![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাস করি কল্পলোকে। আমি নিঃশ্বাস নেই অসীম শূন্যতায়।আমি আঁকি ছবি মনের রঙিন ক্যানভাসে।আমি কবিতা লিখি ভালোবাসার গদ্যলোকে।আমি গান গেয়ে যাই নিজ সুর অলিন্দে।তবুও করতে পারিনি স্পর্শ আমার আমি কে।।
দিনটি ছিল রবিবার--- সকালে ঘুম থেকে উঠে খেলা দেখার আনন্দে বিভোর—একটার পর একটা উইকেট পড়ছিল—বাংলাদেশের জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছি—বিরতির দিকে কি মনে করে ফেসবুকে ঢুকি—একটা লিঙ্ক দেখে তাতে ক্লিক করি—খবরটা রুদ্ধশ্বাসে পড়ে ফেলি—শিশুটির নির্যাতনের চিত্র ছিল কয়েকটা—লিঙ্কের নিচে দেখলাম লিখা ভিডিও সহ দেখুন—মানুষ তো আমি—তারপরেও ভয় পাচ্ছিলাম ভিডিওটিতে ক্লিক করতে—ক্লিক করে বুঝলাম ভুল করেছি—এই মর্মান্তিক ভিডিও পুরোটা দেখা অন্তত আমার দারা হবেনা---অবা মরিজাইরাম রে বা, আমারে বাচাও রে বা—একটা অবুঝ শিশুর বেঁচে থাকার আকুল আকুতি—পাশে শোনা গেল একদল হায়েনাদের অট্টহাসি—ও মাইগ মাই আর মাইরনারে বা—এইতুকু শোনার পর আর পারিনি—ততক্ষনে জেনে গেছি সে আর নেই।।
মাত্র তের বছর বয়সে যখন একটি ছেলে বাজারে সবজি বিক্রি করে তখন বুঝতে হবে, সে কেবল শিশুই ছিল না—অভাব অনটনের সংসারের যুগান দাতা এক মহা শিশু—তার ও হয়তবা ইচ্ছে ছিল পাঠশালার গণ্ডি পেরিয়ে একদিন বড় কিছু হবে—হয়তোবা ছিল না—তাতে কি—শৈশবের কোমল রেখাগুলো মুখের উপর তখনও খেলা করছে—হায়েনারা যখন আঘাত শুরু করলো কান্নার মধ্যেও সেই রেখাগুলো জানান দিচ্ছিল,আমি শিশু—আমারে তোরা মারিস কেন—কেনরে মারিস--
খেলা দেখার আনন্দ মাটি হয়ে গেল—স্বভাবত খেলা জিতলেই স্ট্যাটাস দেই—ক্রিকেট রঙ্গে টুকটাক লিখা ছাড়ি—সে দিন আর কিছুই করতে পারলাম না---কানে শুধু আওয়াজ হচ্ছিলো—‘’ আমারে কেউ বাচাও রে বা’’ – সারাদিন কাজেও মন বসাতে পারিনি—দিলাম শেয়ার করে ঐ মর্মান্তিক ভিডিওটা—কিছু লিখতেও পারছিলাম না— আমি আবার বেশী কষ্টে নিরেট গবেট হয়ে যাই-- এ কি দেখলাম—বুকের ভিতর একদলা কষ্ট, রাগ নিয়ে সারাদিন ঘুরেছি—লাল কষ্ট নীল কষ্ট হলুদ কষ্ট—জীবনে কত ধরনেরই কষ্ট পেয়েছি কিন্তু এই কষ্টের,এই অভিমানের সাথে কিছুরই মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না---ছেলেটা তো আমার না—রক্তের ও কুনো সম্পর্ক নেই—--এরকম কত হত্যা কাণ্ডই তো খবরের কাগজে দেখছি—দেখেছি বিশ্বজিৎ কেও—কই নাতো —এরকম তো মন আন্দোলিত হইনি—তবে কি সূত্র অন্যখানে---??
