নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর্য্য মিঠুন

আর্য্য মিঠুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আর্য্য রম্য গল্প ১

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৩১

বশীকরণ ( প্রথম পরিচ্ছেদ )

“ওঁ নমো নরসিংহায় কপিস জটায়,
অমোঘ-বীচা সতত বৃত্তান্ত,
মহোগ্রহুরুপায়।
ওঁ হ্লীং হ্লীং ক্ষাং ক্ষীং ক্ষীং ফট স্বাহা।”

অত্রি হা করিয়া এই মন্ত্রের জপ গিলিতেছে । বিগত দুই ঘটিকা তান্ত্রিক মহাশয় একই মন্ত্রখানি বার বার জপ করিয়া চলিয়াছেন। থামিবার কোন উপলক্ষ্য কিংবা পূর্বাভাস অত্রি খুজিয়া পাইতেছে না। অগত্যা কৌতূহল আর প্রত্যাশা মাখা মুখখানি লইয়া প্রতীক্ষা করিয়া চলিয়াছে। যদিও অত্রি এইসকল সাধু তান্ত্রিক দুই চক্ষে দেখিতে পারিত না। কিন্তু চন্দ্রাকে বশ করিবার সকল প্রয়াস যখন ব্যর্থ হইলো তখন নিরুপায় হইয়া তাহার মিত্র সপ্তক এর নিকট কথায় বাধ্য হইয়া এই তান্ত্রিকের নিকট আগমন করিল। সপ্তক জানাইয়াছে ইনি একজন মহা তান্ত্রিক । হিমালয়, কাশী, কাশ্মীর এহেনো কোন স্থান সাধনা করিতে তিনি অবশিষ্ট রাখেন নাই। দেখিতে যদিও সাধারণ তান্ত্রিকের ন্যায়, মাথায় বিশাল জটা, মুখমন্ডল ভস্মে আবৃত আর পরণে শুধু শিকড় বাকড়। তান্ত্রিক মহাশয় বিশেষ করিয়া ব্যক্তি বিশেষকে বশে আনিবার জ্ঞানে পি এইচ ডি ডিগ্রী ধারীর সমতুল্য মানিলেও বাহুল্য হইবে না। ভক্তরা সেই হেতু তান্ত্রিক নামকরণ করিয়াছেন স্বামী বশানন্দ গুরুজী মহারাজ অর্থাৎ যাহার বশ করিয়াই আনন্দ। কিন্তু অত্রি এখনো আনন্দিত হইতে পারিতেছে না।

অবশেষে স্বামী বশানন্দ মহারাজ চোখ খুলিলেন। অন্তঃপর স্মীত ফু দিয়ে সম্মুখে রাখা পিজাখানি মন্ত্রপুত করিলেন। আর বলিলেন, “ এই খাদ্য কোন নারী গ্রহণ করিবার পরে তাহার সামনে যে রক্ত সম্পর্ক চ্যুতপুরুষ আসিবে সে তার প্রতি অনু রক্ত হয়ে পরবে”। চন্দ্রা পাঠ গ্রহন হইতে সংস্কৃতি চর্চা কোন কিছুতেই আসক্তি না থাকিলেও তাহার স্বাস্থ্যের সমীপে অতিমাত্রায় সচেতন। কোন ধরনের চর্বি খাবার হইতে সে নিজেকে বঞ্চিত করিয়া রাখে । শুধু মাত্র পিজা দেখিল আর এই প্রতিরোধের মুখ থুবড়াইয়া পতন ঘটে। প্রেম বলিতে যদি চন্দ্রার জীবনে কিছু থাকিয়া থাকে তাজা পিজার উপরেই আছে। অনেক খাদ্য যাচাই বাচাই করিয়া তাই চন্দ্রার নিমিত্তে পিজা নির্বাচিত করিয়া অত্রি আর সংপ্তকে দুই সদস্য বিশিষ্ট বশীকরণ কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে।

