নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যবাক

অাবছার তৈয়বী

আবছার তৈয়বী

অাবছার তৈয়বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

যৌতুক একটি সামাজিক অভিশাপ

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৩৪

যৌতুক একটি সামাজিক অভিশাপ
- আবছার তৈয়বী

'জাতীয় সমস্যার সমাধান: জাতীয়ভাবে করা হোক'
যৌতুক একটি সামাজিক অভিশাপ। যৌতুক মানুষের মনুষ্যত্ব নষ্ট করে। যৌতুক মানুষকে পশুতে রূপান্তরিত করে। যৌতুকের কারণে অনেকের সংসার আজ 'হাবিয়া দোযখ'। নিত্য লেগে আছে- ঝগড়া ও নারী নির্যাতন। যৌতুকের নির্মমতা কত ভয়ানক শুধু তারাই বুঝবেন- যারা কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা বা বোনদায়গ্রস্থ ভাই। অন্যরা তেমন একটা বুঝবেন না। তাদের কাছে মনে হবে- ‘পোয়ার মুত পানি পানি’। আসলে যৌতুকের নির্মমতা আমি জানি। কারণ আমি ৫ বোনের একমাত্র ভাই। বলতে দ্বিধা নেই- আমার বোনদের বিয়ে দিতে হয়েছে যৌতুক দিয়ে। কিন্তু আমি যখন বিয়ে করেছি- যৌতুক নেইনি। হ্যাঁ- খাট-পালঙ্কও না, আলমিরাও না, শো-কেইসও না, না বলতে না, কিছুই না। তবে একটি ভুল আমারও হয়েছে। সেটির যাতনায় এখনও আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। এইতো সেদিনও আমার মুহতারাম শশুরের কবরে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে এসেছি। সেই ভুলটা কী? সেই ভুলটা হলো- আমার শশুরের টাকায় বরযাত্রী খাইয়েছি। আমার শশুর বেঁচে থাকলে তাঁর হাতে সেই খাবারের টাকাগুলো দিয়ে দিতাম, নতুবা মাফ চেয়ে নিতে পারতাম। যদিও আমার মুহতারাম শুশুর মহোদয় নিজ আগ্রহেই সেই বরযাত্রী খাইয়েছিলেন।

এই বরযাত্রী খাওয়ানোটা বর-কনে উভয় পক্ষের জন্য এক বিরাট ঝামেলা! বরযাত্রী খাওয়াতে গিয়ে কনে পক্ষের ১২ টা বাজলে বর পক্ষের বাজে ১৩টা। কেমনে? সেই বরযাত্রীদেরকে সকাল থেকে বরের মা-বাপ, বরের ভাই-বোন এবং বর নিজেই ৯ মন ঘি মালিশ করতে হয়। হাঁটাপথের দূরত্বেও 'মাইক্রো' বা 'হাইস' করে আনা নেয়া করতে হয় এবং গাড়িতে গিয়ে বরযাত্রীদের বসিয়ে দিয়ে আসতে হয়। ‘দুলামিয়া’ নিজে তৈরী হবে- নাকি বরযাত্রীদের খোশামোদ করবে? তারপরও দেখবেন- প্রতি বিয়েতে বরের কোন ভগ্নিপতি বা বরের মা-বাবার কোন ভগ্নিপতি প্রথমে নাখোশ এবং পরে উপোস! আমাদের চট্টগ্রামে প্রতি বিয়েতে এই ঝামেলাটা আমি নিজ চোখে দেখেছি। বিয়ের অনুষ্ঠানে পান নিয়ে, বাতাসা (আকদের মিস্টান্ন) নিয়ে, মাংসের সাইজ নিয়ে, টেবিল অপরিষ্কার নিয়ে, দুলামিয়ার ভগ্নিপতিদের আংটি এবং মালা নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি, পরে তুমুল ঝগড়া, তারপর মারপিট এবং সবশেষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও আমি দেখেছি। এসব কারণে কখনো হতাহতের ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। আমার ঘটকালি জীবনেও তেমন একটি ঘটনা ঘটেছে। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, একপর্যায়ে বিয়ে ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। কী ঝগড়ারে বাবা! ঝগড়া থামাবো কি? আমার নিজেরই আক্কেল গুড়ুম! পরে ভেবে চিন্তে আমি নিজে মেয়ের বাবার হাতে-পায়ে ধরে, বরের বড় ভাইকে জাপটে ধরে বকুনি থেরাপী দিয়ে এবং অনেক কৌশল খাটিয়ে বিয়েটা রক্ষা করেছি। বর আর কনেকে সোজা থ্রেট দিয়েছি- "দুনিয়া কাত হয়ে যাক, তোমরা ঠিক থাকবা। খবরদার! নড়চড় করবা তো সিদা জেলে হান্দাইয়া দিমু আর পত্রিকায় রিপোর্ট কইরা দিমু।" আলহামদুলিল্লাহ্! তাদের এখন সুখের সংসার।

