নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

||--অজ্ঞাত সব লেখা--||

অজ্ঞাত লেখক

অবর্ণনীয় অবস্থা!

অজ্ঞাত লেখক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ১-৫ এর গল্প :D

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৮:৪২

আমার বয়স তখন হবে ৮-১০ এর মাঝামাঝি । মানে ৯,বুঝছেন ই তো তাও বুঝায় দিলাম । পড়ি তখন ক্লাস 4 এ। তার উপরে রোল ছিল ২,ছিলাম ক্লাস ক্যাপ্টেন । তখন অবশ্য ক্যাপ্টেন হবার কারণে বহুত গর্ববোধ করতাম । যাই হোক আসল কথায় আসি। ক্লাস ১-৫ পর্যন্ত মেয়েরা ছিল আমার চরম শত্রু। আমারে হয়রানি করার মাঝে ওরা যে কি মজা পাইত আমি বুঝতাম না । ক্লাস ২ তে থাকতে মাইর খাইছি অনেক মেয়েদের জন্য তাও প্রতিবাদ করিনাই কারণ প্রতিবাদ যে করা যায় তা আমার জানা ছিল না। এইটা ছিল আমার কাহিনীর মেইন থিম।



১৮ আগস্ট,২০০৪। দুপুর ২টা বেজে ৩০ মিনিট । একটুক্ষণের মধ্যেই ক্লাসে ধর্ম টিচার ঢুকলেন। (স্যারের নাম মনে নাই মাগার মাইরস এখনো মনে আসে......... মনে পরলেই,ইসসসস! আমার পাসারে!!! জ্বালাইয়া ফেলছিল বেটায়) এইদিন সবার পড়া ছিল পুরা ধর্ম বইয়ের অর্ধেক। ( সামনে পরীক্ষা তাই এত পড়া )



স্যার : সবাই পড়া শিখছ ত?



ছাত্রছাত্রী : কোন উত্তর নাই।



স্যার : কে কে পড়া শিখে আস নাই?



ছাত্রছাত্রী : একযোগে সব মেয়েছেলেরা দাঁড়ায় গেলাম।



স্যার : সজল যাও,বেতটা নিয়ে আসো।



আমি : জি স্যার!



( জীবনে প্রথমবার মাইরের ভঁয়ে শরীর ঘামায় গেল, কিন্তু এই ব্যাপার আরও ভয়াবহ হবে )



আমি বেত নিয়াসলাম । বাকি সব পোলাপান গুইলের মত ( গুইল means গুইসাপ) বড় বড় চোখ কইরা আমার দিকে তাকায় ছিল।



কিছুই করার নাই। এমনকি আমার ঐ সময়ের বেষ্ট ফ্রেন্ড পিয়াস ও চেইতা ছিল। আমি ছিলাম তৎকালীন ক্লাসের সবচেয়ে বলদ পোলা। হয়ত এজন্যই ভাবতাছিলাম যে বেত আইনা দেয়ার জন্য স্যার আমারে পিটাইবনা।



কিন্তু একি পোড়া কপাল! শুভ কামটা স্যার আমারে দিয়াই শুরু করল। আমারে কইল যে,বাইরে যাও। আমি ডাঙ্গায় আইসা পড়া টাকি মাছের পোনার মত চাইয়া রইলাম। পরক্ষণে ( সংস্কৃত ভাষায় লিখতে হইতাছে কারণ শুদ্ধ ভাষায় এইসব বোঝান যাইব না ) আমার পশ্চাতে ২টা বেত্রাঘাত মারিয়া আমার কর্ণযুগল ধরিয়া আমায় কক্ষের বাইরে নিয়া শাসন করা শুরু করিলেন। সেদিন তিনি আমার পশ্চাতে এতই বেশি মেরেছিলেন যে পরের কিছুদিন চেয়ারে বালিশ ছাড়া বসতে পারিনাই। (সংস্কৃত ভাষা শেষ করলাম,চলিতের দূষণের গন্ধ পাইতাছি)



