![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড,উইলিয়ম কেরি,রামমোহন রায়, হেনরি ডিরজিও,ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,মাইকেল মধুসূদন দত্ত,ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্,ড.সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, মুনীর চৌধুরী,ড.হুমায়ুন আজাদ প্রমুখ বাংলা ভাষার প্রসারে যেসকল মনীষী পতঙ্গের ন্যায় মত্ত হয়ে দীপশিখাকে বেছে নিয়ে ছিলেন তাঁদের চরণে প্রণতি জানায়।
অনেক চড়ায় উৎরায় পেরিয়ে আজকের বাংলাভাষা ।এই ইতিহাস আলোচনা আমার মুখ্যবিষয় নয়,তবে এটা সত্য যে বাংলা ভাষা আর্য/বৈদিকভাষার বৃত্ত থেকে সংগ্রাম করে বের হয়েছিল শুধু অনার্যদের নিজস্ব ভাষার স্বীকৃতি লাভের জন্য।দুঃখের বিষয়, ভাবনাটি আধুনিক সময়ে এসে জটিল রূপ ধারণ করেছে। এ কারণে যে-একটি ঐতিহ্যবাহী প্রবহমান স্রোতের দিক ও গতি পরিবর্তন হয়ে মরুর চড়ে ঠেকার উপক্রম হয়েছে!রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,প্রমথ চৌধুরী, কাজী নজরুল ইসলাম বিদগ্ধ জনেরা বাংলাকে এমন পর্যায়ে উন্নীত করেছিলেন যে, মানুষ ১৯৫২-এ প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন তাদের মায়ের মুখ রক্ষার্থে!আর এখন ভাষার ব্যবহার এমন স্তরে পৌঁছেছে যা শুধু দুঃখজনক নয়,ভয়ঙ্করও!আমি অত্যন্ত দুঃখ পাই যখন অনুভব করি শালীনতাহীন ভাষা শুধু নয়, ভাষার প্রতি আগ্রহ বা ভালোবাসা নামের শ্রদ্ধার জায়গাটিই উঠে যাচ্ছে!আমরা ভুলেই যাই মাইকেল মধুসূদন দত্ত শেষপর্যন্ত এই বাংলার জন্য কী করেছিলেন!
এর কারণ হিসেবে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন ,যেমন- আমাদের দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমপ্রদায় বলেন -ইংরেজি বা অন্যভাষার প্রভাবে আমাদের ভাষা নাজুক অবস্থায় পড়েছে।
আমি সম্পূর্ণরূপে এর দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ ভাষা তার নিজস্ব গতিতে চলবে এটাই স্বাভাবিক মানুষের ভাল না লাগলে সে কেন এটা রপ্ত করবে?তাহলে প্রশ্ন হলো বাংলাভাষার সমস্যা কোথায়?সমস্যা আমাদের মস্তিষ্কে।
ভাষাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাকরণের ভূমিকা অনস্বীকার্য।এর প্রাথমিক পর্যায় নির্ভর করে শিক্ষার্থীর ওপর।আমাদের দেশের প্রায় নব্বই ভাগ শিক্ষার্থীই বাংলা ব্যাকরণে অনাগ্রহ দেখায়। কারণ তারা মনে করে এবিষয়টি দুর্বোধ্য।বয়স,সময় ও মানসিকতার পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা যেভাবে পড়তে চায়, সেভাবে যখন পায়না তখনই শুরু হয় আসল বিপত্তি।
ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বিধানে তৈরী হয়- ব্যাকরণ শাস্ত্র। ভাষার শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যে ব্যাকরণশাস্ত্র তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর ওপর অনাগ্রহের কারণ কী?উত্তর সহজ- দুর্বোধ্য। আর দুর্বোধ্য কেন?-উদাসীনতা!
