![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফুল বাণিজ্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনা
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করে ফুল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চাষী ও ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, ফুল সংরক্ষণে আধুনিক ব্যবস্থা ও ফুলের উন্নত জাত ও মান উন্নয়নে গবেষণা জোরদার করতে হবে। এছাড়া বিদেশে বাজার তৈরিতে সহযোগিতা করতে হবে।
অপার সৌন্দর্যের প্রতীক এই ফুল। প্রিয়ার মান ভাঙ্গাতে চাই ফুল, ভালবাসতেও চাই ফুল। কোন অনুষ্ঠান, উত্সব-পার্বণ সে-তো ফুল ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। কবিরা এই সৌন্দর্যের প্রতীক ফুল নিয়ে যে কতশত কবিতা লিখেছেন তার হিসাব নেই। কবি নজরুল লিখেছেন, ‘আমি কবি, তাই আঘাতও করি ফুল দিয়ে।’
যে ফুল নিয়ে এত গুণকীর্তন কাব্যে, সাহিত্যে-তারই বাণিজ্যিক গুরুত্ব নিয়ে অপার সম্ভাবনা দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ফুল রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করে ফুল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চাষী ও ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, ফুল সংরক্ষণে আধুনিক ব্যবস্থা ও ফুলের উন্নত জাত ও মান উন্নয়নে গবেষণা জোরদার করতে হবে। এছাড়া বিদেশে বাজার তৈরিতে সহযোগিতা করতে হবে।
দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষে পথিকৃত হচ্ছে যশোর জেলা। এছাড়া ঝিনাইদহ, সাভারসহ কমবেশি ১৯টি জেলায় ফুলের চাষ হয়। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর, খাদ্যশস্য উইংস ঢাকা খামারবাড়ির তথ্য মতে, সারাদেশে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুল ও বাহারি গাছের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে এক হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষ হয়। এর সিংহভাগই হয় যশোর জেলায়।
রাজধানীতে ফুলের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দুটি পাইকারীবাজার। শাহবাগ ও ফার্মগেটে প্রতিদিন রাত ৩টা না বাজতেই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই বাজারে ফুল আসতে শুরু করে। সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে এই বাজারের কার্যক্রম।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজার দুটি ফুলে ফুলে সয়লাব। গোলাপ, রজনীগন্ধা থেকে গাঁদা, গ্লাডিওলাস, অর্কিড, কামিনী, পাতালহর, বকুল, দোঁলনচাপা, পদ্ম, জিপসিসহ আরো কত ধরনের বাহারী ফুলের সমারোহ। রাজধানী ও রাজধানীর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুল ব্যবসায়ীরা এসেছেন ফুল কিনতে।
শাহবাগ মার্কেটের ফুল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, ‘কৃষকরা আমাদের কাছে ফুল পাঠিয়ে দেয়। আমরা বিক্রি করে কমিশন রেখে তাদের টাকা পাঠিয়ে দেই। আবার অনেক কৃষক আমাদের কাছ থেকে আগে থেকেই দাদন নিয়ে ফুল চাষ করে।’
এই বাজারের আরেক ফুল ব্যবসায়ী জাভেদ বলেন, ‘অনেক সময় এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করি। কিন্তু তাদের সুদের হার বেশি হওয়ায় পোষায় না। সরকার আমাদের কম সুদে ঋণ দিলে ব্যবসাটা দাঁড়াতো।’
সারাবছর ফুল চাষ করা হলেও শীত মৌসুমেই ফুলের বাজার জমে ওঠে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন ফুলের চাহিদা কম। তাই ব্যবসা ভালো না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বাবুল প্রসাদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ফুল চাষী ও ব্যবসায়ীরা নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফুল ব্যবসার জন্য স্থায়ী কোন বাজার নেই। সিটি কর্পোরেশনের কাছে বার বার আবেদন করেও বাজারের জন্য কোন স্থান বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘ভারতে ফুল চাষের জন্য কৃষকরা ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পান। কিন্তু আমরা কোন ঋণই পাই না। অথচ আমাদের চাষীরা খুবই গরীব।’
আমদানি রফতানি দুই-ই হচ্ছে
বর্তমানে দেশের উত্পাদিত ফুল দুবাই, কাতার ও কুয়েতে রফতানি হচ্ছে। তবে তা খুবই অল্প পরিমাণে। রফতানিকৃত ফুলের মধ্যে রয়েছে রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস ও গোলাপ। বর্তমানে ফুল রপ্তানির জন্য কোন নীতিমালা না থাকায় পানের সাথে তা রফতানি করা হয়।
এদিকে চীন, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে ফুল আমদানিও করা হচ্ছে। অথচ দেশে ফুল চাষের প্রতি জোরালো নজর দিলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পুরোপুরি মিটিয়ে বিদেশেও আরো অনেক বেশি পরিমাণে রপ্তানি করা যাবে।
ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বাবুল প্রসাদ বলেন, ‘নেদারল্যান্ড তাদের রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ পায় ফুল রফতানি থেকে। এটা আমরাও পারব। এজন্য ফুল চাষে আমাদের আরো আধুনিক হতে হবে। এছাড়া সংরক্ষণ ও পরিবহনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, বিদেশে রপ্তানি ছাড়া শুধু দেশের বাজারের উপর নির্ভর করে ফুল চাষিরা টিকে থাকতে পারবে না।
ফুলের রাজধানী গদখালী
