নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উর্বর মস্তিষ্কের কার্যকলাপে জবাবদিহি করতে বাধ্য নহে।

ছোট সাহেব

উর্বর মস্তিষ্কের কার্যকলাপে জবাবদিহি করতে বাধ্য নহে।

ছোট সাহেব › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেক্যুলার হেজেমনি ও আওয়ামী শাসনের পুনর্জন্ম: এক ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:১০

১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দৃশ্যপট বেশ পরিবর্তিত হলেও, সাংস্কৃতিক প্রভাবের দিক থেকে তেমন কোনো বিপ্লব ঘটেনি। এই সময়ে, রাজনৈতিক ক্ষমতা বিভিন্ন হাত বদল করলেও, সেক্যুলার ও প্রগতিশীলদের সাংস্কৃতিক প্রভাব এবং আধিপত্য অটুট ছিল। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্ষমতা সেই সময়ের জন্য ক্ষীণ হয়ে গেলেও, তাদের আদর্শ ও সংস্কৃতি বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এর পেছনে কাজ করেছে সেক্যুলার ধারার চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা, যারা বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বজায় রেখেছিল।

১৯৯৬ সালে, মাত্র ২১ বছরের মাথায়, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে। এটি ছিল এক ঐতিহাসিক পুনরাগমন, যার পেছনে সেক্যুলার ধারার দীর্ঘমেয়াদী সাংস্কৃতিক প্রভাবের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। ক্ষমতায় ফিরে আসার পর আওয়ামী লীগ একদিকে দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেয়, অন্যদিকে তার শাসন ব্যবস্থার মধ্যে আবারও ঐতিহাসিক 'আওয়ামী শাসন' এর পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। সেই পুনরাবৃত্তির উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায় ২০০৯ সালে পিলখানা ট্র্যাজেডি, যেখানে দেশের জনগণ এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। অনেকের মতে, এই ঘটনা ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছিল, যা মানুষের মনে তীব্র দুঃখের ছাপ ফেলে।

শেখ মুজিবের আমল থেকে শেখ হাসিনার আমলে আবারও 'আওয়ামী শাসন' মানুষের সামনে হাজির হয়। এই শাসন চলাকালীন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের নাম করে একটি নতুন ধরণের রাজনৈতিক খেলা শুরু হয়। বিচারপ্রক্রিয়াকে ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়, যা সমালোচকদের চোখে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখা দেয়। অনেকের মতে, এটি বিচার থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

এরপর আসে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা, যা জাতীয় ইতিহাসের একটি বিতর্কিত অধ্যায়। সরকার সেই সময় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা অনেকের মতে একটি গণহত্যার শামিল ছিল। এই ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অনেক রাজনৈতিক দল এবং ইসলামপন্থী সংগঠন সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এই সময় থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের প্রভাবের বিষয়টি আরও বেশি করে আলোচনায় আসে। বলা হয়ে থাকে, শেখ হাসিনার আমলে ভারত কার্যত একটি প্রক্সি শাসন পরিচালনা করে, যেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকার পেছনে ভারতের কৌশলগত স্বার্থ কাজ করে। এমন অবস্থায় সেক্যুলারদের সেই সাংস্কৃতিক আধিপত্য এবং ভারতীয় সমর্থন মিলে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে ভিন্ন আকার দেয়।

এই সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও প্রভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিল ২০২৩ সালের জুলাইয়ের আন্দোলন, যা ছিল সেক্যুলারদের সেই দীর্ঘদিনের প্রভাবের প্রতিরোধ। এই আন্দোলনে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি স্বতন্ত্র চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠা করা, যা বহিরাগত প্রভাবমুক্ত। তবে, আশঙ্কার বিষয় হলো, আন্দোলনের নেতৃত্বের একটি অংশ, বিভিন্ন কারণে, আবারও সেই পুরোনো সেক্যুলার হেজেমনিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। তারা গণমানুষের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে, সেক্যুলার চিন্তাধারার সাথে আপস করতে চায়, যা একটি বড় ধরনের ঐতিহাসিক ভুল হিসেবে চিহ্নিত হয়।

এই ঐতিহাসিক ভুলের মাশুল হয়তো কেবল রাজনৈতিক দল নয়, বরং পুরো সমাজকেই দিতে হবে। কারণ, যখন গণমানুষের চাওয়া-পাওয়াকে উপেক্ষা করে, অন্যের মন যুগিয়ে চলার চেষ্টা করা হয়, তখন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে এবং সামাজিক বিভাজন বৃদ্ধি পেতে পারে। ইতিহাস সাক্ষী, সাংস্কৃতিক আধিপত্যের মাধ্যমে যারা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছে, তারা চিরকাল টিকে থাকতে পারেনি। বরং এর প্রতিরোধে বহু আন্দোলন এবং গণজাগরণ হয়েছে।

সেক্যুলার ও প্রগতিশীলদের সাংস্কৃতিক আধিপত্য যতদিন ধরে টিকে থাকবে, ততদিনই বিভিন্ন রূপে ফিরে আসবে 'আওয়ামী জাহেলিয়াত'। কখনও এটি সরাসরি ক্ষমতায়, কখনও ছায়া থেকে প্রভাব বিস্তার করে, মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব তৈরি করে, যা দেশের সংস্কৃতিকে ব্যাহত করে। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে, গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে এবং সেখান থেকেই ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণ করতে হবে। দেশের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক মুক্তি তখনই সম্ভব, যখন সমাজের প্রতিটি স্তরে একটি গণমুখী চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠা করা যাবে।

এই পথেই সম্ভব, দেশের জন্য একটি স্থিতিশীল এবং সার্বভৌম সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা করা, যেখানে কোনো বাহ্যিক প্রভাব বা সংস্কৃতির চাপ থাকবে না। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেই নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত হতে পারে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.