এই ১৮ আগস্ট থেকেই সকল ছাত্রছাত্রী আমার উপর প্রচণ্ড রেগে ছিল। বিশেষ করে মেয়েরা।



১৯ আগস্ট,২০০৪ সকাল ১০:৩০ মিনিট । কেপ্টেনের সিট নিয়া ( মানে আমার ) লাগল ঝগড়া ।



আমি : দেখ ! এইটা কিন্তু আমার সিট ।



জামি : কই তর নাম লেখা আসে নাকি?



আমি : দেখ! ভাল হইব না কিন্তু!



জামি : তর যা করার তুই কইরা নিস! যা এনতে।



আমি সুন্দর কইরা একটা নালিশ দিয়াইলাম মেডামের কাছে। মেডাম আইসা জামিরে উত্তম মধ্যম দিল । কিন্তু আমার মনটা খারাপ হইয়া গেল । জামি যতটাই ঘার ত্যাড়া হোক না কেন ও এমনিতে অনেক ভাল ছিল। এরপর থেকে বেশিরভাগ পলাই আমার উপর ক্ষ্যাপা হইয়া গেল ।



দুপুর ১:৩০ মিনিট ( টিফিন টাইম ) আর আমার টিফিন বক্স গায়েব । অইদিন আমি ভাবসিলাম আমার টিফিনবক্স জামি নিসে । কিন্তু পড়ে জানলাম একটা মেয়ে নিসে । কি আশ্চর্য ব্যাপার! জামি আমারে আমার টিফিন বক্স আইনা দিল । পরে আমি ওরে সরি বললাম + বাকি সব পোলাদের কাছেও সরি বললাম । ভাবলাম যে সব দন্দ এখানেই শেষ । কিন্তু ঐদিন ও সবাই ধর্ম পড়া না পারার জন্য মাইর খাইলাম । যাক মাইরের কাহিনী বাদ দেই। পরের দিনে যাই।



২০ আগস্ট,২০০৪ দুপুর ১:৩০ মিনিট । বাসায় গেলাম টিফিন খাইতে। স্কুলে আসলাম । আবার সেই ভয়ানক ধর্ম স্যার ।



স্যার বলে ''পড়া শিখছ?'' আমি আকুপাকু কারতাছি । যাক ক্লাসের আগে হালকা উত্তম মধ্যম খাইলাম। ক্লাসে আবারও সবাই খাইলাম । টানা ৩ দিন কেউই পড়া পারিনাই । খবর খারাপ । পরের দিন পড়া না পারলে পিটাইয়া আধামরা বানায় ফেলব ।



আজকের মাইর খাওয়ার কাহিনীটা সবাই শুনলে হাসবেন! আমারও মনে পড়লে অনেক হাসি পায়।



তো অন্যদিনের মত আজকে আর বেত আনা হয় নাই। আজকে জাদু দেখানো হইতাছে স্কেল দিয়া। বাড়ি মারা মাত্রই ছাত্র অথবা ছাত্রী সুললিত কন্ঠে ''ছুউউউউউউউউউউউউ'' ''উফফফফফফ'''আআআআআআ'' ইসসসসসসস'' আহহহহহ'' যা গাওয়া শুরু করল তা দেইখা কে না হাসে।



