![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ ছিল না (এক)
-আবছার তৈয়বী
আজ ২৬ মার্চ। অামাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি- যাঁর নামে এবং প্রেরণায় মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত বাঙালি জাতির জনক, বাংলাদেশের স্থপতি, আমি যাঁকে ‘বাংলাদেশের আত্মা’ বলি- শহীদ রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। আরো স্মরণ করছি- আমাদের জাতীয় নেতা শেরে বাংলা এ.কে.এম ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপূত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এককালের আওয়ামী লীগ সভাপতি মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনসহ জাতীয় চার নেতাকে। আরো স্মরণ করছি- মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক জহুর আহমদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ১ম ঘোষক এম.এ হান্নান, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ২য় ঘোষক শহীদ প্রেসিডন্ট জিয়াউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সকল সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানী, সকল সেক্টর কমান্ডারর্স, সকল ফোর্স প্রধান, সকল বাহিনী প্রধান, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সর্বস্তরের সকল মুক্তিযোদ্ধা, সকল শহীদ বুদ্ধিজীবী, সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, সকল খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, লিস্টেড এবং আনলিস্টেড সকল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, সকল বীরাঙ্গনা, শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপনকারী সকল ধর্মের বর্ণের নারী-পুরুষ, মুক্তিযুদ্ধের সহায়তাকারী আপামর জনসাধারণ, বিদেশী বন্ধু ও বন্ধু রাষ্ট্রকে। আজকের এই দিনে অান্তরিক শুভেচ্ছা জানাই- বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা, সর্বস্তরের সকল জীবিত মুক্তিযোদ্ধা, সকল রাজনৈতিক দলের নেতা, সকল ধর্মীয় নেতা, সকল আধ্যাত্মিক নেতা, সকল সামাজিক নেতা, স্বাধিনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্বাসী সকল সংগঠনের নেতা-কমী, সকল শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী এবং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে। সেই সাথে শরীরের সকল শক্তি একত্রিত করে কাশমিশ্রিত একদলা ঘৃণার থুথু নিক্ষেপ করছি- সকল পাকি জালিম রাজনীতিবিদ, সশস্ত্র পাকি হায়েনা ও হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহায়তাকারী এদেশের সকল রাজাকার, আলবদর, আল শামসসহ সকল স্বাধীনতা বিরোধীদের চোখে মুখে।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা! আজ আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্য ও স্থিতিশীলতা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র কথা বলে পবিত্র ইসলাম ও ইসলামী রীতি-নীতিকে কটাক্ষ করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে দাঁড়ি, টুপি, পর্দাকে উঠিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে বাংলাদেশের জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে ব্রাহ্মন্যবাদী চেতনা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে জাতীয় পর্যায়ে ভিনধর্মের সংস্কৃতির চর্চা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তকে পর্যন্ত ধর্ম-নিরপেক্ষতার মতো গাঁজাখুরি মতবাদ তথা নাস্তিক্যবাদ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মাইকে আযান দিতে বারণ করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে রাস্ট্রের সর্বস্তরে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে ‘রাব্বী যিদনী ইলমান’ কেটে দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে কবি কাজী নজরুল ইসলাম সরকারি কলেজ থেকে ‘ইসলাম’ শব্দটি কেটে দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে সংবিধান থেকে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ ও আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে এখন সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বাদ দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুসলিম নারীদের অবশ্য পালনীয় পর্দা প্রথাকে উঠিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে কুকুরের মাথায় টুপি পড়ানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে দাঁড়িওয়ালা হিন্দুকেও গণপিটুনী দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে বিজাতীয় সংস্কৃতি- মঙ্গল প্রদীপ, রাখি-বন্ধন, হোলিখেলা এবং সাপ, হাঁস ময়ুর, পেঁচক, দেবী ইত্যাদির প্রতিকৃতি বানিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে সরকারি খরচে রাস্তায় রাস্তায় মূর্তি বানানো হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে নাটক-সিনেমায় চোর ও অপরাধীর মাথায় ও গায়ে ইসলামী পোষাক পরিধান করানো হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়াকে দিয়ে সেক্যুলারিজমের সবক দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে আমাদের হাজার বছরের পারিবারিক বন্ধন শিথিল করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মায়ের জাতি নারীদেরকে রাস্তায় নামানো হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে লিভ টুগেদারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে অলি আউলিয়ার আদর্শের অহিংস, অসাম্প্রদায়িক, ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এবং হৃদ্যতা-ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একটি দেশকে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গীবাদী রাষ্ট বানানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা কী? আমি দীর্ঘদিন খেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজে ফিরেছি। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- ইংরেজ খেদানোর আন্দোলনে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- মাওলানা ফজলে হক খায়রাবাদীর নির্বাসনে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি ভারত-পাকিস্তান ভাগের টেবিলে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- লাহোর প্রস্তাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের বিচক্ষনতায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি মাওলানা ভাসানী অসহযোগ আন্দোলনে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- বঙ্গবন্ধুর ছয় দফায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- তৎকালীন পাকিস্তানের পার্লামেন্ট অধিবেশনে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণাপত্রে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- স্বাধীনতার ইশতেহারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- মুজিবনগর সরকারের সকল ঘোষণা, ইশতেহার, ফরমান, নির্দেশনা ও নথি-পত্রে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ও সেক্টর কমান্ডারর্সগণের নিদের্শনায়, ভাষনে ও লিখনীতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার চোখে-মুখে, রাইফেলের বারুদে এবং নিক্ষিপ্ত প্রতিটি বোমা ও গ্রেনেডে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- বীরাঙ্গনা নারীদের আর্তনাদে ও শ্বাস-প্রশ্বাসে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- নির্যাতিত মা-বোনের শাড়ির আঁচলে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- মুক্তিযোদ্ধাদের মায়েদের অশ্রুতে, বোনের চাহনিতে, সহধমীনীর আর্তিতে এবং বৃদ্ধ বাবার মুনাজাতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- এদেশের প্রতিটি মসজিদে, মাজারে ও দরসগাহে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- এদেশের প্রতিটি মন্দিরে, মঠে, কেয়াঙয়ে ও গীর্জায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- এদেশের প্রতিটি পাঠশালা ও শিক্ষালয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- মুক্তিযোদ্ধাদের শয়নে, স্বপনে ও জাগরণের প্রতিদিনের রোজনামচায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- শরনাথী শিবিরের ঘুপচি কুঠুরীতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশী বিদেশী সকল সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পায়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- বীর কঙ্কালসার মুক্তিযোদ্ধার গায়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে ফেরি করা বীর মুক্তিযোদ্ধার দীর্ঘশ্বাসে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজেছি- বয়সের ভারে নূয়ে পড়া বাবার সমান বয়েসী রিক্সা বা ঠেলাগাড়ির চালক বীর মুক্তিযোদ্ধার চিকচিক করা ঘামের প্রতিটি ফোঁটায়। প্রিয় পাঠক/পাঠিকা! দুঃখিত, আমি কোথাও ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ মানে ‘ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ’ বা সেকুলরিজম পাইনি। আপনারা কেউ পেয়ে থাকলে দয়া করে কমেন্ট করে আমাকে জানিয়ে কৃতার্থ করবেন।
তারিখ: ২৬ মার্চ, ২০১৬ খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।
©somewhere in net ltd.