![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাস করি কল্পলোকে। আমি নিঃশ্বাস নেই অসীম শূন্যতায়।আমি আঁকি ছবি মনের রঙিন ক্যানভাসে।আমি কবিতা লিখি ভালোবাসার গদ্যলোকে।আমি গান গেয়ে যাই নিজ সুর অলিন্দে।তবুও করতে পারিনি স্পর্শ আমার আমি কে।।
পড়তে বসছি--- বইয়ের ভিতর আরেকটা বই--- হুমায়ুন--সমরেশ-- সুনীল-- তিন গুয়েন্দা-- ওয়েস্টার্ন- অথবা চার্লস ডিকেন্স অথবা সায়েন্স ফিকশন।। বাসার পাব্ লিক সবাই দেখে আমি পড়তে ব্যস্ত। বেশি ঝামেলা হলে কাঠের সন্দুক-- ডালা হাল্কা ফাঁক করে টানা পাচ ছয় ঘণ্টা অল্প আলোর রেখায় পুরো বই গিলতুম-- বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র , ব্যক্তিগত পাঠাগার আর উপহারের বই, উপরি ছিল বন্ধুদের বই বেমালুম গায়েব দেয়া--- সংগ্রাম করেই বই পড়তাম--- ইস্কুল কলেজের পুস্তকে আমার মনোযোগ কোনদিনই ছিলনা--- রেজাল্টের খাতায় অশ্ব ডিম্ব ছিল অতি সাধারন ব্যাপার।
সিলেট পাইলট স্কুল-- নুরুল আলম সারের কথা মনে হলে কারো বুকে কাপুনি ধরেনি এমন কেহ নেই মনে হয়--- স্যার এর ক্লাসে চোখে চোখ রেখেই ক্লাস করতে হত-- যতক্ষণ উনি ক্লাসে থাকতেন একটা পিন পড়লে ও শব্দ হতো-- গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত-- এরকমই একদিন--- আগেরদিন রাত্রে ঘুমাবার আগে একটা বই হাতে নিয়েছিলাম, তাও আবার শমরেশের সাতকাহন-- ফজর পর্যন্ত পড়েছি--- কোনরকমে স্কুলে গেলাম-- প্রত্যেক ক্লাসেই অল্প ফাকি দিয়ে কয়েক পেজ গিলেছি--- আসলেন নুরুল আলম স্যার--- কোনভাবেই মন বসানো যাচ্ছিলনা--- আবার সারের ভয়ে লুকানো বইটার দিকে তাকাতে পারছিনা -- কি করি-- যা হবার হবে ভেবে রিস্ক নিয়েই নিলাম--- স্যার বোর্ডে লিখেন আর আমি নিচের দিকে (হাঁটুর মধ্যে রাখা ) তাকিয়ে তাকিয়ে সাতকাহন পড়ি-- গলা শুকিয়ে কাঠ-- ক্লাসের সাতকাহনে ধরা পড়ি এই ভয়ে-- স্যার অবশ্য দু একবার আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন-- বুঝতেও দেইনি মাইরি।
বই পড়া আমাকে কি দিয়েছে তা কেবল আমিই ভালো জানি--- ইংরেজি উপন্যাস পড়তাম বলে ম্যাট্রিক লেবেলেই ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে পারতাম--
সে যাক--- আসি আজকালকার ছেলেদের কথায়--- গেম -- প্লে স্টেশন আর ট্যাবলেটের সৌজন্যে এদের মাথায় এক গাঁদা গুবর ছাড়া আর কিছুই উৎপাদিত হচ্ছেনা দেখে চিন্তায় পড়ে গেলাম-- ভাবতে লাগলাম কিভাবে বিশেষ করে আমার ছেলেকে এই গবেটিজম থেকে বাইরে নিয়ে আসা যায়। ঘাটাঘাটি শুরু হল-- অ্যামাজন কিন্দল নামে একটা ট্যাবলেট পেলাম যেখানে হাজার হাজার বুক ডাউনলোড করে পড়া যায়-- যেই ভাবা সেই কাজ-- কিনে দিলাম ছেলেকে-- প্রথম প্রথম পড়তে চাইতনা-- আমাকে খুশি করার জন্যেই বলতো পড়েছি-- কারন কিঞ্চিৎ গেমের নেশা তখনও ভালই ছিল--বুঝাতাম ,দেখ বাবা আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়েছি আর তোকে নিজ থেকে চাইছি তাও পড়তে চাস না-- শুধু বিরক্তির একটা স্রাগ করে চলে যেত--- আমার বাছাই করা বইয়ের দিকে তার আগ্রহ নেই--- বলল, এগুলো ইন্টারেস্টিং না-- কিন্দলে আবার গেম ও খেলা যায়-- ভাবলাম অন্য পথ ধরাতে হবে--- একদিন বললাম, বাবা তোমার ইচ্ছেমত বুক ডাউন লোড দিতে পারবে-- কাজ হল-- সে তার ইচ্ছেমত মত বই ডাউনলোড দিল-- পড়া শুরু করলো--- বই ই তাকে বইয়ের জগতে নিয়ে যেতে লাগলো-- ও বুক ডাউন লোড দেয় আর আমার ইমেইল এ নোটিফিকেশন আসে-- পুলকিত হই।।
ওইদিন উইলল্কিন্সনে ঢুকেছি--- সাথে সে ছিল -- হটাৎ দেখি এক গাঁদা বই নিয়ে এসে কাঁচুমাচু স্বরে বলল '' বাবা ক্যান ইয়উ বাই দিজ ফর মি''--- মা বাঁধা দিতে যাচ্ছিল-- কয় কি ব্যাটা !! পারলে তো তোকে বইয়ের সেলফটাই কিনে দিতুম। এত সুখ কার সয়-- সে ওর মেজ চাচুর ঘরে কয়দিন যাবত হল বেড়াতে এসেছে---সকালে ঘুম ভাঙলে দেখি ,আমার আরেক ডুপ্লিকেট কপি কাঁথা মুড়ি দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়ছে...!!
বি দ্র ঃ এই লিখাটার পিছনে একটা উদ্দেশ্য আছে-- নিজের বাচ্চাদের বই পড়তে উৎসাহিত করুন-- কারণ ডিজিটালের এই যজ্ঞে সবই আছে কিন্তু নৈতিকতা বিবেক বোধ, জীবনবোধ ও ব্যক্তির সঠিক মননশীলতা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা এক ধরনের ডিজিটাল রোবট হয়ে যাচ্ছি। এ থেকে পরিত্রান দিতে পারে একমাত্র বই আর বই।
দৌড়ের উপর আছি--- লিখাটা লম্বা করতে না পারার জন্যে সুখিত-
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আমার মনের কথা গুলিই লিখেছেন ।