![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বাধীনতা আর মুক্তি সত্য কথায় থাকুক যুক্তি । এটা আমার প্রেরনা ।
আবির সিটি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । অনেক ক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়ানো । বেথায় তার পা টনটন করছে । সে খানিকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করবে কিন্তু তা পারছে না । ছোট মাসুদ তাকে এক জায়গায় দাড়াতে বলেছে । নড়াচড়া বন্ধ । সে কথা বলার সময় নড়াচড়া পছন্দ করে না । সে খুবই বিপদজনক লোক । ঢাকা কলেজে পড়তো । এখন পড়ে না । রাজনীতি করে । এক অধ্যাপকে সে কঠিন হুমকি দিয়েছিলো । সে তার গ্রুহদার দ্বার দিয়ে বাঁশ প্রবেশ করানোর ভয় দেখায় । সে এই কাজে দক্ষ । খুবই আনন্দের সাথে এই কাজ করে। এই কাজ তার কাছে পান্তাভাত । তাই ছাত্রত্ত চলে গেছে । এতে ভালোই হয়েছে । পড়াশোনা খুবই যাতনার ব্যাপার । এটা তার খুবই অপছন্দ । কাকের বিশটার মতন অপছন্দ । সে এখন নিয়মিত সিটি কলেজের সামনে বসে। মেয়েদের কুসলাদি জিজ্ঞেস করে । বখাটেদের এই এলাকা থেকে দূরে রাখা তার রাজনৈতিক দায়িত্ব । সকাল ৮ তা থেকে ১২ তা পর্যন্ত সে এই রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে । তার কাছে এটা খুবই আনন্দের কাজ । তার মতে আবির বখাটে । চরম বখাটে । চেহারায় তা স্পষ্ট । তাই সে আজ আবিরকে দাড়াতে বলেছে । তার অপরাধ গুরুতর । সে গত কয়েকদিন ধরে নিয়ম করে সিটি কলেজের গেটের ঠিক উলটো দিকে দাঁড়িয়ে থাকে । তার হাতে থাকে ৫ টা রজনীগন্ধা ফুল । রজনীগন্ধা ফুলের দাম কম । পার পিছ ২ টাকা । ৫ টা রজনি গন্ধা ফুলের দাম ১০ টাকা । আবিরের জন্য এটাই অনেক খর্চার ব্যাপার । ১০ টাকা হোলে দুইটা নোনতা বিস্কুট আর এক কাপ চা পাওয়া যায় । এতে সকালের নাস্তা হয়ে যায় । কিন্তু সে এই কাজ না করে শাহবাগ থেকে ফুল কেনে । শাহবাগে ফুল সস্তা । ফুল নিয়ে সিটি কলেজের সামনে এসে দাড়ায় । টুকটুকি ফুল পছন্দ করে । অবশ্য রজনীগন্ধা তার তেমন পছন্দ নয় । সে মাঝে মাঝে বলে " রজনীগন্ধা ফুল আর কই মাছের প্রান একই । কঠিন প্রান । সহজে মরে না । আমার এইটা খুবই অপছন্দ লাগে । তুমি তাও আনো । তুমিও কই মাছ, কথা শোন না । কিন্তু তুমিও আমার পছন্দ । তোমাকে কই মাছের সাথে তুলনা করলাম । আবির একটা কই মাছ । কই আবির । এটাকে বলে সিমিলি । মানে তুলনা । ম্যাটাফর মানে রুপক । আজ আমাদের ক্লাসে মিস পড়াইছে । এই মিসকে আমরা মোটা মিস বলি । চুপ যে , রাগ করলে না কি ? " এই বলেই মেয়েটা হাসতে আরম্ভ করে । হাসতে হাসতে গভীর আগ্রহে ফুলগুলো হাতে নেয় । সাদা হাতে সাদা ফুল খুব মানায় । তার হাসি থামতেই চায় না । এতে হাসির কি আছে আবির বুঝে পায় না । সে চেয়ে থাকে । হাসি দেখে তার খুব আনন্দ হয় । হাসলে টুকটুকিকে সুন্দর লাগে । আবির এই হাসির নাম দিয়েছে সমুদ্র হসি । টুকটুকি বোঝে না ছেলেটা এতো পাগল কেন । এতো বাদ দিয়ে হাসির তুলনা দেয় সমুদ্রের সাথে । আবির সমুদ্র হাসি দেখার জন্য প্রতিদিন ফুল কেনে ।
ছোট মাসুদ আবিরের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে । তার গভীর সন্দেহ হয় এই ছেলেটা কোন মেয়েকে জ্বালাতন করতে এখানে দাঁড়িয়ে আছে । মেয়ে তাকে কোন অভিযোগ করে নি । তাতে কি । মেয়েরা লাজুক । লজ্জায় পড়ে অনেক কিছু বলতে পারে না । কথায় আছে বুক ফোটে তো মুখ ফোটে না । তাই হয়তো তাকে কিছু বলে নি । কিন্তু তাই বলে এই ছেলে প্রতিদিন এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে এটা কেমন কথা । ছেলেরই বা কেমন বিবেচনা । একে আজ কিছু কঠিন কথা বলতে হবে । ডলা দিতে পারলে হতো । মেয়েদের কলেজের সামনে দাড়ায় । ডলা দেয়াই দরকার । কিন্তু এটা ঠিক হবে না , আজ সাবধান করা যাক । ডলা পরে দেখা যাবে । সে কড়া করে কথা শুরু করে ।
~ এই ছেলে তোমার নাম কি ?
