নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর্টিস্ট/ব্লগার/টুকটাক ধরনের গাতক------ ধুসর ক্যানভাস---জমাট বাঁধা রঙের তুলি--- কলমের সুচাগ্র ডগা-- গীটারের টুংটাং-- বেচে আছি এই তো।।

আর্টিিস্টক বিপ্লব

আমি বাস করি কল্পলোকে। আমি নিঃশ্বাস নেই অসীম শূন্যতায়।আমি আঁকি ছবি মনের রঙিন ক্যানভাসে।আমি কবিতা লিখি ভালোবাসার গদ্যলোকে।আমি গান গেয়ে যাই নিজ সুর অলিন্দে।তবুও করতে পারিনি স্পর্শ আমার আমি কে।।

আর্টিিস্টক বিপ্লব › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন বাবা এবং আমি ...।।

০২ রা মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:৫৩

ঐদিন আমার ছেলে বুকের ঘ্রান নিয়ে বলল ‘’Baba I love your body smell it’s something different to me’’ পুত্রের কথায় অনেক কিছুই মনে পড়লো। বললাম নে বাবা যত পার ঘ্রান নে আমার তো আর তোর মত কপাল ছিলনা যে বাবার গায়ের গন্ধ নেবো আর হেসে হেসে তা বলবো, তবে আমিও ঠিক উনার গন্ধ শুঁকতাম। তোর যেমন লাগছে তেমনই আমার ও লাগতো।। এটা কিছু নারে বাবা এটা রক্তের সাথে রক্তের কালচক্র। ডিজিটাল পুত্রের তো অনেক প্রস্ন ,কেন বাবাকে ওসব বলতে পারতাম না... আমি বলি... এই যে তুমি আমার পায়ের সাথে পা লাগিয়ে শুয়ে আছ আমাদের সময় বাবার স্যান্ডেলে ও যদি আমাদের পা লাগতো ওই স্যান্ডেল সাহেবকে আমরা সালাম করতাম।। যাহ্‌ পা সরা ফাজিল কোথাকার ... পুত্র আমার হাসতে থাকে। বলে সে লাকি যে ওর দাদার পুত্র হয়ে আসেনি আমার পুত্র হয়ে এসেছে বলে। আর আমি ভাবি উল্টো, তোর ঐরকম দাদার পুত্র বলেই তো তুই তোর বাবাকে এরকম পেয়েছিস ।

বয়স তখন ৪/৫ ই হবে। শুনেছি আমিই নাকি সেই ভাগ্যবান যে কিনা বাবার বুকে এতো বয়স পর্যন্ত ঘুমানোর অধিকার পেয়েছিলূম । এজন্যে অবশ্য আমার কোন সংগ্রাম করতে হয়নি।! সৃষ্টিকর্তা বাবার কোলে ঘুমানোর সব ধরনের যোগ্যতা দিয়েই পাঠিয়েছিলেন। কপালের নিচে চশমা। গভীর মনোযোগ দিয়ে পেপারস এ দাগ দিচ্ছেন। পালঙ্কের কর্নারে খুঁটি ধরে দাড়িয়ে। আমার দিকে চশমার ফাঁক দিয়ে তাকালেন। চশমার ফাঁক দিয়ে তাকানোর ব্যাপারটায় রহস্য আছে, যতোই বড় হচ্ছিলাম উনার ফাঁকটা ততোই বড় হচ্ছিলো। মানে ভয় বাড়ছিলো। ডাকলেন কাছে, গেলাম কোলে বসালেন... পেটে কাতুকুতু দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন এইটা কি?? ঝটপট উত্তর দিলাম, পেট। মাথা নাড়লেন বললেন বল বেলী। এইভাবেই আমার ইংরেজি শেখা শুরু। যখনই সামনে যেতাম একটা একটা করে ইংরেজি শব্দ শিখতে লাগলাম। ক্লাস ৫ এ যখন উঠি আবিষ্কার করলাম আমি যা জানি আমার সমবয়সী কেঊ এতো জানেনা।

