নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গান শুনতে ভালবাসি কিন্তু গান গাইলে সবাই পালায়। প্রেম করি কিন্তু প্রেমিকা নাই। লেখালেখি করি কিন্তু পাঠক নাই। আমি আছি কিন্তু কেউ নাই...

আসিফ বিন হোসেন

পনেরো হাজার পৃষ্ঠার একটা উপন্যাস লিখব! সেই উপন্যাসে তার নাম কোটিবার থাকবে! সেই উপন্যাসের নায়ক আমি আর নায়িকা সে!

আসিফ বিন হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমার ছবি আঁকা

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৯

একবার আমি তোমার ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি! আমার জানা মতে, প্রায় প্রত্যেক প্রেমিকই কোনও না কোনও এক সময় নিজের প্রেমিকার ছবি আঁকার চেষ্টা করে। তখন ছবি আঁকার জন্য আর্টিস্ট হতে হয় না। রং তুলির প্রয়োজন হয় না। একটা পাঁচ টাকার কলম অথবা একটা টু বি পেন্সিল হলেই চলে।

আমার কাছে পেন্সিল ছিল না। একটা কলম ছিল। তাও কালি অল্প! তোমার চেহারা আঁকতে ওই অল্প কালিই যথেষ্ট হবে। আমার ওই কলমটাতে যতটুকু কালি ছিল, ওতে তোমার শ'খানেক ছবি অনায়াসেই আঁকা যেত!

টেবিলে ফার্স্ট সেমিস্টারের অ্যাসাইমেন্টের জন্য মোটা কাগজ ছিল। অ্যাসাইনমেন্ট অনেক আগেই শেষ কিন্তু কয়েকটা পৃষ্ঠা বেঁচে গেছে।
পৃষ্ঠা গুলো, কলমটা নিয়ে খাটে এসে বসলাম। এমন অবসর রাত্রি বেলা আমার হয় গান শুনে কাটে নয়তো এডাল্ট সিনেমা। আজ এসবের কিচ্ছু ইচ্ছে করছে না। তোমার ছবি আঁকব, শুধু তোমার ছবি..
.

আমার ছবি আঁকার হাত ভালো না। ছোট বেলায় একবার আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। কিচ্ছু শিখতে পারিনি, এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি!
প্রাইমারিতে ড্রইং পরীক্ষাতে কখনও রঙের ব্যবহার করতাম না। একটা পেন্সিল দিয়ে আঁকা ওই গ্রামে ঘরবাড়ি স্কেচ করতাম। আমার চোখে ওই ছবি গুলো বেশ সুন্দর লাগতো। নম্বর অবশ্য ভালো পেতাম না। তবে ওই ছবিগুলি এঁকে আমার আত্মতৃপ্তি হতো...

বৃষ্টি হচ্ছে, বিদ্যুত চমকাচ্ছে, হঠাত্ তোমার কথা মনে পড়েছে আর আমি আবেগ প্রবণ হয়ে তোমার ছবি আঁকাতে বসে গেলাম, সিচুয়েশনটা ঠিক এমন না। অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম তোমার একটা ছবি আঁকা দরকার, তোমাকে উপহার কিংবা সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য না। নিতান্তই নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য। আর ভালোবাসা মানুষের ছবি আঁকার চেষ্টা করা, প্রেমিক প্রেমিকার একটা অসুখই বৈকি...

অনেকেই এরকম ছবি আঁকার চেষ্টা করে। কেউ হুবহু এঁকে ফেলতে পারে! তো কেউ শুধু পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা নষ্ট করে। আমি আবার ভেবে রেখেছিলাম, যদি দুই তিনবারে তোমার ছবি না আঁকতে পারি তাহলে চারুকলা বিভাগের এক বন্ধু আছে, আর্টিস্ট, দারুণ ছবি আঁকে, ওকে দিয়ে তোমার ছবি আঁকিয়ে নিব। ওকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমার একটা ছবি এঁকে দিবে কিনা। ও দুইশো টাকা দাবি করেছিল। শালা বন্ধুর ছবি আঁকাবে, তাই বলে টাকা নিবে! রাগ করে চলে আসি!

চারুকলার স্টুডেন্টের যে অবস্থা, ওই হিসেবে ওর দুইশো টাকা চাওয়া দোষের কিছু ছিল না। তবে আমি ভুল করেছি সেদিন চা আর একটা সিগারেট খাইয়ে দিলেই সে, আমার ছবি এঁকে দিত!

.

আলতো আলতো করে, ওই শক্ত কাগজে তোমার চোখ আঁকলাম, ঠোঁট আঁকলাম, নাক-কান চুল আঁকলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম, যদি পুরোপুরি তোমার ছবি আঁকতে পারি, তাহলে ছবিতে তোমার কপালে একটা টিপ এঁকে দিব!
কিন্তু ছবিটা এঁকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আমি কিছুক্ষণ!