এই বরযাত্রী খাওয়া নিয়ে কত বিতকিচ্ছিরি কাণ্ড যে ঘটে তার কোন সীমা পরিসীমা নেই। এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় থাকাকালে একটি আইন করেছিলেন- ১০০ জনের বেশি বরযাত্রী খাওয়ানো যাবে না। সেটি সমাজে প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু বড় লোকের বিয়েতে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ১০০ জনের জায়গায় ১০০০ বরযাত্রী খাওয়াতে যেমন দেখেছি, তেমনি ১০০ জন করে ১০টি হোটেলেও বরযাত্রী খাওয়াতে দেখেছি। এরশাদ সাহেবের পতনের সাথে সাথে তার সমাজবান্ধব আইনটাও উধাও। অতএব, যতো পারো- 'বরযাত্রী খাও আর খাওয়াও'। কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা বা ভাইটির ওপর কোন কিয়ামত যাচ্ছে- তা একমাত্র তারাই বুঝবেন। প্রকৃতপক্ষে আইন করে মানুষকে সোজা করা যায়না- যদি না মানুষকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা যায়। আর এই কাজটিই হাতে নিয়েছেন- আমার পরম শ্রদ্ধেয় উস্তাদ, গণজাগরণের প্রতিভু, খ্যাতিমান ওয়ায়েজ, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা আবুল কাসেম নূরী (আল্লাহ্ তাঁর ছায়া আমাদের ওপর দীর্ঘায়িত করুন)।

এই জাতীয় সামাজিক সমস্যাটির সমাধানে বেশ জোরালো ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন- আল্লামা আবুল কাসেম নূরী। তিনি এ পর্যন্ত যত কাজ করেছেন- তার মূল্যায়ন হয়নি। এই কাজটি যদি তিনি না করে কোন নারী নেত্রী, কোন আলেম নন- এমন ব্যক্তি, কিংবা কোন সামাজিক ও এনজিও সংস্থা করতো- তাহলে তাকে নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াই হইচই পড়ে যেতো। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভুষিত হতো। কারণ, আল্লামা নূরীর যৌতুক বিরোধী আন্দোলন ইতোমধ্যে সারাদেশে আলোড়ন তুলেছে। বাংলাদেশের মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছে। তিনি প্রায়ই প্রতি মাহফিলে যৌতুকের কুফল নিয়ে আলোচনা করছেন। তিনি বাৎসরিক একটি মহাসমাবেশ করেন- চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে। এই সমাবেশে সবাই সদলবলে যোগদান করা উচিত। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও এই সমাবেশ করা প্রয়োজন। এবং বিশেষ করে জাতীয়ভাবে এই সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। জাতীয় পাঠ্যপুস্তকেও ‘যৌতুকের অভিশাপ’ শিরোনামে লেখা থাকা প্রয়োজন।

যৌতুক একটি ‘জাতীয় সামাজিক সমস্যা’। জাতীয় ভাবেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। মনে রাখতে হবে- এটি শুধু সুন্নীদের সমস্যা নয়। তাই জাতি, ধর্ম, বর্ণ নিবিশেষে এই সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এই আন্দোলনকে বেগবান ও সাফল্যমণ্ডিত করতে হলে ভিন্ন মতের, ভিন্ন ধর্মের মানুষদেরও আলোচনার সুযোগ দিতে হবে। জাতীয়ভাবে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে- ‘আমরা যৌতুক দেবো না, আমরা যৌতুক নেবো না’। দেশের ৬৮ হাজার গ্রামে স্থানীয়ভাবে সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবে বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, আলেম, সকল রাজনৈতিক দলের নেতা, সকল ধর্মের পণ্ডিত এবং সকল মতের মানুষের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তবেই এই আন্দোলন প্রকৃত সফলতার মুখ দেখবে, অন্যথায় না। আশাকরি- কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

তারিখ: ০৪ মার্চ, ২০১৬ খৃ.
আবুধাবি, ইউ. এ.ই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.