স্কুল জীবন শুরু হল। বাবার সাথে যাই। টিফিনের সময় আমার ডাক পড়তো। স্কুলের নির্ধারিত টিফিন খাওয়ার পর ও খেতে হতো। উনার আবার আলসার ছিল। চিড়ে ভিজিয়ে রাখতেন । গুড় অথবা কলা সাথে দিতেন। অফিসের পিছনের জায়গায় গোগ্রাসে গিলতাম। সঙ্গী ছিল ফাজিল দুইটা বোন। জানালায় দেখা যেত উৎসুক জনতার ভিড়। ডাবল খাওয়াটা অত্যাচারই মনে হতো। স্কুল ছুটি, সবাই চলে যায়, কিন্তু আমরা কয়জন খেলাধুলায় মগ্ন। আব্বার অফিস শেষ হলে তবেই আমরা যাব। সন্ধ্যা নামে। উনার কাজ আর শেষ হয়না। বিকেলটা তাই খেলাধুলা করেই কাটিয়ে দিতাম।
বয়স বাড়ছিলো আর বাবার সাথে কথাবার্তার গ্যাপ বেড়ে যাচ্ছিলো। দিন যায়। এভাবে পাইলট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার সময় চলে আসলো। অফিসের পিছনে একটা নামাজের খাট। ঐখানেই আমার বাস্তু সংস্থান গাড়লাম। পড়াশুনা খাওয়া দাওয়া সবকিছু। লাইফ হেল। মুখস্থ বই বারবার মুখস্থ করা। টু ইজ টূ মেইকস ফোর। সকালে যাই আর সন্ধ্যায় আসি। রিক্সায় বাবা নামক ভিনগ্রহের বাসিন্দার সাথে কথা বলতে ভয় করতো। বাসায় আসার পর আবার পড়তে বসা। বড়দের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম ওরা কতো সুখী, আব্বার কাছে পড়তে বসতে হচ্ছেনা।!পড়ার রাজ্যে মজুমদারি গদ্যময় আর বাবা যেন নিদ্রাহীন রোবট। উনার কষ্টের প্রতিদান দিলাম। ভালো মার্কস পেয়ে পাইলট স্কুলে ভর্তি হলাম। ঐ রাত্রে এত সুন্দর করে আমাকে ডাকলেন, আদর করে খাওয়ালেন যে আনন্দে আমার কান্নাই চলে আসলো। এই হলেন আমার আব্বা। এত আদর করেন অথচ বুঝতে দিবেননা।

শ্রদ্ধা ভয় আর ভালোবাসার মিশেল আমাদের বাবা। প্রতিদিন সকাল বেলা কলের পাড়ে বাবা যেতেন গোসল করতে। সারাক্ষণ চোখ রাখতাম কলের দিকে। বাবাকে কোনভাবেই কল চাপতে দেয়া যাবেনা। উনি দাঁত মাজেন আর ঐদিকে আমি লম্ফ ঝম্ফ মেরে কলের হাতল বুক দিয়ে চেপে চেপে বালটি ভরতাম। আহা কি সুখ বাবার জন্যে কিছু করছি। এখানেও কম্পিটিশন ছিল কে আগে গিয়ে কলের হাতল ধরবো। পড়া ফাঁকির মোক্ষম একটা সুযোগ ও ছিল। দারোগা আপা কিছুই বলতে পারতেন না।
আমাদের সাপ্তাহিক গোসলের ডাক পড়তো। আহা কি লজ্জার বিষয়। সবাই দিগম্ভর। আমাদের লজ্জা লাগলেও লজ্জার কোন লজ্জা ছিলনা। কারন উনিও বুঝতেন উনি আব্বার সামনে। কলের পাড়ে আর্মির মতো লাইনে দাড়িয়ে থাকতাম। সাবান লাগিয়ে গামছা দিয়ে কি ঘষানিটা নাই দিতেন।! লাল চামড়া পিঙ্ক বর্ণ ধারন করত। ঘষা দিতেন আর অভিশম্পাত করতেন যিনি আমাদের সর্বদা গোসল করাতেন উনার প্রতি। মজাই লাগতো। উনার ভাষায় ছেলেগুলো উনার রাজপুত্র শুধু সঠিক গোসলের অভাবে শ্যামবর্ণ হয়ে আছে। ঐদিন তৈল টইল উনিই মাখাতেন। চারিদিকে শুধু সুদর্শন আর সুদর্শন।