ছবিটা যদি তোমার চেহারার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে আমি ধারের কাছেও আঁকতে পারিনি তোমাকে! ছবিটাকে ভীষণ রকমের জঘন্য মনে হল। এত খারাপ ছবি আঁকি আমি, বিশ্বাসই হচ্ছিল না! আমার আঁকা এই ছবিটা কিছুটা আমাদের বাসার দারোয়ান চাচার মতো মনে হল। আঁকলাম তোমাকে (ভীষণ সুন্দর একটা মেয়ে) কল্পনা করে, কিন্তু প্রতিফলন ঘটল দারোয়ান চাচার! নিজেকে নিজে গালি দেওয়া যায়?

আঁকতে আর ইচ্ছে করছে না। এমন জঘন্য কিছু আঁকার পরে, আঁকার ইচ্ছে মরে যাওয়াই উচিত! ভাবলাম, সকালে উঠে গিয়ে দারোয়ান চাচাকে ছবিটা দিয়ে আসবো। খুশি হবেন তিনি। বালিশের পাশে সব রেখে লাইটটা অফ করে ঘুমোতে গেলাম।

কিন্তু ঘুম আসে না। অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করলাম। আবার উঠে পড়লাম। ভীষণ বিরক্তি লাগছে। লাইট জ্বালিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মাত্র দশ মিনিট অতিবাহিত হয়েছে! বিরক্তিকর মূহুর্ত গুলো যেন যেতেই চায় না।
আবার কাগজ কলম নিয়ে বসলাম। মাঝখানে মুখে পানি দিতে গিয়ে বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গেলাম।

দ্বিতীয় বার আঁকতে আঁকতে লক্ষ করলাম, একটা দারুণ সুন্দরী মেয়ের ছবি এঁকেছি! কিন্তু এই মেয়েটা তুমি না। আমার ডিপার্টমেন্টের অবিবাহিত সুন্দরী এক ম্যাডাম! আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, কল্পনা করছি তোমাকে, আঁকছি তোমাকে কিন্তু কাগজে ফুটছে অন্য কারও চেহারা!

আমি পানি খেয়ে একটা বড় নিশ্বাস নিলাম। চোখ বন্ধ করে তোমাকে আবার কল্পনা করার চেষ্টা করলাম। মানুষ যখন কাউকে কল্পনা করার চেষ্টা করে, তখন সেই মানুষটার চেহারা আবছা আবছা হয়ে বন্ধ চোখের সামনে ভেসে উঠে। তোমার ঠোঁট, তোমার চোখ, তোমার চুল, তোমার হাসি, তোমার গলা আবছা আবছা হয়ে আমার চোখে ভাসতে লাগল!
তোমার হাসির শব্দও যেন শুনতে পেলাম। অনেকক্ষণ ধরে তোমাকে এভাবে কল্পনা করলাম!

আঁকতে আর অসুবিধে হল না। আমি যেন রীতিমতো ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছি তোমার ছবি আঁকাতে আঁকতে! সচরাচর নেশাটেশা করি না। মাঝে মধ্যে সিগারেটে দু একটা টান।
ছবিটা অল্পক্ষণের মধ্যেই একেবারে কমপ্লিট! তুমি যেন একটা মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছো! আমি তাহলে পেরেছি তোমাকে আঁকতে! আমি পেরেছি! রীতিমতো উল্লাস করতে ইচ্ছে করছে! চিত্কার করতে ইচ্ছে করছে!
.

আমি ছবিটা তোমার জন্য আঁকি নি। ছবিটা আমি আমার ডায়রির মধ্যে রেখে দিয়েছি। টাইটানিকের জ্যাকের মতো প্রেমিকার ছবি এঁকে প্রেমিকাকেই দিব না। মানুষ কখনও নিজের ছবি দেখে কারও কথা মনে করে না। তোমাকে যদি দিতেই হয়, তাহলে কোনও দিন, আমি আমার ছবি এঁকে তোমার উপহার দিব!

যাতে সেই ছবি দেখে আমার কথা মনে পড়ে তোমার। সঙ্গে আমার ওই ডায়েরিটাও তোমাকে হয়তো দিব। ওই ডায়েরির গল্পটা আবার আলাদা। এখন আর বলতে ইচ্ছে করছে না। অন্য একদিন বলব। আপাতত একটু অপেক্ষা করো। তবে, এই "অন্য একদিন" আদৌ কোনও দিন আসবে কিনা সেটা বলতে পারছি না... 

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৬

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: আমিও আঁকছি। কাগজ, কলম, খাতা, পেন্সিল কিছুই লাগে নাই।

পিকাসায় আর্ট ইফেক্ট মাইরা নিজের নামে চালাইয়া দিছি।

যাইহোক, লেখা লাগলো ভালই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.