পিজাখানির দিকে চক্ষুপাত করিয়া অত্রির খুব একটা ভরসা হইলো না তবুও শেষ চেষ্টা রূপে সে পিজাখানি বাক্সবন্দী করিল। চন্দ্রাকে পাওয়ার সকল চেষ্টা বাষ্পীভূত হইয়া অত্রিকে হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত করিয়াছে। চন্দ্রা এলাকার শ্রেষ্ঠ সুন্দরী সেই সাথেও অংহকারিনীও বটে। প্রেম পিয়াসু যুবকদের সে এখনও মনুষ্য জ্ঞান করিতে শিখে না। যাহা না চাইতেই অতিমাত্রায় মেলে তাহার প্রতি অনুরাগ প্রদর্শন কোন ব্যক্তিত্ববাণ মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইতে পারে না।

প্রায়শই চন্দ্রা দূরালপনীতে হোম ডেলভারিযোগে পিজা আনিবার আদেশ প্রদান করে। আজও করিবে গোপন সূত্রে সংপ্তক তথ্য পাইয়াছে। সেই হেতু অত্রি আর সংপ্তক বাড়িতে বিপরীতমুখে আত্নগোপন করিয়া প্রতীক্ষা করিতে লাগিল। এমনি সময় স্কুটারের বিপ ধধনিতে তাহারা সচেতন হইয়া উঠিল। ডেলিভার যুবক স্কুটার হইতে নামিবার মূহুর্তের মাঝেই চারখানা হস্ত আসিয়া তাহাকে পাশের আধারাচ্ছন গলিতে লইয়া গেল। ব্যাপারখানা এতো বেগে ঘটিল সে ভীতিতে আর একটু বিলম্ব হইলেই মূর্ছা যাইত। অত্রি কিছু বলিবার পূর্বে সংপ্তক চোখ রাঙ্গাইয়া তাহাকে বহুবিধ আদেশ করিল। যাহার সারমর্ম করিলে দাড়ায়, “শোন, আজ ঐ বাড়িতে তোদের ফালতু পিজা যাবে না। এই নে স্পেশাল পিজা। আর ঐ অখাদ্য টা এদিকে দে। চুপচাপ এটা গিয়ে দিয়ে আসব। একটা বাড়তি কথা বলবি তো কেলিয়ে রং পালটে দেবো”। বেচারা ডেলিভারি যুবক কোন প্রতিবাদ করিবার সাহস না দেখাইয়া তাহাদের প্রদত্ত স্পেশাল পিজাখানা লইয়া চন্দ্রাদের বাড়িতে বেল টিপিল। পারতপক্ষে সে অত্র স্থান হইতে নিষ্কৃতি পাইলে আর কোন দিবসে এমুখো না হইবার প্রতিজ্ঞা করিয়া ফেলিয়াছিল।

বেল শুনিয়া চন্দ্রার দিদান পরমাদেবী দুয়ার খুলিয়া দিলেন। চন্দ্রা পিজার আদেশ করিয়া পাশের বাড়ি হইতে তাহার সখিকে নিমন্ত্রন করিতে গিয়াছে। পরমাদেবী ডায়বেটিস জরাতে আক্রান্ত। বাড়ির সকলে একতাবদ্ধ হইয়া তাহাকে এই সামান্য ব্যধির নিমিত্তে সকল মজার খাবার হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া রাখিয়াছেন। চন্দ্রা সে অত্যাচারে প্রধান ভূমিকা পালন করিয়া থাকে। এই সেইদিনে সামান্য দুই টুকরা সাসলিক খাইয়াছিলেন তাই বলিয়া সবাই মিলিয়া তাহাকে কত উপদেশ আর বঞ্চনা করিল। চন্দ্রা তো বলিয়াই দিয়াছে এমন করিলে দিদানের সহিত বাক্যলাপ স্থগিত করিয়া দিবে। আজ সেই অত্যাচারের প্রতিশোধ লইবার শুভ লগ্ন উপস্থিত হইয়াছে।

চলবে...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.