নাইটরাইডার ফলগাই আর ম্যাকগাইভার এর ডিশুম ডাশুম যুগ। উনাদের না দেখলে আমাদের রাতের ঘুম হারাম। সারাদিন অপেক্ষায় থাকতাম কখন রাত ৯ টা বাজবে। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। আব্বা প্রায়ই দেরিতে আসতেন। শুধু ওইদিনের প্রার্থনা ছিল উনি যেন ১০ টার পরেই আসেন। পঙ্গপালের মতো আমরা সবাই টেলিভিশন দেখতাম। কেন যেন ঐদিনটায় উনি এতো তাড়াতাড়ি আসতেন! শুধু উনার ছায়াটা কেবল দরজার কাছে দেখেছি তো ভোঁ দৌড়। কেউ কেউ আবার ভীষণ চালাক । দরজার বাইরে পজিশন নিয়ে টেলিভিশন দেখত। উনি কিছুই বলতেননা বা কিছুই করতেন না। স্বাভাবিক ভাবেই রুমে ঢুকতেন। আজও আমি উত্তর খুজে পাইনা এরকম ব্যক্তিত্ব কীভাবে মানুষ পায়?!
আমি কত চেষ্টা করেছি আমার ছেলের সাথে এরকম হওয়ার। সব বৃথা।।

শেষ বয়সে রিটায়ার হওয়ার পর স্কাইপি দিয়ে এই দেশ থেকে কথা বলতাম। সেই উনিই আমাদের সাথে মজা করতেন।! এখন আর দৌড় ও দিতে পারতাম না আবার তাল মিলিয়ে রসবোধ করতে ভয় করতো।
‘’বাবা ফুত ও আম্বিয়া... কই বাবা’’ এরকম ডাকার মানেই আব্বার মন ভালো। হাতে টাকা দিয়ে বলতেন সিগারেট আনার জন্যে। আহা কি আনন্দ পড়ার ফাকে একটা ব্রেক। সবসময়ই প্রার্থনা করেছি উনি যেন প্রত্যেক ঘণ্টায় সিগারেট আনতে পাঠান।

আব্বার আশেপাশে আর ছোট ছিলাম বলে সব আব্দার যেমন স্কুলের বেতন স্কুল যাওয়ার ভাড়া এইসব হাবিজাবি আমকে দিয়েই বলানো হত। এখন ভাবতেই অবাক লাগে এত্ত বড় একটা সংসার এতো খরচ তারপরও ভ্রু কুঁচকাতে দেখিনি কখনো । বলতাম আর ও আচ্ছা বলে দিয়ে দিতেন। আজ আমার একটা মাত্র ছেলে, সে কিছু চাইলে কত কিছুই জিজ্ঞেস করি... অপ্রয়োজনীয় হলে বকা ও দেই।

যতদূর মনে পড়ে উনাকে ধর্ম কর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দেখিনি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। আর কোরান পড়তেন যখন, দাড়িয়ে কেবল শুনতেই ইচ্ছে করতো। এতো মধুর তেলাওয়াত। ধর্মীয় ব্যাপার গুলো খুব সঠিক ভাবে মেনে চলার চেষ্টা করতেন। মনে পড়ে... কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন এমন সময় আম্মা কি একটা নিয়ে কথা বলতে গেলেন... সে কি রাগ। পরে বুঝালেন হাদিসের ব্যাখ্যা দিয়ে, যে কোরআন পড়ায় কেউ নিমগ্ন থাকলে আশেপাশের সব কথা স্থগিত রাখতে হয়। সেই শিক্ষা আজো আমি কাজে লাগাই। আব্বা ওজু করছেন মানে হল ২০ মিনিটস ওই জায়গা বুকড। এতো সময় নিয়ে শুদ্ধভাবে ওজু আর নামাজ পড়তে আজ পর্যন্ত আমি কাউকে দেখিনি।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাবার অনেক সেবা যত্নের সুযোগ হারাতে লাগলাম। এখন আর আগের মতো সিগারেট আনতেও ডাকেননা, মাথা পা টিপে দেয়ার কথাও বলেননা। আর কলের চাপ! সে তো মোটর লাগিয়ে দিলেন। মনখারাপ লাগতো... বড় হয়ে যাচ্ছি বলে অপরাধ করলাম না কি??!