এ উদাসীনতা কাদের- তথাকথিত পণ্ডিত পাঠ্যব্যাকরণ প্রণেতাদের।আমরা বিশ্বের উন্নত দেশের দিকে তাকালে দেখি তাদের ভাষার পরিবর্তনের সংগেই এমনকি কখনো বা তার আগেই পরিবর্তন হচ্ছে ব্যাকরণের। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় প্রাচীন আমল থেকে যে ব্যাকরণের চর্চা বাংলায় শুরু হয়েছিল আমার লেখায উল্লিখিত পণ্ণ্ডিত বর্গের হাতে। পরবর্তীতে তা আরো দুর্বোধ্য অথবা একইরকম রয়ে গেছে। এবিষয়ের তাত্বিক ব্যাখ্যা হিসেবে আমি প্রথমে উল্লেখকরতে চাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে যেখানে শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত ব্যাকরণ বই রয়েছে। প্রতিবছর সরকার এই বইটি নতুন করে সম্পাদনার জন্য বিপুল অঙ্কের সম্মানীদেন দেশের বিশিষ্ট ভাষাবিদদের। এখানে বিনয়ের সংগে বলে রাখতে চাই অামি কাউকে ছোট করতে চাইনা আমার লেখার মাধ্যমে। অামরা নবম শ্রেণির ব্যাকরণ প্রসংগে বলতে পারি তিন চার দশক ধরে এই বইয়ে একই ভাষা চলে আসছে যার ফলে কোমল মতি শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছেনা। তারি ফলে ভাষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে তারা। আমি বলছিনা যে আমাদের ব্যাকরণের নিয়মগত জটিলতার কথা, আমি বলতে চাইছি এর উপস্থাপনে ভাষাগত দুর্বোধ্যতা ও পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা। এর ধারাবাহিকতায় ব্যাকরণের শব্দগঠন বিষয়ের অধ্যায় নিয়ে কিছু লিখব।‘সন্ধি’র কথা যদি বলি তাহলে বলব আমরা শিক্ষার্থীদের মুখস্ত করাচ্ছি। তাদের সৃজনশীল প্রতিভাকে ভেঙে নষ্ট করছি যেখানে বলা হচ্ছে- আমরা সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাচ্ছি অথচ পাঠ্য হচ্ছে মুখস্ত নির্ভর।
যা বলছিলাম একটি উদাহরণ দিয়ে পরিষ্কার করি- প্রথমে নিয়ম বলা হল ‘অ’কার কিংবা ‘আ’কারের পরে ‘ই’কার কিংবা ‘ঈ’কার থাকলে উভয় মিলে‘এ’কার হবে। যেমন- শুভ+ইচ্ছা =শুভেচ্ছা এভাবে না বলে শব্দটি ব্যাখ্যা করলেই সহজ হত।আমরা লিখতাম-শুভেচ্ছা অর্থ - ভাল কিছু আশা। এরপর আমরা লিখতাম শুভ অর্থ- ভাল,আর ইচ্ছা মানে আশা। এবার নিয়ম বলতাম- ভ এর ‘অ’এবং ই মিলে এ হলো ।এভাবে শব্দ তৈরি হয়।
এবার প্রত্যয়ে আসা যাক-প্রত্যয় শব্দ গঠনের অন্যতম প্রক্রিয়া
কিন্তু পাঠ্য বইয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম লেখানেই যা পাঠ করে শিক্ষার্থী তার উদ্দেশ্য সফল করতে পারে।
ধ্বনির পরিবর্তন অধ্যায়ে পাওয়া যায়-বেশকিছু দুর্বোধ্য সংজ্ঞা। যেমন -অভিশ্রুতির সংজ্ঞায় বলা আছে-বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি যদি পূর্ববর্তী স্বরের সঙ্গে মিলে যায় তবে তাকে অভিশ্রুতি বলে।যেমন-বলিয়া>বলে। এর পরিবর্তে যদি থাকত-সাধুরীতির শব্দ চলিত রীতিতে রূপান্তর করাকে অভিশ্রুতি বলে। তাহলেই হয়তো সহজ হতো।
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যায়- দীর্ঘ বছর সাধনা করে বাংলা একাডেমি ২০১১ সালে প্রকাশ করলো প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ মনে ভাবলাম এবার হয়তো সহজে সমাধান পাওয়া যাবে,কিন্তু ঘটনা দাঁড়ালো মর্মান্তিক! অধিকাংশ অধ্যায়ের প্যাচালো ব্যাখ্যা শেষে লেখা হলো- এ বিষয়ের বিস্তৃততর গবেষণার সুযোগ রয়েছে, তার পৃথক আলোচনা না হলেও চলে ইত্যাদি।
আমি প্রশ্নাকুলচোখে তাকিয়ে থাকলাম- সত্যিকার গবেষকের প্রতি,যে মাটির কথা বলে আর সহজে মন ভুলাতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১৮
দীপংকর চন্দ বলেছেন: সাধুরীতির শব্দ চলিত রীতিতে রূপান্তর করাকে অভিশ্রুতি বলে।[/sb
ভালো লাগা থাকছেই অরুণ।
এবং শুভকামনা বারবার।
অনেক ভালো থাকবেন। সবসময়। অনেক।