নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন কুনোব্যাং এর চোখে দুনিয়াদারী

আসিফ হাসান জিসান

স্থাপত্যের অমনোযগী ছাত্র। অধিক ওজন, মধ্যম উচ্চতা ও নিচু একাডেমিক গ্রেডধারী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, আশাবাদী ও সারকাস্টিক এক সাধারণ মানব সন্তান।

আসিফ হাসান জিসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাস্তা দেখার গল্প ১

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০২

এক... দুই... তিন... নাহ তিনটা লাইটপোস্ট এর বাতি হলুদ ছিল পরেরটাতে কোন বাতিই নাই। দেখে গোণায় আমার ছেদ পড়ে।
উত্তরা যাচ্ছি। আজকেও দেরী হয়ে গেছে যথারীতি কাজের দিকে রওনা দিতে। ভাল জ্যাম পিক অফিস আওয়ার এর। শীত। এজমা রোগী আমি ঠান্ডায় ভাঙ্গা জানালার পাশে জুবুথুবু হয়ে বসে আছি। আশেপাশে তাকাই। হকার চানাচুর বিক্রেতাদের মুভমেন্ট খেয়াল করি। উলটা করে রোডসাইড ল্যাম্প গুনি। কুয়াশার ভিতরে পাওয়ারলেস চশমার ভরসায় আকাশের কালার দেখার চেষ্টা করি। কয়েকদিন থেকে চিন্তা করতেছি মোবাইলের স্ক্রীন এর দিকে যতটা পারি কম তাকাব। সেই নিয়তেই এই সন্ন্যাস। ধ্যান ভাঙ্গে এক বৃহন্নলার ডাকে।
-অ্যাঁই দেনা কয়টা টাকা
আমি আর দশটা সাধারণ মানুষের মতই এদের ভয় পাই। ভয়ে ১০ টাকা বের করে দিতে যাচ্ছি এমন সময় আমার সাথে স্বাভাবিক এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল
এক ৬-৭ বছরের মাথাছেলা পিচ্চি কোথায় থেকে তিড়িং বিড়িং করে এসে বলল-
-এই দামড়া বেডা টাকা চাইতেছে মাইয়াগো মোত সাইজা আইস্যা আর এরে ১০ ট্যাকা কইরা দিতেছেন। আমরা খাইতে চাইলে আমাগোরে তো দুই টিয়াও দেন না।
আমি হতভম্ব হয়ে তাকেও ১০ টাকা বের করে দিয়ে বললাম
-আচ্ছা যা তুই ও নে।
- না লাগবো না। অহন কইছি বইলা দিতাছেন। অন্যসুম আপনারাই টাকা চাইলে বলেন যে কাজ করুম কী না...
-কাজ করা কী খারাপ?
-খারাপ ভালো আপনেরাই ভাল কইতে পারেন
এর মাঝে আমার প্রথম সাহায্যপ্রার্থী বলল- এ পিচ্চি এত বক বক করিস না তো। যা অন্যের ব্যাবসা দেখলে তোমাদের তো জ্বলে।
আমি বললাম - আপনি তো পাইছেন আপনি যান অন্যদিকে
সে চলে গেল
পিচ্চিকে বললাম- আমরা তো কাজ করাকে ভালোই বলি ভিক্ষা করার চেয়ে। খারাপ কবে বললাম?
-হে কয় সপ্তা আগে কারা জানি মিছিল করছে না কী করছে বইলা আমাগোরে গ্যারেজে নেয় না। কয় আরো বড় হইয়া যাইতে। আমাগোরে বয়াস ১৮ কইলে কেউ মানত না
- তুই তো আসলেও ছোট। তোর তো কাজ করার কথা না
-কী করার কথা?
-স্কুলে যাস?
যামু না ক্যা? যাই। কিন্তুক সেইজন্যেই তো টাকা দরকার।
-অ্যা? স্কুলে তো টাকা লাগে না
কিন্তুক বই খাতা কিনা তো লাগে।
-তুই আসলেই বই কিনার জন্যে টাকা তুলতেছিস? সত্যই কথা ক নাইলে এক চড় মেরে সর্দি যা ঝুলতেছে ভিতরে ঢুক্কায় দিব।
পিচ্চি এবার দাত বের করে হেসে দেয়। এবং দৌড়ায় চলে যায়।
আলাপ বেশ বড়। কিন্তু তার চেয়ে বড় হয়ে উঠে আমার সামনে আমার ই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। আমরা বড়ই কমপ্লেক্স। বড়ই কিউট

