![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিছানায় শুয়ে,টেবিলে বা মেঝেতে বসে,ডায়েরীতে যেটা লেখেন, সেটা নিজের জন্য ইচ্ছেমত লেখা। যখনই অন্যকে দেখাতে যাবেন,সেটা অন্যের জন্য লেখা, যেক্ষেত্রে অন্যের রুচিটাকে প্রাধান্য দিতে হয়।
১.
অনিক সরকার চেয়ারে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন বেশ আয়েশ করেই। চিনি একটু বেশী হয়েছে, তবে খারাপ লাগছেনা। চা-পানের আনন্দকে তুমুল করার জন্য সিগারেট ধরানো আবশ্যক। সামনে বসে থাকা বুড়োমতন লোকটির কারণে অস্বস্তি লাগছে। তিনি কেনই বা দেখা করতে এসেছেন, সেটাও স্পষ্ট না। তবে স্পষ্ট হবে। হাতে সময় আছে ।
- কিছু মনে করবেন না । সিগারেট এর অভ্যাস আছে? অনিকের বিনয়ী প্রশ্ন।
- না করিনা। তবে আপনি চাইলে খেতে পারেন।
“ আমি স্মোক করি ,কিভাবে জানলেন”- এ জাতীয় কথা বলে অনিক সময় নষ্ট করলেন না। ধীরে সুস্থে দুটো লম্বা টান দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
- আপনার নামটা জানতে পারি?
- নিশ্চই। আসগর আলী।
- কী করেন?
- আগে হাইস্কুল শিক্ষক ছিলাম। চাকরী চলে গেছে তাই টিউশন করাই।
- ছেলে মেয়ে?
- বউ নেই। বাচ্চা আসবে কোত্থেকে?
- কেন? বিয়ে করেন নি?
- করেছিলাম। দু বছরের মাথায় বিচ্ছেদ। আর ওদিকে পা বাড়াইনি।
- ও আচ্ছা। ভালোই তো। আপনি কী পড়াতেন?
- পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন- এগুলোই। বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলাম।
- আমার কাছে কেন? রসায়ন পড়াবেন?
হাল্কা রসিকতা করলেন অনিক। কেন করলেন, তা তিনি জানেন না। হয়তো একটু আনন্দের জন্য।
- তার দরকার দেখছি না। আপনি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে গ্রাজুয়েশন করেছেন। আপনাকে রসায়ন পড়ানোর যোগ্যতা আমার নেই।
অপ্রত্যাশিত কঠিন জবাব।
- আমার সম্পর্কে জানলেন কী করে?
- আপনি যে চা স্টলে বসে চা খান, সেটাতে আমিও যাই। প্রায়ই আপনি বন্ধুদের সাথে গল্প করেন, সেগুলো শুনতে বেশ ভালো লাগে। বলতে পারেন এভাবেই জেনেছি।
- আচ্ছা বলুন, কী করতে পারি আপনার জন্য।
- আমি আপনাকে একটা ব্যাপার জানাবো। আপনি বলবেন এটা মানসিক সমস্যা কিনা।
- আচ্ছা, বলুন।
- আমি স্বপ্ন দেখি।
- সেতো সবাই দেখে। আমিও দেখি।
- স্বপ্ন দেখা শেষ হতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। মাথায় কড়া যন্ত্রণা করে। বাকি রাত দুচোখের পাতা এক করতে ভয় লাগে।
- ও আচ্ছা, ঘুমের সমস্যা। ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। দেখবেন স্বপ্নবিহীন প্রশান্তিদায়ক ঘুম হচ্ছে। সহজ সমাধান।
- সে চেস্টা করেছিলো। প্রথম কয়েকদিন বেশ ভালোই ঘুমিয়েছিলো। এরপর আবার সেই আগের মতোই অবস্থা। ঘুমোতে যাই, স্বপ্ন দেখি, ঘুম ভেঙে যায়। দিনে দু তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে কি আর বাঁচা যায় বলুন?
- আপনার স্বপ্নগুলো কি ধরণের?
- বিজ্ঞান বিষয়ক।
- যেমন?
- একরাতে স্বপ্নে দেখি, একটা সাপ নিজেই নিজের লেজ গিলছে। একপর্যায়ে প্রায় বৃত্তাকার হয়ে গেলো। শেষটা দেখার আগেই ঘুম ভেঙে গেলো। তারপর বাকি রাত একফোঁটা ঘুম হলোনা।
- শেষটা কি হতো বলে আপনার ধারণা? সাপটা অদৃশ্য হয়ে যেতো? কিছু মনে করবেন না, এই স্বপ্ন বিজ্ঞান বিষয়ক হলো কি করে ?
- কারণ এ স্বপ্নটা দেখেছিলেন কেকুল। তিনি বেঞ্জিনের স্ট্রাকচার মডেল দাঁড় করান এই স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে।
- ও, তাই? আপনার কি মনে হয় ? কেন স্বপ্নগুলো দেখছেন ?
- নিঃসঙ্গ মানুষ, দিনরাত বই গিলছি, সেগুলো নিয়েই ভাবছি। তাই বোধহয়।
- সমাধান তো নিজেই বের করেছেন। বই পড়া, ভাবাভাবি ছেড়ে দিন।
- তাহলে সময় কাটবে কি করে?
- বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটান। সবচেয়ে ভালো উপায় একটা বিয়ে করুন, সংসারী হোন।
- কেউ সময় দেয় না ভাই। সবাই মহা ব্যস্ত। আর বিয়ে করার মতো সামর্থ নেই।
- দুঃখিত আসগর সাহেব, এই মুহূর্তে আপনাকে সহায়তা করতে পারছি না। আমি সদ্য গ্রাজুয়েট, নিতান্তই অনভিজ্ঞ। তবে আপনার ঠিকানা দিয়ে যান। আমি আপনাকে স্যারের কাছে নিয়ে যাবো।
- অসংখ্য ধন্যবাদ।
- আরেক কাপ চা খাবেন?
- দিন। দুধ চা, চিনি বাদ।
আসগর সাহেব চা খেয়ে চলে গেলেন। ভুলবশত, কিংবা ইচ্ছে করেই ঠিকানা দিলেন না।
২.
ছয় মাস পার হয়ে গেছে। অনিক সরকার পুরোপুরি ভুলে গেলেন আসগর সাহেবের ব্যপারটা। চা স্টলে গেলেন চা খেতে।
- ভাই একটা দুধ চা দিন, চিনি বাদ
অনিক সরকার চমকে তাকালেন। না আসগর সাহেব নয়। তবে তার প্রচন্ড ইচ্ছে হলো মানুষটার একটা খোঁজ নিয়ে দেখতে। চা স্টলের মালিককে জিজ্ঞাসা করতেই ঠিকানা জানা গেলো।
আসগর সাহেবকে দেখে অনিক চমকে গেলেন। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে লোকটা। বোধয় খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। তবে চেহারায় আনন্দ। পাগল হয়ে যাননি তো আবার।
- আসগর সাহেব, কেমন আছেন?
- দারুণ আছি ভাই, এখন আর ঘুমের সমস্যা নেই। দিব্যি ঘুম হয়। স্বপ্ন এখনও দেখি। তবে, সেগুলো আগের মতো জ্বালাতন করে না। আসে এবং চলে যায়। ঘুম ভাঙার পর মজা পাই। স্বপ্নগুলোর কারণেই মজা পাই। এইতো গতরাতেই স্বপ্নে দেখলাম, গ্রহগুলো সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি দেখার পর স্বপ্ন পালটে গেলো। সূর্যের বদলে নিউক্লিয়াস চলে আসলো। গ্রহের বদলে ইলেকট্রন প্রোটন, তখন বুঝলাম এটা পরমানু। ঘুমটা খুবই ভালো হয়েছে ভাই। আরাম পেয়েছি। শুধু একটাই দুঃখ।
- কি সেটা?
- এই স্বপ্নটা নিলস বোরের। তিনি ধরেই নেন স্বপ্নটা বাস্তব। এই স্বপ্নের উপর ভিত্তি করেই দিনরাত এক করে তিনি পরমাণুর মডেল দাঁড় করান, তার রক্ত ঘাম করা পরিশ্রম বৃথা যায়নি, বিজ্ঞানী মহল তার পরমাণু মডেলকে স্বীকৃতি দিলেন। এই মডেলের জন্য তিনি নোবেল পান।
- দুঃখটা কিসের?
- নিজস্ব স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা করে, অন্যের স্বপ্ন না। ভাই, আমি কোনোদিন নিজের মতো করে একটা স্বপ্ন দেখতে পারবো না?
- বলতে পারছি না। তবে আমার অনুরোধ, এই জীবন পদ্ধতি পরিবর্তন করুন। নইলে প্রচন্ড অসুস্থ্য হবেন। মারাও যেতে পারেন।
- ভাই, যদি স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেই, তাহলে কি চিরকাল বাঁচবো?
২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৩
যায়েদ আল হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১১
তানজিম রহমান বলেছেন: ভাল লেখা। গল্প লেখা চলতে থাকুক।
৪| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২১
শোভন শামস বলেছেন: গল্প লেখা চলতে থাকুক।
৫| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৪
যায়েদ আল হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ। যদ্দিন পারি, চালিয়ে নেবো। নতুবা গল্প আমাকে চালিয়ে নেবে।
৬| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: গল্প লেখা বড় আনন্দের।
৭| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:২৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আমি নেওয়াজ আলি । আপনার গল্পে আসগর আলি
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৮
যায়েদ আল হাসান বলেছেন: সত্যি বলছেন? আপনার দেখা পরবর্তী স্বপ্ন টি জানার অপেক্ষায় রইলাম।
৮| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৬
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ভাল লেগেছে। শুভ কামনা।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৩
যায়েদ আল হাসান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।
৯| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩২
কল্পদ্রুম বলেছেন: লেখা ভালো লেগেছে। কনসেপ্টাও ইন্টারেস্টিং। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লেগেছে আসগর সাহেবের চিনি ছাড়া দুধ চায়ের মতো বিস্বাদ জিনিস খাওয়ার অভ্যাস।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৭
যায়েদ আল হাসান বলেছেন: আমার লেখা পড়ে আপনি আনন্দ পেয়েছেন, এটাই আমার কাছে পরশপাথর প্রাপ্তির সমান।
চিনি ছাড়া দুধ চা খেতে ভালো নয়, তবে অভ্যেস হয়ে গেলে অপুর্ব লাগে।
১০| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:২৬
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: স্বপ্ন নিয়েই মানুষ বাঁচে!
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৫৬
যায়েদ আল হাসান বলেছেন: তা বেশ বলেছেন মশাই। কেউ কেউ আবার স্বপ্ন দেখতে দেখতেই ফুস করে অন্যজগতে চলে যায়। কি অদ্ভুত কাণ্ড!
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৮
আমি সাজিদ বলেছেন: বেশ