১৯৯৪,বিশ্বকাপ জরে ভুগছি। বৃষ্টিবাদল দিন। সারারাত খেলা দেখা আর দিনে ঘুম।আমাদের বাঙ্গালিদের একটা সমস্যা হচ্ছে যা শুরু করি তা নিয়েই শহীদ হবো। বিশ্বকাপ কেও আমরা শহীদের দরজায় উৎসর্গ করলাম।কারবালায় যাব আর বিনা যুদ্ধে শহীদ হব এটা কি হয়?? আম্মা যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। উনার মৌমাছির মতো ভনভন (নামাজের জন্যে) আব্বার কানে গিয়ে পৌঁছল। আব্বা অবশ্যকোনদিনই আমাদের নামাজ রোজা নিয়ে হাপিত্যেশ করেননি। ঐদিন কি হল কে জানে আম্মা প্রীতি দেখানোর জন্যেই হয়তোবা !খেলা দেখে আরাম করে ঘুমাচ্ছি। প্রিয় দল জিতসে আর পায় কে? অঝোর ধারায় বৃষ্টি। ওইদিকে ফজরের আযান ও হচ্ছে। বারিন্দা ধরে উনি অনেক্ষন হয়তো পায়চারি করছিলেন,দেখছিলেন আমরা উঠি কিনা। পাশে আম্মাও বারুদে কাঠি দিবেন দিবেন এই ভাব। দু- একজনের নাম ধরে ডাক দিলেন কয়েকবার। কোন সাড়া শব্দ নেই। আম্মাও দিলেন টোকা। দেয়াশলাই জলে উঠলো। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দের মধ্যে আরও একটি শব্দ যোগ হল। বিরাট কিছু ভাঙ্গার শব্দ। এক এক করে তিনবার। প্রতেকবার শব্দ হচ্ছে আর লেপের নিচে বিড়ালের মতো কেঁপে কেঁপে উঠছি। আমার সহযোদ্ধাদের কি অবস্থা সেটা জানার আমার সময় নেই। আব্বা যদি পারতেন টিভির সাথে সাথে আমাদের একেক জনকে মাথার উপর তোলে আছাড় মারতেন ! যাক প্রানে বেচে গেলাম।পরদিন সকালে বাসার খালে গিয়ে আবিষ্কার করলাম প্রাগৈতিহাসিক টিভি মহোদয়কে। খালের স্রোতও ওকে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরাতে পারেনি। এক ফোটা জল চোখের কোনা দিয়ে গড়িয়ে পড়লো।কানাকনি হল আব্বার কাঁধে ব্যথা পেয়েছেন।কি আর করা বাকি খেলাগুলো আশেপাশের ঘরে গিয়ে দেখে কাটিয়ে দিলাম। সবাই অবশ্য শোক সন্তপ্ত আমাদের প্রতি দুক্ষগিয়াপন করলো।
আব্বা ও অনেক দুক্ষ পেয়েছিলেন টিভিটাকে এভাবে ভেঙ্গে ফেলে। উনার খুব আদরের টিভি ছিল এটা। অনেকদিন উনি আর টিভি কিনেননি। পরে আমরাই কিনেছি। মাঝে মাঝে খবর দেখার ছাতুতে উনিও টিভি দেখা শুরু করলেন।

কলেজের ছাত্র আমি। জণ্ডিস বাঁধিয়ে ফেললাম। নিজের ফার্মাছি ব্যবসা ছিল বলেই হয়তো ফার্স্ট এইড কোর্স করা ছিল। ইনজেকশন স্যালাইন সবই দিতে পারতেন। নিয়ে গেলেন ডাক্তার চাচার কাছে। উনি বললেন আর বেশিদিন গেলে হয়তো লিভার পচে যেত। চেম্বার থেকে বেরিয়ে রাগে গজ গজ করলেন। অনেক কথাই শুনতে হল।শুরু হল আমার সেবা যত্ন। কমপ্লিট বেড রেস্ট এ গেলাম। প্রত্যেক দিন আব্বা শিয়রের পাশে এসে বসে থাকেন । মাথায় হাত বুলান, নিজ হাতে খাইয়ে দেন।পৃথিবীর যাবতীয় খাবার আমার জন্যে আনতে লাগলেন। মনে মনে দোয়া করছিলাম এই জন্ডিস যেন না সারে।
আম্মাকেও দু একটা কথা শুনান। রন্ধন প্রণালি নিয়ে। শুয়ে শুয়ে ভাবতাম তুমি তো বাবা ডাক্তার হলেই পারতে। প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ব নিয়ে থাকা রাশভারী একজন মানুষ সন্তানের সামান্য অসুখে আজ কেমন অসহায়।! আবদাল ভাই ছিলেন আমার স্যালাইন প্রয়োগকারী। তো উনি এইদিন ছিলেন না। সুচটা বিরাট ছিল। কিছুই করার নাই দেখে নিজেই হাতে নিলেন। যেখানে ঢুকানোর কথা ঐখানে ঢুকাতে পারলেননা। চামড়ার নিচে রগবিহীন জায়গায় গিয়ে পড়লো। ফলে স্যালাইনের সব পানি চামড়ার নিচে জমতে লাগলো। ঐ জায়গা ফোলে বেলুন। উনি ভয় পেয়ে গেলেন। আব্বাকে এত অসহায় আগে কখনো দেখিনি। আমি অভয় দিলাম কিছুনা আব্বা স্যালাইনটা টান মেরে খুলে ফেলেন, উনি তাই করলেন। আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট এর এই অসহায় নার্ভাস মুখটা দেখে আমি তারিয়ে তারিয়ে মজা নিলাম। শুধু অজুহাত দিচ্ছিলেন... চশমা ছিলনা তো তাই। আর আমি বললাম সুচটাও বড় ছিল কিনা। ব্যথা পাইনি।আব্বা আশ্বস্ত হয়ে বিদায় নিলেন। আফসোস উনার শেষ সময়ে এরকম গভীর মমতায় যদি আমি থাকতে পারতাম!একটু হলেও প্রতিদান দিতাম।