~ আবির ।
~ পুরা নাম বল । নামের আগে পিছে কিছু নাই নাকি । হিন্দু না মুসলমান কিছুই তো বোঝা যায় না ।
~ আমার নাম শুধু আবির । আবির অর্থ লাল । আমি মুসলমান । ১০ বছর বয়সে আমার মুছলমানি হয়েছে । ওস্তাদের নাম আব্দুল কাদের । বড় পিরের নামে নাম । খুবই কাজের হাত ।
~ আমি তো এতো কিছু জানতে চাই নাই । কথা সংক্ষেপ বলবা । বেশি কথা আমার খুবই অপছন্দ । আল্লাহার নবী বেশি কথা পছন্দ করতেন না । আমিও করি না ।
~ আচ্ছা বেশি কথা বলব না । চুপ থাকলাম ।
~ চুপ থাকাও চলবে না । প্রশ্নের উত্তর দাও । এই খানে তোমার কি চাই ?
~ কন্যা চাই । ঘটকালী করবো । হাতে ভালো পাত্র আছে । কন্যা দরকার । কন্যার খোঁজে আসছি । আমি নিজেও একজন পাত্র ।
ছোট মাসুদের মেজাজ তখন চরমে । এই ছেলে অতি বদজাত । এরে ডলা দেয়াই দরকার । তৃতীয় মাত্রার ডলা । একবারে সোজা হয়ে যাবে । এখন বাকা আছে । সে সিদ্ধান্ত নিল এই ছেলে যদি বেশি তেড়িবেড়ি করে তবে সে চিৎকার দিবে । কঠিন চিৎকার । আশপাশে মানুষ জড় হবে । " ইভ টিযার " বলে ডলা দিবে । বেটা সাহস কতো মেয়েদের জ্বালাতন করে । পুলিশ আসলে তো কেল্লা ফতে । তবে অতদুর না করলেও চলবে । অবস্থা বিবেচনায় কাজ করতে হবে ।
~ তুমি জানো এইখানে দাঁড়ানো নিষেধ ?
~ জানি না । কবে থেকে নিষেধ ? এটা তো সরকারি রাস্তা ।
~ এখন থেকে নিষেধ । আমি নিষেধ করেছি । এইটা আমার বিবেচনা । তুমি এইখানে দাড়াতে পারবে না ।
দাঁড়ালে পা ভেঙ্গে দিবো । দুই পায়ী ভাঙ্গবো । কোন ছাড় নাই । গুহ্য দ্বার দিয়ে বাঁশও দিতে পারি । এইটা আমার পছন্দের কাজ ।
~ পা কখন ভাঙ্গবেন ? এখনি ভাঙ্গবেন না কিছু দেরি হবে ।
~ এখনি ভাঙ্গবো । মট করে শব্দ হবে । সাথে গুহ্য দ্বার দিয়ে বাঁশও দিবো । মল ত্যাগ করতে পারবি না । তুই এখানে দাড়া । ভয়ে যেন দোড দিবি না কিন্তু । তাহলে হাতও ভাঙ্গবো । মট করে শব্দ হবে ।
বলেই ছোট মাসুদ ফোন বের করলো । বোধয় কোন শাগরেদকে দাকবে । এদের আবার সাগরেদ থাকে । অবশ্যই সাগরেদের গায়ের রঙ কালো হবে। ময়লা জিঞ্চ পরবে । সে তার গুরুর থেকে আকার আকৃতিতে ছোট হবে । কিন্তু লম্ফ ঝম্প দিবে বেশি । সাগরেদ এলেই সে চিৎকার দিবে । একা থেকে দুইজনের চিৎকার অধিক কার্যকর ।
আবির ছোট মাসুদকে নিয়ে তেমন চিন্তিত নয় । পা ভাঙ্গলে খারাপ হয় না । কিছুদিন বিশ্রাম নেয়া যাবে । সে দাঁড়িয়ে থাকে । ঘড়িতে তখন ১২ টা । ঠিক মধ্যাহ্ন । আবির অস্থির হয়। তার মুখ লাল হয়ে যায় । মুখ লাল হোলে তাকে সুন্দর লাগে । টুকটুকি মাঝে মঝেই বলে " এই আবির তুমি মুখ লাল করো তো , লাল মাছের মতন লাল করবে । " বলেই আবিরের হাত ধরে । আবিরের হাত ঘামতে থাকে । মুখ লাল হয়ে যায় । টুকটুকি গভীর আগ্রহে সেই মুখ দেখে । ভালবাসা তার চোখে ভাসে । এখনো আবিরের মুখ লাল । কিছুক্ষণের মধ্যে কলেজে ছুটি হবে । মেয়েরা বের হবে । সবার সাদা পোশাক । দেখতে হিমালয়ের সাদা বরফের মতন । টুকটুকিও আসবে । তার মুখে হাসি । সুমদ্র হাসি । কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ঘটনাটি ঘটবে । যার জন্য আবির গত কয়েক দিন ধরে অপেক্ষা করছে । কিন্তু কেন যেন ঘটনাটা ঘটছে না । ঘটবে কি করে । টুকটুকি তো আর এখানে নেই । ও প্রবাসে । বাংলাদেশ থেকে বহু দূরে । কিন্তু তার স্মৃতি এখানে । আবির এখানে প্রতিদিন অপেক্ষা করে । তার বুকের ভিতর কোথায় জানি একটু চিনচিনে বেথা হয় । মুখটা লাল হয়ে থাকে । ছোট মাসুদ লাল মুখ দেখে আনন্দ পায় । ভাবে ছেলে ভয় পাইছে । ভয় পেলে ভালো । ডলা দিয়ে আনন্দ বেশি । নাইলে সব পানির মতন পাইন্সা । স্বাদ নাই । পুরাই বিস্বাদ ।
©somewhere in net ltd.