![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অতি বিরক্ত হয়ে আমার অনেক লিখাই ড্রাফটে নিয়েছি কারন সামুতে আমার কিছু ভাবনা শেয়ার করছি, আর এ ভাবনা গুলো আমার অনুমতি ব্যাতিরেকে কপি না করার অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু যত্রতত্র আমার লিখার কপি পেস্ট দেখেই যাচ্ছি দিনের পর দিন।
এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা নিয়ে অনলাইন গরম। কেউ মা'কে দোষারোপ করছে কেউ বউকে। আর কেউ অভাগা পলাশকে দোষ দিচ্ছে। অনেকটা শাবানা জসিমের বাংলা ছবির মতো, "মা বড় নাকি বউ বড়" টাইপের অবস্থা। তাহলে দোষী কে?
আমি বলবো আমরা সবাই দোষী। এ সমাজ, এ সংস্কৃতি, আমাদের মানসিকতা, আমাদের অশিক্ষা, আইন, রাস্ট্র, অধিকারবোধ...... অনেক অনেক কিছুই দায়ী পলাশের আত্মহননের পিছনে।
সংসারের এ ধরনের দড়ি টানাটানিতে সাধারনত ঘরের দূর্বল পার্টি মরে। আর আমাদের দেশে যেহেতু মেয়েদের দাম রাস্তার কুকুর বিড়ালের থেকেও কম তাই বউটাই মরে বা মেরে ফেলা হয় সাধারনত। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে প্রায় ৭০% মেয়ে ইন্টিমেট পার্টনার দ্বারা ডমিস্টিক ভায়োলেন্সের স্বীকার। কি আমি মিথ্যে বলছি?? নীচে ইউএন এর রিপোর্টটা পড়ে দেখুন তাহলে....
তাহলে এক্ষেত্রে পলাশ কেন মরতে গেল? সে কি দূর্বল পার্টি??
আমি বলবো, হাঁ। সেই সবচেয়ে দূর্বল ছিল তাঁর সংসারে। যতটুকু পড়েছি বাবাহারা ছেলেকে মা অনেক কষ্টেই বড় করেছে। যার কারনে ছেলের প্রতি মায়ের অধিকার ও প্রত্যাশা ছিঁল আকাশচুম্বী। ছেলে শুধুই আমার , কাউকেই ভাগ দিবো না.... এমন একটা মানসিকতা হয়তো ছিল সবসময়ই।
তারপর যখন অসামান্য সুন্দরী বউ ঘরে আসে এবং স্বাভাবিক ভাবেই ছেলে নতুন বউকে সময় ও ভালোবাসা দিতে শুরু করে তখনই মায়ের মনে ছেলে হারানোর ভয় কাজ করে। এই বুঝি ছেলেকে বউ কব্জা করে ফেললো, এ বুঝি ছেলে আর আমাকে সহ্য করতে পারবে না, এই বুঝি ছেলে আমার পর হয়ে গেল ........ এরকম অসংখ্য ভয় এর জন্য মা এই সুন্দরী বউকে ডাইনী ভাবতে শুরু করে। আর নিজের অজান্তেই ছেলের বউকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে তাকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায় তার সব কুটকৈাশল প্রয়োগ শুরু করে।
আমাদের দেশে অধিকাংশ পরিবারের এরকম জটিল সমীকরনে বউটাকে আগুনে নিক্ষেপ করে। হয় মেরে ফেলে অথবা আধা মরা অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখে। এর বিপরীতও আছে, যেখানে বউ থাকে শক্তিশালী। তখন সেখানে শাশুড়িরা হয় নির্বাসিত। কপাল ভালো থাকলে আশ্রয় হয় অন্য ছেলের বাড়িতে, নতুবা বৃদ্ধাশ্রমে। আর কপাল খারাপ থাকলে হয় স্টোররুমে কাজের মেয়েদের সাথে।
কেন আমাদের সমাজে এরকম ঘটনা দেখা যায় ঘরে ঘরে? ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ.......... এগুলো আমাদের কাহিনী। তাহলে পশ্চিমা বিশ্বে কেন ঘটে না এমন কিছু? ইন্টিমেট পার্টনার দ্বারা ডমিস্টিক ভায়োলেন্স এখানে খুব কমন কিন্তু বউ শাশুড়ি/ননদ এর যুদ্ধ তেমন শুনিনি। কেন আমাদের দেশে কমন আর পশ্চিমা বিশ্বে আনকমন? কারনগুলো আমার মতে;
- এখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বা individualism এ বিশ্বাসী। বাব-মা, ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী.... কেউ কারো ধার ধারে না। যার যার জীবন তার তার। নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব একান্তই নিজের। এরা "নিজে বাঁচলে বাপের নাম" এ বিশ্বাসী। যার কারনে ছেলের সংসারে এরা থাকেও না, নাক ও গলায় না। তাই তাদের মাঝে কোন কনফ্লিক্ট নেই।
- সন্তানদেরকে সম্পদ ভাবা। যেহেতু আমরা জীবন দিয়ে বাচ্চাদেরকে মানুষ করি, তাদের জন্য পুরো জীবন সেক্রিফাইস করি তাই তাদেরকে আমাদের সম্পত্তি ভাবি। বা বলা যায় সন্তানদেরকে আমরা আমাদের ভবিষ্যত বিনিয়োগ ভাবি। আমরা ভেবে নেই ওদের জীবন গড়ে শেষ বয়সে পায়ের উপর পা তুলে ওদের সংসারে বাকি জীবন কাটিয়ে দিবো। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে সন্তানদের পিছনে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়ার নজির খুব কম। যার কারনে কনফ্লিক্টও নেই।