যশোর অফিস থেকে আহমেদ সাঈদ বুলবুল জানান, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকায় যত দূর চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। যেন ফুলের কোনো স্বপ্নিল রাজ্য। সূর্যের মতো আবিরের রঙ মেখে ফুটে রয়েছে জারবেরা। শরতের কাশফুলের সাথে পাল্লা দিয়ে শত শত গোলাপকলি পাপড়ি মেলে রয়েছে।
এই এলাকার ২০টি গ্রামে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। বছরে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদিত হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৫ হাজার কৃষক। আর এ ফুলকে কেন্দ্র করে সারাদেশের ১০ লাখ লোক ফুল বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সরেজমিন গদখালী ফুলের হাট ঘুরে দেখা যায়, গ্লাডিওলাস, গোলাপের পাহাড় জমে রয়েছে। পাতলা পলিথিনের আবরণ দিয়ে জড়িয়ে রাখা হয়েছে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি, মেরুন, গোলাপিসহ হরেক রঙের জারবেরা। হলুদ গাঁদার স্তূপ পড়ে রয়েছে হাটের কিনারে। নছিমন, করিমন, ভ্যান, পিকআপ, বাসের ছাদে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে হাটে পাইকারি হিসেবে ১০০ রজনীগন্ধার ডাটা বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রকারভেদে ৭শ’ থেকে ৯শ’, গোলাপ ৮০ থেকে ১শ’, গাঁদা প্রতি হাজার ৪০ থেকে ৫০, জারবেরা প্রতিটি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা। ফুলচাষিরা জানান, শীত মৌসুমে বাজার চাঙ্গা থাকে। বর্ষায় বাজার পড়ে যায়।
বিস্তৃত হচ্ছে ফুলের চাষ
আমাদের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি বিমল সাহা জানান, যশোরের ফুল চাষ এখন ঝিনাইদহ জেলাতেও বিস্তৃৃত হয়েছে। এই জেলায় গাঁদা ফুলের চাষ বেশি হয়। তবে পশ্চিমের জেলাগুলোতে ফুলের রাজ্য যশোরের চৌগাছা উপজেলা। এ উপজেলার পানিসরা গ্রামে প্রথম ফুল চাষ শুরু করেন শের আলি নামে এক চাষি। তার দেখাদেখি ফুলের চাষ অন্য গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম শুরু হয়েছিল রজনীগন্ধার চাষ। এরপর আরো নানা প্রজাতির ফুলের চাষ শুরু হয়।
ঝিনাইদহ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় বর্তমানে প্রায় ১২শ’ বিঘাতে ফুলের চাষ হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলা ও দামুড়হুদা উপজেলাতেও গাঁদা ফুলের চাষ হয়। এ জেলায় প্রায় ৮শ’ বিঘাতে ফুল চাষ হচ্ছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঘিঘাটি গ্রামের বড় ফুল চাষি আব্দুর রাজ্জাক জানান, ১৯৯০ সালের দিকে কালীগঞ্জ উপজেলাতে গাঁদা ফুলের চাষ শুরু হয়। এরপর ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ১৭টি এবং শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের ৭টি গ্রামে গাঁদা ফুলের চাষ হচ্ছে। তিনি জানান, এক বিঘাতে গাঁদা ফুল চাষে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর ফুল ভাল হলে এক লাখ টাকা বিঘা প্রতি আয় হয়। তবে এখন বাজার ভালো না।
কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, ঘিঘাটি ও পাতবিলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে ফুলের ভারে নুয়ে পড়ছে গাছগুলো। চাষিরা জানায়, ফুল তুলে হাটে নিয়ে বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে। তারা ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছে। গত ৪ মাস ধরে গাঁদা ফুলের দর পতন চলছে বলে চাষিরা জানান।
পাতবিলা গ্রামের চাষি সাবদার হোসেন জানান, এক আঁটি ফুল মাত্র পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক আঁটি ফুল তুলে হাটে নিতে কমপক্ষে ১৫ টাকা খরচ হয়। এতে চাষি ফুল ক্ষেত থেকে তুলছে না। অনেক ফুল ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ ফুল তুলে ক্ষেতের ভিতর ফেলে দিচ্ছে। অথচ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে তা নষ্ট হতো না।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারীরা এসে এখান থেকে ফুল নিয়ে যায়।
সাভারেও ব্যাপকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে
সাভার থেকে স্টাফ রিপোর্টার তুহিন খান জানান, সৌখিন উত্পাদনকারীদের গন্ডি পেরিয়ে গোলাপ ও গ্লাডিওলাস এখন সাভারে ব্যবসায়ীদের হাতে লাভজনক পণ্য হিসেবে বেশ সমাদৃত হয়ে উঠেছে। এ ফুলের চাষ করে আজ অনেকেরই ভাগ্য বদলেছে। কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই সাভারের ১৪টি গ্রামের শতাধিক চাষি ৩’শ’ একর জমিতে এ ফুলের চাষ করছে। আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা ও সহযোগিতা পেলে তারা তাদের উত্পাদিত এ ফুল বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে।
সূত্র
২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৪৮
মোঃ আসাদুল ইসলাম বলেছেন: কবি বলেছেন, ‘আমি কবি, তাই আঘাতও করি ফুল দিয়ে’
৩| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০০
ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন: কিছুদিন ফুলের ব্যবসায়িদের সাথে ওঠা বসা ছিলো, আপ্নের পোষ্ট পইড়া ব্যাপার গুলো ঝালায়া নিলাম । প্রফাইল পিকচার সুন্দর হইছে !
পোষ্টে পেলাচ।
৪| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:৪৭
মোঃ আসাদুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ঘুড্ডির পাইলট। আপ্নের প্রফাইল পিকচারটা দেখে ছোট্ট বেলার কথা মনে পড়ল.....
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৩১
রাজামশাই বলেছেন: ফুল ভালা পাই