকা নিয়ে হাজির-- বলল,যান বাসে উঠেন-- জায়গা করে দিল শুয়ে থাকার জন্যে-- এখনও দু ঘণ্টা বাকি বাস ছাড়বে-- আর এত টেনশন নিয়েন না ''-- বাস ছাড়ার পর দেখলাম সেও ডিউটিতে-- জানালো,সে প্রায়ই সিলেটে যায় এই বাসে-- তার অনেক ভালো লাগে সিলেটবাসীকে-- অনেক জুরাজুরি করলাম তার নাম ঠিকানার জন্যে-- বলল কি হবে ভাই-- আপনি একটা বিপদে পড়েছেন একটু সাহায্য করেছি , এর মধ্যে আপনি সিলেটের লোক! বাস এসে থামল হ-পার স্টেশনে-- রিক্সা ভাড়া পর্যন্ত দিতে যাচ্ছিল--অনেক অনুরোধ করলাম সময় পেলে বাসায় যাওয়ার জন্যে-- কেমন যেন নিরলিপ্ত একটা হাসি দিল ১০০ টাকার মজুরে চাকরি করা বাস হেল্পার-- অদ্ভুৎ পৃথিবী-- তারচেয়েও আশ্চর্য তার মানুষ।।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৬

অদ্ভুত_আমি বলেছেন: আসলেই অদ্ভুৎ পৃথিবী-- তারচেয়েও আশ্চর্য তার মানুষ।।

তবে মাঝে মাঝে অনেক কষ্ট লাগে যখন দেখি যাকে বিনা স্বার্খে সাহায্য করেছি, প্রয়োজনে সে কোন সাহায্যই তো করেই না, বরং সামান্য কোন চক্ষু লজ্জা টাও তার মধ্যে দেখা যায় না ।

২| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪

ভিটামিন সি বলেছেন: বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। সে বাস হেল্পারই হউক, রিকশাওয়ালা বা মুদি দোকানদার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.