- ক্ষমতার দ্বন্দ: ছেলের সংসারে যখন বউ আসে তখন পুরো পরিবার তাকে প্রতিপক্ষ মনে করে। মা মনে করে ছেলের বউকে প্রথম থেকে টাইটে না রাখলে সে সংসারে কর্ত্রী হয়ে তাকেই লাথি দিবে। সারাক্ষনই ক্ষমতার হারানোর আশংকা থেকে যুদ্ধ শুরু করে। আবার ছেলের বউও ভাবে, বহুততো ছেলের উপর ছড়ি ঘুরাইছো, এবার ক্ষ্যামা দাও এখন আমার পালা। তাই শুরু হয় দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দ।
- সন্তানদের সংসারে নাক গলানো: আমাদের বাবা-মা মনে করে সন্তানদের সংসারে নাক গলানো তাদের অধিকার। আমরাই তোর জন্ম দিয়েছি তাই তোর সবচেয়ে ভালো আমরাই চাই। এই ভালো চাওয়া চাওয়ি এর চাপ থেকে শুরু হয় সব বিষয়ে নাক গলানো আর বিভিন্ন মহলে দ্বন্দ। তারপর সে দ্বন্দে সামিল হয় ভাই বোন খালা বোনের বান্ধবী................। কেউই কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। পশ্চিমা বিশ্বে অন্তত অন্যের সংসারে কেউ নাক গলায় না তাই কনফ্লিক্টও হয় না।
- ব্যালেন্সিং এ ব্যার্থতা: যেহেতু সংসারে ছেলেকে ঘিরেই মা আর বউ এর দ্বন্দ তাই ছেলের বা স্বামীর প্রত্যক্ষ ভূমিকাই মূখ্য। মায়ের স্থান মায়ের, বউ এর স্থান বউ এর, এ দুই সম্পর্কের সীমারেখা তাকেই টানতে হবে। এ দু'টো সম্পর্ককে কোনভাবেই এক পাল্লায় মাপা যাবে না। যত সুন্দরভাবে এ সম্পর্কের ব্যালেন্স সম্ভব তত সুন্দরভাবে জীবন কাটানো সম্ভব। অনেকে এরকম সম্পর্কের দ্বন্দ থেকে পালিয়ে বেড়ায়। কিন্তু পালালে কি সমস্যার সমাধান হবে? না, কখনই হবে না। সমস্যার সমাধান করতেই হবে সেটা যতই তিক্ত হোক। নতুবা পলাশের মতোই নি:শেষ হতে হবে।
লিখাটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে তাই আর না বাড়াই। শুধু এতটুকু বলি, একটি মেয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে নতুন একটি পরিবারে বউ আসে। তাকে আপন করে নেয়ার দায়িত্ব সে পরিবারের। আমি এতটুকু অন্তত বুঝি, ভালোবাসা দিলে ভালোবাসা পাওয়া যায়। একটি পরিবারে মা যদি তার "মা" এর স্থান থেকে ছেলের বউকে পরিবারের একজন মনে করে কাছে টেনে নেয় সে বউটি কখনই সে মা'কে দূরে ঠেলে দিতে পারে না। কিছু ব্যাতিক্রম হয়তো আছে কিন্তু বেশীরভাগেই দেখেছি কনফ্লিক্টটা শুরু হয় যখন ছেলের বউকে প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করে শাশুড়ি।
ভালো থাকুক ওপারে পলাশ সাহা। ভালো থাকুক মা ও ছোট্ট বউটি।
সোহানী
কানাডা
মে ২০২৫
UN 2024 Repot
২| ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: কে দোষী মা না বউ? এটা খোজ করা এখন বোকামি।
কেউ শখ করে আত্মহত্যা করে না। প্রতিটা আত্মহত্যাই আসলে হত্যা।
অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।
দায়ী যদি কাউকে করতে হয়, তাহলে দায়ী করতে হবে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:১৮
মোঃ মঈনুদ্দিন বলেছেন: আসসালামু আলাইকুম, আপা, আপনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু, বাস্তবতা হলো ভারতীয় উপমহাদেশে আমরা প্রায় সবাই একই। একজন নারী তিনি মহীয়সী মা, স্ত্রী, শাশুড়ী, দাদী, নানী, চাচী, খালা, ফুফু, মামী, কণ্যা, ননদ, ঝাঁ, বান্দবী, কুটনি প্রতিবেশি সব রুপেই রয়েছেন। যদি তাঁরা তাদের সকল রুপ এবং তাদের অবস্থা বুঝতে পারে তাহলে এতোসব ঘটনা ঘটতো না। এই একজন মা যখন শাশুড়ী হয়ে যান তিনি তার মায়ের চরিত্র ভুলে যান। ওই একই মেয়ে যখন কারো পুত্রবধু হয়ে যান তখন তিনিও ভুলে যান তিনি অন্য কোন ছেলের মায়ের সাথে কীভাবে ডিল করতে হবে। এভাবেই নানা জঠিলতার আবর্তে সব গুলিয়ে যায়। তৈরি হয় নানা অন্তর্ঘাত! যার পরিণতি অপঘাত, অপমৃত্যু!