আমার হাসিটা হয়ত স্যারের কানে গেসিলো তাই সবাইরে নরমাল পিটাইলেও আমারে গিরায় গিরায় পিটাইল। যাক! বহু যন্ত্রণাযুক্ত পশ্চাৎ নিয়া আমি চেয়ারে বসলাম । এদিকে স্যার আগাইতাছে মেয়েদের দিকে। মেয়েদের ক্যাপ্টেন ''লুবনা আক্তার'' যার উচ্চতা নিতান্তই কম । তার চোখ দিয়া টলটলায় পানি ঝরতেছে । সে অনেক ছোট দেইখা কম মাইর খাইল । একদম পিছনে বসছিল ''সাথি'' উরফে ''চিকনি''। স্যার পিটাইয়া এক একটার বারটা বাজাইতাসে আর ঐটা দেইখা সাথির হার্টবিট বাইরা জাইতাসে। হালকা পাতলা বুঝা হইয়া গেসিল য এখন কিছু আনকমন ঘটব। যেই না স্যার সাথির সামনে গিয়া স্কেল উঠায়া ওর হাতে এক বাড়ি মারল ও এত জোরে শ্বাস নেয়া শুরু করল যে স্যার পর্যন্ত ভঁয় পায়া গেল। যাক মাইর অখানেই শেষ । আর আমরা তো স্যারের ভীত হওয়া চেহারা দেইখা চরম মজা পাইলাম।



তারপরও খবর খারাপ কারণ পরের দিন পড়া না পারলে জবাবদিহি প্রিন্সিপালের কাছে গিয়া করতে হবে।



বাসায় আইসা ধুমচে পড়া। সব পড়লাম তাও নিজের আত্মবিশ্বাস নাই যে পড়া পারুম।



কথা মিথ্যা না এমনকি আমি ঘুমায়া ঘুমায়াও সেই রাতে ধর্ম পরছি।



২১ আগস্ট,২০০৪। দুপুর ২:৩০ মিনিট। ধর্ম ক্লাস।



নার্ভাসনেসের জ্বালায় সব পড়া প্রায় ভুইলা গেসিলাম। স্যার আইল। আবারও ''কে কে পারছনা খারায়া যা'' আমি বাদে বাকি সব খারা । ভঁয়ে আমিও খারায় গেলাম । হঠাৎ কিজন্য জানি আবার গিয়া বইসা পড়লাম । সবার চিপা দিয়া আমারে বসা দেইখা আমারে স্যার জিগায় '' কি? বইসা আস যে?'' আমি বললাম '' আমি পারি পড়া'' স্যার বলে '' ঠিক আছে সবাই বসে যাও। সজল তুমি যদি পড়া পার তাহলে সবাইকে তুমি গালে চর দিবা আর না পারলে সবাই তমার গালে চর দিবে,রাজি? আমি ভঁয় পায়া গেলাম । তারপরও বললাম ''ঠিক আছে''



সবাই হাত কসলাইতেছে,আমার গালে থাপ্রাইব দেইখা.....................মেয়েরা তো হেভি খুশি......লুবনা তো মহাখুশি.................. পড়া বলা শুরু করলাম..................... অর্ধেক কইয়া ভুইলা গেলাম......... বুকের ভিত্তে ছেৎ কইরা উঠল । স্যারলে বললাম যে স্যার সবাই আমার দিক এভাবে তাকায় থাকলে আমার পড়া বলতে সমস্যা হবে। স্যার ও হাসতে হাসতে বলল '' এই সবাই মাথা নিচের দিকে কর'' যাক এইবার পড়া এমুনভাবে কইলাম যে স্যার হা কইরা তাকায় রইল । লাস্টে একটা কবিতার মত ছিল অইটা জিগাইল ...পাইরা গেলাম.....................আর মনে মনে ভাবলাম আজকে মেয়েরা সাবধান হইয়া জা..................আমি আইতাছি হা হা হা............... কিন্তু ঘটল আরেক কারবার...............মাইর শুরু করল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড পিয়াস রে দিয়া............আমি অনেক আস্তে মারলাম...............স্যার কয় হ্যনাই...............আবার মারলাম কয় হয়নাই............ এমনে কইরা স্যার আমারে দিয়া পিয়াসের গালে ৭টা চর বসাইল...............পিয়াসের চেহারা দেইখা আমার আর বুঝতে বাকি নাই যে পলার সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ শেষ। মেজাজ বহুত খারাপ হইয়া গেল............স্যারের দোষে আমার আর পিয়াসের বন্ধুত্বে ফাটল ধরল । যাক মাইয়দের পালা আইসা গেল........................আরে থাপড়ানোর থাপড়ান........................জীবনে আর এমন ফ্রি মাইয়াদের থাপড়ানোর চান্স পামুনা ভাইবা ইচ্ছামত থাপ্রাইলাম। যাক ঐদিন খুব গর্বের সাথে সবাইরে থাপ্পড় দিয়া নিজে রাজা রাজা হইয়া আস্তাছিলাম বাসায় । খাইলাম ফ্রেন্ডদের দৌড়ানি । যাক ভাল দৌড়াইতে পারতাম তাই বাইচা গেসিলাম।



