![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
::: রিভিউ :::
১৯৪৩-৪৪ সালের গ্রামীণ ভারতবর্ষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বারুদের গন্ধ এখানে এসে না পৌছালেও আরেক দাবানল ছারখার করে দেয় সমগ্র ভারতের গ্রামীণ সত্ত্বাকে। সেই দাবানলের নাম ক্ষুধা। অখন্ড ভারতবর্ষের মানুষের স্বপ্ন তখন অর্থ, অট্টালিকা আর প্রতিষ্ঠা নয়, শুধু একমুঠো চাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈনিকদের জন্য খাদ্যের অগ্রীম মজুত বাড়াতে ভারতবর্ষের গ্রামে গ্রামে শেষ খাদ্যদানাটুকুও ব্রিটিশ সরকার কেড়ে নিতে শুরু করে। শুরু হয় দুর্ভিক্ষ। সারা ভারত জুড়ে মৃত্যুবরণ করে ৫০ লক্ষ অসহায় মানুষ। লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অশনি সংকেত উপন্যাসটিতে সেই দুর্ভিক্ষের দাবানলে এক সহায় সম্বলহীন দরিদ্র ব্রাক্ষ্মণ পরিবারের বেঁচে থাকার লড়াই উপস্থাপনের মাধ্যমে পাঠকদের নিয়ে গেছেন সেই ৭০ বছর পূর্বের গ্রামীণ ভারতবর্ষে।
বইয়ের নামঃ অশনি সংকেত ( অসমাপ্ত )
লেখকের নামঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘরানাঃ সামাজিক
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬
প্রকাশনীঃ মাটিগন্ধা
প্রথম প্রকাশঃ ১৩৬৬ বঙ্গাব্দ
নামকরণের স্বার্থকতাঃ
স্বাধীনতাপূর্বে ভারতবর্ষের অবিভক্ত বাংলায় ধনী দরিদ্র সব মানুষের মাঝে অদ্ভুত এক অহংকার দানা বেঁধেছিল। সেই অহংকার ছিল প্রাচুর্যের। গোলা ভর্তি ধান। জলাশয়ে অসংখ্যা মাছের বিচরণ। সৃষ্টিকর্তার আদেশে যেন প্রকৃতি সবকিছু দান করেছে বাংলার মানুষকে। মানুষ দুটো ভাতের জন্য অনাহারে প্রাণ দিতে পারে এমন কথা তাদের কল্পনা জগতেও কখনো ঠাই পেত না। কিন্তু ছিয়াত্তরের মন্বত্তরের প্রায় দুইশত বছর পর মানুষ আবার জানলো দু মুঠো আহার হতে পারে কতটা দামী। উপন্যাসে নতুন গাঁয়ে দুর্ভিক্ষের দাবানলে যেদিন মতি নামের মেয়েটির প্রথম চিতা জ্বলে উঠলো সেদিন মানুষ বুঝতে পারলো ধধংসের সংকেত। অনাহারের আগুনে ছাই হয়ে উড়ে যাওয়ার লক্ষ মানুষের জন্য বিনাশের অশনি সংকেত।
চারিত্রিক বিশ্লেষণঃ
সমগ্র উপন্যাসটিতে দরিদ্র ব্রাক্ষণ গঙ্গাচরণ যেন ছিল মস্তিষ্ক আর তার স্ত্রী অনঙ্গ বৌ ছিল হৃদপিন্ড। একটু ভাল থাকার, দুটা ভাল খাওয়ার আশায় গঙ্গাচরণ পরিবারকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম। কখনো বাসুদেবপুর, কখনো ভাতছোলা আবার কখনো নতুন গাঁ। গঙ্গাচরণ দরিদ্র হলেও কিছু শিক্ষিত ছিল। নতুন গাঁয়ে এসে টোল খুলে ছাত্র জুটিয়ে শুরুটা বেশ ভাল হয়েছিল গঙ্গাচরণের। চতুর গঙ্গাচরণ গ্রামের মানুষের মিথ্যে চিকিৎসা করেও সুনাম এবং সামগ্রী দুটো উপার্জন করছিলো। কিন্তু হঠাৎ একদিন সেই স্রোত থেমে গেল। শুরু হলো যুদ্ধ। হু হু করে বেড়ে যেতে লাগল চালের দাম। শুণ্য হয়ে গেল গুদাম ভরা পাহাড় সমান চালের সারি সারি বস্তা। যারা একদিন স্বপ্রনোদিত হয়ে মাছ, সবজি এনে ব্রাক্ষণকে সেবা দিত তাঁরাই দু মুঠো চালের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতো লাগল গ্রামের পর গ্রাম। এরই মাঝে একদিন অনঙ্গ বউ এর কোলজুড়ে আসে নবজাতক। যার মুখে আহার দিতে গঙ্গাচরণ আর অনঙ্গ বউ প্রতিদিন মুখোমুখি হয় নতুন যুদ্ধের।