পাগলের মত ফোন দিচ্ছিলাম ছেলেকে—সে তো মহা ব্যস্ত গেম নিয়ে—সময় নেই এই বাবার সাথে কথা বলার। দু এক কথা বলে রেখে দেয়—আবার ইম কল করি—আবার দেখি আমার আব্বুটাকে—আশ্চর্য ! আমার আব্বুটাও যে রাজনের মত— সমানই তো উচ্চতা—মুখের অবয়ব ও তো মনে হচ্ছে একি—কি মায়া মায়া, সহজ সরল-- ধুর কি থেকে কি চিন্তা করি—পাগল হয়ে গেলাম নাকি !—ছেলে আমার বুঝেনা তাকে কি জন্যে বার বার ইমু করছি—চোখের কোনে পানি জমে—ও হে ঈশ্বর এত কষ্ট তুমি কোথা হতে অর্পিত কর—সামান্য ভাবতেই আমার বুকের ভিতর যেমন কষ্ট দলা পাকিয়ে উঠলো, কি করে কোন শক্তি বলে রাজনের বাবা মা এই কষ্ট সহ্য করবে? আমার জানা নেই—এই কষ্ট পৃথিবীর নয়—অপার্থিব ঈশ্বর প্রদত্ত কুনো এক কষ্ট—
খবরের কাগজের লিঙ্ক গুলো না চাইলেও আবার চোখের সামনে চলে আসে—না চাইলেও দেখতে হয়—নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি জমে – একসময় আবিষ্কার করি নিজেকেও রাজনের বাবা হিসেবে—হ্যাঁ আমরা যারা এই বয়সী ছেলেদের বাবা তারা আজ সকলেই রাজনের বাবা—খুশিতে মনটা নেচে উঠে—বিচার চাই—কঠিন বিচার ।
পরদিন—এখন আর ওর হত্যার লিঙ্ক দেখেও না দেখার ভান করি—শুধু হন্যে হয়ে খুজতে থাকি ছেলে হত্যার আসামি ধরা পড়েছে কি না—হটাৎ দেখতে পেলাম ভিডিও লিঙ্ক টা— আমার এক বন্ধু শেয়ার করেছে--আনন্দে চোখটা চিক চিক করে উঠলো—দেখার পর মোবাইলের স্ক্রিনের উপরই থুথু দিলাম—নিচে কমেনট ও দিলাম’’ থুক দিলাম তর উপরে”” নিজ মাতৃভাষায়—এই আমার মাতৃভাষাকে তোরা কলঙ্কিত করেছিস—তুই আমি একই আঞ্চলিকতায় কথা বলি দেখে নিজের উপরই ঘৃণা হচ্ছে—
একটা ব্যাপার আমার মাথায় আসেনা—মানুষ জঘন্য কিছু ঘটালে পশু বলে গালি দেয় কেন?? পশুরা এখানে আবার কি দোষ করলো—পশুদের কারোকে কি দেখেছেন অন্য পশুকে দা দিয়ে কোপাইতে, রেপ করতে, চুরি করতে?? বুদ্ধিশুদ্ধিহীন অবলা পশুদের অযথাই মানুষের সাথে কম্পেয়ার করে তাদেরকে আমরা ছোট করছি।
কিছু আশার কথা—ফেসবুক ছিল বলেই আজ রাজন লক্ষ্য ভাই পেয়েছে—হাজারও বাবা পেয়েছে—সোশ্যাল মিডিয়া কি ঘটাতে পারে তা রাজনের হত্যাকারী ধরা পড়ার মাধ্যমেই তা প্রমানিত হল— আসামী টাকা খাইয়ে বিদেশ পাড়ি দিল—আপনারা তো শুধু কামরুলেরই বিচার চাইছেন—আমি চাচ্ছি ঐ পুলিশের ওসির ও মুণ্ডু যাক—
বিচারের বানী আজ আর নিভৃতে কাদবেনা—আজ বানী গুলো ফেসবুক কাদছে—তাই এই বিচার জনতার আদালতেই হবে—
আমাদেরও অনেক দায়বদ্ধতা আছে— আমরা কেহই মুক্ত নই এই অভিশপ্ত জাতির ঘৃণিত সব কর্মকাণ্ড থেকে—অনেকেই দেখছি আইন বহির্ভূত বিচারের কথাই বলছেন—তা ঠিক নয়—এক অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আরেকটা অন্যায় করে প্রমান দিয়ে দেই,আমরাও তো কামরুলদের একজন—‘’কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায় তাই বলে কুকুরকে কামড়ানো কি মানুষের শুভা পায়’’ ---আর দেশের সব পুলিশ যে খারাপ এই ধারনা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে—পুলিশ তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে--- ইরানের মত খোলা আকাশের নিচে হাজারো জনতার সামনে ওদের ফাঁসির রজ্জু ঝুলালেই তবে রাজনের আত্মা শান্তি পাবে—আর রাজন ও দেখবে সে আর একা নয়—তার জন্যে দাড়িয়ে আছে হাজারও রাজন—হাজারও ভাই—হাজার ও বাবা—
আর মায়ের কথা কি বলবো —এই কষ্ট কোন কষ্ট দিয়েই প্রলেপ দেয়ার মত নয়—তবুও যদি মা এসে দাড়ায় ফাঁসির চৌকাঠে তবু মন বলে বাবা তুই ভালো আছিস তো??
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩৬
মাটি ও মানুষ বলেছেন: আম্ববিয়া