![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“The worldly comforts are not for me. I am like a traveler, who takes rest under a tree in the shade and then goes on his way.” –[Tirmidhi]
ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ) তাঁর “আল ওয়াবিলু সাইয়িব” বই এ বেশ চমৎকার একটা কথা বলেন ।
.........প্রকৃতপক্ষে একজন বান্দা সালাতে খুশু বৃদ্ধি করতে পারবে যদি সে তার ইচ্ছা আকাংখা এবং প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । কিন্তু সে যদি প্রবৃত্তির দাশ হয়ে পড়ে এবং শয়তান তার অন্তরে বাসা বাঁধে তাহলে সে কি করে সালাতের সময় শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে নিজেকে রক্ষা করে সালাতে মনোযোগ দিবে?
মানুষের অন্তর সাধারনত তিন ধরনের হয় ।
১) অতিমাত্রায় কলুষিত অন্তর। কোন ভাল কিছু তো দূরের কথা এমনকি ঈমানের ছিটেফোঁটা পর্যন্ত এধরনের অন্তরে থাকে না। এই অন্তরগুলোতে শয়তানের হরদম আসা যাওয়া,এই অন্তরগুলোতে শয়তান তার নিজের বাড়ী বানিয়ে ফেলে । শয়তানের এই কলুষিত অন্তর গুলোতে কুমন্ত্রনা দেওয়ার কোন প্রয়োজনই থাকে না । এগুলো সে পুরো কব্জা করে নেয় এবং যা ইচ্ছা তাই করিয়ে নেয় অন্তরের মালিকদের দিয়ে ।
২) দ্বিতীয় প্রকারের অন্তরগুলো ঈমানের আলোয় আলোকিত। কিন্তু মাঝে মাঝে বা প্রায়শই অন্তরের মালিকদের তাদের প্রবৃত্তির আনুগত্য এবং আল্লাহ (সুবঃ) অবাধ্যতা বিশ্বাসের নূরকে ম্লান করে দেয় ।শয়তান মাঝে মাঝেই অন্তরে হানা দেয় এবং অন্তর কলুষিত করার সুযোগ পেলে তার সদ্ব্যবহার করতে ভুল করে না । এই প্রকারের অন্তরগুলোতে মাঝে মাঝেই ভয়াবহ টানাপোড়েন, দ্বিধা-দ্বন্দ সৃষ্টি হয় । কিছু অন্তর সচারচর শয়তানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন পূর্বক তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়, কিন্তু কিছু অন্তর প্রায়শই শয়তানের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেয় । আর কিছু অন্তরের মালিকদের শয়তানের বিরুদ্ধে জয় পরাজয় সমান সমান ।
৩) তৃতীয় প্রকারের অন্তরগুলো বিশ্বাসে পরিপূর্ণ । ঈমানের নূরে আলোকিত এই অন্তরগুলো কুপ্রবৃত্তি এবং কলুষতা থেকে মুক্ত হয়ে যায় । ঈমানের নূরগুলো যেন এক একটি অগ্নি শিখা। শয়তানের কুমন্ত্রনা এবং কুপ্ররোচনা এই অগ্নিশিখার মতো ঈমানের নূরে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যায় এবং অন্তরগুলো থাকে বিশুদ্ধ । পুরো ব্যাপারটার সঙ্গে সাদৃশ্য পাওয়া যায় নক্ষত্রের মাধ্যমে আকাশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সাথে । এই ব্যাপারটা জানেন নিশ্চয়ই । ফেরেশতাগন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কর্তব্য সমূহ মাঝে মাঝে প্রথম আকাশে এসে আলোচনা করেন । কিছু শয়তান এই খবর গুলো জানার জন্য যখনই গোপনে প্রথম আকাশে যায় তখনই একঝাঁক নক্ষত্র তাদের তাড়া করে এবং পুড়িয়ে ফেলে । যে মানবের খেদমতের উদ্দেশ্যেই এই মহাবিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি সেই মানবের, সেই মুমিনের চেয়ে আল্লাহর(সুবঃ) নিকট আকাশ কম প্রিয় হবে এবং আকাশের নিরাপত্তার চেয়ে মুমিনের নিরাপত্তা আল্লাহ্র নিকট বেশী প্রাধান্য পাবে এটাই স্বাভাবিক । আকাশ হল ফেরেশতাদের ইবাদাতের জায়গা, কুরআন নাজিলের জায়গা ( আল্লাহ প্রথম আকাশে কুরআন সংরক্ষন করেন এবং এখান থেকেই রাসূল (সাঃ) এর নিকট অল্প অল্প করে কুরআন নাযিল করেন ) এবং এখানেই রয়েছে আনুগত্যের রশ্মি । কিন্তু মুমিনের হৃদয় হল সেই মহামূল্যবান স্থান যা পরমযত্নে ধারন করে তাওহীদ, আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসা, মহানবী (সাঃ) এর প্রতি ভালবাসা, দ্বীনের জ্ঞান, বিশ্বাস । তাই এটা অস্বাভাবিক নয়, যে আল্লাহ (সুবঃ) খুব গুরুত্বের সঙ্গে এই হৃদয়গুলোর বিশুদ্ধতা রক্ষা করবেন এবং শয়তান দুর্বোধ্য ফাঁদ ফেলে অন্তরের বিশুদ্ধতা নষ্ট করতে চাইবে ।
এবার পুরো ব্যাপারটা একটা উদাহরণের সাহায্যে ঝালাই করে নেওয়া যাক ।
তিনটি বাড়ীর কথা চিন্তা করা যাক
১) বাদশাহর বাড়ীঃ সোনা দানা ধন সম্পদে পূর্ণ
২) সাধারন জনগণের বাড়ীঃ সোনাদানা বা ধন সম্পদ কিছুটা আছে কিন্তু বাদশাহর মতো অতোটা নাই
৩) ফকিরের বাড়ীঃ পুরো ফাঁকা । কিচ্ছু নাই
এই তিন বাড়ীর মধ্যে কোনটি চোরের নিকট বেশী প্রিয় হবে? ফকিরের বাড়ী ? ওখানে যেয়ে চোর কি চুরি করবে , বাড়ীতে তো কিছুই নেই ।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে একবার বলা হল, ইহুদীরা দাবী করে যে তাদের প্রার্থনার সময় শয়তান তাদের অন্তরে কোনরকম ওয়াসওয়াসা দিতে পারে না, তারা একাগ্রচিত্তে ইবাদাত করে । ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ ঠিকই তো আছে , শয়তান ওদের অন্তরে যেয়ে কি করবে ওরা নিজেরাই তো এক একটা শয়তানের মতো ।
চোর কি তাহলে রাজার বাড়ীতে চুরি করতে যাবে? রাজার অঢেল ধন সম্পদ, সোনা দানা রক্ষার জন্য এমন কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় যেন একটা মাছিও ফাঁক গলে প্রাসদের ভেতরে ঢুকতে না পারে । তার ওপর ধরা পড়লে আবার রয়েছে গর্দান হারানোর ভয় । চোর বাবাজী স্বাভাবিক ভাবেই রাজ প্রাসাদে চুরি করতে যাওয়ার দুঃসাহস দেখাবে না ।
সুতরাং চোরের চুরি করার মোক্ষম জায়গা হল সাধারণ জনগণের বাড়ী।
অনুবাদঃ আল মালহামা অনুবাদক টিম কতৃক অনূদিত
-- Click This Link
©somewhere in net ltd.