আব্বাকে রাজনীতি করতে দেখিনি। ভূতের মূখে রাম রাম। ১৯৯৫ এর নির্বাচনে উনি ইলেকশন ক্যাম্পেইন এ নামলেন। সারাক্ষণ সাইফুর রহমানের সাথে। বিভিন্ন সেমিনার এ বক্তৃতা ও দিতে লাগলেন। পরে শুনলাম সাইফুর চাচা উনার ঘনিষ্টো বন্ধু। বন্ধু স্বার্থেই এই আত্মত্যাগ। তাই বলে উনি যে আমাদের উপর বাকশাল প্রথা চালাবেন সেটা কল্পনা ও করিনি। বন্ধু স্বার্থে পুত্র বিয়োগ। আমি অন্য দল করতাম। স্বভাবতই ওদের ভোট দিবো। ঘটনাটি ঘটলো হটাৎ। বিএণপির একদল যুবক অতি উৎসাহে আমাদের ওয়ালে পোস্টার লাগাতে আসলেন ...আমি বাঁধা দিলাম।। আব্বা খবর পেলেন। যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। হুংকার দিলেন। কেন লাগাতে দিলাম না বলে। আমি নিরুত্তর। কে জানি উনাকে বলে দিলো আমি ভিন্য দল করছি। কি আর বলা... নাসের বূলূয়ার মতো আমার পিঠে দুই তিনটা কিল পড়লো। হা হা মনে হলেই হাসি পায়। আব্বা রাগে গজ গজ করতে করতে বেরিয়ে গেলেন।‘’ আমার বন্ধুর জন্য আমি যেখানে মাঠে নামছি সেখানে উনি আমারই পুত্র হয়ে বাধা দিচ্ছেন আর পোস্টার লাগাতে দিচ্ছেনা।! কত বড় সাহস।!’’ এই বিদ্রোহীর দলে আমি একা ছিলাম না... আরও অনেকেই ছিলেন। তবে আম্মা রেহাই পাননি ভোটের আগের দিন উনাকে শপথ করিয়ে নিজেই সেন্টারে নিয়ে গিয়েছিলেন। আম্মা ভিন্য মতাবলম্বী হয়েও সাইফুর চাচাকে ভোট দিতে বাধ্য হলেন। সে জন্যে অবশ্য আম্মার মেকি কান্না অনেক দিন পর্যন্ত ছিল...। একেই বলে বন্ধু প্রেম, হয়তো কথা দিয়েছিলেন পরিবারের সব ভোট কাস্ট করাবেন!...সাইফুর চাচা আর আজ তুমি এক জায়গায় আল্লাহ্‌ আপনাদের জান্নাত নসিব করুন...।

‘’এই লিখটা আমার ছেলেবেলারই একটা অংশ মাত্র... যেটা শুধু বাবা সম্পর্কে। জানিনা অনেকেরই বাবা হয়তো নেই। বাবা হারানোর অনুভূতি আর সৃতিগুলো একই হওয়ার কথা।। শুধু প্রকাশের ভাষাটা ভিন্ন।পড়ে যদি নিজেদের বাবার সৃতি চারণ করেন আর দোয়া করেন সবার বাবার জন্যে তাহলে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস সার্থক।‘’


মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.