এই দিনের পর থেকে প্রায় ১ মাস পিয়াস আমার সাথে কোন কথা বলে নাই.....................তাকায় ও নাই । একদিন আমাদের এলাকার এক মাঠে খেলা দেখতে গিয়া পিয়াসের সাথে দেখা...............অ আমারে ডাক দিল ''আরররে সজল দোস্ত......কেমন আছছ? আমি হা কইরা তাকায় ছিলাম । ওর আবার ততক্ষণে মনে পইড়া গেল সেই ৭টা থাপ্পড়ের কথা । যাক পরের দিন আমি ওরে গিয়া জিগাইলাম যে ''কিরে? কেমন আছছ? ওর কোন উত্তর নাই...............আমি এইরকম ৩-৪ দিন ওর পিছে লাইগা ছিলাম । শেষ পর্যন্ত আবার বেস্ট ফ্রেন্ড হইয়া গেলাম ।



আমি অবশ্য পরে ক্লাসের সবার কাছে ক্ষমা চাইছিলাম.....................ওরা সবাই আমাকে ক্ষমা করেও দিছে কারণ দোষটা স্যারের যে উনি প্রস্তাবটা দিছিল পিটানর । যাই হোক ক্লাস ৬ এ মাইলস্টোন এ আইসাও আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম । কিন্তু তখন আমার নিজেকে নিয়া আমি কোন গর্ব করতাম না। তখন গর্ব করতাম আমার সেইসব বন্ধুদের নিয়া যাদের সাথে এত খারাপ ব্যাবহারের পরও তারা আমাকে ক্ষমা করতে একটুও সময় নেয়নি।



আর যাই হোক...........................সবজায়গায় একটা ভিলেন তো ছিল..................আমার ১-৫ এর স্কুল লাইফেও ছিল । নাম ছিল তার শশী । এই নামটারে শসা বানায়াই আমার আর ওর মধ্যে শত্রুতার শুরু। যাক এই কাহিনী আর এখানে লিখব না। এমনেই হাত বেথা হইয়া গেসে........................আর একটা জিনিস এতবার পশ্চাত লিখতে লিখতে ঐ ধর্ম স্যারের কথা মনে পইড়া গেল। নামটা ছিল '' মনিরুল ইসলাম''











উপরের লেখাটির কিছুটা বানিয়ে লেখা............... কেননা এখানের প্রতিটি ঘটনা আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগে ঘটা । তাই একদম পুরোপুরি মনে না থাকলেও অনেকটা মনে আছে। আমার মতে উপরের লেখাটির সত্য ও মিথ্যার পারসেন্টেজ ৯০% এবং ১০%

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৮:০০

বিষাদ সজল বলেছেন: ভাই নষ্টালজিয়ায় পড়ে গেলাম ।

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪০

অজ্ঞাত লেখক বলেছেন: বাহ! ভালোই তো! আপনারও তাহলে আমার মত সৌভাগ্য হয়েছিল কোন এক সময়!

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩০

ইনকগনিটো বলেছেন: ভালো লাগলো স্মৃতিচারণ :)

ভালো থাকবেন।

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১

অজ্ঞাত লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ এবং আপনিও ভালো থাকবেন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.