এতকিছু পরেও অনঙ্গ বউ যেন দেবী অন্নপূর্ণা। তীব্র দুর্ভিক্ষের সময় যে এসেছে দুটো ভাতের দাবী নিয়ে কাউকে ফেরাতে পারেনি সেই দেবী। এমনি একজন ধূর্ত ব্রাক্ষণ দুর্গা ভটচায গঙ্গাচরণের কাছে নিলজ্জের মত দিনের পর দিন পাত পেরে খেয়ে গেছে। আর সেই দেবী নিজে না খেয়ে বৃদ্ধকে তুলে দিয়েছে সবটুকু। সেখানেই বিবেক বিবর্জিত ব্রাক্ষণ থেমে যায়নি, নিজের সমগ্র পরিবার নিয়ে উঠে এসেছে গঙ্গাচরণের বাড়িতে। তবুও অনঙ্গ বউ অবিচল।
ক্ষুধা মানুষকে দিয়ে কি করাতে পারে? কোথায় নামাতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে পেটে আহার ভরা কোন দার্শনিককে করে কখনো সত্যিটা জানা যাবে না, দেখা যাবে না। জানতে হলে প্রশ্নটা কতে হবে কোন ক্ষুধার্তকে কিংবা অশনি সংকেত উপন্যাসটি পড়লে আমরা সেই নিষ্ঠুর সত্যটা মানসপটে চাক্ষুস দেখতে পাবো। শুধু দুটো গরম ভাতের জন্য কাপালীদের ছোট বউ যখন নিজের শরীর অন্য পুরুষের কাছে বিলিয়ে আসে তখন জানা যায় ক্ষুধার প্রকৃত সংজ্ঞা।
ব্যক্তিগত অভিমতঃ
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় দুই বাংলা শ্রেষ্ঠ উপন্যাসিক। যাকে আজ পর্যন্ত কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। কারণ সম্ভবত বিভূতিভূষণ একমাত্র সাহিত্যিক যিনি একই সাথে দুইধারার উপন্যাস লিখেছেন। আরণ্যক, দৃষ্টিপ্রদীপ, অপারিজত লিখে উনি সাহিত্যের সমৃদ্ধির সম্যক রূপ উনি পাঠকদের সামনে দাড় করিয়েছেন আর আদর্শ হিন্দু হোটেল, চাঁদের পাহাড়, অশনি সংকেত রচনা করে উনি বাংলা ভাষায় প্রাঞ্জল সাহিত্যের জন্ম দিয়েছেন।
অশনি সংকেত উপন্যাস তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। আর সেটা বাংলা সাহিত্যের দুর্ভাগ্য। তবে এই অসম্পূর্ণ উপন্যাসটিতে পাঠক দুর্ভিক্ষের জীবন্ত রূপ দেখতে পাবেন আর দেখতে পাবে মনুষ্যত্বের গভীরতা। সুখী হবার জন্য রোজ আমরা মরীচীকার পিছনে ছুটে চলেছি। কিন্তু বিশ্বাস আর ভালোবাসা থাকলে এক মুঠো ভাত দুজনে ভাগ করে খাওয়ার মাঝেও সুখ আছে, তৃপ্তি আছে। যেখানে মমতা থাকে সেখানে নিজে না খেয়ে অন্যের প্রশান্তি মুখের অন্নের গ্রাস তুলতে দেখে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুখ খুঁজে পাওয়া যায়। কোন অশনি সংকেত, কোন দুর্ভিক্ষ সেই সুখ কেড়ে নিতে পারে না।
২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১৮
আর্য্য মিঠুন বলেছেন: Click This Link
৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৩
শূণ্য পুরাণ বলেছেন: বইটি পড়িনি, তবে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমাটা দেখেছি, দেখেছি এক দুর্ভিক্ষপীড়িত পরিবারের অসহায়ত্ব অার মূল্যবোধের চলচ্চিত্র রুপায়ন।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৬
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: পিডিএফ ভার্সণ কি বের হয়েছে?
হয়ে থাকলে লিংক দেন।
জানেন ত’
ডিজুস জেনারেশনের এসমস্ত কাগজের ইতিহাস-পাতিহাস পড়ার সময় কই। মোবাইলে স্কিন টাচ করতে করতেই জান শেষ।