মানুষ যখন জিজ্ঞাসা করে প্রিয় শখ কী?
আমি বলি রাস্তার লোক দেখা।
আমাদের কোন এক শিক্ষক আমাকে বলতেন- বাংলাদেশিদের সমস্যা হচ্ছে আমরা রাস্তার লোক পেলেও আমাদ্র ব্যাক্তিগত গল্প জুড়ে দেই। কিন্তু এই গল্প গুলোর মত গল্প মনে হয় আমাদের দেশের রাস্তা ছাড়া কোথাও মিলবে না। আরেকদিনের ঘটনা
সকালে উঠে ভার্সিটি যাওয়াটা একটা বিশাল কায়দা কসরৎ এর ব্যাপার। সবার বিরক্তির কারণ জ্যাম, ক্লাসে ঢুকে ভাল সময়ের নিশ্চয়তা না থাকা, ঝুলে থাকা প্রজেক্ট আর আজকে সামলাতে হওয়া নিত্য নতুন টেনশান এর সাথে সবচেয়ে বড় বাধাগুলার একটা হল সময় মত ঘুম থেকে উঠতে পারা। এই সব জয় করে সময় মত রিকশাতে উঠতে পারলে একটা আলাদা শান্তি আসে মনে। মনে হয় দিনের একভাগে তো জিতেই গেলাম বাকীটা আর কতই খারাপ যাবে। এর মাঝে গল্পবাজ রিকশাচালক পেলে দিনটা আরেকটু ভাল যায়। একবার এক রিকশাচালক পেয়েছিলাম যিনি রিয়াল বায়ার্ন ম্যাচের পরে প্রশ্ন করেছিলেন-“মামা কাইল রিয়াল জিতিছে না বায়ার্ন?” এইসব ঈদের দিন প্রতিদিন আসে না। তারপরেও গল্পদার রিকশাভ্রমণ প্রায় রুটিন করা ঘটনাই। একদিন এক মামা মেলা অনুভুতি নিয়ে বলেই বসলেন-
-মামা এই যে আপনারা ভার্সিটির ছাত্র আপনাদের কী মনে হয় দেশের উন্নতি না অবনতি হইতেছে?
-আমি তো খুব অবনতি দেখি না। ভালই লাগে।
-তাইলে কী মামা “অমুক দল” সাপোর্ট করেন?
-সাপোর্ট কোন দলকেই করি না। আমার কাছে উন্নতি এরকম- আমার বাবা হারিকেন এর আলোতে পড়ছেন। আমি নিয়মিত বাতি পাই। আমার বাড়ি যে গ্রামে সেইখানে কাউকে দেখি নাই যে বাবার চেয়ে কম শিক্ষিত। আমি উন্নতিই বলি এইটারে।
-হেইডা ঠিক। কিন্তুক দেখেন এই যে আপনারা পড়তেয়াছেন। আমার বাপের তো ২০ শতক জায়গা ছিল দাদার তো ছিল কয়েক বিঘা। আমি রিশকা চালাই... এইডা কী উন্নতি?
(আসলেই প্যাচে ফেলছে।ভাবতে থাকলাম কী বলা যায়। গভীর সমস্যা। খুব সাধারন কথা। উত্তর কী দিব? কী দিব?)
-আপনার ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠান। তাইলেই তো ব্যাপারটা লাইনে চলে আসে। তাদের লেখাপড়া করান।
-বাজান চর ভাইঙ্গা ঢাহায় আসইছি দুই সপ্তাহ। বাসা এখনো ফুটপাথে। ঘর ভাড়ার টাকাই উঠে না।
এমন সময় দেখলাম পলাশীর পাশের ফুটপাথের ঘরে এক মেয়ে তার স্কুলের জামার ক্রসবেল্ট ধরে পরিপাটি করে মাথার চুল আচড়াচ্ছে।
দেখিয়ে বললাম- মামা, ওই যে দেখেন। ইচ্ছা থাকলে আসলে কোথায় থাকেন কী করেন কিছুই আপনারে আটকাবে না। আমাকে নামায় দিয়ে লোকটা বলল- মামা, সরকারী স্কুলে কী অহন আসলেই বেতন লাগে না?
-না মামা। বই ও কেনা লাগে না।
-ছেলেডারে স্কুলে দিমুই তাইলে।
-কয় ছেলে মেয়ে আপনার?
-এক ছেলে এক মেয়ে।
-মেয়েটারেও দিয়েন।
কল্পনার গল্পে এই পর্যায়ে আমি উনাকে কনভিন্স করে ফেলব মেয়েটাকে স্কুলে দিতে। কিন্তু রিয়ালিটিতে সেগুলা হয় না। রিয়ালিটিতে লেখাপড়ার কথা বলার সময় পাশের ফুটপাথে স্কুলগামী পথশিশুর দেখা পাওয়াটাই একমাত্র মিরাকল। খারাপ ব্যাপার- এক গল্পে মিরাকলের পর মিরাকল ঘটে না। আর ভাল ব্যাপার- Miracles do happen.
মিরাকল গুলা হয়তো একদিন রাস্তায় বসে দেখতে পাব। এই আশাতেই আবার রাস্তা দেখি। লোকের হাটা দেখি। তাদের গল্প শুনতে ইচ্ছা করে। তখন লাইট পোস্ট গুনি আবার। এক...দুই...তিন...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.